ইউএসএআইডির সহায়তা বন্ধে নতুন সম্ভাবনার সুযোগ: ইমতিয়াজ আহমেদ
৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ডিডাব্লিউর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এমন আশা ব্যক্ত করেন তিনি৷
ডয়চে ভেলে: দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে সহায়তা দিচ্ছে ইউএসএআইডি৷ কিন্তু এই প্রথম হঠাৎ স্থগিত করা হলো৷ কেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো?
অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ: হঠাৎ করে মনে হবে, কিন্তু ট্রাম্পের নির্বাচনের শুরু থেকেই এটা সে বারবার বলেছে এটা পর্যালোচনা করবে৷ তিনি প্রথমবার যখন ক্ষমতায় এসেছিলেন ওই পথেই যাত্রা শুরু করেছিলেন৷ যদিও তিনি কাজটা করতে পারেননি৷ তখনও ইউএসএআইডি একটা পর্যায়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল৷ এটা শেষের দিকের ঘটনা৷ এরপর বাইডেন এসে আবার চালু করেন৷ সবসময় ট্রাম্পের ইউএসএআইডির ব্যাপারে আপত্তি ছিল, এর বড় কারণ এই প্রতিষ্ঠান অ্যামেরিকার স্বার্থ রক্ষা করে না৷ এদের কারণে অ্যামেরিকার সমালোচনা বাড়তে থাকে৷ এই দায়িত্ব যারা পালন করেন তারা অন্য দেশের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন, ট্রাম্পের ভাষায় যেগুলো অ্যামেরিকার স্বার্থ রক্ষা হয় না৷ এটাকে তিনি অপচয় মনে করেন৷ এটা যে হঠাৎ করেই করেছে সেটা বলা ঠিক হবে না৷
সহায়তা বন্ধে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কোন ধরনের দেশ?
দেখতে হবে কোন বিষয়ের উপর তার যে চিন্তা ভাবনা, সেই বিষয়গুলো যদি আমরা বের করতে পারি তাহলে দেশগুলো বের করা যাবে৷ তার কথায় যেগুলো এসেছে, তার মধ্যে বড় আকারে ক্লাইমেট চেঞ্জের ব্যাপারে তার বড় একটা আপত্তি আছে৷ তিনি মনে করেন, ক্লাইমেট তার গতিতেই চলছে৷ ক্লাইমেট চেঞ্জের সঙ্গে জড়িত যেসব ফান্ড আছে, যেসব এনজিও কাজ করে সেখানে একটা বাধা আসবে৷ একইভাবে জেন্ডারের ব্যাপারে যেসব দেশ বা এনজিওরা কাজ করছিল বা সহায়তা পাচ্ছিল সেগুলো আমার মনে হয় না চালু হবে৷ আমার মনে হয়, এগুলো বড় আকারেই বাধা পড়বে৷
ট্রাম্প যেটা বলছেন, এই সংস্থাকে টাকা দেওয়া অর্থের অপচয়৷ আসলে কি তাই?
আমরা একটা বিষয় ভুলে যাচ্ছি, ৫০ এর দশকের আমেরিকা আর এখনকার অমেরিকা এক না৷ আমরা তার দায়িত্ব নেওয়ার সময় যে ভাষণ সেটা যদি খেয়াল করি, তাহলে দেখব তিনি বলেছেন, আজ থেকে অ্যামেরিকার ডিক্লাইন বন্ধ হলো৷ অন্যভাবে অ্যামেরিকার যে ডিক্লাইন হচ্ছে, এই প্রথম কোনো প্রেসিডেন্ট স্বীকার করলেন৷ এতদিন কিন্তু অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্টরা স্বীকার করছিল না৷ কোনো সন্দেহ নেই তারা পাওয়ারফুল, কিন্তু ডিক্লাইন যে হচ্ছিল সেটা ট্রাম্প তার ভাষণে বলেছেন৷ তার যে ক্যাম্পেইন ‘মেক আমেরিকা, গ্রেট এগেইন' এই শব্দের মধ্যে কিন্তু স্পষ্ট৷ তিনি বলছেন, গ্রেট এগেইন, তার মনে হচ্ছে এখন গ্রেট না৷ এই যে এখন গ্রেট না সেটা তিনি ঠিক করতে চাচ্ছেন৷ যুদ্ধের খরচকে তিনি অপচয় বলছেন৷ তিনি এও বলেছেন, তিনি, পুটিন আর শি জিন পিং মিলে পরমাণু অস্ত্রের বিস্তার ঠেকাতে কাজ করবেন৷ এটাকে তিনি অপচয় মনে করেন৷ মূলত তার ফোকাস হলো আমেরিকার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা৷
এগুলো বন্ধ হওয়ায় দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলো এখন কী করতে পারে?
একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে, বছরের পর বছর একটা দেশ এভাবে সাহায্য দেবে এবং সেই হিসেবে কর্মকাণ্ড হবে এটাতো ঠিক না৷ পয়সাটাতো অ্যামেরিকান টাক্স দাতাদের৷ সেখানকার প্রেসিডেন্ট যদি মনে করেন, পয়সাটাকে তিনি এভাবে খরচ না করে অন্যভাবে করবেন সেই অথরিটি তার তো আছে৷ বরং আমি মনে করি, যারা বছরের পর পর পেয়ে আসছে তাদের মধ্যে এক ধরনের শৈথিল্য চলে এসেছিল, যে অ্যামেরিকা তো দিবেই৷ সেই জায়গায় একটা বড় পরিবর্তন আসবে৷ আমি মনে করি, ছয় মাস আগে থেকেই সেই চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে৷ কারণ ছয় মাস আগেই বোঝা যাচ্ছিল ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছেন৷ যদিও এত বড় বিজয়ের কথা আমি চিন্তা করিনি৷ কিন্তু ট্রাম্প যে জিতছেন সেটা কিন্তু আমি নানাভাবে বলেছি৷ আমি মনে করি, অনেকেই এ ব্যাপারে সচেতন ছিলেন৷ তারাও চিন্তাভাবনা শুরু করেছিলেন যে, এই ফান্ড বন্ধ হলে কি করণীয়? আর কেউ যদি না ভেবে থাকেন তাহলে সেটা দুঃখজনক৷ একটা দেশের উপর নির্ভর করে কাজগুলো চলবে, এটাও তো ঠিক না৷
এর ফলে তো বহু মানুষ চাকরি হারাবেন৷ বাংলাদেশে এর প্রভাব কতোটা পড়বে?
বিভিন্ন সংস্থা তাদের সাহায্য পান, কিন্তু কত পারসেন্ট পান সেটা আমার জানা নেই৷ আবার অনেক বড় বড় এনজিও আছে যারা ইতিমধ্যে অন্য ফান্ডের দিকে চলে গেছেন৷ তারা কাজের কাঠামো হয়ত পরিবর্তন করবে৷ শতভাগ তাদের ফান্ডের উপর কেউ নির্ভরশীল ছিল কিনা তা আমার জানা নেই৷ এই ক্রাইসিসে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে৷ তারা হয়ত নতুন দেশের দিকে তাকাবেন৷ নতুন সুযোগ হয়ত আসবে৷ তবে শর্টটার্মে হয়ত কিছুটা ক্ষতি হতেও পারে, যদি না তারা গত ছয় মাসে কোনো চিন্তাভাবনা না করে থাকে৷
অভিবাসন নীতি কঠোর করেছেন ট্রাম্প৷ এর প্রভাব বাংলাদেশে কতোটা পড়তে পারে?
অভিবাসনের ব্যাপারেও তিনি বলছেন অবৈধ অভিবাসী ও যাদের কোনো কাগজপত্র নেই তাদের উপর দৃষ্টি তার৷ সেখানেই কিন্তু কাজ শুরু হয়েছে৷ বৈধদের ব্যাপারে না৷ তাদের যে বার্থ রেট ও যে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড রয়েছে সেখানে তাদের লোক লাগবেই৷ এখানে কথা হচ্ছে, এগুলো বৈধভাবে না অবৈধভাবে আসবে৷ তার মূল দৃষ্টিটা কিন্তু মেক্সিকো বর্ডারের দিকে৷ তারা রীতিমতো দেয়াল টপকিয়ে আসছিল, এই ধরনের অবৈধদের তো সব দেশই বন্ধ করবে৷ এটা ঠিক যে, এতদিন এ ব্যাপারে শৈথিল্য ছিল৷ অনেকে দেয়াল টপকিয়ে ঢুকে গ্রিনকার্ড পেয়েছে৷ তিনি মনে করছেন, এটা হজম করার শক্তি এখন আর আমেরিকার নেই৷ যতদিন অবৈধদের ব্যাপারে আলোচনা হবে, ততদিন এটা নিয়ে আমাদের উদ্বেগের বড় কোনো কারণ নেই৷ দেখতে হবে, লিগ্যাল অভিবাসন থামে কিনা?
প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে গেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ এর ফলে বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো কতোটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে?
এগুলো নিয়ে তো অনেক কনফারেন্স হয়েছে৷ এখানে বড় আকারে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, লস এন্ড ড্যামেজের উপর৷ এখানে যে ফান্ডের দরকার আর যেটা কমিটমেন্ট হয়েছে তার মধ্যে ব্যবধান কিন্তু বিশাল৷ আমি যদি ধরেও নেই এক বিলিয়ন ডলার কমিটমেন্ট হয়েছে, কিন্তু দরকার তিন ট্রিলিয়ন ডলার৷ যে কনফারেন্সগুলো হয়েছে, তাতে এত বড় গ্যাপ রয়েছে, এটা আমি মনে করি না যে ঠিক৷ বরং দেখা দরকার ক্লাইমেট ফিউচার৷ নিজেদের উদ্ভাবন, চেষ্টা দিয়ে কতখানি রক্ষা করা যায়, সেই চেষ্টা করা সময় এসেছে৷ ক্লাইমেট চেঞ্জ তো হবেই, হিউম্যান একটা এলিমেন্ট আছে সে কারণে এটা তো হবেই৷ আমি এটাকে কিভাবে মোকাবেলা করব৷ একই দেশের উপর নির্ভর করে অর্থ চাওয়ার যে বিষয়টিকে আমি ইতিবাচক মনে করি না৷ এখানে নতুনত্ব আসা দরকার৷
ট্রাম্পের কঠোর নীতি কি যুক্তরাষ্ট্রকে এগিয়ে নেবে না কি পিছিয়ে দেবে?
ট্রাম্প মিডিওলগ করেন৷ তিনি ডায়ালগ করেন না৷ দেখা দরকার তিনি যেটা বলছেন সেটা না, কী করছেন সেটা৷ আমি যদি গাজার বিষয়ে যদি সুনির্দিষ্ট করে বলি, এখানে তিনটা ফেইজ আছে৷ প্রথম ফেইজটা যদি আমি দেখি, এটা মোটামুটি চালু আছে৷ আমরা জানি, ৫০০ জনের মতো ফিলিস্তিনি মুক্তি পেয়েছেন৷ এটা তো বিশাল অর্জন৷ এর মধ্যে অনেক কিছু বলেছেন তাতে সন্দেহ নেই৷ মিডিওলগ যারা করেন, তাদের কথার উপর নির্ভর করা ঠিক হবে না৷ বরং কাজটা দেখা দরকার৷ ট্রাম্প অ্যামেরিকাকে যে পরিবর্তনটা করতে চাচ্ছেন সেটা করতে গেলে একেবারে নিয়ম মাফিক, ভদ্রভাবে করা সম্ভব বলে আমার মনে হয় না৷ পরিবর্তনটা করতে চাইলে তাকে অন্যভাবেই এগুতে হবে৷