রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পরেই ইইউ একের পর এক নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে। তবু ইউরোপের জিনিস রাশিয়া পৌঁছাচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২। ইউক্রেন আক্রমণ করলো রাশিয়া। তারপর থেকে ইইউ অন্তত দশবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। রাশিয়া থেকে আমদানি ও রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। সমুদ্রপথে রাশিয়া থেকে তেল আসছে না। তেল, গ্যাস ও পেট্রো পদার্থের দামের সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও ২০২২ সালে রাশিয়ার অর্থনীতির উপর যতটা চাপ আসবে বলা হয়েছিল, তা হয়নি।
ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্সের প্রধান অর্থনীতিবিদ রবিন ব্রুকস বলেছেন, ''রাশিয়ার উপর ইইউ যখন নিষেধাজ্ঞা জারি করলো, তখন তেলের উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি। কারণ, তখন ভয় ছিল, এই কাজ করলে বিশ্বজুড়ে তেলের দাম অনেকটাই বেড়ে যাবে। তার চাপ সামলাতে গিয়ে বিপাকে পড়বে দেশগুলি।''
ডিডাব্লিউকে লিখিতভাবে ব্রুকস জানিয়েছেন, ''এর মানে এই নয় যে, নিষেধাজ্ঞা কাজ করেনি। কিন্তু এটাও ঘটনা, তেল বিক্রি করে রাশিয়ার হাতে প্রচুর অর্থ জমা হয়েছে। ''
রাশিয়ার অর্থনীতিতে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব
ইউক্রেনে হামলার কারণে নানামুখী নিষেধাজ্ঞায় পড়েছে রাশিয়া৷ দেশটি বলছে অর্থনীতিতে এর প্রভাব যতটা পড়বে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল ততটা পড়েনি৷ তবে বিশ্লেষকদের মতে, প্রকৃত পরিস্থিতি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে৷
ছবি: Pavel Bednyakov/SNA/IMAGO
নিষেধাজ্ঞার বহর
২২ ফেব্রুয়ারির পর থেকে রাশিয়ার উপর ৮,২২৫টি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বিভিন্ন দেশ৷ আমদানি-রপ্তানি, ঋণ প্রদান, লেনদেন ব্যবস্থা সুইফট থেকে বাদ দেয়াসহ নানা নিষেধাজ্ঞা ঝুলছে দেশটির উপরে৷ বৈশ্বিক নিরাপত্তা ঝুঁকি ও নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কাজ করা কাস্টেলাম-এর হিসাবে সবচেয়ে বেশি দুই হাজার ২৬টি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷ এরপর আছে সুইজারল্যান্ড, ক্যানাডা, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, জাপান৷
ছবি: Torsten Sukrow/SULUPRESS.DE/picture alliance
রুবলের উল্লম্ফন
নিষেধাজ্ঞার পরও রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপে দেশটির মুদ্রা দুর্বল হওয়ার বদলে শক্তিশালী হয়েছে৷ জানুয়ারির পর থেকে মে পর্যন্ত ডলারের বিপরীতে রুবল ৪০ শতাংশ শক্তিশালী হয়েছে৷ জ্বালানি তেলের উচ্চমূল্য, রাশিয়া থেকে আমদানি পণ্যের মূল্য রুবলে পরিশোধের বাধ্যবাধকতা এর পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে৷
ছবি: Jakub Porzycki/NurPhoto/picture alliance
বেড়েছে মূল্যস্ফীতি
জুনের হিসাবে এক বছর আগের তুলনায় রাশিয়ায় মূল্যস্ফীতি বা জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ১৭ শতাংশ৷ তবে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার কারণে যতটা মূল্যস্ফীতি হবে বলে ধারণা করা হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে বছর শেষে তা আরো কম হবে৷ যে কারণে মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস ১৮ থেকে ২৩ শতাংশের বদলে ১৪ থেকে ১৭ শতাংশে নামিয়ে এনেছে তারা৷
ছবি: Alexey Malgavko/REUTERS
খরচ কমিয়েছেন ভোক্তারা
জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে কেনাকাটা কমিয়ে দিচ্ছেন রাশিয়ার মানুষ৷ পণ্যের মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাটের হিসাব থেকে এমন তথ্যই মিলছে৷ গত এপ্রিলে যা ৫৪ শতাংশ কমেছে বলে রাশিয়ার দৈনিক কমারস্যান্টকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে রয়টার্স৷ ফেডারেল স্ট্যাটিস্টিকস সার্ভিসের হিসাবে একই মাসে খুচরা বিক্রি কমেছে ৯.৭ শতাংশ৷ ব্যবসা ও ভোক্তা ব্যয়ে ‘চাহিদা সংকট’ রয়েছে বলে স্বীকার করেছেন অর্থমন্ত্রী ম্যাক্সিম রেশেটনিকভও৷
ছবি: Peter Kovalev/TASS/dpa/picture alliance
প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসে পরিবর্তন
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী রাশিয়ায় এপ্রিলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমেছে তিন শতাংশ৷ মে মাসে দেশটির সরকার থেকে জানানো হয়েছিল চলতি বছর জিডিপি সাত দশমিক আট শতাংশ কমতে পারে৷ তবে অর্থমন্ত্রী ম্যাক্সিম রেশেটনিকভ সম্প্রতি বলেছেন, এই হার পাঁচ থেকে ছয় শতাংশে সীমাবদ্ধ থাকবে৷ অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সের পূর্বাভাস, বিদেশি বিনিয়োগ ও শিল্পোৎপাদন কমায় জিডিপি কমবে ১৫ শতাংশ৷
ছবি: Gavriil Grigorov/dpa/picture alliance
আমদানি কমেছে অনেক
যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞায় বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ও শিল্প উৎপাদন কমায় রাশিয়ার আমদানি ব্যাপকভাবে কমেছে৷ রাশিয়ার বাণিজ্যিক ব্যাংক ওটক্রিতির তথ্য দিয়ে দ্য মস্কো টাইমস জানিয়েছে, এপ্রিলে ৫০০ কোটি থেকে এক হাজার কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে দেশটি৷ যেখানে ফেব্রুয়ারিতে আমদানি হয়েছে দুই হাজার ৭৫০ কোটি ডলারের পণ্য৷ তবে সরকারের পক্ষ থেকে সবশেষ মাসের আমদানি, রপ্তানি বিষয়ক তথ্য প্রকাশ করা হয়নি৷
ছবি: Yuri Smityuk/TASS/dpa/picture alliance
চাঙা জ্বালানি রপ্তানি
দ্য ইকোনোমিস্ট-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, জ্বালানি রপ্তানি থেকে এখনও দৈনিক ১০০ কোটি ডলার আয় করে চলেছে রাশিয়া৷ হেলসিংকিভিত্তিক দ্য সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিয়ার এয়ার-এর তথ্য অনুযায়ী, ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন হামলার পর প্রথম ১০০ দিনে জ্বালানি রপ্তানি থেকে ৯৭ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে মস্কো৷ এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল-এর তথ্য অনুযায়ী, বছরের প্রথম পাঁচ মাসে দেশটির তেল রপ্তানি থেকে আয় ১২ শতাংশ বেড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Y. Aleyev
গাড়ি বিক্রিতে ধাক্কা
অ্যাসোসিয়েশন অব ইউরোপিয়ান বিজনেসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চাহিদা কমে যাওয়া এবং কাঁচামাল সংকটের কারণে মে মাসে গাড়ি বিক্রি রেকর্ড ৮৩ শতাংশ কমেছে৷ রুশ পরিসংখ্যান দপ্তর রসস্ট্যাট-এর তথ্য অনুযায়ী, গাড়ির দাম ৫০ শতাংশ বেড়েছে৷ গাড়ি শিল্পের ক্ষতি কাটাতে প্রণোদনার উদ্যোগ নিতে ১৬ জুন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন ভ্লাদিমির পুটিন৷
ছবি: Stanislav Krasilnikov/TASS/dpa/picture alliance
সার্বিক প্রভাব কতটা?
রুশ অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘প্রথম প্রান্তিকের (অর্থনৈতিক) ফলাফল এবং এপ্রিল-মে মাসের পূর্বাভাস বলছে, যতটা খারাপ আশঙ্কা করা হয়েছিল পরিস্থিতি ততটা খারাপ হবে না৷’’ তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান এলভিরা নাবিউলিনা সেন্ট পিটার্সবার্গের অর্থনৈতিক ফোরামে বলেছেন, বিদেশি চাপে রুশ অর্থনীতি যে চাপে পড়েছে, তা অনির্ধারিত সময় ধরে চলমান থাকার শঙ্কা রয়েছে৷ পরিস্থিতি আগের অবস্থায় আর ফিরবে না বলেও আশঙ্কা তার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Belousov
প্রকৃত পরিস্থিতি
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাশিয়ার প্রকৃত পরিস্থিতি কী সেটি এখনও পরিস্কার নয়৷ দীর্ঘমেয়াদে দেশটির অর্থনীতিতে কী ধরনের প্রভাব পড়তে যাচ্ছে, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে৷ বিশেষ করে রাশিয়া ছাড়ার ঘোষণা দেয়া বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানিগুলো কর্মীদের বেতন দেয়া বন্ধ করলে তা মানুষের আয়ে প্রভাব ফেলবে৷ তবে কর্মসংস্থান, আমদানি, রপ্তানিসহ অর্থনীতির সাম্প্রতিক বিভিন্ন পরিসংখ্যান প্রকাশ বন্ধ রেখেছে দেশটির সরকার৷
ছবি: Pavel Bednyakov/SNA/IMAGO
10 ছবি1 | 10
ব্রাসেলসের থিংক ট্যাংক ব্রুগেলসের মারিয়া ডেমের্টজিস বলেছেন, ''এখন তাই নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি তা কীভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে, তার উপরে জোর দেয়া হচ্ছে।''
ইইউ থকে রাশিয়ায়
ইইউ-র দেশগুলি থেকে রাশিয়ায় জিনিস পাঠানোর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তা সত্ত্বেও ইইউ-র জিনিস রাশিয়ার কাছে পৌঁছে যাচ্ছে।
জার্মান অর্থ মন্ত্রণালয় ফোব্রুয়ারিতে একটি পেপার প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ইইউ থেকে জিনিস তৃতীয় কোনো দেশে যাচ্ছে। সেখান থেকে জিনিসগুলি রাশিয়ায় পৌঁছে যাচ্ছে। জার্মানির অর্থমন্ত্রী এই পেপার প্রকাশ করে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, উচ্চ প্রযুক্তির জিনিস রাশিয়ার সামরিকক্ষেত্রে কাজে লাগতে পারে।
ইইউ-র বর্তমান নিষেধাজ্ঞা অনুসারে, রাশিয়াকে কোনো প্রযুক্তি হস্তান্তর করা যাবে না। সেমি কন্ডাকটর, ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক্যাল জিনিস রাশিয়ায় পঠানো যায় না। ড্রোন, এনক্রিপশন টুলসও সেখানো পাঠানোর উপর নিষেধাজ্ঞা আছে।
রাশিয়ার উপর কে, কত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে
ইউক্রেনে হামলার পর থেকে রাশিয়ার উপর দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে পশ্চিমা দেশগুলো৷ সঙ্গে যোগ দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, জাপান৷ পাল্টা পদক্ষেপ নিচ্ছে রাশিয়াও৷ ছবিঘরে জানুন বিস্তারিত৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Smialowski
শীর্ষে যুক্তরাজ্য
রাশিয়ার উপর কারা কত নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে তার হালনাগাদ পরিসংখ্যান রাখছে বৈশ্বিক নিরাপত্তা ঝুঁকি ও নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট কাস্টেলাম ডট এআই৷ তাদের হিসাবে ইউক্রেনে হামলার পর থেকে ক্রেমলিনের উপর সবচেয়ে বেশি ৮৭৮টি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাজ্য৷ এই তালিকায় রুশ ব্যাংক, ড্রোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে আব্রাহোমোভিচের (ছবি) মতো ধনকুবের কিংবা পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লেভরভের সৎ কন্যাও রয়েছেন৷
ছবি: Mike Egerton/empics/picture alliance
সম্পদ জব্দ করছে সুইজারল্যান্ড
নিষেধাজ্ঞার আওতায় রাশিয়ার ৬১৭ কোটি ডলারের সম্পদ এরই মধ্যে জব্দ করেছে সুইজারল্যান্ড, যা আরো বাড়বে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার৷ ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়ার উপর সুইজারল্যান্ডের নিষেধাজ্ঞার সংখ্যা ৭৭৪টি৷
ছবি: Jean-Christophe Bott/EPA-EFE
আরো বাড়াতে চায় ইইউ
ইউক্রেনে হামলার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো একযোগে রাশিয়ার বিভিন্ন খাত, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে৷ কয়েক দফায় সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে ৭০৫-এ, যা আরো বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা চলছে৷ এছাড়া ফ্রান্সের অর্থ বিভাগ নিজেরাও আলাদাভাবে রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞার তালিকা করেছে, যার সংখ্যা ৬৯৬৷
ছবি: IAN LANGSDON/AFP/Getty Images
টার্গেটে মিডিয়া ব্যাক্তিত্বরাও
ক্যানাডার নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আছেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরাও৷ চলতি মাসের শুরুর দিকে রাশিয়ার গণমাধ্যম নির্বাহীসহ দশ জনের একটি তালিকা ঘোষণা করে দেশটি৷ তাদের মধ্যে রয়েছেন রাশিয়ান টেলিভিশন নিউজ নেটওয়ার্ক আরটির প্রধান সম্পাদক মার্গারিটা সিমোনিয়ানও৷ সব মিলিয়ে ইউক্রেনে রুশ হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৫২৬ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ক্যানাডা৷
ছবি: Muhammed Ibrahim Ali/IMAGESLIVE via ZUMA Press Wire/picture alliance
বিনিয়োগকারীরাও ছাড় পাচ্ছে না
অস্ট্রেলিয়ায় সম্পদ আছে রাশিয়ার এমন ধনকুবেরদের উপর নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে দেশটি৷ গত সপ্তাহে এই তালিকায় যুক্ত হয়েছেন কুইন্সল্যান্ডে অ্যালুমিনা পরিশোধনাগারের বিনিয়োগকারী ওলেগ দেরিপাস্কা (ছবি)৷ ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার উপর ৪৭৯টি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি৷
ছবি: picture.alliance/dpa/Tass/V. Smirnov
অন্যদের চেয়ে কম যুক্তরাষ্ট্র
রাশিয়ার বিরুদ্ধে সবচেয়ে সরব যুক্তরাষ্ট্র৷ তবে মিত্র দেশগুলোর তুলনায় এখনও তাদের নিষেধাজ্ঞার তালিকাটি ছোট৷ কাস্টেলাম এর হিসাবে হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত ক্রেমলিনের উপর ২৯৩ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ওয়াশিংটন৷ তবে ২৪ মার্চ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রাশিয়ার পার্লামেন্ট ডুমা ও এর ৩২৮ সদস্য এবং ৪৮টি প্রতিরক্ষা সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র৷
ছবি: Brendan Smialowski/AFP
তৎপর জাপানও
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে শুরু থেকেই সরব জাপান৷ রাশিয়ার রাজনীতিবিদ, তাদের স্বজনদের উপর নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে দেশটি৷ তার মধ্যে আছেন ডুমার ১১ সদস্য, ব্যাংকার, শিল্পপতিও৷ ২২ ফেব্রুয়ারির পর এখন পর্যন্ত মোট ৮৮টি নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে তারা৷
ছবি: The Yomiuri Shimbun/AP Images/picture alliance
নিষেধাজ্ঞায় শীর্ষে রাশিয়া
রাশিয়া এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হওয়া দেশ৷ মোট সাত হাজার ৩৮৬টি নিষেধাজ্ঞার বোঝা বিশ্বের অন্যতম এই পরাশক্তির কাঁধে৷ এর মধ্যে চার হাজার ৩৬২টি দেয়া হয়েছে ইউক্রেনে হামলা শুরুর পরে৷ এর আগে নিষেধাজ্ঞা পাওয়া দেশের তালিকায় শীর্ষে ছিল ইরান (৩৬১৬৷ এরপর রয়েছে সিরিয়া (২৬০৮), উত্তর কোরিয়া (২০৭৭), ভেনেজুয়েলা (৬৫১), মিয়ানমার (৫১০) ও কিউবা (২০৮)৷
ছবি: Mikhail Klimentyev/AP/picture alliance
নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য
২২ ফেব্রুয়ারির পর থেকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরোপিত চার হাজার ৩৬২টি নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বেশিরভাগই দেয়া হয়েছে ব্যক্তির উপরে৷ তিন হাজার ৯১৫টি নিষেধাজ্ঞাই এ সংক্রান্ত৷ আর বাকি ৪৩৭টি দেয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানের উপরে৷
ছবি: Anton Novoderezhkin/Tass/imago images
রাশিয়ার পাল্টা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী অস্টিনসহ বিভিন্ন কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে ক্রেমলিন৷ অন্যদিকে ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোসহ ৩১৩ জনের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ এছাড়াও মার্চের শুরুতে রাশিয়া ‘অবন্ধুসুলভ’ ৪৮ দেশের তালিকা প্রকাশ করে৷ বুধবার পুটিন ঘোষণা দিয়েছেন দেশগুলোকে রাশিয়ার গ্যাসের মূল্য শোধ করতে হবে রুবলে৷
ছবি: Bai Xueqi/ Xinhua News Agency/picture alliance
10 ছবি1 | 10
তৃতীয় দেশের মাধ্যমে
কোনো সরকারি নথি নেই, তবু সন্দেহ আছে। মারিয়া বলেছেন, যে সব দেশ রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি, তাদের উপরই সন্দেহ গিয়ে পড়ছে। তার মতে, এক্ষেত্রে দুইটি প্রধান দেশ হলো চীন ও তুরস্ক।
ইউরোপীয় ব্যাংক ফর রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভলাপমেন্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ জ্যাভোরসিক এই তালিকায় আরো তিনটি দেশের নাম যোগ করেছেন। কাজাখস্তান, কিরঘিজস্তান ও আর্মেনিয়া। অনলাইন সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ''যদি ইইউ থেকে রাশিয়ায় রপ্তানির বিষয়টি দেখা হয়, তাহলে তা ৬০ শতাংশ কমেছে। কিন্তু একইসঙ্গে কিরঘিজস্তান, কাজাখস্তান, আর্মেনিয়ায় রপ্তানি অনেকটা বেড়েছে। এই দেশগুলি বেলারুশ ও রাশিয়ার সঙ্গে একসঙ্গে ইউরেশিয়ান কাস্টমস ইউনিনে আছে। তাই একবার এই সব দেশে কোনো জিনিস পৌঁছে গেলে, তার উপর আর নজর রাখা সম্ভব নয়। যে জিনিসগুলি সরাসরি রাশিয়া যেত, তা এখন এই সব দেশের মাধ্যমে যাচ্ছে।''
ইইউ-র সদস্য দেশগুলি এবং ইউ কমিশন এখন এই বিষয়গুলি দেখছে। জার্মানির অর্থ মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, তারা ইইউ কমিশনের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে। জার্মানি তার বাণিজ্যিক সহযোগী দেশগুলির উপর কড়া নজর রাখছে। দেখা হচ্ছে, এখান থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো জিনিস রাশিয়ায় যাচ্ছে কি না।
এছাড়াও কড়া ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। যেমন তুরস্কের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যাওয়ার অভিযোগ ছিল। তারাও এখন সম্ভবত তা বন্ধ করেছে। ইইউ ও অ্যামেরিকা যৌথ বিবৃতি জারি করে বলেছে, নিষেধাজ্ঞা আরো কড়াভাবে রূপায়ণ করা হবে।
ইইউ-র তরফে প্রতিনিধি পাঠানো হয়েছে তুরস্ক ও আমিরাতে। তাদের সঙ্গে অ্যামেরিকা ও যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। ফলে চাপ বাড়ানো হচ্ছে।