ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ-তে ২০১২ সালের তুলনায় ২০১৩ সালে প্রায় ১৭ শতাংশ বেশি মানুষকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া হয়েছে৷ অভিবাসীদের অধিকাংশই এসেছেন সিরিয়া, আফগানিস্তান ও সোমালিয়া থেকে৷
বিজ্ঞাপন
যুদ্ধবিগ্রহ ও সংঘাত থেকে পলায়নপর মানুষদের কাছে ইউরোপ একটা স্বপ্ন বৈকি৷ অপরদিকে অর্থনৈতিক সংকটপীড়িত ইউরোপে এই অভিবাসীদের চাকরি এবং সামাজিক সুযোগসুবিধার ক্ষেত্রে অন্যায় ভাগীদার হিসেবে মনে করে থাকেন অনেক ইউরোপীয়৷
তা সত্ত্বেও গতবছর ১,৩৫,৭০০ মানুষ ইইউ-তে রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছেন৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান সংস্থা ‘ইউরোস্ট্যাট' গত বৃহস্পতিবার বিশ্ব উদ্বাস্তু দিবস উপলক্ষ্যে এই সব খুঁটিনাটি প্রকাশ করে৷ সেই খুঁটিনাটিতে প্রথমেই যা চোখে পড়ে, তা হলো এই যে, ২০০৫ সাল যাবৎ ইইউ-তে আর কখনো এত বেশি মানুষকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া হয়নি৷
জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য কিছু তথ্য
জার্মানিতে এসে যাঁরা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন, তাঁদের আমলাতন্ত্রিক নানা জটিলতার মধ্যে পরতে হয়৷ ফলে তাঁরা দিশেহারা হয়ে যান৷ তাঁদের সুবিধার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবার কমিক্স আকারে এই তথ্য পুস্তিকাটি রের করেছে৷
ছবি: SMI Sachsen
কিভাবে এগোবেন
গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত এক লাখ ১৫ হাজার ৫৭৬ জন বিদেশি জামানিতে এসে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছেন৷ তাঁরা যাতে কোনো রকম আমলাতান্ত্রিক জটিলতার সম্মুখীন না হন, সেজন্য স্যাক্সনি রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জার্মানি সম্পর্কে তিনটি ভাষায় একটি তথ্যপুস্তিকা প্রকাশ করেছে৷ যাতে রয়েছে সহজ ভাষায় ডাক্তারের কাছে যাওয়া থেকে শুরু করে বাচ্চাকে স্কুলে পাঠানো পর্যন্ত নানা তথ্য৷
ছবি: SMI Sachsen
ভদ্রভাবে চলা
বিভিন্ন অফিস-আদালত বা কতৃপক্ষকে কোনো উপহার দেওয়া এ দেশে মোটেই ভদ্রতার মধ্যে পরে না বরং তাঁরা এতে বিরক্ত বোধ করেন৷ কাজেই সে ধরণের কোনো আচরণ না করাই ভালো৷ অন্যদিকে, কতৃপক্ষ কোনো উপহার নিলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাঁদেরও শাস্তি পর্যন্ত ভোগ করতে হয়৷
ছবি: SMI Sachsen
সহানুভূতিশীল
জার্মানিতে এসে যাঁরা রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী হন, তাঁদের থাকার জন্য আলাদা বাড়ির ব্যবস্থা রয়েছে৷ সেসব বাড়িতে অনেকে একসাথে থাকেন এবং সেখানে থাকতে তাঁদের কারও যেন কোনো অসুবিধা না হয়, সেজন্য সবাইকেই বেশ কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়৷ তথ্য পুস্তিকাটিতে বিশেষভাবে লেখা রয়েছে যে, একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে এবং নিজের কারণে যেন অন্যের অসুবিধা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে৷
ছবি: SMI Sachsen
সময় সচেতনতা
সময় সচেতনতা সম্পর্কে জার্মানির খ্যাতি রয়েছে৷ কারুর যদি ডাক্তারের কাছে যাওয়ার নিদিষ্ট সময় দেওয়া থাকে আর তিনি যদি কোনো কারণে সে সময় সেখানে না যেতে পারেন, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারকে ফোন করে জানিয়ে দিতে হবে৷ তাছাড়া ডাক্তারি পরীক্ষা ছাড়া আশ্রয়প্রার্থীকে জার্মানিতে থাকার জরুরি কাগজ-পত্র বা টাকাও দেওয়া হবে না৷ জার্মানরা সময় সচেতন হলেও আজকাল মাঝেমাঝেই অবশ্য ট্রেনের সঠিক সময় রক্ষা করা যাচ্ছে না৷
ছবি: SMI Sachsen
স্কুলে যাওয়া বাধ্যতামূলক
জার্মানিতে তিন বছর বয়সি প্রতিটি শিশুর কিন্ডারগার্টেনে জায়গা পাওয়ার অধিকার রয়েছে৷ রাজনৈতিক আশ্রয়পার্থীদের বাচ্চাদের স্কুলের খরচ বহন করে জার্মান সরকার৷ জার্মানিতে ছয় বছর বয়স হলে বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়া বাধ্যতামূলক৷ এছাড়া, স্কুলে বিদেশি বাচ্চাদের জার্মান ভাষা শেখার জন্য বাড়তি সুযোগ-সুবিধাও দেওয়া হয়ে থাকে৷
ছবি: SMI Sachsen
চিকিৎসা ব্যবস্থা
রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য বিনা খরচে ডাক্তার দেখানোর ব্যবস্থাও রয়েছে জার্মানিতে৷ সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পুরো খরচ বহন করে জার্মান সরকার৷ কোনো রকম মানসিক সমস্যা হলে তাঁদের মনোবিজ্ঞানীর কাছে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়৷ এ সব ক্ষেত্রে কারো ভাষাগত সমস্যা হলে, দোভাষীর ব্যবস্থাও করা হয়ে থাকে৷
ছবি: SMI Sachsen
6 ছবি1 | 6
এ তো যাঁদের রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া হয়েছে৷ ২০১৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮টি দেশ মিলিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন ৪,৩৫,০০০ মানুষ৷ তাঁদের মধ্যে এক-চতুর্থাংশই ছিলেন সিরিয়া অথবা রাশিয়ার মানুষ৷ যাঁরা রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছেন, তাঁদের তালিকাতেও সিরিয়া সর্বোচ্চ: ৩৫,৮০০, যা কিনা ২০১২ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ৷
দ্বিতীয় স্থানে আছেন আফগানরা: তাঁদের মধ্যে ১৬,৪০০ জন রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছেন৷ তৃতীয় স্থানে আছেন সোমালিরা: তাঁদের মধ্যে ৯,৭০০ জনের আবেদন সফল হয়েছে৷ সিরীয়দের প্রায় ৬০ শতাংশ আশ্রয় পেয়েছেন সুইডেনে ও জার্মানিতে; আফগানরা গেছেন প্রধানত জার্মানি, অস্ট্রিয়া, সুইডেন, ইটালি ও বেলজিয়ামে; সোমালিরা আশ্রয় খুঁজেছেন নেদারল্যান্ডস, সুইডেন এবং ইটালিতে৷
সুইডেন ও জার্মানি সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী নিয়েছে, উভয় দেশে ২৬ হাজারের বেশি৷ তৃতীয় স্থানে ফ্রান্স, ১৬,২০০৷ চতুর্থ ইটালি, ১৪,৫০০৷ পঞ্চম ব্রিটেন, সেখানে আশ্রয় পেয়েছেন ১৩,৪০০ রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী৷ এই পাঁচটি দেশ মিলিয়ে ইইউ-র ৭০ শতাংশের বেশি রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী নিয়েছে৷ অপরদিকে এস্টোনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, স্লোভেনিয়া ও স্লোভাকিয়া ১০০ জনের কম করে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী নিয়েছে৷
সুইডেনের জনসংখ্যা ৯৬ লাখ, অথচ তারাই গতবছর সবচেয়ে বেশি মানুষকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে: ২৬,৪০০৷ জার্মানির জনসংখ্যা সুইডেনের দশগুণ হলেও, জার্মানি মাত্র ২৬,১০০ মানুষকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে৷