বৃহস্পতিবার তুরস্কে এক জনসমাবেশে প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান এই অভিযোগ করেন৷ এছাড়া ইউরোপ আবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের সময়ে ফিরে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে তুরস্কের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক উত্তেজনাকে এর্দোয়ান ইউরোপের খ্রিষ্টান বাহিনী ও মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামি শাসকদের মধ্যে মধ্যযুগে সংঘটিত ধর্মীয় যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করার চেষ্টা করেছেন৷ জনসভায় উপস্থিতদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘ভাইয়েরা আমার, ক্রস আর অর্ধচন্দ্রের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে৷ এছাড়া আর অন্য কোনো ব্যাখ্যা থাকতে পারে না৷''
জার্মানি ও নেদারল্যান্ডসে তুরস্কের মন্ত্রী সহ রাজনৈতিক নেতাদের প্রচারণা চালাতে বাধা দেয়ায় দেশটির সঙ্গে ইইউর উত্তেজনা চলছে৷ এর প্রতিক্রিয়ায় তুরস্ক ও ইইউর মধ্যে স্বাক্ষরিত হওয়া শরণার্থী চুক্তি বাতিলেরও হুমকি দিয়েছেন তুরস্কের শীর্ষ নেতারা৷
এপ্রিলের ১৬ তারিখ তুরস্কে অনুষ্ঠেয় গণভোট নিয়ে জার্মানি ও নেদারল্যান্ডসে বসবাসরত লক্ষ লক্ষ তুর্কি ভোটারদের মধ্যে প্রচারণা চালাতে আগ্রহী তুরস্ক৷ ঐ গণভোটের মাধ্যমে তুর্কি প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বহুগুন বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷
এদিকে, ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ জাস্টিসের সাম্প্রতিক এক রায়ের উল্লেখ করে এর্দোয়ান বলেন, ঐ রায়ের মধ্য দিয়ে ইউরোপ ‘ধর্মযুদ্ধ' শুরু করেছে৷ রায়ে কোম্পানিগুলো তাদের কর্মীদের (কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে) হেডস্কার্ফসহ দৃশ্যমান সব ধর্মীয় প্রতীক পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে বলে জানানো হয়৷
এর আগে এক সাক্ষাৎকারে এর্দোয়ান জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাসীদের মদদ দেয়ার' অভিযোগ এনেছিলেন৷ ‘‘মিসেস ম্যার্কেল, আপনি আপনাদের দেশে সন্ত্রাসীদের লুকিয়ে রাখছেন কেন? কেন আপনি কিছু করছেন না?'' বলেন তিনি৷ সম্ভাব্য সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে আংকারা যে ৪,৫০০ ফাইল পাঠিয়েছে, ম্যার্কেল সে বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে অস্বীকার করছেন, বলে এর্দোয়ানের অভিযোগ৷
তবে ম্যার্কেল এসব বিষয়ে কথা চালিয়ে যেতে আগ্রহী নন৷ শুক্রবার জার্মানির আঞ্চলিক এক পত্রিকায় প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘আমি এ ধরনের উত্তেজনামূলক মন্তব্য বিনিময় চালিয়ে যেতে আগ্রহী নই৷''
ম্যার্কেল বলেন, তুরস্কের রাজনৈতিক নেতারা জার্মানিতে প্রচারণা চালাতে পারবেন যদি আগে থেকেই জানানো হয় সেখানে কারা উপস্থিত থাকবেন এবং কী উদ্দেশ্যে এই আয়োজন৷ আর বিদেশি নেতাদের জার্মানির আইন ও নীতি মেনে চলতে হবে বলেও জানান তিনি৷
তুরস্কে সামরিক অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পাঁচটি কারণ
সামরিক অভ্যুত্থানের প্রয়াসকে ব্যর্থ করে দিয়েছেন এর্দোয়ান৷ তাঁর সমর্থকরা রাস্তায় নেমে এসেছিল বলেই অভ্যুত্থান হতে পারেনি৷ তবে জনসমর্থনই তো সবসময় অভ্যুত্থান ঠেকাতে পারে না৷ তাহলে কেন ব্যর্থ হলো অভ্যুত্থানের চেষ্টা?
ছবি: Getty Images/G.Tan
এর্দোয়ানকে আটকাতে না পারা
অভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্যই ছিল রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ানকে ক্ষমতাচ্যুত করা৷ এ লক্ষ্য পূরণের জন্য এর্দোয়ানকে অবরুদ্ধ করাই ছিল প্রথম কাজ৷ সে কাজে ব্যর্থ হয়েছে অভ্যুত্থান প্রয়াসের সঙ্গে জড়িত সেনাসদস্যরা৷ তাঁকে ধরার চেষ্টা করেছিল বিমান বাহিনীর একটি অংশ৷ কিন্তু এর্দোয়ান সে চেষ্টা ব্যর্থ করে অভ্যুত্থানকেও ব্যর্থ করে দেন৷
ছবি: Reuters/H.Aldemir
প্রেসিডেন্ট ভবনে তীব্র প্রতিরোধ
আঙ্কারায় প্রেসিডেন্ট ভবনের ওপরও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল সেনাবাহিনী৷ কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, সেনাসদস্যরা প্রেসিডেন্ট ভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে কিছুটা খাটো করেই দেখেছিলেন৷ সে কারণে এক রকমের সমন্বয়হীনতা দেখা যায় প্রেসিডেন্ট ভবন আক্রমণে৷ ভবনের নিরাপত্তাকর্মীরা কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তোলে৷ শেষ পর্যন্ত সেখানেও ব্যর্থ হয় সেনাবাহিনী৷
ছবি: Getty Images/E. Ortac
পুলিশকে নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা
পুলিশের ওপরও শুরুতে সেনা সদস্যদের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না৷ পুলিশ বুঝে উঠতে পারছিল না অভ্যুত্থানের প্রয়াসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে, নাকি সমর্থন দেবে৷ তাই শুরুতে প্রায় নিষ্ক্রিয়ই ছিল তারা৷ কিন্তু এর্দোয়ান পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার পর পুলিশও রুখে দাঁড়ায়৷
ছবি: Reuters/M.Sezer
ধর্মীয় নেতাদের আস্থা অর্জন করতে না পারা
ধর্মীয় নেতাদের আস্থায় নেয়ার চেষ্টা করেনি সেনাবাহিনী৷ ফলে এর্দোয়ান স্মার্ট ফোনে ভাষণ দেয়ার পর মসজিদগুলো থেকেও প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়৷ ফলে পরিস্থিতি দ্রুত চলে আসে এর্দোয়ানের অনুকূলে৷ এছাড়া প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এফকান আলাকে গ্রেপ্তার করতে না পারা এবং টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর দখল নিতে কালক্ষেপণ করার বিষয়টিও অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করায় ভূমিকা রেখেছে৷
ছবি: Reuters/Prime Ministry Pool
সমাজের ‘উঁচুমহলের’ সমর্থন না পাওয়া
অভ্যুত্থানের চেষ্টার সঙ্গে জড়িতরা জনমত একেবারেই বুঝতে পারেনি৷ তুরস্কে সামরিক অভ্যুত্থান বা অভ্যুত্থানের প্রয়াস নতুন কিছু নয়৷ তবে বর্তমানে তুর্কি সমাজ একেবারেই সামরিক অভ্যুত্থানকে স্বাগত জানানোর অবস্থায় নেই৷ তাছাড়া ব্যবসায়ী সমাজ এবং অভিজাত শ্রেণির সমর্থন আদায়েও ব্যর্থ হয়েছে সেনাবাহিনী৷