নেপালে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করছে বাংলাদেশ৷ নিহতদের মরদেহের অপেক্ষায় রয়েছেন স্বজনরা৷ আহত এক বাংলাদেশির অবস্থা আশংকাজনক৷
বিজ্ঞাপন
সোমবার নেপালের কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলার একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে ৭১ আরোহীর মধ্যে ৫১ জন নিহত হন৷ তাদের মধ্যে চার ক্রুসহ ২৬ জন ছিলেন বাংলাদেশি৷ দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সারা দেশে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ভবনে এবং বিদেশে বাংলাদেশের সব মিশনে জাতীয় পাতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে৷
বিমান দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা দিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশের একটি বিশেষ চিকিৎসক দল গঠন করে নেপালে পাঠানো হয়েছে৷ ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কামরুল হাসান জানিয়েছেন, বিমান দুর্ঘটনায় আহত ১০ বাংলাদেশির মধ্যে ইমরানা কবির হাসি, শেখ রাশেদ রুবাইয়াত, আলমুন নাহার অ্যানি, মেহেদী হাসান, সাঈদা কামরুন্নাহার স্বর্ণা, কবির হোসেন ও মো. শাহীন বেপারি কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷ ইয়াকুব আলী নরভিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷ আহত চিকিৎসক রেজওয়ানুল হককে গতকাল উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়েছে৷ এছাড়া, আহত শাহরিন আহমেদ ঢাকায় ফিরে এসেছেন৷
বাংলাদেশ এবং নেপালে শোকের ছায়া
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান দুর্ঘটনার পর থেকে বাংলাদেশ এবং নেপাল দুই দেশেই শোকের আঁধার৷ খবরের শিরোনামে, সর্বস্তরের আলোচনায় শুধু ত্রিভুবন বিমানবন্দরে কিছু জীবনের করুণ পরিণতি নিয়ে আলোচনা৷
ছবি: Reuters/N. Chitrakar
কেন এই দুর্ঘটনা?
বিষয়টি এখনো রহস্যাবৃত৷ ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের আগে পাইলটের সঙ্গে বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণকক্ষের কথিত কথোপকথনের একটি অডিও ইউটিউবে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে অনেকেই মনে করছেন, কোনদিক দিয়ে রানওয়েতে নামা নিরাপদ এ নিয়ে পাইলটের মনে বিভ্রান্তি দেখা দেয়ার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে৷
ছবি: Reuters/N. Chitrakar
নেপালে তদন্ত
দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য ইতিমধ্যে নেপালে তদন্ত শুরু হয়েছে৷ বিমানের ব্ল্যাকবক্স উদ্ধারের পরই্ তদন্ত শুরুর এ উদ্যোগ নেয়া হলো৷ তদন্তে সহযোগিতা করার জন্য ইউএস-বাংলার সিইও ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ইতিমধ্যে কাঠমান্ডু পৌঁছেছেন৷
ছবি: Reuters/N. Chitrakar
বিমানবন্দরের ছয় কর্মকর্তা বদলি
সোমবার দুর্ঘটনার সময় কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে যে ছয় কর্মকর্তা ছিলেন, তাঁদের প্রত্যেককেই বদলি করা হয়েছে৷ বিমান কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলছে, শুধু ভয়াবহ দুর্ঘটনা প্রত্যক্ষ করার ধাক্কা সামলানোর সুযোগ দিতেই বদলি করা হয়েছে তাঁদের৷
ছবি: Reuters/N. Chitrakar
শোক
বাংলাদেশ এবং নেপাল নামের দু’টি দেশের মাঝের আটশতাধিক কিলোমিটারের দূরত্ব যেন ঘুচিয়ে দিয়েছে এই দুর্ঘটনা৷ দু’দেশেই এখন শোকের ছায়া৷ স্বজন হারানোর বেদনা আর আহতদের চিন্তায় অশ্রু ঝরছে দু’দেশেই৷ ওপরের ছবিতে স্বজনের জন্য নেপালি এক তরুণীর কান্না৷
ছবি: Reuters/N. Chitrakar
প্রিয়জন হারানোর বেদনা
দুর্ঘটনার পর কাঠমান্ডুর হাসপাতালগুলোতে নিয়ে আসা আহতদের মাঝে চেনামুখ খুঁজতে ছুটে যান অনেকে৷ অনেকেই ফিরে যান স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে৷
ছবি: Reuters/E. Joshi
আহতদের চিকিৎসা
আহত এবং মৃতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি এখনো কাটেনি৷ সোমবার প্রায় সংবাদমাধ্যমই ৫০ জনের মৃত্যুর খবর প্রচার করে৷ তবে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি অসিত বরণ সরকার জানিয়েছেন, ফ্লাইট বিএস২১১ এর ৭১ আরোহীর মধ্যে ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, বাকি ২২ জন এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷
ছবি: Reuters/N. Chitrakar
২৬ জন বাংলাদেশি নিহত
বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ২৬ জন বাংলাদেশি৷ চারজন ক্রু এবং ২২ যাত্রী৷ এছাড়া আহত ১০ বাংলাদেশিকে কাঠমান্ডুর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/N. Chitrakar
কাঠমান্ডুর আকাশ
দূরে বিমান পুড়ছে আর ধোঁয়ায় ঢেকে যাচ্ছে কাঠমান্ডুর আকাশ৷
ছবি: Reuters/Nitin Keyal
মৃতদেহ ব্যবস্থাপনা
কাঠমান্ডুতে খোলা হয়েছে ‘ডেডবডি ম্যানেজমেন্ট কো-অর্ডনিনেশন ডেস্ক’৷ এই ডেস্কে কর্মরতদের দায়িত্ব দুর্ঘটনায় নিহতদের লাশ সংরক্ষণ এবং তা স্বজনদের হাতে তুলে দেয়া৷
ছবি: Reuters/N. Chitrakar
জীবন থেমে থাকে না
একদিকে শোক, তবে অন্যদিকে ঠিকই জীবন বয়ে চলেছে আপন নিয়মে৷ ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ভেঙে চুরমার, পুড়ে যাওয়া বিমানটির পাশ দিয়েই আকাশে উড়ছে নতুন নতুন বিমান৷
ছবি: Reuters/N. Chitrakar
10 ছবি1 | 10
লাশের জন্য স্বজনদের অপেক্ষা
কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস বুধবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘নিহতদের ময়নাতদন্ত শেষ করতে আরও চার দিন সময় লাগবে৷ তারপর স্বজনদের তালিকার সঙ্গে মিলিয়ে তথ্য নিশ্চিত করে মরদেহের পরিচয় নিশ্চিত করবে নেপালি কর্তৃপক্ষ৷ পুড়ে যাওয়ার কারণে যাদের মরদেহ শনাক্ত করতে ডিএনএ মেলানোর দরকার হবে, তাদের ক্ষেত্রে তিন সপ্তাহ সময় লাগবে৷'' লাশ শনাক্ত করার কাজটি দ্রুততর করতে নেপালকে ডিএনএ পরীক্ষার কাজে সহযোগিতা করারও প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ৷
লাশের অপেক্ষায় ক্ষণ গুনছেন বাংলাদেশ, নেপাল ও চীনের নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা৷ নিহত ৫১ জনের কারো লাশই মর্গে আনার পর স্বজনদের দেখতে দেওয়া হয়নি৷ ময়নাতদন্ত শেষ না হলে কোনো লাশ দেখতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন টিচিং হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান প্রমোদ শ্রেষ্ঠা৷ তিনি জানান, নিহতদের ১০ জনকে দেখে চেনা সম্ভব৷ অন্য ৪১ জনের শরীর এতটাই পুড়ে গেছে যে তাঁদের কোনোভাবেই চেনা সম্ভব নয়৷
এদিকে বিমান দুর্ঘটনায় আহত ২০ জনের মধ্যে ৪ জনের অবস্থা আশংকাজনক৷ একজনকে কৃত্রিম উপায়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে৷ এদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি এমরানা কবির হাসির অবস্থা গুরুতর৷ তাঁর শরীরের ৭০ শতাংশ পুড়ে গেছে৷ কাঠমান্ডু মেডিকেলে তিনি চিকিৎসাধীন আছেন৷ হাসির স্বামী রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রকিবুল হাসান ঘটনাস্থলেই মারা যান৷
নিহত নেপালিদের জন্য
01:00
তদন্তে দীর্ঘ সময়
বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশ, নেপাল ও উড়োজাহাজের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোম্বার্ডিয়ার যৌথভাবে তদন্ত শুরু করেছে৷ বোম্বার্ডিয়ারের প্রতিনিধি বুধবার বাংলাদেশ ও নেপাল তদন্ত দলের সঙ্গে বৈঠক করেন৷ নেপাল সরকারে ছয় সদস্যের কমিটি এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে৷ বোম্বার্ডিয়ারের দুই সদস্য গতকাল নেপালে গেছেন৷
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল নাইম হাসান বলেছেন, ‘‘নেপালে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার তদন্তে দীর্ঘ সময় লেগে যেতে পারে৷ ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) নিয়ম অনুযায়ী, ৩৬৫ দিনের মধ্যে এ ধরনের তদন্ত শেষ করতে হয়, প্রয়োজনে আরও বেশি সময় নেওয়া যেতে পারে৷''
বাংলাদেশের বিমানের ভয়াবহ দুর্ঘটনা
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে বিধ্বস্ত হয়েছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি বিমান৷ ৭১ জন আরোহী ছিল বিমানটিতে৷ তার মধ্যে অন্তত ৫০ জান মারা গেছে৷
ছবি: picture-alliance/Zuma Press/Xinhua
যারা ছিলেন বিমানে
ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিএস ২১১ বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা ৫২ মিনিটে ঢাকার শাহজালাল থেকে রওনা হয়৷চার জন কেভিন ক্রু-সহ মোট ৭১ জন আরোহী ছিল ইউএস-বাংলার বোম্বার্ডিয়ার কিউ৪০০ বিমানটিতে৷ ৬৭ জন যাত্রীর মধ্যে ৩৩ জন ছিলেন নেপালের, ৩২ জন বাংলাদেশের আর একজন করে চীন এবং মালয়েশিয়ার৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Mathema
রহস্যজনক দুর্ঘটনা
নেপাল সময় বেলা ২টা ১৮ মিনিটে ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বাভাবিক অবতরণের উদ্যোগই নিয়েছিলেন বৈমানিক৷ কিন্তু অবতরণের অনুমতি পাওয়ার পরই তিনি উত্তর দিকে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন৷ আকাশে দু’বার পাক খেতে দেখা যায় বিমানটিকে৷ তারপর কন্ট্রোলরুমের আপত্তি সত্ত্বেও তড়িঘড়ি অবতরণের উদ্যোগ নেন পাইলট৷ বিমানবন্দরের প্রাচীরে ধাক্কা দিয়ে বিমান নেমে পড়ে মাটিতে আর সঙ্গে সঙ্গেই আগুন জ্বলতে শুরু করে৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Mathema
প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ
মার্কিন নাগরিক অ্যামান্ডা সামার্স কর্মসূত্রে এখন নেপালেই থাকেন৷ সোমবার ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হওয়ার আগে তিনি পরিষ্কার দেখেছেন ইউএস-বাংলার যাত্রীবাহী বিমানটিকে৷ বার্তাসংস্থা এপিকে তিনি বলেছেন, ‘‘বিমানটি এত নীচ দিয়ে উড়ছিল যে, আমার মনে হয়েছিল এক্ষুণি বুঝি পাহাড়ে গিয়ে ধাক্কা খাবে৷ তারপর হঠাৎই প্রথমে একবার এবং তারপর আরেকবার বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাই৷’’
ছবি: picture-alliance/Zuma Press/Xinhua
মোট কতজন নিহত?
৭১ জন আরোহীর মধ্যে বিভিন্ন বার্তা সংস্থা ৫০ জন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে৷ ১২ জন আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷ বাকি ৯ জনের বিষয়ে এখনো কিছুই জানা যায়নি৷ নিহতদের অনেকের দেহই পুড়ে প্রায় ছাই৷ আহতদেরও কারো কারো অবস্থা শঙ্কাজনক৷ মৃতের সংখ্যা বাড়তেই পারে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Sapkota
বাংলাদেশের ভয়াবহতম বিমান দুর্ঘটনা
এ পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো বিমানের যে কয়টি দুর্ঘটনা হয়েছে তার মধ্যে এটিই ভয়াবহতম৷ এর আগে ১৯৮৪ সালের ৫ আগস্ট প্রতিকূল আবহাওয়ায় অবতরণের সময় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফকার এফ২৭-৬০০ বিমান বিমানবন্দরের কাছের জলাভূমিতে বিধ্বস্ত হয়৷ চট্টগ্রামের পতেঙ্গা বিমানবন্দর থেকে আসা ঘরোয়া ফ্লাইটের বিমানটির ৪৯ জন আরোহীর সবাই মারা যান৷ কাঠমান্ডুর দুর্ঘটনা ১৯৮৪ সালের ভয়াবহতাকে ছাড়িয়ে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/N. Shreshta
5 ছবি1 | 5
এপিবি/এসিবি
প্রতিবেদনটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷