জেলেনস্কির পাশে দাঁড়াতে কিয়েভে জার্মানি, ফ্রান্স, ইটালির রাষ্ট্রপ্রধানরা। জানালেন, দ্রুত ইউক্রেনকে ইইউ-র অংশ করতে চান তারা।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার একসঙ্গে কিয়েভে পৌঁছেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ, জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস, ইটালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি এবং রোমানিয়ার প্রেসিডেন্ট ক্লাউস ইওহানিস। বৃহস্পতিবার তারা একসঙ্গে ইউক্রেনেরপ্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেখানেই ইউক্রেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অংশ করার বার্তা দেওয়া হয়।
সাংবাদিক বৈঠকে শলৎস বলেন, জার্মানি সবরকমভাবে ইউক্রেনের পাশে আছে। জার্মানি চায় ইউক্রেন দ্রুত ইউরোপীয় ইউনিয়নের অংশ হয়ে উঠুক। একই কথা বলেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ। জানিয়েছেন, ''আমরা সকলে চাই ইউক্রেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের অংশ হয়ে উঠুক।''
ইউক্রেন ইস্যুতে মধ্যপ্রাচ্যকে কেন পাশে পাচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র?
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর তেলের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সৌদি আরবকে উৎপাদন বাড়ানোর অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ কিন্তু সফল হয়নি৷ সংযুক্ত আরব আমিরাতেরও সহায়তা চেয়ে পায়নি যুক্তরাষ্ট্র৷ কিন্তু কেন?
সৌদি যুবরাজ কথা বলতে চাননি?
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর তেলের মূল্য বেড়ে গেলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার চেষ্টা করেছিলেন বলে খবর প্রকাশিত হয়েছিল৷ কিন্তু সালমান তার সঙ্গে কথা বলতে চাননি বলে সেই সময় জানা গিয়েছিল৷ যদিও মার্কিন প্রশাসন এই খবর অস্বীকার করেছিল৷ এর কিছুদিন পরই রাশিয়া ও চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেন সালমান৷
আরব আমিরাতও কথা শোনেনি
রাশিয়ার ধনাঢ্য ব্যক্তিরা যেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে তাদের সুপারইয়ট ও সম্পদ লুকাতে না পারেন সেই অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ কিন্তু সেই অনুরোধ শোনেনি আরব আমিরাত৷ ছবিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে এক রুশ ধনীর ইয়ট দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Kamran Jebreili/AP/picture alliance
জাতিসংঘে সহায়তা দিতে অনিচ্ছুক
ইউক্রেন দখলের বিরোধিতা ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত জাতিসংঘের বিভিন্ন রেজুলেশন পাস করতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সমর্থন প্রয়োজন৷ কিন্তু সেই সমর্থন দিতে মধ্যপ্রাচ্যকে অনিচ্ছুক দেখা গেছে৷
ছবি: Spencer Platt/Getty Images
কারণ কী?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র নিজে তেল উৎপাদন শুরুর পর তাদের কাছে মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্ব কিছুটা কমে গিয়েছিল৷ সে কারণে অন্যান্য দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ৷ মার্কিন সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা অ্যারন ডি. মিলার বলেন, ‘‘মধ্যপ্রাচ্যের অংশীদাররা বুঝতে পেরেছিল যে তাদের এখন কম গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে৷ সে কারণে তারা অন্যদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চেয়েছে৷’’
ছবি: Kirill Kukhmar/TASS/dpa/picture alliance
চীনা বিনিয়োগ
বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল আমদানিকারক চীন৷ মোট তেল আমদানির ৪৭ শতাংশ করা হয় মধ্যপ্রাচ্য থেকে৷ এছাড়া সৌদি আরবের ব্যালিস্টিক মিসাইল কর্মসূচিতে সহায়তা করছে চীন৷ ইরাকের তেলক্ষেত্র কিনে নেয়া এবং অবকাঠামোতেও বিনিয়োগ করছে চীন৷ ছবিতে গতবছর বাগদাদে চালু হওয়া চীনা ভাষা শিক্ষার একটি ক্লাস দেখা যাচ্ছে৷
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস মে মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করেন৷ আর প্রেসিডেন্ট বাইডেন জুলাই মাসে সৌদি আরব যাচ্ছেন৷
ছবি: REUTERS
6 ছবি1 | 6
ইইউ-র অংশ হয়ে ওঠা আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র হওয়া এক বিষয় নয়। সদস্যপদ পাওয়ার জন্য একাধিক নিয়ম পালন করতে হয়। তার জন্য সময়ও লাগে যথেষ্ট। ইউক্রেনকে ইইউ-এর অংশ করার অর্থ সেই লম্বা প্রক্রিয়া শুরু করার প্রস্তুতি।
জেলেনস্কির পাশে দাঁড়িয়ে ইটালির প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ''ইউক্রেনের মানুষ প্রতিদিন গণতন্ত্রকে রক্ষা করে চলেছেন। গণতন্ত্রের উপর প্রতিটি আঘাত জীবন দিয়ে রুখে দিচ্ছেন। আর সময় নষ্ট করা যাবে না। ইউক্রেনকে যত দ্রুত সম্ভব ইইউ-র অংশ করে নিতে হবে। ইউক্রেনের পাশে থাকতে হবে।''
ইটালির প্রেসিডেন্টের সুর ধরেই জেলেনস্কি বলেছেন, পশ্চিমা বিশ্বের সহযোগিতায় ইউক্রেনের মানুষ লড়াই করছেন। লড়াইয়ের জন্য তাদের অস্ত্রের প্রয়োজন। পশ্চিম সেই অস্ত্র পাঠাতে সময় নিলে সমস্যায় পড়ছেন যোদ্ধারা। দখল হয়ে যাওয়া জমি পুনরুদ্ধারে সময় লেগে যাচ্ছে।
সাংবাদিক বৈঠকের মধ্যেই মাক্রোঁ জানিয়ে দেন, ইউক্রেনকে তারা আরো নতুন অস্ত্র সরবরাহ করবে। ছয়টি নতুন সিজার হাউইৎজার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। মাক্রোঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জেলেনস্কি।
বোমা বর্ষণের মাঝেই যে হাসপাতালে চলে চিকিৎসা
বাখমুত শহরের এ হাসপাতালে দূর-দূরান্ত থেকে এত রোগী আসবে কোনোদিন ভাবেনি কেউ৷ এখন সেখানে নিত্য রোগীর আসা-যাওয়া৷ পুরোনো অ্যম্বুলেন্স, স্ট্রেচারের বদলে কাঠের দরজা নিয়েই চলছে যুদ্ধাহত সৈনিকদের চিকি’সা৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Jorge Silva/REUTERS
দরজায় চড়ে ‘নরক’ থেকে হাসপাতালে
যুদ্ধাহত সৈনিক ইগর বলছিলেন, ‘‘আমরা নরক থেকে এখানে এসেছি৷’’ বাখমুতের এই হাসপাতালে তিনি এসেছেন বাঁচার আশায়৷ হাতে গোনা কয়েকজন ডাক্তার এবং প্যারামেডিক্স প্রাণপণ লড়ছেন তাদের বাঁচাতে৷ হাসপাতালে আধুনিক যন্ত্রপাতি বলতে গেলে কিছুই নেই৷ পর্যাপ্ত স্ট্রেচারও না থাকায় ওপরের ছবির মতো কাঠের দরজায় তুলে আনতে হচ্ছে আহত সৈন্যদের৷
ছবি: Jorge Silva/REUTERS
সেকেন্ড-হ্যান্ড অ্যাম্বুলেন্স
এমনকি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আহত সৈন্যদের নিয়ে আসার জন্য ভালো কোনো অ্যাম্বুলেন্সও নেই৷ জার্মানি এবং পোল্যান্ডের তৈরি কয়েকটি সেকেন্ড-হ্যান্ড অ্যাম্বুলেন্সই ভরসা বাখমুতের এই হাসপাতালের৷
ছবি: JORGE SILVA/REUTERS
ক্যানাডা থেকে ইউক্রেনে
ছবির এই নারীর নাম এলেনা বুলাখতিনা৷ রুশ বংশোদ্ভূত এই ক্যানাডিয়ান কাজ করছেন পিরোগভ ফার্স্ট ভলান্টিয়ার মোবাইল হসপিট্যালে৷ ভ্রাম্যমাণ হাসপাতালটির মূল কাজ লুহানস্ক অঞ্চলের পোপসানা শহরের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আহত সৈনিকদের বাখমুতের হাসপাতালে নিয়ে আসা৷ আহতদের সব চিকিৎসা হয় না এখানে৷ প্রাথমিক চিকিৎসায় রক্তপাত বন্ধ করে, কিছুটা সুস্থ করে সব রোগীকে পাঠিয়ে দেয়া হয় ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলের বড় কোনো হাসপাতালে৷
ছবি: Jorge Silva/REUTERS
‘এত রোগী আসবে ভাবিনি’
বুলাখতিনার ‘বস’ সভেতলানা ড্রুজেনকো জানালেন এত আহত সৈনিকের চিকিৎসা দিতে গিয়ে তারা হিমশিম খাচ্ছেন, ‘‘যুদ্ধ শুরুর পর আমরা যখন কাজ শুরু করি, তখনও ভাবিনি এত লোক আহত হয়ে আসবে৷ এখন যে হারে আসছে, সংখ্যাটা সত্যিই বিশাল৷ অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে, সব শহরেই মারা যাচ্ছে মানুষ৷’’
ছবি: Jorge Silva/REUTERS
‘পোপাসনা এখন ধ্বংসস্তূপ‘
আহত সৈন্য ইগরের যুদ্ধক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা খুব ভয়াবহ৷ বলছিলেন, ‘‘ওরা (রুশ বাহিনী) ভূমি থেকে এবং বিমান থেকে হামলা চালিয়েছে, সব জায়গায় বোমা ফেলছে, দিনে-রাতে হামলা চালাচ্ছে৷ পোপাসনা একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে৷’’
ছবি: Alexander Ermochenko/REUTERS
আহত আলেসান্দ্রোর স্বস্তি
যুদ্ধাহত সৈনিক আলেসান্দ্রোর পরিবার যুদ্ধ শুরুর পরই ইউক্রেন ছেড়ে চলে গেছে পোল্যান্ডে৷ সেখানে তারা নিরাপদে আছেন৷ হাসপাতালে নিজের শরীরের ব্যথা ভুলে সন্তানের সঙ্গে কথা বলছেন আলেসান্দ্রো৷
ছবি: JORGE SILVA/REUTERS
6 ছবি1 | 6
এদিন সাংবাদিক বৈঠকের আগে কিয়েভের অদূরে ইরপিনে গেছিলেন বিশ্বনেতারা। রাশিয়া কীভাবে শহরটিকে ধ্বংস করেছে তা দেখে শলৎস বলেন, ''রাশিয়ার নিষ্ঠুরতা দেখে দম বন্ধ হয়ে আসছে। গোটা শহরটিকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছে। বেসামরিক মানুষকে খুন করা হয়েছে। কাছেই বুচায় গণকবর উদ্ধার হয়েছে। এই নিষ্ঠুরতা কল্পনার অতীত।''
মাক্রোঁ জানিয়েছেন, রাশিয়া বর্বরের মতো আক্রমণ করেছে। যে বেসামরিক মানুষরা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, তাদের সাহসিকতার প্রশংসা করে মাক্রোঁ বলেছেন, তাদের জন্যই আজ কিয়েভ এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চল রাশিয়া দখল করতে পারেনি।
রাশিয়ার বর্বরতার নিন্দা করেছেন ইটালির প্রধানমন্ত্রীও। তার বক্তব্য, নার্সারি, খেলার মাঠ সব ধ্বংস করে দিয়েছে রাশিয়া। সে এক ভয়াবহ দৃশ্য।
বৃহস্পতিবার ট্রেনে করে বিশ্বনেতারা একসঙ্গে ইউক্রেনে গেছিলেন। ট্রেন থেকে নেমে মাক্রোঁ বলেছিলেন, ''ইউক্রেনের পাশে আছি, এই বার্তা দেওয়ার জন্যই আমরা সকলে একসঙ্গে এখানে এসে পৌঁছেছি।''
মস্কো যেতে পারেন মাক্রোঁ
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ, জানিয়েছেন, তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুটিনের সঙ্গে কথা বলতে মস্কো যেতে চান। তবে তিনি বলেছেন, ''মস্কো সফরের পূর্বশর্ত হলো, প্রেসিডেন্ট পুটিনকেও আলোচনার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। এমনি এমনি আমি মস্কো যাব না।''