আগামীতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ-তে সিগারেটের প্যাকেটের উপর রোগীদের ভয়াবহ, অপ্রীতিকর সব ছবি থাকবে এবং মেন্থল সিগারেট নিষিদ্ধ করা হবে৷ ইইউ পার্লামেন্ট বুধবার এই সব ধূমপান বিরোধী নিয়মকানুন অনুমোদন করে৷
বিজ্ঞাপন
ইইউ-এর স্বাস্থ্য কমিশনার টোনিও বোর্গ মন্তব্য করেন: ‘‘তামাকজাত পণ্য যা-তে স্বাদে ও আকৃতিতে সত্যিই তামাকের মতো দেখতে হয়, তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে এই নতুন নিয়মাবলী ইইউ-তে যে সব মানুষ সদ্য ধূমপানের অভ্যাস শুরু করতে চলেছেন, তাদের সংখ্যা কমাতে সাহায্য করবে৷''
‘ধূমপান বর্জন করুন, ক্যানসারকে দূরে রাখুন’
ফুসফুসের ক্যানসার রোগীদের মধ্যে শতকরা ৯০ জনই ধূমপায়ী
ছবি: Fotolia/Fotowerk
ধূমপান – বিষপান
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, সে কথা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখেনা৷ তবে ধূমপান স্বাস্থ্যের ঠিক কতটা ক্ষতি করে, তা হয়তো অনেকেরই জানা নেই৷ জার্মানির ক্যানসার গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র ধূমপান করার কারণেই বছরে ১ লাখ ১০ হাজার থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ মারা যায়৷ আর বছরে ৩,৩০০ জন মারা যায় ধূপায়ীদের কাছাকাছি থেকে সিগারেটের ধোঁয়া গ্রহণ করার কারণে৷
ছবি: AP
ফুসফুসের ক্যানসার
ধূমপান শরীরের যে কোনো অঙ্গেরই ক্ষতি করে, তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে ফুসফুস এবং হার্ট বা হৃদযন্ত্রের৷ ফুসফুসের ক্যানসার রোগীদের মধ্যে শতকরা ৯০ জনই ধূমপায়ী৷
একদিনে দুই কোটিরও বেশি সিগারেট
জার্মানিতে মানুষ দিনে প্রায় আড়াই কোটি সিগারেট খায়৷ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে শতকরা ২৫ জন নিয়মিত ধূমপান করেন, মাঝে মাঝে করেন শতকরা চারজন৷ তার মধ্যে শতকরা ৩৫ জন পুরুষ এবং ২২ জন নারী৷ জার্মানিতে সবচেয়ে বেশি ধূমপান করেন কনস্ট্রাকশন বা নির্মাণ ক্ষেত্রের শ্রমিক, বাস বা ট্রাক চালক৷ আর সবচেয়ে কম ধূপায়ীদের মধ্যে রয়েছেন ডাক্তার, ফার্মেসি কর্মী এবং শিক্ষক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মহিলা ধূমপায়ীদের সংখ্যা বাড়ছে
গত ২০ থেকে ৩০ বছরে জার্মানিতে মহিলাদের মধ্যে ধূমপান করার প্রবণতা অনেক বেড়েছে৷ জার্মানিতে মহিলাদের গড় আয়ু পুরুষদের চেয়ে বেশি৷ তবে এখন মহিলারা যেভাবে ধূমপান করেন, তা অব্যাহত থাকলে শীঘ্রই মহিলাদের গড় আয়ু পুরুষদের সমান হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে৷
ছবি: Picture-Alliance/KEYSTONE
সিগারেটের বিজ্ঞাপন অনেকটা দায়ী
কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ধূমপান উপভোগ করার চেয়ে স্মার্টনেস দেখানোই যেন বড় কথা৷ তবে সিগারেটের বিভিন্ন বিজ্ঞাপনই এদের ধূমপান করতে প্রভাবিত করে থাকে৷ সুখের কথা, জার্মানিতে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সম্মিলিত প্রচেষ্টা
ধূমপান ছেড়ে দেওয়া সহজ নয়, তবে চেষ্টা করলে পারা যায়৷এর জন্য রয়েছে নানা ওষুধপত্র,গ্রুপ থেরাপি৷মনোবিজ্ঞানী, গবেষক এবং কেমনিৎস শহরের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ধূমপান বিরোধী কেন্দ্রের প্রধান প্রোফেসার স্টেফান ম্যুলিশ বলেন, ধূমপান ছাড়ার ২৪ ঘণ্টা পর থেকেই হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমতে শুরু করে৷তিনি একটি গ্রুপ থোরাপিও পরিচালনা করেন৷তাঁর মতে, ‘একা চেষ্টার চেয়ে গ্রুপের মাধ্যমে ধূমপান ছাড়ার চেষ্টায় সফলতা বেশি’৷
ছবি: Privat
ঘরের বাইরে ধূমপান
বেশ কয়েক বছর থেকে জার্মানিতে বিভিন্ন জায়গায় ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷বিভিন্ন রেস্তোরাঁ বা অফিস-আদালতের মতো ডয়চে ভেলেতেও অফিস ঘরে ধূমপান পুরোপুরি নিষিদ্ধ৷ তবে ঘরের বাইরে, অর্থাৎ বারান্দায় প্রায়ই কর্মীদের ধূমপান করতে দেখা যায়, এমনকি বাইরের তাপমাত্রা মাইনাস ১০ ডিগ্রি হলেও৷
ছবি: picture-alliance/Coleman/Photoshot.
প্রোফেসর ড. এলিজাবেথ পট
‘ধূমপায়ীরা মাত্র কয়েক সপ্তাহ ধূমপান থেকে বিরত থাকুন৷ নিজেরাই বুঝতে পারবেন যে আপনাদের ফুসফুস আরো ভালোভাবে কাজ করছে’৷ একথা বলেছেন প্রোফেসর ড. এলিজাবেথ পট, যিনি ১৯৮৬ সাল থেকে জার্মানির স্বাস্থ্যবিষয়ক কেন্দ্রীয় দফতরের পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করছেন৷
ছবি: dapd
শেষ কথা
মানুষ তার আয়ু নিজেই নির্ধারণ করতে পারেনা তা ঠিক, তবে ধূমপান করে ইচ্ছে করে নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবারও কোনো যুক্তি নেই৷ শুধু তাই নয়, যারা ধূপায়ীদের আশেপাশে থাকে তারা আক্রান্ত হয় স্বাস্থ্যগত নানা সমস্যায়৷ আর সন্তানসম্ভবা মায়েরা ধূমপানের সময় ভাবুন তাদের অনাগত শিশুর স্বাস্থ্যের কথা৷ এমনটাই বলেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: Fotolia/Fotowerk
9 ছবি1 | 9
তিনি যুক্তি দেখান যে, মানুষের স্বাস্থ্যের উপর তামাক সেবনের ‘‘মারাত্মক প্রভাব'' পড়ে; বছরে প্রায় সাত লক্ষ ইউরোপীয় তামাক সংশ্লিষ্ট রোগে প্রাণ হারান; ধূমপায়ীরা গড়ে ১৪ বছর কম বাঁচেন৷ অন্যদিকে নতুন নিয়মাবলীর বিরোধী – বিশেষ করে সিগারেট শিল্পের যুক্তি ছিল যে, এর ফলে বেআইনি সিগারেট পাচার বাড়বে, শুল্ক ও কর থেকে সরকারের আমদানি কমবে এবং বহু মানুষের চাকরি যাবে৷
নতুন নিয়ম অনুযায়ী সিগারেটের প্যাকেটের উপরে ও পিছনের ৬৫ শতাংশ এলাকা জুড়ে থাকবে স্বাস্থ্যহানি সংক্রান্ত সাবধানবাণী এবং সংশ্লিষ্ট রোগ ও রোগীদের ছবি৷ যে সব দেশ কোনো ছবি কি রং ছাড়াই ‘প্লেইন প্যাকেজিং' চালু করতে চায়, তারা তা করতে পারবে৷ ফ্লেভার অথবা গন্ধ যুক্ত বিশেষ ধরনের সিগারেট পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হবে – যেমন মেন্থল সিগারেট৷ তবে তার একটি ‘ফেজ-আউট', অর্থাৎ ধীরে ধীরে প্রত্যাহারের সময়কাল থাকবে৷ মেন্থল সিগারেট বাজার থেকে পুরোপুরি উঠে যাবে ২০২০ সালের মধ্যে৷
তথাকথিত ই-সিগারেট বা ইলেকট্রনিক সিগারেটও নিয়ন্ত্রণ করা হবে – কেননা তাদের ‘ঔষধের' পর্যায়ে ফেলার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে৷ অনুরূপভাবে ‘স্লিম' বা বিশেষভাবে পাতলা সিগারেটগুলি নিষিদ্ধ করা চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে – তবে তাদের প্যাকেটও অতো রঙচঙা, মনোলোভা হলে চলবে না৷ অন্যান্য নিয়মাবলীর লক্ষ্য হল তামাক জাত বেআইনি পণ্য, এবং সিগারেট ও তামাক জাত পণ্যের অনলাইন বিক্রির প্রসার রোখা৷
ইইউ সংসদ ৫১৪ বনাম ৬৬ ভোটে এই নতুন নিয়মাবলী অনুমোদন করেছে৷ ইইউ দেশগুলির সরকারবর্গ ১৪ই মার্চ তাদের চূড়ান্ত অনুমোদন দেবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে৷ তারপরও এই নিয়মাবলীকে স্বদেশের আইনে পরিণত করার জন্য দু'বছর সময় থাকবে৷