জাতিসংঘের যে মানবাধিকার সংস্থাটি গাজায় কাজ করছে, তাদের বিরুদ্ধে ৭ অক্টোবরের হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ জানিয়েছে ইসরায়েল।
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস জানিয়েছেন, ইউএনআরডাব্লিউএ-কে এতদিন ধরে যারা অর্থ সাহায্য করছিল তাদের সঙ্গে নিউ ইয়র্কে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করবেন তিনি। তাদের বোঝানো হবে যে, ওই সংস্থাটি ছাড়া গাজায় কাজ করার মতো আর কোনো বিকল্প সংস্থা নেই। বস্তুত, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
গত রোববার ইসরায়েল অভিযোগ করেছিল, ইউএন এজেন্সি ফর ফিলিস্তিন রিফিউজিসের (ইউএনআরডাব্লিউএ) একাধিক সদস্য হামাসকে সহযোগিতা করছে। তারা ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার সঙ্গেও জড়িত। ইসরায়েলের এই অভিযোগ রীতিমতো আলোড়ন ফেলে দেয়। এরপরেই জাতিসংঘ জানায় তারা ১২ জন কর্মীকে বরখাস্ত করেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। এরপরেই জাতিসঙ্ঘের তরফে জানানো হয়, এই সংস্থাটি ছাড়া গাজায় কাজ করা অসম্ভব। কারণ এই সংস্থাটির মতো গাজার মানুষকে আর কেউ চেনে না। কোথায় কখন কীভাবে সাহায্য পাঠাতে হবে, এই সংস্থাটি তা সবচেয়ে ভালো জানে।
দক্ষিণ গাজায় উদ্বাস্তু শিবিরে ইসরায়েলের আক্রমণ
খান ইউনিসের ইউএনআরডাব্লিউএ-এর একটি শিবিরে ইসরায়েল আক্রমণ চালিয়েছে। অন্তত ১২ জন নিহত। মৃতের সংখ্যা বাড়ছে।
ছবি: Ohad Zwigenberg/AP/picture alliance
খান ইউনিসের আশ্রয়শিবির
দক্ষিণ গাজার সবচেয়ে বড় শহর খান ইউনিস। ইসরায়েল গাজা স্ট্রিপে অভিযান চালানোর পর থেকে বহু মানুষ ঘর-বাড়ি ছেড়ে দক্ষিণ গাজার এই শহরে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। এখানেই ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্ক এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইনের (ইউএনআরডাব্লিউএ) সবচেয়ে বড় আশ্রয়শিবিরটি আছে।
ছবি: Ramez Habboub/AP Photo/picture alliance
ইসরায়েলের হামলা
এই আশ্রয় শিবিরে প্রায় ৪৩ হাজার উদ্বাস্তু বসবাস করছেন। শুধু তা-ই নয়, আশ্রয়শিবিরের বাইরে আরো অন্তত ৩০ হাজার মানুষ খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। অভিযোগ, বৃহস্পতিবার এই আশ্রয় শিবির লক্ষ্য করে ইসরায়েল হামলা চালিয়েছে।
ছবি: Adel Hana/AP Photo/picture alliance
মৃতের সংখ্যা বাড়ছে
ইউএনআরডাব্লিউএ জানিয়েছে, এখনো পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। বহু মানুষকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে।
ছবি: Ohad Zwigenberg/AP/picture alliance
ইসরায়েলের মাইকিং
ওই আশ্রয় শিবিরটি কার্যত ঘিরে রেখেছে ইসরায়েলের সেনা। মাইকিং করে তারা বলছে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সকলকে ওই আশ্রয় শিবির ছেড়ে চলে যেতে হবে।
ছবি: Ohad Zwigenberg/AP/picture alliance
জাতিসংঘের প্রশ্ন
জাতিসংঘের বক্তব্য, হাজার হাজার মানুষের পক্ষে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আশ্রয়শিবির ছেড়ে চলে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। আশ্রয়শিবিরের বাইরে লড়াই চলছে। ফলে এই সময় শিবির ছেড়ে বাইরে যাওয়া মোটেই নিরাপদ নয়। তাছাড়া ৭০ হাজার মানুষের পক্ষে নতুন জায়গা খুঁজে বার করাও প্রায় অসম্ভব।
ছবি: Ohad Zwigenberg/AP/picture alliance
ইসরায়েল ও হামাসকে জানানো হয়েছিল
জাতিসংঘের সংস্থাটি জানিয়েছে, তারা আশ্রয় শিবিরের সমস্ত তথ্য ইসরায়েল এবং হামাসকে দিয়ে রেখেছিল, যাতে সেখানে কোনোভাবেই লড়াই না হয়। তারপরেও ওই শিবিরে আক্রমণ চালানো হলো।
ছবি: Ohad Zwigenberg/AP/picture alliance
আন্তর্জাতিক আদালতে গাজা মামলা
আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ করেছিল সাউথ আফ্রিকা। আন্তর্জাতিক আদালত সেই মামলার প্রাথমিক রায় শুক্রবার দিতে পারে। জাতিসংঘ অবশ্য আন্তর্জাতিক আদালতকে মামলাটি গ্রহণ না করার আর্জি জানিয়েছিল। কিন্তু আদালত মামলাটি শুনেছে।
ছবি: Nicolas Economou/NurPhoto/picture alliance
অভিযান বন্ধের আবেদন
সাউথ আফ্রিকা নয়টি পয়েন্ট আদালতের সামনে রেখেছে। গাজায় বেসামরিক মানুষের নিরাপত্তা, তাদের জন্য আরো ত্রাণের ব্যবস্থা এবং যত দ্রুত সম্ভব ইসরায়েলের অভিযান বন্ধের আবেদন ওই পয়েন্টগুলির মধ্যে আছে। শুক্রবার আদালত ওই বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
ছবি: THILO SCHMUELGEN/REUTERS
চার হুতি নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য চার হুতি নেতার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ওই নেতাদের নির্দেশেই লোহিত সাগরে হুতি বিদ্রোহীরা একের পর এক আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ।
ছবি: Mohammed Hamoud/Anadolu/picture alliance
9 ছবি1 | 9
এদিকে ইসরায়েলের অভিযোগের পর জার্মানি, অ্যামেরিকা, জাপানের মতো একাধিক দেশের ডোনার বা সাহায্যকারী এই সংস্থাটিকে অর্থ পাঠানো বন্ধ করে দেয়। ৭ অক্টোবরের হামলার সঙ্গে জড়িতদের সাহায্য করা হবে না, এমন একটি মনোভাব তৈরি হচ্ছিল তাদের মধ্যে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গুতেরেস জানিয়েছেন, ব্যক্তিগতভাবে তিনি সকলের সঙ্গে কথা বলবেন।
বস্তুত, মঙ্গলবারও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে গাজার পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। যেভাবে সেখানে মানুষ বসবাস করছেন, যে পরিমাণ মানুষ গৃহহীন অবস্থায় বিভিন্ন ক্যাম্পে থাকছেন, তা এক কথায় অবর্ণনীয়। জাতিসংঘ আবার জানিয়েছে, যে পরিমাণ ত্রাণ গাজায় পৌঁছাচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি সাহায্য পাঠানো প্রয়োজন।
সুড়ঙ্গে জল
এদিকে ইসরায়েলের সেনা জানিয়েছে, গাজার বেশ কিছু এলাকায় সুড়ঙ্গে জল ভরে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, গাজার একাধিক এলাকায় মাটির তলায় সুড়ঙ্গের নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিল হামাস যোদ্ধারা। সেখানে তারা অস্ত্র ভাণ্ডার তৈরি করেছিল। শুধু তা-ই নয়, বাংকার বানিয়ে সেখানেই তারা থাকতো। এই সুড়ঙ্গগুলিতে ঢোকার রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল বিভিন্ন জনবহুল অঞ্চলে। যেমন বাজারের মধ্য দিয়ে, হাসপাতালের ভিতর দিয়ে। ইসরায়েলের সেনা জানিয়েছে, এমন বেশ কয়েকটি সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্কে তারা পাম্প করে জল ঢুকিয়ে দিয়েছে, যাতে হামাস সুড়ঙ্গগুলি আবার ব্যবহার করতে না পারে।