ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচনে ইইউ-বিরোধী, পপুলিস্ট দলগুলির বিপুল সাফল্যের পর তথাকথিত ‘প্রকল্প ইউরোপ’ অনিশ্চয়তার সম্মুখীন৷ এমনকি ইউরোপীয় কমিশনের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হবেন, তা-ও নিশ্চিত নয়৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানিতে ইইউ-বিরোধী সেন্টিমেন্ট মোটামুটি ইউরো-বিরোধী সেন্টিমেন্টে সীমিত, বলা চলে, সেটাই বাঁচোয়া৷ ‘অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি’, অর্থাৎ ‘জার্মানির জন্য বিকল্প’ বা এএফডি দল প্রথম আবির্ভাবেই সাত শতাংশ ভোট পেয়েছে, যেখানে উদারপন্থিদের মতো সুপ্রতিষ্ঠিত দল তিন শতাংশের কাছাকাছি নেমে গেছে৷ উগ্র দক্ষিণপন্থি এনপিডি দল সাকুল্যে ইউরোপীয় সংসদে একটি আসন পাবে বটে, কিন্তু তাদের জোড়োয়া রিপাবলিকানদের সেটা পাবারও সম্ভাবনা নেই৷
নেদারল্যান্ডসে গের্ট উইল্ডার্স-এর ইসলাম বিরোধী, ইইউ-নিন্দুক ডাচ ফ্রিডম পার্টি; ডেনমার্কে অভিবাসন বিরোধী পিপলস পার্টি; হাঙ্গেরিতে চরম দক্ষিণপন্থি, জাতিবাদী বলে নিন্দিত জবিক দল, সকলেই সফল৷ ওদিকে ইইউ-এর দুই প্রধান অংশীদার দেশ ফ্রান্স ও ব্রিটেনে যা ঘটেছে, তাকে ফরাসি প্রধানমন্ত্রী মানুয়েল ভাল্স-এর ভাষায় ‘‘রাজনৈতিক ভূমিকম্প’’ ছাড়া আর কিছু বলা চলে না৷
২০১৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চ্যালেঞ্জ
ইইউ অঞ্চলের বিদ্যমান সংকট নিরসনে নতুন বছরে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হবে৷ ছবিঘরে সেসব বিষয় সম্পর্কে একটু ধারণা নেয়া যাক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নির্মাণাধীন ভবন
ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে৷ গড়ে উঠছে নতুন নতুন ভবন৷ ভবন নির্মাণের সময় প্রচুর শব্দ হয়, ধুলাও হয় প্রচুর৷ আর্থিক দিকটা দেখে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান আর নির্মাণ শ্রমিকরা নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করেন, আশপাশের এলাকাবাসীর সব রকমের ঝামেলাই মেনে নিতে হয়৷
ছবি: DW
ইউরোপীয়দের আছে বিকল্প
চলমান সংকটের সময় ইইউ-র নানা কর্মসূচিকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে কর্মসূচির কার্যকারীতা নিয়েও সন্দেহ পোষণ করা হয়েছে৷ মে মাসে অনুষ্ঠেয় ইউরোপীয় নির্বাচনেও এর প্রভাব দেখা যেতে পারে৷ গত কয়েক বছর ধরে নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি কমছিল৷ কিন্তু এবার ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়াতে বিভিন্ন ধরণের উদ্যোগ নিচ্ছে ইইউ পার্লামেন্ট৷ এমনকি টেলিভিশনে বিতর্কের মাধ্যমেও অংশগ্রহণ বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে৷
ছবি: Getty Images
ইউরোপীয় বিস্ময়?
ইইউ-র সংশয়বাদী অংশগুলো নিজেদের ভোট বাড়ানো জন্য উঠেপড়ে লেগেছে৷ ব্রিটেনের ইউকে ইন্ডিপেনডেন্ট পার্টি, ফ্রান্সের ন্যাশনাল ফ্রন্ট কিংবা জার্মানির অল্টারনেটিভ ফর ডয়েচলান্ড – সবাই চায় ‘স্বল্প ইউরোপ’৷ প্রশ্ন হলো, তারা কি একটি স্থিতিশীল প্যান-ইউরোপিয়ান জোট গড়তে পারবে?
ছবি: picture alliance/ZUMA Press
সংকট ব্যাবস্থাপনা
কয়েক বিলিয়ন বেইলআউট সংকটাপন্ন ইউরোপে কিছুটা স্থিতিশীলতা এনেছে৷ আর্থিক অনুদান এবং সংস্কার কর্মসূচির মাধ্যমে আয়ারল্যান্ড ইইউ-র বিশেষ অর্থায়নের সহায়তা ছাড়াই চলতে পারছে৷ অন্য দেশগুলোতেও কৃচ্ছতা সাধন এবং আর্থিক সংস্কার কর্মসূচিতে কঠোরতা আসার অপেক্ষায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সংকট নিরসনে অলৌকিকের সহায়তা?
সংকট নিরসনের আগে কারণটা জানতে হয়৷ ইইউ অঞ্চলে ব্যাংকিং ব্যবস্থার দুর্বলতা দূর করার চেষ্টা চলছে৷ যেসব ব্যাংকের অস্তিত্ব বিপন্ন, তাদের কখনোই দেশের অর্থনৈতিক সংকট চরমে তোলার মতো পদক্ষেপ নেয়া উচিত নয়, নাগরিকদের উচিত নয় করের টাকায় ব্যাংকগুলোকে বেইলআউটের দিকে এগিয়ে দেয়া৷ প্রস্তাবিত ব্যাংকিং ইউনিয়ন গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেউলিয়া হওয়া থেকে বাঁচাতে ইইউকে আগেই হস্তক্ষেপ করার সুযোগ দেবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চাকুরি প্রত্যাশীদের জন্য সুখবর
ইইউ অঞ্চলের ২ কোটি ৬০ লাখেরও বেশি বেকারের জন্য পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হতে পারে৷ অতীতে সংকটের সময় কর্মহীনদের কাজ দেয়ার ব্যাপারে সহায়তা না করায় কঠোর আর্থিক পরিকল্পনা এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের সমালোচনা হয়েছে৷ এবার ব্রাসেলস থেকে সাহায্যের হাত বাড়ানো হবে, সংকটাপন্ন দেশগুলোর তরুণদের সহায়তা করবে ইইউ-র বিভিন্ন কর্মসূচি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চাই আরো প্রতিযোগিতার মনোভাব
বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে ইইউ অঞ্চলের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করতে হবে৷ এ লক্ষ্যে উন্মুক্ত অভ্যন্তরীণ বাজার এবং তৃতীয় দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্যকে উৎসাহিত করার কথা ভাবছে ইউরোপীয় কমিশন৷ এছাড়া ইইউ-র সংকটগ্রস্ত সদস্য দেশগুলোকে নিজ নিজ সমস্যা সমাধানে অবশ্যই আরো বেশি উদ্যোগী হতে হবে৷
ছবি: Getty Images
তথ্য নিরাপত্তা ২.০
ইইউ অঞ্চলে দু’বছর পর্যন্ত সবার টেলিফোন এবং ইন্টারনেট তথ্যের রেকর্ড রাখা আইনসম্মত৷ তবে এক্ষেত্রে পরিবর্তন আসতে পারে৷ ইউরোপীয় কোর্ট অফ জাস্টিস এ বছরের শুরুতেই তথ্য ধারণ সংক্রান্ত আইনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে৷ বিচারকদের অনেকেই মনে করেন, দীর্ঘমেয়াদে তথ্য ধারণ করে রাখলে মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়৷ তাই তথ্য ধারণ সংক্রান্ত প্রচলিত নিয়মে পরিবর্তন আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
ছবি: CC-BY-Verena Hornung 3.0
অভিবাসন নীতিমালা
ইইউ অঞ্চলে শরণার্থী এবং রাজনৈতিক আশ্রয় বিষয়ক নীতিমালা নিয়ে বিতর্ক চলছে৷ ২০১৩ সালের অক্টোবরে ইউরোপে উন্নত জীবনের আশায় এসে ৩৬০ জন আফ্রিকান অভিবাসী ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরার পর, ইইউ-র অভিবাসন নীতিমালা পড়েছে তোপের মুখে৷ নতুন বছরে ইইউ তাই অভিবাসন প্রত্যাশীদের মূল দেশ এবং ট্র্যানজিট দেশের সঙ্গে সহযোগীতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগী হবে৷ এক্ষেত্রে উল্লেখিত দেশগুলোকে আরো বেশি উন্নয়ন সহায়তা দেয়ার কথাও ভাবছে ইইউ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
9 ছবি1 | 9
ফ্রান্সে মারিন ল্য পেন-এর অভিবাসন এবং ইউরো বিরোধী ন্যাশনাল ফ্রন্ট ২৫ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রথম স্থানে৷ ব্রিটেনে নাইজেল ফারাজ-এর ইউকে ইনডিপেন্ডেন্স পার্টি বা ইউকেআইপি প্রায় ২৮ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রথম হওয়ায় ইইউ-তে ব্রিটেনের দীর্ঘমেয়াদি অবস্থান নিয়েই – সংশয় না হলেও – প্রশ্ন দেখা দিয়েছে৷ আর কিছু না হলে, ইউকেআইপি-র সাফল্যের ফলে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন যদি ইউরোপের প্রতি আরো কড়া অবস্থান নেন, তাহলে স্কটল্যান্ডের প্রো-ইউরোপীয় ভোটাররা সেপ্টেম্বরের গণভোটে ব্রিটেন পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে৷
কিন্তু এবারকার ইউরোপীয় নির্বাচনের ফলে ইউরোপের বৈধতা যে দুর্বলতর হয়েছে, তা-তে কোনো সন্দেহ নেই, বলছেন বিশ্লেষকরা৷ দ্বিতীয়ত, স্থায়িত্বের জন্য ইউরোপের প্রয়োজন ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যে ভারসাম্য৷ অথচ ফ্রান্স অর্থনৈতিক বিচারে ইটালি অথবা গ্রিসের দিকে এগোচ্ছে; আবার রাজনৈতিক বিচারে ইউরোপের সঙ্গে ফ্রান্সের সম্পর্ক ক্রমেই ব্রিটেনের মতো হয়ে যাচ্ছে৷
এই পরিস্থিতিতে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল সোমবার বার্লিনে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, উগ্র দক্ষিণপন্থিদের এই সাফল্য ‘‘লক্ষণীয় এবং দুঃখজনক’’৷ তাঁর মতে, ভোটারদের ফিরিয়ে আনার জন্য ‘‘প্রতিযোগিতার ক্ষমতা, প্রবৃদ্ধি এবং চাকুরি সৃষ্টির উপর মনোযোগ দেওয়াটাই হলো আশাভঙ্গের সেরা উত্তর৷’’ ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট কে হবেন? এই প্রশ্নের কোনো সহজ জবাবও ম্যার্কেলের পক্ষে দেওয়া সম্ভব হয়নি৷ রক্ষণশীল ইউরোপিয়ান পিপলস পার্টি জোটের জঁ-ক্লোদ ইয়ুংকার-এর শেষ নির্বাচনি প্রচারসভায় ম্যার্কেল নিজে উপস্থিত ছিলেন৷ কিন্তু সোমবার তিনি স্পষ্ট করে দেন যে, ইইউ-এর প্রধান কর্মকর্তা নির্ধারণের আগে ব্যাপক আলাপ-আলোচনার প্রয়োজন পড়বে৷
তার কারণটা সহজ: নির্বাচনে ইপিপি পেয়েছে ২১৪টি আসন; অপরদিকে সমাজতন্ত্রীরা পেয়েছে ১৮৯টি আসন; অথচ ৭৫১ জন সদস্যের ইউরোপীয় সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ৩৭৬টি আসনের৷ ওদিকে সমাজতন্ত্রীদের হয়ে জার্মানির এসপিডি দলের সভাপতি সিগমার গাব্রিয়েল পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, তাঁরা এখনও মার্টিন শুলৎস-এর জয়ের আশা ছাড়ছেন না৷