ইইউ-লেবানন চুক্তি সিরীয় শরণার্থীদের জন্য খারাপ খবর?
৮ মে ২০২৪
২০২৭ সাল পর্যন্ত লেবাননকে এক বিলিয়ন ইউরো সহায়তা দেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ এর মধ্যে ৭৩৬ মিলিয়ন ইউরো শরণার্থীদের দেখাশোনার জন্য৷ বাকিটা সীমান্ত ও অভিবাসী নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য৷
বিজ্ঞাপন
এর মধ্যে ৭৩৬ মিলিয়ন ইউরো শরণার্থীদের দেখাশোনার জন্য৷ বাকিটা সীমান্ত ও অভিবাসী নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য৷
গত বৃহস্পতিবার (২ মে) বৈরুতে এ সংক্রান্ত চু্ক্তি সই হয়েছে৷
তবে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে এবং অবৈধ উপায়ে ইইউতে প্রবেশের চেষ্টা বাড়তে পারে৷
৫২ লাখ জনসংখ্যার দেশ লেবাননে প্রায় ১৫ লাখ সিরীয় শরণার্থী বাস করছেন৷ তাদের বেশিরভাগই সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরুর পর লেবাননে আশ্রয় নিয়েছেন৷
সিরীয় শরণার্থীদের সঙ্গে লেবাননের নাগরিকদের প্রায় সংঘর্ষ হয়৷ লেবাননের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটের কারণে উত্তেজনা আরও বেড়েছে৷
মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, লেবাননের নিরাপত্তা বাহিনী সিরীয়দের রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে সীমান্ত পার করিয়ে সিরিয়ায় পাঠিয়ে দিচ্ছে৷ সিরিয়ায় তারা গ্রেপ্তার, নির্যাতন বা হত্যার শিকার হচ্ছেন৷ অনেককে জোর করে সেনাবাহিনীতে ভর্তি করানো হচ্ছে৷
এ কারণে অনেক সিরীয় নাগরিক লেবানন ছাড়ার চেষ্টা করছেন৷ তাদের অনেকে সাইপ্রাস যাওয়ার চেষ্টা করছেন৷ এ বছরের প্রথম তিন মাসে সাগর পাড়ি দিয়ে প্রায় দুই হাজার মানুষ সাইপ্রাসে প্রবেশ করেছেন৷ গতবছর একই সময়ে সংখ্যাটি ছিল মাত্র ৭৮৷
লেবাননের কিছু মানুষ মনে করছেন, সিরীয় শরণার্থীদের লেবাননে রাখার জন্য অর্থ দিচ্ছে ইইউ৷ এর মধ্যে কিছু সত্যতা থাকতে পারে বলে মনে করেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ইইউ পরিচালক ফিলিপ ড্যাম৷ তুরস্ক ও টিউনিশিয়ার সঙ্গে সই হওয়া এমন চুক্তির কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি৷
জার্মানির অভিবাসন নীতিতে যেসব পরিবর্তন আসছে
আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য জার্মানি আরো অনাকর্ষণীয় হতে যাচ্ছে ২০২৪ সালে৷ তবে সহজ হবে দক্ষ কর্মীদের অভিবাসন৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Uwe Zucchi/dpa/picture alliance
আবেদন প্রত্যাখ্যাতদের ‘ডিপোর্টেশন’
জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস আগেই জানিয়েছেন, নতুন বছরটি আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যাতদের জন্য কঠিন হতে যাচ্ছে৷ ডেয়ার স্পিগেল ম্যাগাজিনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ডিসেম্বরে শলৎস বলেছেন, তিনি আবেদন প্রত্যাখ্যাতদের ‘বড় আকারে ডিপোর্টেশন’ বা প্রত্যাবাসনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন৷
ছবি: Michael Kappeler/dpa/picture alliance
প্রত্যাবাসন আইনের পরিবর্তন
সরকারি হিসাবে ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে জার্মানি সাত হাজার ৮৬১ জনকে ডিপোর্ট করেছে৷ ‘প্রত্যাবাসন উন্নয়ন আইন’ নামের একটি বিল পাস হলে সংখ্যাটি আরো বাড়তে পারে৷ এই আইনে আগে থেকে ডিপোর্টেশনের ঘোষণা দেয়ার ইতি টানা হবে, বাড়ানো হবে বন্দি রাখার সময়সীমা৷ সেই সঙ্গে যাদের ফেরত পাঠানো হবে তাদের তল্লাশি ও ফোনের মতো ব্যক্তিগত সম্পত্তি জব্দের বাড়তি ক্ষমতা পাবে পুলিশ৷ অপরাধীদের ক্ষেত্রে ডিপোর্ট আরো দ্রুত হবে৷
ছবি: Julian Stratenschulte/dpa/picture alliance
‘নিরাপদ দেশ’-এর সংখ্যা বাড়বে
যেসব দেশে তেমন নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই তাদেরকে ‘নিরাপদ দেশ’ এর তালিকায় রাখে সরকার৷ এসব দেশের নাগরিকেরা আশ্রয়ের জন্য কম বিবেচিত হন এবং দুই দেশের চুক্তি অনুযায়ী তাদেরকে দ্রুত ফেরত পাঠানো যায়৷ এমন দেশের সংখ্যা বাড়াতে চায় জার্মানি৷ সবশেষ নভেম্বরে এই তালিকায় ঢুকেছে জর্জিয়া ও মলডোভা৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে তুরস্কের একটি চুক্তি পুনর্নবায়ন হলে দেশটির আশ্রয়প্রার্থীদেরও দ্রুত ফেরত পাঠানো যাবে৷
ছবি: Alexander Pohl/NurPhoto/picture alliance
আশ্রয় প্রক্রিয়ায় গতি
আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়ায় গতি আনতে চায় জার্মানি৷ বর্তমানে একটি আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হতে দুই বছরের বেশি পর্যন্ত সময় লাগে৷ প্রস্তাবিত আইনে তা তিন মাস থেকে ছয় মাসে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে৷ আশ্রয় আবেদনকারীদের ভাতাসহ বিভিন্ন সরকারি সুবিধাগুলোও কমানোর কথা বলা হয়েছে৷ বর্তমানে ১৮ মাস পরে ‘কল্যাণভাতা’ পাওয়া যায়, যা তিন বছর পর মিলবে৷ রাষ্ট্রীয় আবাসনে যারা থাকবেন তাদের খাবার খরচ কেটে নেয়া হবে৷
ছবি: DW
‘ক্যাশ’-এর বদলে কার্ড
ব্যাংকের মাধ্যমে ক্যাশ বা অর্থ প্রদানের বদলে কার্ড ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা করছে জার্মানির বিভিন্ন রাজ্য, যাতে তারা পরিবারকে বা অন্য কাউকে অর্থ পাঠাতে না পারে৷ হ্যানোফার গত ডিসেম্বরে ‘সোশ্যাল কার্ড’ ব্যবস্থা চালু করেছে৷ পূর্বের রাজ্য ঠুরিঙ্গিয়াও আশ্রয় আবেদনকারীদের জন্য কার্ড ইস্যু করেছে৷ ২০২৪ সালে এই ব্যবস্থা চালু করবে হামবুর্গ ও বাভারিয়াও৷
ছবি: Julian Stratenschulte/dpa/picture alliance
সুখবর দক্ষ কর্মীদের জন্য
আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠলেও দক্ষ কর্মীদের আকর্ষণে সম্প্রতি আইনে বেশ কিছু সংস্কার আনা হয়েছে৷ ভাষাগত দক্ষতা, পেশাগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পয়েন্ট ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে অভিবাসীরা চাকরি খোঁজার জন্য এক বছরের ভিসা পাবেন৷ স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাসহ যেসব খাতে কর্মী সংকট আছে সেসব ক্ষেত্রে ইউ ব্লু কার্ডের আওতা বাড়ানো হবে৷
ছবি: Daniel Karmann/dpa/picture alliance
সুখবর দক্ষ কর্মীদের জন্য
আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠলেও দক্ষ কর্মীদের আকর্ষণে সম্প্রতি আইনে বেশ কিছু সংস্কার আনা হয়েছে৷ ভাষাগত দক্ষতা, পেশাগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পয়েন্ট ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে অভিবাসীরা চাকরি খোঁজার জন্য এক বছরের ভিসা পাবেন৷ স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাসহ যেসব খাতে কর্মী সংকট আছে সেসব ক্ষেত্রে ইউ ব্লু কার্ডের আওতা বাড়ানো হবে৷
ছবি: Jens Krick/Flashpic/piture alliance
পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অভিবাসন
মার্চ থেকে বিদেশিরা দক্ষতার ভিত্তিতে সরাসরি জার্মানিতে এসে চাকরিতে যোগ দিতে পারবেন৷ আবেদনকারীদের পরিবারের সদস্য আনার প্রক্রিয়াও সহজ হবে৷ ব্যয় বহনের সামর্থের প্রমাণ দিতে পারলে কর্মীরা তাদের উপর নির্ভরশীলদের নিয়ে তিন বছরের বসবাসের অনুমতি পাবেন৷ কিছু দেশের জন্য বিশেষ অভিবাসন কোটার সংখ্যা বাড়ানো হবে৷ যেমন জুনে বলকান দেশগুলোর জন্য এই সংখ্যা দ্বিগুন বৃদ্ধি করে ৫০ হাজারে উন্নীত করা হচ্ছে৷
ছবি: Armando Babani/Xinhua/picture alliance
8 ছবি1 | 8
লেবানন ও ইইউর মধ্যে চুক্তি সইয়ের সময় উপস্থিত ছিলেন ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন৷ সেই সময় তার দেওয়া কিছু বক্তব্য সমস্যাজনক বলে মনে করছেন ড্যাম৷ ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, ‘‘অভিবাসন ও সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় লেবাননের নিরাপত্তা বাহিনীকে সমর্থন দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি (লাইয়েন), যেটা সমস্যাজনক৷ কারণ, তারাই সিরীয়দের বিতাড়নের সঙ্গে জড়িত৷''
স্বেচ্ছায় সিরিয়ায় ফেরা এবং সিরিয়ায় ফিরে যাওয়ার পর সিরীয়দের সহায়তা নিয়েও কথা বলেছেন লাইয়েন৷ এটি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ড্যাম৷ কারণ, তার সংস্থাসহ অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থার আশঙ্কা, এর মাধ্যমে সিরিয়ার কিছু অংশে ফেরা নিরাপদ বলে স্বীকৃতি দেওয়া হতে পারে৷ অথচ মার্চে এক যৌথ বিবৃতিতে জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স বলেছে, ‘‘সিরিয়ায় এখনও যুদ্ধ শেষ হয়নি৷ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় সিরিয়ায় শরণার্থীদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের শর্তগুলি এখনও পূরণ হয়নি৷''
থিংক ট্যাংক ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্সের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার কেলি পেটিলো বলেন, ইইউ ও লেবাননের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে তার উদ্দেশ্য কখনও সিরীয় শরণার্থীদের সহায়তা ছিল না৷ ‘‘সাইপ্রাস ও ইইউর বাকি অংশে অভিবাসন ঠেকানোই এই চুক্তির প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য৷''
তিনি বলেন, লেবাননের সেনাবাহিনীকে অর্থ সহায়তা দেওয়ার কারণে সিরীয় শরণার্থীদের নিরাপত্তাহীনতা আরও বাড়বে৷ সে কারণে তারা বিতাড়িত হওয়ার চেয়ে নিজেরাই লেবানন ছাড়তে চাইবে বলে মনে করছেন পেটিলো৷ তাই লাইয়েন দৃশ্যত যা অর্জন করতে চান, আদতে তার বিপরীত ঘটনা ঘটবে এবং সিরীয়রা ইউরোপে যাওয়ার জন্য আরও বেশি চাপ অনুভব করবে বলে মনে করছেন তিনি৷