ব্রাসেলসে ইইউ-র বৈঠকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেন কিভাবে জয় পাবে, সেই পরিকল্পনা পেশ করলেন জেলেনস্কি।
বিজ্ঞাপন
ইইউ সাধারণভাবে জেলেনস্কিকে সমর্থন করার কথা বললেও, জেলেনস্কির সব দাবি মানতে নারাজ ইইউ-র কিছু সদস্য দেশ।
লিথুয়ানিয়ার প্রেসিডেন্ট শীর্ষবৈঠকে বলেছেন, আমি যখন পরিকল্পনা দেখি, তখন দেখতে পাই, বিগত মাস বা বছরগুলিতে আমরা যে সব সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি, সেই সব বিষয় এখানে আছে।
২৭টি ইইউ দেশের শীর্ষনেতার বৈঠকে জেলেনস্কি একঘণ্টা সময় পেয়েছিলেন তার পরিকল্পনার কথা জানানোর জন্য। একদিন আগেই তিনি ইউক্রেনের পার্লামেন্টে পাঁচটি বিন্দুর কথা বলেছিলেন। সেগুলি আবার এই বৈঠকে বলেন।
ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করার কোনো সিদ্ধান্ত এই বৈঠকে নেয়া হবে না। পরে ন্যাটোর প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে না। লিথুয়ানিয়া এই প্রস্তাবে রাজি হলেও যুক্তরাষ্ট্র জানিয়ে দিয়েছে, ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করা হলে পরমাণু শক্তিধর রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে ন্যাটো।
জার্মানি থেকে ক্ষেপণাস্ত্র চান জেলেনস্কি
জেলেনস্কি বৈঠকে বলেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে দূরপাল্লার মিসাইল ব্যবহার করার অনুমতি দিক পশ্চিমা দেশগুলি। তিনি জানিয়ছেন, এই যুদ্ধটা রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়াটা জরুরি। তাহলেই রুশরা যুদ্ধের ভয়াবহতা বুঝতে পারবেন এবং তারা পুটিনকে ঘৃণা করতে শুরু করবেন।
ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য মিসাইল ও রকেট দিয়েছে, যা দিয়ে রাশিয়ার ভিতরের লক্ষ্যে আঘাত করা সম্ভব। কিন্তু বাইডেন চান না, ইউক্রেন রাশিয়ার ভিতরে ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ করুন। অ্যামেরিকা মনে করছে, তাহলে উত্তেজনা বহুগুণ বেড়ে যাবে।
রাশিয়ার কুরস্কে ঢুকে ৭৪টি বসতি তারা দখল করে নিয়েছে বলে দাবি ইউক্রেনের। কী বলছেন কুরস্কের সাধারণ মানুষ?
ছবি: Roman Pilipey/AFP/Getty Images
রাশিয়ার ভূখণ্ডে ইউক্রেনের সেনা
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তারা যুদ্ধটা এবার রাশিয়ার ভূখণ্ডে নিয়ে গেছেন। ইউক্রেন জানিয়েছে, তাদের সেনা ১৩ কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে পড়েছে। ৭৪টি বসতি তাদের অধিকারে আছে। এক সপ্তাহ হলো ইউক্রেনের সেনা কুরস্কে ঢুকেছে। রাশিয়ার দাবি, ইউক্রেনের সেনার অগ্রগতি তারা থামাতে পেরেছে।
ছবি: ROMAN PILIPEY/AFP
'প্রথমে সবাই শান্ত ছিলেন'
কুরস্কের বাসিন্দা মার্গারিটা(আসল নাম জানাতে চাননি) ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''গত শুক্রবার যখন সাইরেন বাজলো, তখন মানুষ শান্ত ছিলেন। তারা নিজেদের কাজ করেছেন, বাজার করেছেন, সবই স্বাভাবিক ছিল। রাস্তায়, পার্কে মানুষ স্বাভাবিকভাবে হাঁটছিলেন। পরে সীমা্ন্ত থেকে খবর এলো, ইউক্রেনের সেনা আক্রমণ করেছে।''
ছবি: AP Photo/picture alliance
টিভি বললো, 'সাময়িক সমস্যা'
গোটা এলাকার জন্য সতর্কবার্তা জারি করা হয়। মার্গারিটা জানিয়েছেন, ''গোটা অঞ্চলকে সতর্ক করা হয়েছিল। আর আমরা এখন সাইরেনে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তাই সাইরেন সত্ত্বেও আমরা খুব একটা চিন্তিত হইনি। পরে আত্মীয়রা জানান, সীমান্তে তীব্র লড়াই চলছে। মানুষ ওই এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।''
ছবি: Ilya Pitalev/Sputnik/IMAGO
'পালাবার জন্য হুড়োহুড়ি'
অ্যান্টোনিনা কুরস্কে থাকেন, আর তার বোন থাকতেন সুদঝাতে। অ্যান্টোনিনা জানিয়েছেন, ''সুদঝা এখন ইউক্রেনের দখলে। তার বোন জুলিয়া বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছেন। ইউক্রেনের আক্রমণের পর মানুষ যেভাবে পেরেছে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।''
ছবি: AP Photo/picture alliance
'সবকিছু ফেলে আসতে হয়েছে'
অ্যান্টোনিনা জানিয়েছেন, তার বোন জুলিয়া এখন আত্মীয়দের কাছে দূরে চলে যেতে পেরেছেন। কিন্তু তিনি ব্যাংক কার্ড-সহ সব ডকুমেন্ট ফেলে এসেছেন। তবে তার সবচেয়ে বেশি চিন্তা পালিত হাঁস, মুরগি ও অন্য পশুদের নিয়ে।
ছবি: AP Photo/picture alliance
অর্থ ও রেশনের প্রতীক্ষায়
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, যাদের বাড়ি থেকে চলে আসতে হয়েছে, তাদের রেশন দেয়া হবে এবং ১০ হাজার রুবল দেয়া হবে। কিছু অসুবিধার জন্য জুলিয়ারা এখনো রেশন পাননি। তারা অপেক্ষা করছেন। অনেকে বলছেন, এই অর্থ দিয়ে এক বা দুই দিনের জন্য খাবার ও ওষুধ কেনা যেতে পারে। ফলে তা যথেষ্ট নয়।
ছবি: AP Photo/picture alliance
প্রতিবেশী এলাকাতেও আশংকা
কুরস্কের প্রতিবেশী বেলগোরোদের নিনা ডিডাব্লিওউকে বলেছেন, তারাও সমানে এয়ার রেইড সাইরেন শুনতে পাচ্ছেন। ডিডাব্লিউর সঙ্গে কথা বলার সময়ও সাইরেন বাজার শব্দ পাওয়া গেলো। নিনা জানিয়েছেন, তারা এখন সাইরেনে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। ইউক্রেন কুরস্কে ঢুকে পড়ার পর এখানে প্রচুর রাশিয়ার সেনা এসেছে।
সুদঝা অঞ্চলে নিখোঁজ মানুষদের নিয়ে সামাজিক মাধ্যম সরগরম। বলা হচ্ছে, ৪০ জন নিখোঁজ। অনেকে আত্মীয়দের নিয়ে আসার জন্য গেছিলেন। তাদের খোঁজ নেই। সামাজিক মাধ্যমে একজন লিখেছেন, ইউক্রেনের সেনা যাতে বিপাকে পড়ে, সেজন্য রাশিয়া গ্রামগুলিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক জায়গায় ফোনে যোগাযোগও করা যাচ্ছে না।
ছবি: Evgeniy Maloletka/AP Photo/picture alliance
'আগাম সতর্কতা ছিল না'
সামাজিক মাধ্যমে মানুষ প্রশ্ন তুলছেন, কেন গোয়েন্দারা ইউক্রেনের আক্রমণের খবর দেয়নি বা দিতে পারেনি? জুলিয়ানা বলেছেন, ''মানুষের আশংকা ছিল, কিন্তু কর্তৃপক্ষ আগাম কোনো সতর্কতা জারি করেনি।'' শ্বেতলানা বলেছেন, ''কোথায় গেল সিক্রেট সার্ভিস? তারা তো মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে?'' স্থানীয় প্রশাসন মানুষকে শান্ত থাকতে বলেছেন।
ছবি: Anatoliy Zhdanov/REUTERS
9 ছবি1 | 9
ইউক্রেন জার্মানির কাছ থেকে টাউরুস ক্রুজ মিসাইলও চেয়েছে। কিন্তু জার্মান চ্যান্সেলর শলৎস সাংবাদিকদের বলেছেন, ''আপনারা আমার সিদ্ধান্তের কথা জানেন। আমার সিদ্ধান্ত বদল হবে না।'' শলৎস ইউক্রেনকা টাউরুস মিসাইল দিতে রাজি নন।
তবে শলৎসের জোটসঙ্গী ও প্রধান বিরোধী দলের এই ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনের হাতে তুলে দিতে কোনো আপত্তি নেই।
তবে ন্যাটোর সামরিক কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাশিয়ার সরবরাহ লাইন ও রুশ পরিকাঠামোয় আঘাত করতে পারলেই একমাত্র ইউক্রেন যুদ্ধে জিততে পারবে।
জেলেনস্কির বক্তব্য
ইইউ সদস্য দেশগুলি যৌথ ঘোষণায় জানিয়েছে, ইউক্রেনকে সঙ্গে নিয়েই শান্তি আলোচনা করতে হবে। ইউক্রেনের শর্তেই একমাত্র শান্তি আলোচনা হতে পারে।
শলৎস বলেছেন, জেলেনস্কির সঙ্গে তার বৈঠক রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে একটা বার্তা দিচ্ছে। ইউক্রেনের প্রতি তার সমর্থন কমেনি।
জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তার এই জয়ের পরিকল্পনার রূপায়ণ রাশিয়ার উপর নির্ভর করছে না। সেটা নির্ভর করছে ইউক্রেনের সঙ্গীদের উপর। তিনি নভেম্বরের শেষে ইউক্রেন শান্তি সম্মেলনের আয়োজন করবেন। সেখানে রাশিয়াও চাইলে যোগ দিতে পারে।
তিনি বলেছেন, ইউক্রেন শক্তিশালী হতে চায় এবং কঠোর কূটনীতির পথ নিতে চায়। জেলেনস্কির দাবি, এখনই জয়ের পরিকল্পনা নিয়ে এগোলে আগামী বছর যুদ্ধ বন্ধ হতে পারে।