রাশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্কের উপর নির্ভরশীলতার দোহাই দিয়ে ইসরায়েল ইউক্রেনের ইহুদি প্রেসিডেন্টকে এখনো সামরিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত নয়৷ তবে রাশিয়া-ইরান ঘনিষ্ঠতা সে দেশের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
ইউক্রেনের দুর্দিনে পশ্চিমা বিশ্ব নিজস্ব স্বার্থ সামলে যতটা সম্ভব সামরিক সহায়তা দিয়ে চলেছে৷ রাশিয়ার হানাদার বাহিনীর মোকাবিলায় ইউক্রেনের সৈন্যরা সেই অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম যথেষ্ট কার্যকরভাবে প্রয়োগ করছে৷ কিন্তু সম্প্রতি গোটা দেশ জুড়ে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ধাক্কা সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে ইউক্রেন৷ তাই আপাতত শহরগুলির আকাশে মজবুত প্রতিরোধ ব্যবস্থার উপর জোর দিচ্ছে প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির সরকার৷ জার্মানির মতো কিছু দেশ সেই ডাকে সাড়া দিলেও ইসরায়েল তার বিখ্যাত ‘আয়রন ডোম' প্রতিরোধ ব্যবস্থা হস্তান্তর করতে অস্বীকার করছে৷ এমন প্রণালী সত্যি ইউক্রেনে কতটা কার্যকর হবে, সে বিষয়ে অবশ্য কিছু সংশয় রয়েছে৷
ইউক্রেনের ইহুদি প্রেসিডেন্টের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা ইসরায়েলের জন্য চরম অস্বস্তির কারণ, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই৷ কিন্তু অন্যদিকে জাতীয় স্বার্থে এই মুহূর্তে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতিও সে দেশের পক্ষে মেনে নেওয়া কঠিন৷ বিশেষ করে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার পরিস্থিতি সামলাতে মস্কোর সঙ্গে সহায়তার উপর ইসরায়েল অত্যন্ত নির্ভরশীল৷ রাশিয়ার বিশাল ইহুদি সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষাও সে দেশের জন্য জরুরি৷ ফলে ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলার নিন্দা করলেও এখনো পর্যন্ত সে দেশকে মানবিক সাহায্য ছাড়া অন্য কোনো সহায়তা দেয় নি ইসরায়েলের সরকার৷
ইউক্রেনকে সরাসরি অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র, রকেট ও ড্রোন প্রতিরোধ প্রণালী সরবরাহ না করলেও ইসরায়েল এমন হামলা সম্পর্কে নিরীহ মানুষকে আগাম সতর্ক করতে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে৷ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গানৎস ইইউ রাষ্ট্রদূতদের বলেন, ড্রোন হামলা সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্যের ভিত্তিতে ইসরায়েল ‘এয়ার ডিফেন্স অ্যালার্ট' ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে৷ ইসরায়েলে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ইয়েভগেন কর্নিচুক অবশ্য এমন প্রণালী তাঁর দেশের জন্য আর প্রাসঙ্গিক নয়৷ প্রতিরক্ষামন্ত্রী গানৎস এখনো সামরিক সহায়তা দিতে অস্বীকার করে চলেছেন৷ জেলেনস্কি একাধিকবার এমন মনোভাবের জন্য ইসরায়েলের কড়া সমালোচনা করেছেন৷ আক্রমণাত্মক অস্ত্র না পেলেও কমপক্ষে প্রতিরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সামরিক সরঞ্জামের প্রত্যাশা করছেন তিনি৷ বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ইয়াইর লাপিদ ও ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুলেবা টেলিফোনে কথা বলবেন৷
রাশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাইলেও রাশিয়া ও ইরানের মধ্যে বেড়ে চলা ঘনিষ্ঠতা ইসরায়েলের অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠছে৷ অথচ সিরিয়ায় ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীর স্থাপনার উপর ইসরায়েল বিমান হামলার ক্ষেত্রে রাশিয়ার সহায়তার উপর নির্ভরশীল সে দেশ৷ রাশিয়ার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ সোমবার বলেন, ইসরায়েল সম্ভবত কিয়েভ সরকারকে অস্ত্র পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ এমন ‘বেপরোয়া' পদক্ষেপ নিলে সব দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে বলে তিনি সতর্ক করে দেন৷
শাহেদ-১৩৬ : ইউক্রেনে আতঙ্ক ছড়ানো ইরানের ড্রোন
ইরানের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে চলেছে ইইউ৷ না, পারমাণবিক অস্ত্র বা মাহসা আমিনি হত্যাকাণ্ড নয়, নিষেধাজ্ঞার কারণ ইরানের এমন এক ড্রোন যা নিয়ে ইউক্রেনে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে রাশিয়া৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Efrem Lukatsky/AP/picture alliance
ইউক্রেনের আকাশে পুলিশের মুহুর্মুহু গুলি
১৭ অক্টোবরের ছবি৷ আকাশের দিকে গুলি ছুঁড়ছেন ইউক্রেনের দুই পুলিশ সদস্য৷ দূরে রাশিয়ার ড্রোন ছুটে আসতে দেখেছেন, তাই এভাবে আকাশের দিকে গুলি ছোঁড়েন তারা৷ ইউক্রেনের অভিযোগ- রাশিয়াকে এমন এক ড্রোন সরবরাহ করেছে ইরান, যা এখন অনায়াসে উড়ে ঢুকে রাজধানী কিয়েভে, ঢুকে দমাদম বোমা ফেলছে যেখানে-সেখানে৷
ছবি: Vadim Sarakhan/REUTERS
একমাসে ২২০টি ড্রোন!
না, ২২০টি ড্রোন রাশিয়াকে দেয়নি ইরান, অভিযোগ সত্যি হলে তার চেয়ে অনেক বেশি ড্রোন ইরান থেকে পেয়েছেন পুটিন৷ ইউক্রেনের দাবি, গত এক মাসের চেয়ে একটু বেশি সময়ে ২২০টিরও বেশি ড্রোন গুলি করে ফেলেছে তাদের নিরাপত্তা বাহিনী৷ রাশিয়া অবশ্য ইরানের কাছ থেকে কোনো ধরনের ড্রোন নেয়ার কথা অস্বীকার করেছে৷ ইরানেরও একই সুর, অর্থাৎ তারা বলছে, রাশিয়াকে কোনো ড্রোনই দেয়া হয়নি৷ ছবিতে কিয়েভের আকাশে রাশিয়ার ড্রোন৷
ছবি: Roman Petushkov/REUTERS
কিয়েভে ভয়াবহ হামলা
সোমবার ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের আবাসিক এলাকায় বোমা হামলা চালায় রাশিয়ার ড্রোন৷ হামলায় পাঁচ জন মারা যান৷ ছবিতে হামলায় বিধ্বস্ত এক ভবন থেকে আটকে পড়াদের বের করার চেষ্টা করছেন উদ্ধারকর্মীরা৷
ছবি: Oleksii Chumachenko/ZUMA/IMAGO
আতঙ্কের নাম শাহেদ-১৩৬
১৭ অক্টোবরের এই ছবিতেও ড্রোন থেকে ফেলা বোমায় বিধ্বস্ত কিয়েভের আবাসিক এলাকার এক অংশ দেখা যাচ্ছে৷ ইউক্রেনের দাবি- রাশিয়ার হয়ে এ হামলা চালিয়েছে ইরানের তৈরি শাহেদ-১৩৬ ড্রোন৷
ছবি: Oleksii Chumachenko/ZUMA Wire/IMAGO
শাহেদ-১৩৬-এর আরেক নাম
ইউক্রেনের কর্তৃপক্ষ রাশিয়ার ব্যবহার করা ড্রোনকে কামিকাজে ড্রোন নামেও বর্ণনা করছে৷ ওপরের ছবিতে সেই ড্রোনের হামলায় বিধ্বস্ত কিয়েভের আবাসিক এলাকার একাংশ৷
ছবি: NurPhoto/IMAGO
কামিকাজে কী?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের বিমান বাহিনী এই নামে মিত্রবাহিনীর নৌবহরের ওপর আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছিল৷ জাপানি ভাষায় কামিকাজে অর্থ ‘স্বর্গীয় বায়ু’৷ বিস্ফোরক বোঝাই বিমান নিয়ে বৈমানিকরা মিত্রবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজে আত্মঘাতী হামলা চালাতো বলে সেই হামলার নাম দেয়া হয়েছিল কামিকাজে৷ এমন হামলায় জাপানের প্রায় তিন হাজার ৮০০ বৈমানিক প্রাণ দিয়েছিলেন৷ বিপরীতে অন্তত সাত হাজার নৌ-সেনা হারিয়েছিল মিত্রবাহিনী৷
ছবি: Vadym Sarakhan/AP/picture alliance
ইউক্রেনের আকাশে ড্রোন মানেই এখন আতঙ্ক
কিয়েভের আকাশে উড়ে যাচ্ছে রাশিয়ার আরেকটি ড্রোন৷ এই ছবিটিও ১৭ অক্টোবরের৷
ছবি: SERGEY SHESTAK/EPA-EFE
ক্ষুব্ধ যুক্তরাষ্ট্র
কিয়েভসহ ইউক্রেনের কয়েকটি শহরে ড্রোন হামলা হওয়ার পর হোয়াইট হাউস জানায়, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র শিগগিরই যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুলবে৷ এ বিষয়ে রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া এখনো জানা যায়নি৷
ছবি: Vladyslav Musiienko/REUTERS
ইরানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
সোমবারের হামলার পর ইরানের দূতাবাসের সামনে ইউক্রেনীয়দের বিক্ষোভ৷ ইরানের প্রতি অবিলম্বে রাশিয়াকে ড্রোন দিয়ে সহায়তা বন্ধ করার আহ্বান জানান বিক্ষোভকারীরা৷
ছবি: SERGEY DOLZHENKO/EPA-EFE
পোল্যান্ডেও বিক্ষোভ
রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করার পর অনেক ইউক্রেনীয় পাশের দেশ পোল্যান্ডে আশ্রয় নেয়৷ সোমবার পোল্যান্ডের ওয়ারশ শহরের ইউক্রেনীয়রা কিয়েভে ড্রোন থেকে বোমা হামলার প্রতিবাদ জানান৷ ওয়ারশর ইরান দূতাবাসে গিয়ে বিক্ষোভ জানান তারা৷
ছবি: Aleksander Kalka/ZUMA//picture alliance
ইরানের ওপর আরো নিষেধাজ্ঞা
রাশিয়াকে ড্রোন সরবরাহ করায় বুধবার ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নেয় ইইউ৷ বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদেও বৈঠক হয়৷ রুদ্ধদ্বার বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র,ফ্রান্স এবং ব্রিটেন কিয়েভে ড্রোন হামলা চালানোয় নিরাপত্তা পরিষদকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব আনান অনুরোধ জানায়৷