যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৬ সাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ'র রাষ্ট্রদূত একটি সদস্য রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের মতো মর্যাদা পেতেন৷ কিন্তু এখন আর সেটি পাচ্ছেন না৷ এই পরিবর্তনের খবরও ইইউকে জানানো হয়নি৷
বিজ্ঞাপন
ইইউর এক কর্মকর্তা ডয়চে ভেলেকে এ সব তথ্য নিশ্চিত করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ঠিক কখন তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আমরা জানি না, কারণ, তাঁরা আমাদের জানাতে ভুলে গেছেন৷'' ইইউ মিশনের মর্যাদা কমিয়ে এখন আন্তর্জাতিক সংগঠন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷
ওয়াশিংটনে নিযুক্ত ইইউর এক সদস্য দেশের একজন কূটনীতিকও ইইউ মিশনের মর্যাদা কমানোর বিষয়টি ডয়চে ভেলেকে নিশ্চিত করেছেন৷ বিষয়টি নিয়ে ইইউ কূটনীতিকরা মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছেন বলেও জানান তিনি৷ ‘‘তাঁরা আমাদের বলেছেন যে, তাঁরা আমাদের জানাতে ভুলে গেছেন৷ এবং তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কারণ চিফ অফ প্রটোকল মনে করেন, এটাই ঠিক সিদ্ধান্ত,'' বলেন ঐ কূটনীতিক৷
গত বছরের শেষ দিকে কয়েকটি অনুষ্ঠানে ওয়াশিংটনে ইইউর রাষ্ট্রদূত ডেভিড ও'সুলিভানকে আমন্ত্রণ না জানানোয় বিষয়টি প্রথম ইইউর নজরে আসে৷ এরপর ৫ ডিসেম্বর সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ.ডাব্লিউ বুশের শেষকৃত্যানুষ্ঠানের আয়োজকরা ইইউর মর্যাদা কমানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন৷
নিয়ম অনুযায়ী, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টকে সম্মান জানাতে ওয়াশিংটনে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতদের প্রথমে ডাকা হয়৷ এভাবে ক্রমান্বয়ে সবচেয়ে নতুন রাষ্ট্রদূত পর্যন্ত যাওয়া হয়৷ সে হিসেবে, প্রায় দেড়শ' রাষ্ট্রদূতের মধ্যে ইইউ রাষ্ট্রদূতকে ২০ কিংবা ৩০-এর মধ্যে ডাকার কথা৷ কিন্তু তাঁকে ডাকা হয় একেবারে শেষে৷
ইইউ-অ্যামেরিকা বাণিজ্য
সম্প্রতি অ্যামেরিকার সঙ্গে ক্যানাডায় শীর্ষ সম্মেলনে জি-সেভেন নেতৃত্বের বাণিজ্য ভারসাম্য নিয়ে বেশ একচোট লড়াই হয়ে গেল৷ ছবিঘরে দেখে আসা যাক কেমন আসলে অ্যামেরিকা ও ইইউ-এর বাণিজ্য৷
ছবি: Imago/Hoch Zwei Stock/Angerer
এক ট্রিলিয়নেরও বেশি বাণিজ্য
অ্যামেরিকার সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক অঞ্চলগুলোর তালিকায় রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ অ্যামেরিকার মোট রপ্তানির ৫ ভাগের একভাগ হয় ইইউতে৷ আবার ইইউ থেকেও মোট রপ্তানির ৫ ভাগের একভাগ হয় অ্যামেরিকায়৷ ২০১৭ সালে অ্যামেরিকা ও ইইউ-এর বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৬৯ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার৷ এর মধ্যে ইইউ আমদানি করেছিল ২৫৬ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বা সেবা৷ এর বিপরীতে অ্যামেরিকার আমদানি ছিল ৩৭৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ইউরো৷
ছবি: Imago/Hoch Zwei Stock/Angerer
ইইউ-এর বাণিজ্য উদ্বৃত্ত
অ্যামেরিকা ও ইইউভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে মূলত মেশিনারি, গাড়ি, কেমিক্যাল যন্ত্রপাতি এবং অন্যান্য শিল্পজাত পণ্য বাণিজ্য হয়৷ ২০১৭ সালে দুই দেশের বাণিজ্যের মোট ৮৯ শতাংশই এসব পণ্যের লেনদেনের মধ্য দিয়ে হয়েছে৷ খাদ্য এবং পানীয়সহ তিনটি রপ্তানি খাতে ইইউ-এর অ্যামেরিকার সাথে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে৷ তবে অ্যামেরিকা জ্বালানি এবং কাঁচামাল রপ্তানিতে ইইউ-এর তুলনায় এগিয়ে রয়েছে৷
ছবি: Reuters
রপ্তানির শীর্ষে গাড়ি ও যন্ত্রপাতি
অ্যামেরিকাতে ১৬৭ বিলিয়ন ইউরোর যন্ত্রপাতি ও মেশিনারি বিক্রি করে, যা এ অঞ্চলের মোট রপ্তানির ৪৪ দশমিক ৪০ শতাংশ৷ বিপরীতে ১১১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের যন্ত্রপাতি ও পরিবহন যোগাযোগ যন্ত্রপাতি ইইউতে রপ্তানি করে অ্যামেরিকা, যা দেশটি থেকে ইইউতে রপ্তানির ক্ষেত্রে শীর্ষ স্থান দখল করে আছে৷ আর ইইউ-এর মোট আমদানি ব্যয়ের এটি সাড়ে ৪৩ শতাংশ৷
ছবি: picture-alliance/U. Baumgarten
ক্ষুদ্র একটি অংশ!
এ বছরের মে মাসে অ্যামেরিকার বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে ট্রাম্প প্রশাসন ইইউ থেকে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ বাড়তি করারোপ করেছে৷ অথচ ইউরোপ থেকে অ্যামেরিকায় ২০১৭ সালে মাত্র ৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ইউরোর ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানি করেছিল৷
ছবি: Reuters/Y. Herman
প্রতিশোধমূলক করারোপ
ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বিপরীতে ইউরোপীয় ইউনিয়নও কর বাড়ানোর জন্য অ্যামেরিকা থেকে আমদানি করা হয় এমন কিছু পণ্যের তালিকা করেছে৷ এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে চিনাবাদাম থেকে তৈরি মাখন, বোরবন হুইস্কি, হার্লে ডেভিডসন মোটরসাইকেল, জিন্স এবং কমলার রস৷ এসব আমদানি পণ্যের মোট মূল্য ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ইউরো বলে জানিয়েছেন ইইউ কর্মকর্তারা৷
ছবি: Shaun Dunphy / CC BY-SA 2.0
সেবা আমদানি-রপ্তানি
ইইউ ২১৯ দশমিক ৩ বিলিয়ন ইউরোর সেবা আমদানি এবং ২১৮ বিলিয়ন ইউরোর পণ্য রপ্তানি করে৷ এসব সেবার আওতায় রয়েছে দক্ষ ব্যবস্থাপনা সেবা, ইন্টেকলেকচুয়েল প্রোপার্টি, পর্যটন এবং শিক্ষা৷ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আন্তঃলেনদেনের মাধ্যমে অ্যামেরিকা-ইইউ-এর মোট বাণিজ্যের এক তৃতীয়াংশ হয়ে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
6 ছবি1 | 6
ইইউর কূটনীতিক জানান, মর্যাদা কমানোর বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি প্রতিক্রিয়া জানানোর প্রস্তুতি চলছে৷ তিনি বলেন, নতুন সরকার আসার পর প্রটোকলের বিষয়টি পুনরায় বিবেচনা করে দেখা নতুন নয়৷ কিন্তু এক্ষেত্রে সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়েছে প্রায় দুই বছর পর৷ এছাড়া মর্যাদা কমানোর সিদ্ধান্তটি সংশ্লিষ্ট মিশনকে লিখিতভাবে না জানানোর ঘটনাও বিরল, বলে জানান ইইউর ঐ কূটনীতিক৷
বিষয়টি নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা এই বিষয়ে উত্তর দেননি৷ এক্ষেত্রে সরকারে ‘শাটডাউন' চলার কারণে সীমিত কাজকর্মের যুক্তি দিয়েছেন তাঁরা৷