1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইউএস-বাংলা দুর্ঘটনা: সব দোষ পাইলটের?

২৭ আগস্ট ২০১৮

পাইলট আবিদ সুলতান ‘মারাত্মক মানসিক চাপ ও উদ্বেগে' ছিলেন৷ বিমান অবতরণের বিষয়ে বেশ কিছু ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি৷ এসব কারণেই বিমানটি বিধ্বস্ত হয় বলে নেপাল সরকারের এক তদন্ত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে৷

Nepal Flugzeugabsturz, Flug aus Bangladesch
ছবি: picture-alliance/Zuma Press/Xinhua

নেপালের ইংরেজি দি কাঠমান্ডু পোস্ট তদন্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে জানায়, পাইলট আবিদ বিমানটি আবতরণের আগে ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে ভুল তথ্যও দিয়েছিলেন৷ ঢাকা থেকে আসা প্রায় এক ঘণ্টার এ ফ্লাইটটিতে তিনি ধূমপান করছিলেন বলেও দাবি করা হয়৷

ঢাকা থেকে ৬৭ জন যাত্রী ও চারজন ক্রু নিয়ে রওনা হয়ে গত ১২ মার্চ দুপুরে কাঠমান্ডুতে অবতরণের সময় দুর্ঘটনায় পড়ে ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিএস-২১১৷ আরোহীদের মধ্যে ৫১ জনের মৃত্যু হয়, যাঁদের ২৭ জনই ছিলেন বাংলাদেশি৷ ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে নেপাল সরকার৷

ভুল তথ্য প্রদান

তদন্ত প্রতিবেদনেটির বরাত দিয়ে কাঠমান্ডু পোস্ট জানায়, বিমানটি চলাকালে অস্বাভাবিক আচরণ করছিলেন পাইলট আবিদ, যা কর্তৃপক্ষের আগেই নজরে আসা উচিত ছিল৷ বিমান আবতরণের ছয় মিনিট আগে পাইলট আবিদ ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে বিমানটির ‘ল্যান্ডিং গিয়ার' নামানো ও তা ‘লক করা' আছে বলে নিশ্চিত করেছিলেন৷ কিন্তু সহকারি পাইলট পৃথুলা রশিদ যখন বিমানটির চূড়ান্ত অবতরণের আগে যান্ত্রিক বিষয়াদিগুলো মিলিয়ে দেখছিলেন, তখন দেখতে পান ল্যান্ডিং গিয়ার নামানো নয়৷ তার মিনিটখানেক পরেই ড্যাশ-৮ কিউ৪০০ মডেলের উড়োজাহাজটি রানওয়ের একপাশে বিধ্বস্ত হয়৷

ককপিটে ধূমপান

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,  বিমানটি চালানোর সময় ধূমপান করছিলেন পাইলট আবিদ৷ প্রায় ৫,৫০০ ঘন্টা বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা থাকা বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সাবেক পাইলট আবিদ সুলতান তাঁর ধূমপানের অভ্যাসের বিষয়টি আগে কখনো প্রকাশ করেননি বলেও তদন্ত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়৷

ককপিটের ভয়েস: আবিদের অস্বাভাবিক আচরণ

ককপিটের ভয়েস রেকর্ডারের তথ্য বিশ্লেষণ করে তদন্তকারী দলটি জানায়, পাইলট আবিদ মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন৷ তাঁকে ক্লান্ত মনে হয়েছে এবং তিনি অনিদ্রাজনিত অবসাদগ্রস্ততায় ভুগছিলেন৷ এ সময় তিনি কাঁদছিলেন বলেও জানিয়েছে তদন্তকারী দলটি৷ তদন্ত প্রতিবেদনটির উদ্বৃতি দিয়ে কাঠমান্ডু পোস্ট জানায়, বিমানটি পরিচালনার সময় পাইলট আবিদ উদ্বিগ্ন ছিলেন এবং বিমান পরিচালনার সময় তাঁর মধ্যে প্রয়োজনীয় সচেতনতার অভাব ছিল৷  

প্রায় একঘণ্টার এ ভয়েস রেকর্ড বিশ্লেষণ করে তদন্তকারী দলটি জানায়, পাইলট আবিদ তাঁর সহকারী পাইলটের সাথে অস্বাভাবিক আচরণ করছিলেন৷ এক পর্যায়ে তিনি বিমানটির নিরাপদে অবতরণের বিষয়ে কোনো পরোয়া করেন না বলেও জানিয়ে দেন অশ্লীল ভাষায়৷ তবে তিনি কাকে উদ্দেশ্য করে এ ধরনের আচরণ করছিলেন, এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি বলে তদন্তকারী দলটি জানিয়েছে৷ যদিও সে সময় আবিদের সাথে  ককপিটে ছিলেন সহকারী পাইলট পৃথুলা রশিদ৷    

তদন্ত প্রতিবেদনটি জানায়, এক ঘণ্টার ওই বিমানযাত্রায় পাইলট আবিদ  ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে কর্মরত তাঁর আরেক নারী সহকর্মীর বিষয়ে বিরক্তি প্রকাশ করছিলেন ও অশ্লীল কথাবার্তা বলছিলেন৷ ভয়েস রেকর্ডারের তথ্য অনুযায়ী, সহকারী পাইলট পৃথুলা এ সময় নীরবে পাইলট আবিদের কথা শুনছিলেন৷ তদন্ত প্রতিবেদনটি বলছে, দুর্ঘটনার আগের দিন ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স থেকে অব্যাহতি চেয়েছিলেন আবিদ, যদিও এ বিষয়ে তিনি কোনো লিখিত আবেদন করেননি৷ 

শতাধিকবার ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণের অভিজ্ঞতা যাঁর রয়েছে, সেই আবিদ সুলতানের পরিচালনায় ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমানটি কিভাবে বিধ্বস্ত হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল আগেই৷

বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার আগে যে পাইলটের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের (এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলরুম) যোগাযোগ স্বাভাবিক ছিল না, সে বিষয়টি  নেপালি তদন্ত কমিশনের প্রাথমিক প্রতিবেদনেও উঠে এসেছিল৷

২০১৫ সালে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে যোগদান করেন আবিদ৷ তার আগে তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন৷ ১৯৯৩ সালে সেখানে কর্মরত অবস্থায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী কর্তৃপক্ষ মানসিক সমস্যা থাকার কারণে ফ্লাইট পরিচালনা থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেয়৷ পরে ২০০২ সালে  ডাক্তারি পরীক্ষায় তাঁকে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য যোগ্য ষোষণা করা হয়৷ নেপাল সরকারের করা তদন্ত প্রতিবেদনটি আরো জানায়, নিয়োগ দেয়ার আগে ইউএস বাংলা কর্তৃপক্ষ আবিদের ডাক্তারি পরীক্ষার রেকর্ডগুলো বিবেচনায় নেয়নি৷ এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স এর জেনারেল ম্যানেজার কামরুল ইসলাম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বলেও জানিয়েছে কাঠমান্ডু পোস্ট৷

তবে তদন্ত প্রতিবেদনটি বলছে, ২০০২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ডাক্তারি পরীক্ষায় পাইলট আবিদের  মানসিক রোগের কোনো লক্ষণ ধরা পড়েনি৷

আরআর/এসিবি (কাঠমান্ডু পোস্ট)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ