এক সাক্ষাৎকারে ইউরোপ নিয়ে নতুন ‘দায়িত্ববোধের’ কথা বলেছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ এরপর ইউরোপীয় ইউনিয়নে শীর্ষ পদে যাচ্ছেন তিনি, এমন জল্পনার পালে হাওয়া লাগে৷ তবে সে জল্পনা আবার নিজেই উড়িয়ে দিয়েছেন ম্যার্কেল৷
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার ম্যার্কেল স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ২০২১ সালের শেষে চ্যান্সেলর হিসেবে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো দায়িত্ব নিচ্ছেন না তিনি৷
বার্লিনে ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে ম্যার্কেল জানান, তিনি ‘‘কোথাও কোনো রাজনৈতিক দপ্তরের দায়িত্ব নেবেন না, এমনকি সেটা ইউরোপের হলেও না৷’’
তবে একই দিনে স্যুডডয়চে সাইটুং-কে দেয়া তাঁর সাক্ষাৎকার আবার উসকে দিচ্ছে এমন জল্পনা৷ পত্রিকাটিকে ইউরোপের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁর ‘দায়িত্ববোধের’ কথা বলেছেন তিনি৷
তিনি বলেন, ‘‘আমার মতো অনেক মানুষই ইউরোপের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন৷ ফলে অন্যদের সঙ্গে নিয়ে ইউরোপের ভাগ্য বিষয়ে চিন্তা করতে এক নতুন দায়িত্ববোধ অনুভব করছি আমি৷’’
আঙ্গেলা ম্যার্কেল: এক বিজয়ীর নাম
রাজনীতির মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বীদের সুকৌশলে কাবু করা বা হটিয়ে দেয়ার কাজটি খুব ভালো পারতেন তিনি৷ প্রতিপক্ষ দলের লোকেরা তো আছেই, নিজ দলেরও প্রতিদ্বন্দ্বীর ক্ষেত্রে এই কৌশল অবলম্বন করতেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ANP/R. De Waal
কোলকেই পেছনে ফেলে
সিডিইউ নেতা সাবেক চ্যান্সেলর হেলমুট কোল হাতে ধরে ম্যার্কেলকে মন্ত্রিসভায় পদ দেন, ম্যার্কেলের উত্থানে ভুমিকা রাখেন৷ ১৯৯৮ সালে চ্যান্সেলর পদ হারানোর পর দলের তহবিল নিয়ে একটি ঘটনা দু’জনকে মুখোমুখি দাঁড় করায়৷ তখন ম্যার্কেল সাহস করে বলেন যে, কোলকে ছাড়াই সিডিইউ’র এগিয়ে যাওয়া উচিত৷ দল ম্যার্কেলের পক্ষেই দাঁড়ায়৷ কোলকে ছাড়াই এগিয়ে যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Altwein
হটে গেলেন গ্যুন্টার হ্যারমান ও্যটিঙার
রাজনীতিতে পথ থেকে সরিয়ে দেয়া মানে কিন্তু সবসময় জোর খাটানো নয়৷ যেমনটি তিনি করেছেন বাডেন-ভুর্টেমব্যার্গ রাজ্যের সিডিইউ নেতা গুন্টার ওয়েটিঙ্গারের সঙ্গে৷ দলে তাঁর এই সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীকে ২০১০ সালেই তিনি ইউরোপিয়ান কমিশনে বড় চাকরি দিয়ে পাঠিয়ে দেন, যদিও ইউরোপের রাজনীতিতে ওয়েটিঙ্গারের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Seeger
হারিয়ে গেলেন রোল্যান্ড কখ
দালাই লামার সঙ্গে বন্ধুত্বের জন্য কখ অনেকের কাছেই পরিচিত ছিলেন৷ তিনি সরকারের দ্বৈত নাগরিকত্বের পরিকল্পনার বিরুদ্ধেও চালিয়েছেন প্রচারণা৷ হেসে রাজ্যে দলের ম্যার্কেলবিরোধী অংশের একজন বলেই তাঁকে গণ্য করা হতো৷ কখ এ-ও ভেবেছিলেন যে, বার্লিন থেকে চাকরির জন্য তাঁকে ডাকা হবে৷ তাঁর কোনো ভাবনাই হালে পানি পায়নি৷ বরং নিজেই মিলিয়ে গিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ – দুর্ভাগা প্রেসিডেন্ট
লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ৷ জনপ্রিয়তার কারণে ২০০৫ সালের নির্বাচনে সিডিইউ থেকে চ্যান্সেলর পদের জন্য অন্যতম প্রতিযোগী ছিলেন৷ কিন্তু পরে আঙ্গেলা ম্যার্কেলকে সমর্থন দেন৷ অবশ্য প্রেসিডেন্ট পদের প্রশ্ন এলে তিনি ম্যার্কেলের প্রথম পছন্দ ছিলেন না৷ হর্স্ট ক্যোলারের হঠাৎ পদত্যাগের পর তিনি নির্বাচিত হন৷ অবশ্য পরে দুর্নীতির দায়ে সেই চাকরিও হারাতে হয়৷ মামলাও খেতে হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস – ক্ষমতার লড়াইয়ে পরাজয়
সাবেক ইউরোপীয় ও জার্মান সংসদ সদস্য ফ্রিডরিশ ২০০০ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত সিডিইউ/সিএসইউ পার্লামেন্টারি গ্রুপের চেয়ারম্যান ছিলেন৷ কিন্তু সিডিইউ নেতা ম্যার্কেল তাঁকে হটিয়ে চেয়ারম্যান হন, যা তিন বছর পর চ্যান্সেলর পদের জন্য লড়তে তাঁকে সহায়তা করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Baumgarten
5 ছবি1 | 5
অবশ্য সংবাদ সম্মেলনে ম্যার্কেল বলেছেন সাক্ষাৎকারটি তিনি দিয়েছেন ‘জার্মান চ্যান্সেলর’ হিসেবে৷ তিনি বলেন, ‘‘জার্মান চ্যান্সেলর হিসেবে একটি কার্যকর ইউরোপ গড়ে তোলার জন্য আমাকে আরো বেশি চেষ্টা করে যেতে হবে৷’’
এর আগে এপ্রিলে ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ ক্লদ ইয়ুঙ্কার বলেছিলেন, ইউরোপের শীর্ষ পদের জন্য ম্যার্কেল ‘অত্যন্ত যোগ্যতাসম্পন্ন’৷
২০২১ পর্যন্ত থাকতে পারবেন ম্যার্কেল?
রক্ষণশীল খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী ইউনিয়ন- সিডিইউ-এর প্রধানের দায়িত্ব থেকে এরই মধ্যে অব্যাহতি নিয়েছেন ম্যার্কেল৷ একই সঙ্গে ২০২১ সালে মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত জার্মান চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালনের ইচ্ছাও প্রকাশ করেন তিনি৷
কিন্তু সিডিইউ, বাভারিয়া রাজ্যে দলটির সহযোগী খ্রিষ্টীয় সামাজিক ইউনিয়ন সিএসইউ এবং সামাজিক গণতন্ত্রী দল এসপিডির মধ্যে জোট যদি এর মধ্যে ভেঙে পড়ে, তাহলে সে সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ৷
নিজের দল থেকে অবশ্য সমর্থন পাচ্ছেন ম্যার্কেল৷ ম্যার্কেলের পর সিডিইউয়ের দায়িত্ব নেয়া আনেগ্রেট ক্রাম্প-কারেনবাউয়ার ভেল্ট আম সনটাগ পত্রিকাকে রোববার এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তিনি চান ম্যার্কেল ২০২১ সাল পর্যন্ত চ্যান্সেলরের দায়িত্বে থাকুন৷ তিনি বলেন, ‘‘চ্যান্সেলর ও সরকার পূর্ণ মেয়াদের জন্যই নির্বাচিত হয়েছেন৷ সে ম্যান্ডেট তাঁরা পূরণ করবেন, সে প্রত্যাশা করার অধিকার জনগণের রয়েছে৷’’