রাশিয়ার হামলা মোকাবিলায় ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা প্রদান চালিয়ে যেতে প্রস্তুত উন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানিতে অনুষ্ঠিত সদস্য জোটের দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়৷
জোটের সদস্যরাষ্ট্র জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ক্যানাডা, ফ্রান্স, ইটালি, জাপান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন৷
বৈঠক শেষে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘আমরা ইউক্রেনকে দেওয়া আমাদের সামরিক ও প্রতিরক্ষা সহায়তা যতক্ষণ প্রয়োজন চালিয়ে যাব৷''
চলতি বছরের বৈঠকে যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউক্রেন এবং মোলদোভার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরাও উপস্থিত ছিলেন৷
বৈঠকের বিষয়ে এক টুইট বার্তায় জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক বলেন, ‘‘স্নায়ু যুদ্ধের পর জি-৭ এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো এতো বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েনি৷আর আগে কখনো আমরা এমনভাবে একতাবদ্ধও হইনি৷’’
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার কারনে উন্নত দেশগুলোর এ জোটের চলতি বছরের বৈঠকটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন৷ আর স্বাভাবিকভাবেই আলোচনার কেদ্রবিন্দুতে ছিল ইউক্রেন যুদ্ধ৷
বৈঠকে জোটের কূটনীতিকরা রাশিয়াকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে বাকি বিশ্ব থেকে আলাদা করে দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেন৷
এর মধ্যে রয়েছে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করে দেওয়া বা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা৷ এ বিষয়ে অবশ্য ইইরোপের দেশগুলোর আগামী সপ্তাহে চুক্তিতে পৌঁছার কথা রয়েছে৷ তবে রাশিয়া থেকে তেল-গ্যাস আমদানি বন্ধ করার বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে ইউরোপের দেশ হাঙ্গেরির৷
বৈঠকে সদস্যরাষ্ট্রগুলো যুদ্ধের কারণে বিশ্ব্যাপী সৃষ্ট হওয়া খাদ্য সংকট মোকাবিলায়ও একসাথে কাজ করার প্রত্যয় ব্যাক্ত করে৷
আরআর/এআই (রয়টার্স)
ইউক্রেন যুদ্ধ: অপরিণত শিশুর জন্ম বাড়ছে
যুদ্ধে গর্ভবতী নারীদের মানসিক চাপের কারণে ইউক্রেনে সময়ের আগে জন্ম নেয়া শিশুর সংখ্যা বাড়ছে৷ লাভিভে একটি প্রসূতি হাসপাতালে এখন পর্যন্ত দুইশোর বেশি অপরিণত শিশু জন্ম নিয়েছে৷
ছবি: T. Kiptenko/J.P. Scholz/DW
সময়ের আগে জন্ম
লাভিভের প্রসূতি হাসপাতালে কিছুদিন আগে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন গ্যালিনা গোলেট৷ নির্ধারিত সময় অনুযায়ী তার সন্তান একমাস পর ভূমিষ্ঠ হওয়ার কথা ছিল৷ গোলেট বলেন, ‘‘বাচ্চাকে এখন টিউবের মাধ্যমে খাবার দিতে হচ্ছে, বোতল থেকে খাবার নেয়ার মতো সামর্থ্য তার নেই৷ তবে সে নিজে নিজে শ্বাস নিতে পারছে৷ আশা করছি ধীরে ধীরে শক্তি পাবে সে৷’’ গোলেট জানান, গর্ভকালে শেষ সময়টাতে যুদ্ধের ভয়াবহ মানসিক চাপ বহন করতে হয়েছে তাকে৷
ছবি: T. Kiptenko/J.P. Scholz/DW
সর্বোচ্চ অপরিণত শিশু
শুধু লাভিভের এই হাসপাতালটিতে যুদ্ধ শুরুর পর এখন পর্যন্ত ২০০ অপরিণত শিশুর জন্ম হয়েছে বলে জানান সেখানকার স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ মারিয়া মালাচিনস্কা৷ নির্ধারিত সময়ের আগে জন্ম নেয়া এত শিশু এর আগে হাসপাতালটিতে দেখেননি তিনি৷ যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলগুলোতে এই পরিস্থিতি আরো প্রকট৷ স্থানীয় চিকিৎসকদের তথ্য অনুযায়ী যুদ্ধের প্রথম সপ্তাহে খারকিভে জন্ম নেয়া প্রতি দুই শিশুর একটি ছিল অপরিণত৷
ছবি: T. Kiptenko/J.P. Scholz/DW
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
মারিয়া মালাচিনস্কা বলেন, ‘‘যেকোন মানসিক চাপই গর্ভাবস্থায় প্রভাব ফেলে৷ সেখানে যুদ্ধের সূচনা তাদের জন্য বিশাল এক ধাক্কার ব্যাপার এবং এখন ভবিষ্যৎ কোনদিকে যাবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে৷’’ এমন পরিস্থিতির কারণে অপরিণত শিশু জন্মের ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করেন তারা৷ পাশাপাশি যুদ্ধ বিধ্বস্ত বিভিন্ন অঞ্চলে জন্ম নেয়া শিশুদের রোগ সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে বলেও জানান এই চিকিৎসক৷
ছবি: T. Kiptenko/J.P. Scholz/DW
সরঞ্জাম সংকট
লাভিভের এই হাসপাতালে চিকিৎসা সরঞ্জামের তেমন সংকট নেই৷ কেননা যুদ্ধের আগেই সেখানে প্রয়োজনীয় সহায়তা পৌঁছে৷ এছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকেও সহযোগিতা পেয়েছে তারা৷ কিছুদিন আগেই সেখানে নতুন তিনটি ইনকিউবেটর এসে পৌঁছেছে৷ তবে সামনের দিনে কী হবে তা নিয়ে শঙ্কিত চিকিৎসক মালাচিনস্কা৷ লাভিভের হাসপাতালটির মতো পরিস্থিতি সবগুলোর নয়৷ অনেক জায়গায় হাসপাতালে ইনকিউবেটর সংকট রয়েছে, যা অপরিণত শিশুদের বাঁচাতে অত্যাবশ্যকীয়৷
ছবি: T. Kiptenko/J.P. Scholz/DW
হাসপাতালে হামলা
হাসপাতালে থাকলেও খুব একটা স্বস্তিতে নেই রোগী আর চিকিৎসকেরা৷ কেননা দেশটির চিকিৎসা স্থাপনাতেও হরহামেশা হামলার ঘটনা ঘটেছে৷ বার্তা সংস্থা এপির হিসাবে এই সংখ্যা ৪৯৷ এরমধ্যে গত মার্চে মারিউপলে একটি প্রসূতি হাসপাতালেও হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী৷