সিরিয়া ও অন্যান্য দেশ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন অভিমুখে উদ্বাস্তুর স্রোতের পরিপ্রেক্ষিতে ইইউ দেশগুলির মধ্যে অধিকতর সংহতি ও সহযোগিতার প্রয়োজন দেখেন ডয়চে ভেলের ব্যার্ন্ড রিগার্ট৷
বিজ্ঞাপন
ব্রাসেলসে মঙ্গলবার ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক৷ ইউরোপীয় পরিষদের বর্তমান সভাপতি দেশ লুক্সেমবুর্গ অতিকষ্টে জোড়াতালি দিয়ে আপোশের ব্যবস্থা করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ছেঁড়াখোঁড়া উদ্বাস্তু নীতিকে বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছেন বটে, তবে উদ্বাস্তু সংকটের কোনো যৌথ, সহযোগিতামূলক সমাধানের ধারে-কাছে আসতে পারেননি মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীবর্গ৷ যে সব উদ্বাস্তুরা ইতিমধ্যেই ইউরোপে এসে পৌঁছেছেন, তাদের একটি বিশেষ সূত্র অনুযায়ী ইইউ-এর বিভিন্ন দেশের মধ্যে ভাগবাঁটোয়ারা করে দেওয়ার প্রসঙ্গটিও আগামী মাস অবধি শিকেয় তুলে রাখা হয়েছে – কেননা ব্রিটেন তথা পূর্ব ইউরোপের একাধিক দেশ ঐ ব্যাপারে নড়ে বসতেও রাজি নয়৷
কাজেই শুধুমাত্র একটি ‘‘রাজনৈতিক ঐকমত্য'' অর্জিত হয়েছে, যা আসলে অর্থহীন গালভরা বাগাড়ম্বর, উদ্বাস্তুদের বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে যার কোনো সম্পর্ক নেই৷ ‘‘ও' দিয়ে আমাদের কোনো কাজ হবে না'', বলেছেন জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টোমাস ডেমেজিয়ের৷ অস্ট্রিয়া-জার্মান সীমান্তে আবার নিয়ন্ত্রণ চালু করে তিনি ইউরোপীয় সহযোগীদের উপর যে চাপ সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন, তা-তে দৃশ্যত কোনো কাজ হয়নি৷ ইইউ দেশগুলির একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ উদ্বাস্তুদের বণ্টন করার সপক্ষে হলেও, যে সব দেশ এ যাবৎ খুব কম উদ্বাস্তু নিয়েছে, তারা পূর্বাপর বাধ্যতামূলক কোটা নির্দিষ্ট করে দেওয়ার বিরোধী৷
সমাধানের কোনো চিহ্ন নেই
প্রচেষ্টা ছিল, গ্রিস, ইটালি অথবা হাঙ্গেরি থেকে ১ লক্ষ ৬০ হাজার উদ্বাস্তুকে আগামী দু'বছরের মধ্যে অপরাপর দেশের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া৷ কিন্তু তথাকথিত বলকান রুটে যে হাজার হাজার উদ্বাস্তু জার্মানি অবধি এসে পৌঁছাচ্ছে, তাদের পরিস্থিতি যাবতীয় সদাশয় পরিকল্পনা সত্ত্বেও আগের মতোই নাটকীয় থেকে যাচ্ছে৷ লক্ষ লক্ষ মানুষের আবাসের যে কী ব্যবস্থা করা হবে, ব্রাসেলস সে প্রশ্নের কোনো জবাব দেয়নি৷
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা বারংবার দাবি তুলে আসছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বহির্সীমান্তগুলিকে আরো ভালোভাবে সুরক্ষিত করতে হবে৷ তারও অর্থ দাঁড়ায়: আরো কম উদ্বাস্তু ও রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের ইইউ-তে ঢুকতে দেওয়া হবে৷ কিন্তু গ্রিস কিংবা ইটালির উপকূলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সামুদ্রিক সীমানাকে সুরক্ষিত করা খুব সহজ কাজ হবে না৷
কাজেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের সর্বাধুনিক সম্মেলনের পরও সেই একই তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে যাচ্ছে যে, ইউরোপের উদ্বাস্তু নীতিতে বাস্তব কোনো প্রগতি অর্জিত হয়নি৷ ইউরোপীয় পরিষদের লুক্সেমবুর্গীয় সভাপতি জঁ আসেলবর্ন যেমন বলেছেন: ইউরোপ যদি এবার একত্রিত না হয়, তা হলে ইউরোপ আবার বিভক্ত হবে৷
‘এতিম’ শিশু শরণার্থীরা ধর্ষণ-নির্যাতনের শিকার
ইউরোপে আশ্রয় মিলছে শরণার্থীদের৷ খারাপ খবরও আসছে তাদের নিয়ে৷ সপ্তাহে একটি দেশেই অন্তত ৭০০ এমন শিশু আসছে যাদের বাবা-মা সঙ্গে নেই৷ ধর্ষণ-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে অনেকেই৷ গ্রিসে শুরু হয়েছে শরণার্থী-পুলিশ সংঘর্ষ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M.Djurica
বছরে ৫ লাখ শরণার্থী নেবে জার্মানি
কয়েক হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী নিরাপদ এবং উন্নত জীবনের আশা নিয়ে প্রবেশ করেছে জার্মানি ও অস্ট্রিয়ায়৷ জার্মানির ডেপুটি চ্যান্সেলর সিগমার গাব্রিয়েল জানিয়েছেন, আগামী কয়েক বছর জার্মানি বছরে ৫ লক্ষ করে অভিবাসনপ্রত্যাশী নিতে পারবে৷ তিনি আরো জানান, এত শরণার্থী নিলেও সরকার জনগণের ওপর বাড়তি করারোপ করবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Jensen
বাড়িতে শরণার্থী রাখতে আগ্রহী ব্রিটিশরা, সরকারের ওপর বাড়ছে চাপ
শিশু আয়লানের লাশের ছবি নিয়ে আলোড়নের পর বছরে ২০ হাজার শরণার্থী নিতে রাজি হয়েছে ব্রিটেন৷ তবে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের এই ঘোষণায় ব্রিটিশরাই সন্তুষ্ট নয়৷ এখনো অনেক ব্রিটিশ ইন্টারনেটে নিজের বাড়িতে শরণার্থী রাখার আগ্রহ প্রকাশ করে সরকারের প্রতি আরো উদার হবার আহ্বান জানাচ্ছেন৷ প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টিও একই দাবি তুলেছে৷ ব্রিটেন আরো বেশি শরণার্থী নেবে কিনা এ নিয়ে আলোচনা হবে সংসদে৷
ছবি: Reuters/T. Melville
গ্রিসে শরণার্থী-পুলিশ সংঘর্ষ, শঙ্কিত ইইউ সভাপতি
শরণার্থী আর পুলিশের মধ্যে আবার সংঘর্ষ শুরু হয়েছে গ্রিসের লেসবস দ্বীপে৷ আড়াই হাজারের মতো অভিবাসনপ্রত্যাশী এথেন্সে যাওয়ার জন্য জোর করে জাহাজে উঠতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়৷ তারপরই শুরু হয় সংঘর্ষ৷ এদিকে তুরস্কের কাছাকাছি দেশ হওয়ায় গ্রিসে সিরীয় শরণার্থীর ঢল অব্যাহত রয়েছে৷ ইইউ সভাপতি ডোনাল্ড টাস্ক এ নিয়ে শঙ্কিত৷ তিনি মনে করেন, সিরিয়া থেকে অবাধে লোক আসার এই ধারা আগামী কয়েক বছর ধরে চলতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/AA/A. Mehmet
সুইডেনে ‘এতিম’ শিশু শরণার্থী
তাদের বাবা-মা বেঁচে আছে কিনা, বেঁচে থাকলে কোথায় আছে- শিশুরা তা বলতে পারেনা৷ প্রাণ বাঁচাতে একা একাই দেশ ছেড়ে তারা চলে এসেছে ইউরোপে৷ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি সপ্তাহে শুধু সুইডেনেই ৭০০-র মতো এমন শিশু আসছে৷ ওপরের ছবিটি হাঙ্গেরির৷
ছবি: Reuters/L. Balogh
পথে পথে শিশুনির্যাতন
শুধু সিরিয়া নয়, মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ, এমনকি আফ্রিকা অঞ্চল থেকেও আসছে শিশু শরণার্থী৷ ডেনমার্কের ওরেসুন্ড ব্রিজ হয়ে তারা ঢুকে পড়ছে সুইডেনে৷ শিশুদের অনেকেই আহত, শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনে বিপর্যস্ত৷ চলন্ত ট্রাক থেকে লাফিয়ে নামতে গিয়ে আহত হচ্ছে অনেকে৷ অনেকে আবার ধর্ষণ, নির্যাতনের শিকার৷ মানবপাচারকারীরাই করছে ধর্ষণ, নির্যাতন৷