ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ভিডিও-ভাষণ দিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। ইউক্রনকে ইইউ-র সদস্য করার দাবি।
বিজ্ঞাপন
রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র, বোমা, গোলায় প্রতিদিন বিধ্বস্ত হচ্ছে ইউক্রেনের শহরগুলি। এই অবস্থায় ইউরোপীয় পার্লামেন্টে জেলেনস্কি দাবি করলেন, ''কেউ আমাদের ভেঙে টুকরো করতে পারবে না। আমরা শক্তিশালী। আমরা ইউক্রেনের বাসিন্দা। আমরা দেখিয়ে দিয়েছি, কীভাবে লড়তে হয়।''
কী বলেছেন জেলেনস্কি
ইউরোপীয় পার্লামেন্টে জেলেনস্কি বলেছেন, ''অবিলম্বে যেন ইউক্রেনকে ইইউ-র সদস্য করা হয়।'' তার দাবি, ''ইউক্রেন ইইউ-র সদস্য হওয়ার যোগ্যতা রাখে। কারণ, আমরা দেখিয়ে দিয়েছি, কীভাবে নিজের অস্তিত্বের জন্য লড়াই করতে হয়।''
জেলেনস্কি বলেছেন, ''আমি বিশ্বাস করি, আমরা আমাদের জীবন দিচ্ছি, কারণ, আমরা সমান থাকতে চাই। সেজন্য আমদের সেরা সন্তানদের বিসর্জন দিচ্ছি।''
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট খারকিভের অবস্থার কথা জানান। কীভাবে সেখানে সমানে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করছে এবং তার মধ্যে কীভাবে ইউক্রেন লড়ছে, সেকথা জানান তিনি।
আর ইইউ-কে জেলেনস্কি বলেন, ''আপনারা প্রমাণ করুন যে, আপনারা আমাদের সঙ্গে আছেন। আপনারা আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছেন না। আপনারা প্রমাণ করুন যে, আপনারা সত্যিকারের ইউরোপীয়। তাহলেই মৃত্যুকে হারিয়ে জীবন জয়ী হবে। অন্ধকার কেটে গিয়ে আলো দেখা যাবে।'' তিনি বলেছেন, ''ইইউ সঙ্গে থাকলে ইউক্রেন শক্তিশালী থাকবে। ইইউ সঙ্গে না থাকলে ইউক্রেন একলা হয়ে পড়বে।''
ইইউ-র পার্লামেন্ট সদস্যরা জেলেনস্কিকে দাঁড়িয়ে অভ্যর্থনা জানান। তারা অনেকেই 'স্ট্যান্ড উইথ ইউক্রেন' লেখা টি শার্ট পরেছিলেন।
কমেডিয়ান থেকে যুদ্ধকালীন নেতা জেলেনস্কি
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি একসময় অভিনেতা ও কমেডিয়ান ছিলেন৷ এখন যুদ্ধকালীন নেতা হিসেবে বিশ্বের মনোযোগ কেড়েছেন ৪৪ বছর বয়সি জেলেনস্কি৷
ইউক্রেনে হামলা শুরুর পরদিন শুক্রবার প্রেসিডেন্ট ভবনের কাছে কয়েকজন উপদেষ্টাকে নিয়ে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে ভিডিও বার্তা দিয়েছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি৷ তিনি তার পদ ছেড়ে দিয়েছেন বলে ওঠা গুজব মিথ্যা প্রমাণ করতে ভিডিওটি করেন ৪৪ বছর বয়সি জেলেনস্কি৷
ছবি: FACEBOOK/@Volodymyr Zelensky/AFP
বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট নেই
রাশিয়া তাকে হত্যা করতে চায় - এমন সতর্কবাণী থাকার পরও জেলেনস্কি বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট বা হেলমেট ছাড়াই ভিডিওতে উপস্থিত হয়েছিলেন৷ তাকে দেখে মনে হচ্ছিল, তিনি ঠিকমতো ঘুমাননি৷ মাঝেমধ্যে তাকে হাসতেও দেখা গেছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা সবাই এখানে আছি৷ আমাদের সামরিক বাহিনী এখানে৷ সমাজের নাগরিকরা এখানে৷ আমরা সবাই আমাদের দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করছি, এবং এটা এভাবেই থাকবে৷’’
ছবি: Ukrainian Presidential Press Service/REUTERS
মিশ্র বার্তা
এই ছবিটি শনিবারের ভিডিও থেকে নেয়া৷ সামরিক স্টাইলের খাকি টি-শার্টের ওপর হালকা সবুজ জ্যাকেট পরে জেলেনস্কি নাগরিকদের আশ্বস্ত করছেন যে, তিনি কিয়েভেই আছেন৷ এর বাইরে আনুষ্ঠানিক পোশাক পরেও সংবাদ সম্মেলন করেছেন৷ তার বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি একইসঙ্গে নাগরিকদের চাঙা রাখার পাশাপাশি তাদের আসন্ন বিপদ সম্পর্কেও সচেতন করার চেষ্টা করেছেন৷ তিনি ইউক্রেনীয়দের ‘অদম্য’ বৈশিষ্ট্য নিয়েও কথা বলেছেন৷
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জেলেনস্কির কিয়েভ ছাড়ার প্রয়োজন হলে তাকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছিলেন৷ কিন্তু জেলেনস্কি বাইডেনকে বলেন, ‘‘আমার অস্ত্র দরকার, উড়ান নয়৷’’ ব্রিটেনের ইউক্রেন দূতাবাসের টুইটে এই তথ্য জানানো হয়েছে৷
ছবি: AFP
আবেগী বার্তা
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে এক ভিডিও কলে জেলেনস্কি বলেন, ‘‘আমাকে হয়ত আপনারা শেষবারের মতো জীবন্ত দেখছেন৷’’ এরপর তিনি তাদের কাছে অস্ত্র সহায়তা কামনা করেন৷
ছবি: EU Council/Pool /AA/picture alliance
চার্চিলের সঙ্গে মিল
জেলেনস্কির সঙ্গে ব্রিটেনের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সময়কালীন প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের মিল খুঁজে পেয়েছেন চার্চিলের জীবনী লেখক অ্যান্ড্রু রবার্টস৷ তিনি জেলেনস্কির ‘অভাবনীয় ব্যক্তিগত সাহসিকতা’, ‘মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের দক্ষতা’ এবং ‘জয় সম্পর্কে তার অটল বিশ্বাসের’ প্রশংসা করেন৷ চার্চিল একসময় বলেছিলেন, মানুষের অনেকগুলো গুণের মধ্যে প্রথম হচ্ছে সাহস, কারণ এটা এমন একটা গুন, যা অন্যগুলো নিশ্চিত করে৷
অভিনেতা ও কমেডিয়ান
২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগে জেলেনস্কি একজন প্রখ্যাত অভিনেতা ও কমেডিয়ান ছিলেন৷ একটি শোতে তিনি স্কুল শিক্ষকের ভূমিকায় ছিলেন৷ শোতে দেখা যায়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে দেয়া তার জ্বালাময়ী এক বক্তব্য একজন শিক্ষার্থী রেকর্ড করে অনলাইনে ছেড়ে দেয়৷ পরে তিনি দেশের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন বলে শোতে দেখানো হয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/Ukrainian Presidential Press Office via AP
পোরোশেঙ্কোর মন্তব্য
২০১৯ সালে যখন জেলেনস্কি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হন তখন তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক প্রেসিডেন্ট পেট্রো পোরোশেঙ্কো (ছবি) তার ইউক্রেনিয়ান ভাষা নিয়ে হাসাহাসি করেছিলেন (কারণ জন্মসূত্রে জেলেনস্কির প্রাথমিক ভাষা হচ্ছে রুশ)৷ এছাড়া পুটিনের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার মতো রাজনৈতিক মর্যাদা তার নেই বলেও মন্তব্য করেছিলেন৷ কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় পোরোশেঙ্কোকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট হয়ে যান জেলেনস্কি৷
ছবি: Anna Marchenko/dpa/TASS/picture alliance
জেলেনস্কির উত্তর
নির্বাচনি প্রচারণার সময় জেলেনস্কির সমালোচকরা বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য যে ধরনের গাম্ভীর্য ভাব দরকার, সেটা তার নেই৷ এর উত্তরে জেলেনস্কি বলেছিলেন, ‘‘আমি রাজনীতিবিদ নই৷ আমি একজন সাধারণ মানুষ যে সিস্টেম ভাঙতে এসেছে৷’’
ছবি: Daniel Leal-Olivas/AFP
শপথ অনুষ্ঠানে অঙ্গীকার
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে জেলেনস্কি বলেছিলেন, ‘‘এতদিন ইউক্রেনীয়দের হাসানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, আর এখন এমন চেষ্টা করবো যেন ইউক্রেনীয়দের কাঁদতে না হয়৷’’
ছবি: Irina Yakovleva/TASS/dpa/picture alliance
10 ছবি1 | 10
ইউক্রেনকে সদস্য করতে
চেক প্রজাতন্ত্র, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া ও স্লোভেনিয়ার প্রেসিডেন্টরা খোলা চিঠিতে সই করে ইউক্রেনকে ইইউ-র সদস্য করার দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, ইউক্রেনকে ইইউ-র সদস্য করা হলে সেখানে বাণিজ্য করার ক্ষেত্রে সুবিধা হবে, বিনিয়োগ বাড়বে।
রোমানিয়ার প্রেসিডেন্ট মঙ্গলবার বলেছেন, তিনিও ইউক্রেনকে ইইউ-র সদস্য করার পক্ষে। মলডোভা, হাঙ্গেরি ও জর্জিয়াও চাইছে ইউক্রেনকে সদস্য করা হোক।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েনও ইউক্রেনকে সদস্য করার পক্ষে। তবে ইইউ-র সব দেশকে মতৈক্যের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেয়ারবক জানিয়েছেন, এটা নিয়ে তাড়াহুড়ো করা সম্ভব নয়। কারণ, কয়েক মাসের মধ্যে ইউক্রেনকে সদস্যপদ দেয়া যাবে না। তবে তারা ইউক্রেনকে ইউরোপের অংশ বলেই মনে করেন।