ইউক্রেনকে আরো ৪০ কোটি ডলারের অস্ত্র সাহায্য করবে অ্যামেরিকা। এক শীর্ষ মার্কিন জেনারেলের দাবি, যুদ্ধে রাশিয়ার এক লাখ সেনা হতাহত হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
ইউক্রেনকে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম সহ আরো কিছু সামরিক সরঞ্জাম দিচ্ছে অ্যামেরিকা। দেয়া হবে আর্থিক সহায়তাও। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, নতুন করে ৪০ কোটি ডলারের প্যাকেজ দেয়া হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সালিভান বলেছেন, ইউক্রেনকে হক এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের জন্য ক্ষেপণাস্ত্র দেয়া হবে। তাদের অ্যাভেঞ্জার এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমও দেয়া হবে। এই সিস্টেমের সঙ্গেও ক্ষেপণাস্ত্র থাকবে৷
পেন্টাগন জানিয়েছে, ইউক্রেনকে হাই মোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম ও অন্য অস্ত্রও দেয়া হবে। তার মধ্যে আছে, চারশ গ্রেনেড লঞ্চার, ঠান্ডা আবহাওয়ার জন্য প্রোটেকটিভ গিয়ার, একশটি হাই মোবিলিটি মাল্টিপারপাস হুইলড ভেহিকেল।
একদিন আগেই রাশিয়া জানিয়েছিল, তারা খেরসন থেকে নিপ্রো নদীর পূর্ব তীরে চলে যাচ্ছে। সালিভান জানিয়েছেন, তারাও খেরসন থেকে রুশ সেনা সরে যাওয়ার কিছু চিহ্ন দেখতে পাচ্ছেন। তবে তিনি বলেছেন, রাশিয়া কিছু এলাকা থেকে সেনা সরিয়ে নিচ্ছে বলে এটা ভাবা ভুল হবে যে, যুদ্ধ এবার শেষ হচ্ছে।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফ্রন্টলাইনে
ডনবাস অঞ্চলকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর অন্য কয়েকটি ইউক্রেনীয় শহর দখলে রাশিয়া নতুন করে আক্রমণ শুরু করেছে৷ অন্যদিকে ইউক্রেনও ডনবাস পুনরুদ্ধারে নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে৷ ছবিঘরে থাকছে যুদ্ধের ফ্রন্টলাইনের কিছু ছবি৷
ছবি: Vyacheslav Madiyevskyy/REUTERS
বিনা যুদ্ধে নাহি দিবো...
খারকিভকে লক্ষ্য করে আক্রমণ শুরু করেছে রাশিয়া৷ তবে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ অঞ্চলটি নিজেদের দখলে রাখতে মরিয়া ইউক্রেনও৷ খারকিভের ফ্রন্টলাইনে রুশ সৈন্যদের লক্ষ্য করে মর্টার নিক্ষেপ করতে দেখা যাচ্ছে এক ইউক্রেনীয় সৈন্যকে৷
ছবি: Vyacheslav Madiyevskyy/REUTERS
পর্যাপ্ত সরবরাহ কি আছে?
দিনের পর দিন রাশিয়া আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে৷ অ্যামেরিকাসহ ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে নিয়মিতই সরবরাহ হচ্ছে অস্ত্র ও গোলাবারুদ৷ তবে তা অব্যাহত না থাকলে রুশ সৈন্যদের ঠেকিয়ে রাখতে বেশ বেগ পেতে হবে ইউক্রেনকে৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে এক সৈন্য গাড়িতে রাখা মর্টার নিয়ে যাচ্ছেন রুশ সৈন্যদের ঠেকিয়ে রাখার অংশ হিসাবে৷
ছবি: Vyacheslav Madiyevskyy/REUTERS
বেসামরিক স্থাপনাও রক্ষা পাচ্ছে না
ছবিটি ইউক্রেনের মাইকোলাইভ শহরের৷ রাশিয়ার বোমা হামলায় একটি স্কুল ধ্বংস হয়েছে৷ তবে ইউক্রেনের সৈন্যরা এখনো শহরটি রাশিয়ার সৈন্যদের দখলে চলে যাওয়া থেকে ঠেকিয়ে রেখেছেন৷
ছবি: Valentyn Ogirenko/REUTERS
মেরামত চলছে...
ইউক্রেনের খারকিভ অঞ্চলের কুপিয়ানস্ক শহরে একটি ট্যাংকের ওপর এক ইউক্রেনীয় সৈন্যকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে৷ বোমার আঘাতে নষ্ট হওয়া ট্যাংক মেরামত করছেন তার সহকর্মী৷ রুশ সৈন্যরা খারকিভ দখলে নিলেও পরবর্তীতে ইউক্রেনের পালটা আক্রমণে দখল হারায় রাশিয়া৷ তবে এখনো এর দখল নিয়ে দুই পক্ষে ব্যাপক লড়াই চলছে৷
ছবি: Clodagh Kilcoyne/REUTERS
মুখোমুখি লড়াই
কৃষ্ণসাগরের তীরবর্তী মাইকোলাইভ অঞ্চলে লড়াই তীব্র হয়েছে৷ ইউক্রেনের সৈন্য মাইকোলা সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন৷ অদূরে অবস্থান করছে রুশ সৈন্যরা৷ তাদের ঠেকিয়ে রাখতে একে-৪৭ হাতে পাহারা দিচ্ছেন মাইকোলা৷
ছবি: Valentyn Ogirenko/REUTERS
মাতৃভূমি রক্ষার লড়াই
আরেক ইউক্রেনীয় সৈন্য ভালেরি একে-৪৭ হাতে পরিখার মধ্যে বসে রয়েছেন৷ তবে সতর্ক প্রহরার পাশাপাশি মাঝেমধ্যে অন্যদিকেও নজর থাকছে তাদের৷ ফ্রন্টলাইনেই এক কুকুরকে দেখে ভালেরির হৃদয় আর্দ্র হয়ে উঠেছে৷
ছবি: Valentyn Ogirenko/REUTERS
পালটা আক্রমণ
ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ঝাপোরিজঝিয়া রয়েছে রাশিয়ার দখলে৷ এর নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সরকার৷ শহরটি পুনর্দখলের জন্য লড়াই করছে ইউক্রেনের সৈন্যরা৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে এক ইউক্রেনীয় সৈন্যকে গাড়িতে মোতায়েন করা হাওয়িৎজার এফএইচ-৭০ প্রস্তুত করতে৷
ছবি: REUTERS
7 ছবি1 | 7
সালিভান বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে অবিলম্বে আলোচনায় বসার জন্য অ্যামেরিকা ইউক্রেনকে কোনো চাপ দিচ্ছে না।
‘এক লাখ রুশ সেনা মৃত বা আহত’
অ্যামেরিকার শীর্ষস্থানীয় জেনারেল মার্ক মিলি দাবি করেছেন, ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে রাশিয়ার এক লাখ সেনা হয় মারা গেছেন বা আহত হয়েছেন। সম্ভবত ইউক্রেনেরও সমপরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
তার মতে, সামরিক দিক থেকে কেউই জয়ী নয়। তাই এখন আলোচনার সম্ভাবনা বাড়বে। তবে তার আগে দুই পক্ষকেই স্বীকার করে নিতে হবে যে, যুদ্ধ করে কোনো পক্ষই জয় পাবে না। এখন অন্য রাস্তায় হাঁটতে হবে। তাই আলোচনার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
জেলেনস্কির দাবি
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি দাবি করেছেন, তার সেনা দক্ষিণ ইউক্রেনে সমানে এগিয়ে যাচ্ছে এবং তারা ৪১টি জনবসতিকে মুক্ত করেছে।
ভিডিও বক্তৃতায় জেলেনস্কি বলেছেন, ''আজ দক্ষিণ প্রান্ত থেকে ভালো খবর এসেছে। আমরা আনন্দিত। তবে আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে, ইউক্রেনের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য প্রচুর নাগরিক প্রাণ দিয়েছেন।'' ইউক্রেনের সেনা এখন খেরসনের কাছে পৌঁছে গেছে।
বৃহস্পতিবার রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, রাশিয়ার সেনা খেরসন থেকে সরে এসে নিপ্রো নদীর পূর্ব তীরে চলে যাবে।
চুম্বন, আলিঙ্গনে প্রিয়জনকে বিদায় রুশ কনস্ক্রিপ্টসদের
১৮ থেকে ২৭ বছর বয়সী তরুণদের (কনস্ক্রিপ্টস বা সংরক্ষিত বাহিনীর সেনা) বাধ্যতামূলকভাবে বাহিনীতে যোগ দেয়ার নিয়ম রয়েছে। চোখের জলে, চুম্বনে প্রিয়জনকে বিদায় জানাচ্ছে পরিবার। আবেগঘন মুহূর্তের ঝলক রইল ছবিঘরে।
ছবি: ALEXEY PAVLISHAK/REUTERS
বিদায় চুম্বন
ইউক্রেন আগ্রাসনের প্রেক্ষিতে যুদ্ধে যোগ দিতে প্রথম ব্যাচের রুশ কনস্ক্রিপ্টসরা ব্যাগ গোছানোর জন্য কয়েক ঘণ্টা সময় পেয়েছিলেন বলে একাধিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল। এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ক্রিমিয়ার সেবাস্তোপোলে ট্রেনের জানলার ধারে বসে এক তরুণ। কাচের জানলার ওপারে থাকা প্রিয়জন চুম্বন করছে তাকে। কিন্তু মাঝে জানলার ব্যবধানটি স্পষ্ট।
ছবি: ALEXEY PAVLISHAK/REUTERS
অনিচ্ছা?
ক্রিমিয়ার সেবাস্তপোলে লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তরুণরা। সামরিক পোশাক পরা এক তরুণের চোখেমুখে অনিচ্ছা ফুটে উঠেছে যেন। অনেক রুশ তরুণের মতো সেও কি যুদ্ধে যোগ দিতে চায় না? সংরক্ষিত বাহিনীতে ডাক পড়ার ভয়ে রুশ তরুণরা দলে দলে দেশ ছাড়ছেন, এমন খবরকে ‘অতিরঞ্জিত' বলে দাবি করেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র৷
ছবি: ALEXEY PAVLISHAK/REUTERS
সামরিক বাহিনীতে যোগ
সামরিক ঘাঁটিতে রওনা দিচ্ছেন সংরক্ষিত বাহিনীর তরুণ সদস্যরা। কিন্তু একদল এই তরুণদের হতাশ মুখগুলি দেখে স্পষ্ট, প্রিয়জনকে ছেড়ে যাওয়ার যন্ত্রণা ভুলতে পারছেন না তারা। যে সব পুরুষ সম্প্রতি সামরিক প্রশিক্ষণ শেষ করেছেন, মূলত তাদেরই কনস্ক্রিপটসে তলব করা হয়েছে দাবি করেছে ক্রেমলিন।
ছবি: ALEXEY PAVLISHAK/REUTERS
সন্তানকে আদর
রাশিয়ান পেনশনভোগী, প্রতিবন্ধী পুরুষ এবং সামরিক প্রশিক্ষণ বা এমনকি যুদ্ধের অভিজ্ঞতা নেই এমন ব্যক্তিরা পর্যন্ত ইউক্রেনের যুদ্ধে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীতে কাজ করার জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বা কনস্ক্রিপশন নোটিশ পেয়েছেন। ছবির এই ব্যক্তি মমতাভরে খুদে সদস্যকে আদর করছেন, জড়িয়ে রেখেছেন পরিবারের অন্য় সদস্য়কেও। আদৌ কি যুদ্ধে যোগ দিতে চান তিনি?
ছবি: ALEXEY PAVLISHAK/REUTERS
বিদায় আলিঙ্গন
বাহিনীকে চাঙ্গা করতে সে দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তিন লাখ রুশ তরুণকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ তবে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রিয়জনকে ছাড়তে চাইছেন না কেউ কেউ। স্টেশনে এসেও সামরিক পোশাক পরা ওই তরুণকে জড়িয়ে ধরেছেন পরিবারের এই নারী সদস্য।
ছবি: ALEXEY PAVLISHAK/REUTERS
ভিড় স্টেশনে
রাশিয়ার প্রায় সব পরিবারেই এক বা একাধিক সদস্যের নাম সামরিক বাহিনীর সদস্য হিসেবে নথিভুক্ত করা থাকে৷ এর প্রেক্ষিতে দলে দলে রুশ তরুণ সামরিক বাহিনীতে যোগদান করতে যাচ্ছেন। স্টেশনে তাই ভিড়। প্রিয়জনকে বিদায় জানাতে এসেছেন পরিবারের সদস্যরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু ছাত্রেরও ডাক পড়ায় ধারণা করা হচ্ছে তিন লাখ নয়, আসলে ১০ লাখ মানুষকে যুদ্ধে পাঠাতে চায় পুটিনের সরকার৷
ছবি: ALEXEY PAVLISHAK/REUTERS
হাসিমুখে বিদায়
প্রিয়জনকে আশ্বাস দিতেই ট্রেনের জানলার ওপার থেকে হাসছেন এক তরুণ। জানলার ওপারে পরিবারের এক নারী দুটি হাত যেন তাকে আগলে রাখতে চাইছেন।
ছবি: ALEXEY PAVLISHAK/REUTERS
মন্ত্রোচ্চারণ ধর্মযাজকের
একজন রক্ষণশীল ধর্মযাজক স্থানীয় রেলওয়ে স্টেশনে নিয়োগপ্রাপ্তদের উপর পবিত্র জল ছিটিয়ে দিচ্ছেন। যাজকের বিশ্বাস, এর ফলে সংরক্ষিত বাহিনী কোনো বিপদে পড়বেন না।
ছবি: ALEXEY PAVLISHAK/REUTERS
8 ছবি1 | 8
জেলেনস্কি বলেছেন, ‘‘শত্রুরা আমাদের জন্য উপহার নিয়ে আসেনি। তারা সৌজন্যমূলক কোনো ব্যবহার করছে না এটা মনে রাখতে হবে। ইউক্রেনের অসংখ্য মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। ইউক্রেন যদি কোনো সুবিধা পায়, তাহলে তাদের জীবনের বিনিময়ে পাবে।’’
জেলেনস্কির পরামর্শদাতা বলেছেন, ‘‘রাশিয়া খেরসনকে মৃতের শহরে পরিণত করতে চেয়েছে। সর্বত্র রাশিয়া মাইন পেতে রেখেছে। আবাসন, নিকাশি নালা, রাস্তাঘাট সর্বত্র মাইন পাতা। আর নদীর পূর্ব তীর থেকে রাশিয়ার কামান সমানে গোলা মেরে শহর ধ্বংস করে দিতে পারবে।’’
তবে যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দাদের মতে, ইউক্রেন যেভাবে রাশিয়ার সাপ্লাই রুট বন্ধ করে দিচ্ছে, তাতে রুশ সেনা বাধ্য হয়ে খেরসন ছেড়েছে। তবে ইউক্রেনের সেনা যাতে দ্রুত খেরসন আসতে না পারে, তার জন্য মাইন পাতা হয়েছে, রাশিয়ার সেনা ব্রিজও ধ্বংস করেছে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বৃহস্পতিবার জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। তিনিও মনে করেন, খেরসনে খুব সাবধানে যেতে হবে ইউক্রেনের সেনাকে।
কিয়েভ থেকে ডিডাব্লিউর প্রতিনিধি লিক কনোলি বলেছেন, ‘‘রাশিয়া তাদের কৌশল বদল করেছে। রাশিয়া অন্য জায়গায় যে কৌশল নিয়েছে, তার সঙ্গে খেরসনের কৌশল মিলছে না। তাই ইউক্রেনের মানুষ মনে করছেন, রাশিয়া নতুন করে একটা ফাঁদ পেতেছে।’’