1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইউরোপে চাষবাস, ভালো-মন্দ

অরুণ শঙ্কর চৌধুরী৪ জুলাই ২০১৬

প্রসঙ্গটা এলেই ‘ক্যাপ’ বা কমন এগ্রিকালচারাল পলিসির কথা উঠে পড়ে৷ ১৯৬২ সালের এই নীতি অনুযায়ী ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিপুল পরিমাণ কৃষি ভরতুকি বিলি করে থাকে৷ ক্যাপের ভালোমন্দ নিয়ে বিতর্ক আজও শেষ হয়নি৷

গ্রিসে শরণার্থীদের থাকার জায়গা
ছবি: DW/M. Papadopoulos

ক্যাপ হলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের কৃষিনীতি৷ ইইউ-এর বাজেটের প্রায় ৪০ শতাংশ আজও যায় কৃষি ভরতুকিতে – তাও অনেক কমার পরে, কেননা ১৯৮৪ সালে ইইউ-এর বাজেটের প্রায় ৭০ শতাংশ যেত কৃষি ভরতুকিতে৷

কিসের ভরতুকি? ফসল বা ফল ফলানোর ভরতুকি; পশুপালনের ভরতুকি; কৃষিজাত পণ্য রপ্তানির ভরতুকি৷ আবার কম কীটনাশক ব্যবহারের ভরতুকি; আলে গাছ না লাগানোর ভরতুকি; জমি ফেলে রাখার ভরতুকি; পুকুর না বোজানোর, গাছ বা ঝোপঝাড় বাঁচিয়ে রাখার ভরতুকি; বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের ভরতুকি৷

ইউরোপের জনসংখ্যার মাত্র তিন শতাংশ কৃষিজীবী; খাদ্যশিল্পের সঙ্গে মিলে এই কৃষি সেক্টর ইইউ-এর জিডিপি-র মোট ছয় শতাংশ উৎপাদন করে৷ অথচ তারা ইইউ-এর বাজেটের ৩০ শতাংশ বা তার বেশি পেয়ে থাকে৷ মোট জনসংখ্যার এই অকিঞ্চিৎকর অংশটিকে বছরে প্রায় ৬০ বিলিয়ন ইউরো ভরতুকি দিয়ে থাকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷

ক্যাপের ভালো দিক

আবার এও সত্য যে, ক্যাপ ইউরোপকে খাদ্য নিরাপত্তা দিয়েছে৷ কৃষিজীবীদের আয়ের নিরাপত্তা না থাকলে ইউরোপবাসীরা এত কম দামে এই পরিমাণ খাবারদাবার কিনতে পারতেন না৷ ৭৫০ ধরণের স্থানীয়, প্রথাগত খাদ্যদ্রব্য আর প্রায় দু'হাজার বিভিন্ন ধরনের সুরা ও মদ্যকে এভাবে সুরক্ষিত করে রাখা যেত না৷ মার্কিন ফুড ইন্ডাস্ট্রি ইউরোপের বাজার ভাসিয়ে দিতো৷

ইউরোপের ৯০ শতাংশই তো গ্রামাঞ্চল, যেখানে তার ৬০ শতাংশ অধিবাসীর বাস৷ অথচ ইউরোপে কৃষিজীবীদের সংখ্যা প্রতিবছর দুই শতাংশ কমে যাচ্ছে৷ চাষি ছাড়া গ্রাম বাঁচে না, গ্রামীণ সংস্কৃতি বাঁচে না – সে কথা ইউরোপেও সত্য৷ তাই শুধু ইউরোপের খাদ্যসংস্কৃতিই নয়, গোটা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও পরিবেশকে বাঁচানোর জন্য গ্রামাঞ্চলকে বাঁচিয়ে রাখা, ছোট খামারগুলিকে বাঁচিয়ে রাখা, কৃষিজীবীদের বাঁচিয়ে রাখা প্রয়োজন – ক্যাপ বা সাধারণ কৃষিনীতি যা করছে৷

সত্যিই কি তাই? ক্যাপের ভরতুকির ৮০ শতাংশ যায় ২০ শতাংশ বড় খামারগুলির কাছে৷ তাদের মধ্যে যেমন ইংল্যান্ডের রানি এলিজাবেথ পড়েন – যিনি বছরে পাঁচ লাখ ইউরো কৃষি ভরতুকি পান – তেমনই ক্যাম্পিনা কিংবা নেসলে-র মতো ফুড ইন্ডাস্ট্রির জায়েন্টরাও পড়ে৷

বাদবাকি

অর্থাৎ ইউরোপীয় ইউনিয়নে চাষবাসের হালখাতা করতে গেলে কী বাদ দিতে হবে আর কী বাকি থাকবে – তাই হলো প্রশ্ন৷ ইউরোপীয় কৃষির সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো অতি-উৎপাদন, যেহেতু এই উৎপাদন ডিম্যান্ড অ্যান্ড সাপ্লাই-এর উপর নির্ভর নয়৷ এর ফলে ইউরোপীয় কৃষি ফুলে-ফেঁপে যে অতিকায় আকার ধারণ করেছে, তা-তে তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলি ইউরোপে খাদ্য রপ্তানি করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে৷

অরুণ শঙ্কর চৌধুরী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Henriksen

প্রশ্ন উঠবে কীটনাশক, আগাছানাশক, পশুপালনে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রভূত ব্যবহার নিয়ে৷ প্রশ্ন উঠবে রাসায়নিক সার ও তরল জৈব সারের যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়ে৷ প্রশ্ন উঠবে মাত্রাধিক পশুপালন, ও তার ফলে পানি ও পরিবেশের দূষণ নিয়ে৷ প্রশ্ন উঠবে খাদ্যের অপরিসীম অপচয় নিয়ে৷ ফাস্ট ফুড, শিশুদের মেদবহুলতা৷ খাদ্যে বিভিন্ন ধরনের কৃত্রিম ও রাসায়নিক উপাদান যোগ৷ অরগ্যানিক ফুডের ভালোমন্দ, সেখানেও ভেজাল চলছে কিনা!

সব মিলিয়ে ইউরোপীয় কৃষ্টির জীবনমরণ যে কোনো না কোনো ভাবে এই কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত, সে উপলব্ধি আজও আছে বলেই সম্ভবত ইউরোপ বেঁচে রয়েছে, এ কথা নির্দ্বিধায় বলা চলে৷ তাই ক্যাপ বানচাল করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না – অন্তত আপাতত নয়৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ