‘নিরপেক্ষতা' সংক্রান্ত আইনের কারণে সুইজারল্যান্ড সংকটের সময় কোনো পক্ষকে অস্ত্র সরবরাহ করতে পারে না৷ ইউক্রেন সংকটের প্রেক্ষাপটে নতুন বিতর্কের মাঝে সুইস প্রেসিডেন্ট বার্লিন সফর করলেন৷
বিজ্ঞাপন
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এক ধাক্কায় অস্ত্র, সামরিক সরঞ্জাম ও গোলাবারুদের চাহিদা বিশাল মাত্রায় বাড়িয়ে দিচ্ছে৷ সরকারি ও বেসরকারি অস্ত্র প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি সেই চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে৷ ফলে মজুত ভাণ্ডারের দিকে সবার আগে নজর পড়ছে৷ এমনকি রপ্তানি করা প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আবার কিনে নেবার উদ্যোগ নিচ্ছে কিছু দেশ৷ জার্মানির মতো দেশ প্রথা ভেঙে যুদ্ধক্ষেত্রে অস্ত্র সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ কিন্তু ইউরোপের দেশ সুইজারল্যান্ড ‘নিরপেক্ষতা' বজায় রাখতে এখনো বদ্ধপরিকর৷
জার্মানিসহ পশ্চিমা বিশ্ব ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার একতরফা হামলার ক্ষেত্রে ‘নিরপেক্ষতা'-র কোনো অবকাশ দেখছে না৷ ইউক্রেনের সহায়তা না করা পরোক্ষভাবে রাশিয়াকে মদত করার সমান বলে তারা মনে করছে৷ পশ্চিমা বিশ্বের মতে, বল প্রয়োগ করে সীমানা বদলানোর এমন আচরণকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া চলে না৷ কারণ সে ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে অন্যান্য দেশের সার্বভৌমত্বও হুমকির মুখে পড়তে পারে৷
সুইজারল্যান্ড এখনো সেই যুক্তি মেনে নিতে নারাজ৷ সরকার ও সংসদ ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ করতে অস্বীকার করছে৷ সে দেশের প্রেসিডেন্ট আল্যাঁ ব্যার্সে মঙ্গলবার বার্লিন সফরে এসে আবার ইউক্রেনকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন৷ উল্লেখ্য, সুইজারল্যান্ড ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর সদস্য নয়৷ সুইস প্রেসিডেন্ট বলেন, দেশের আইন ভেঙে সরকার সংকটের কোনো পক্ষকে অস্ত্র সরবরাহ করবে, এমন প্রত্যাশা করা উচিত নয়৷ তিনি মনে করিয়ে দেন, যে সুইজারল্যান্ডে প্রস্তুত সামরিক সরঞ্জাম কেনার সময় ক্রেতাকে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হয়, যে সেই সরঞ্জাম বিবাদমান পক্ষের হাতে পৌঁছবে না৷ বিদেশ থেকে আমদানি করা অস্ত্র ও গোলাবারুদ নতুন করে রপ্তানির ক্ষেত্রেও সেই বাধা রয়েছে৷ তবে সুইজারল্যান্ডেও বিষয়টি নিয়ে তর্কবিতর্ক চলছে বলে সুইস প্রেসিডেন্ট স্বীকার করেন৷ তবে সরকার ও সংসদের মধ্যে শেষ পর্যন্ত রফা হলেও সেই প্রশ্নে গণভোটের সম্ভাবনা রয়েছে৷ ফলে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার শেষে গোটা পরিকল্পনা বানচাল হয়ে যেতে পারে৷
আপাতত জার্মানি সুইজারল্যান্ডে মজুত গেপার্ড ট্যাংকের গোলাবারুদ ইউক্রেনে সরবরাহের জন্য চাপ দিচ্ছে৷ জার্মানি মোট ৩৪টি ট্যাংক ইউক্রেনের হাতে তুলে দিলেও মাত্র ৬০ হাজার রাউন্ড গোলাবারুদ সরবরাহ করতে পেরেছে৷ ডেনমার্ক ও স্পেনও ইউক্রেনকে ট্যাংক সরবরাহ করে সুইজারল্যান্ডের কাছে গোলাবারুদ সরবরাহের অনুরোধ করেছে৷
জার্মান চ্যান্সেলার ওলাফ শলৎস সুইজারল্যান্ডে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত বিরোধিতা দূর হবে বলে আশা প্রকাশ করেন৷ সুইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সবাই জানে ইউক্রেনের অস্ত্র ও গোলাবারুদের প্রয়োজন৷ সেই কারণে জার্মানি ঘাটতি মেটাতে একাধিকবার সুইজারল্যান্ডের কাছে গোলাবারুদ সরবরাহের অনুরোধ জানিয়েছে৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, এএফপি)
বিধ্বস্ত ইউক্রেনে যেমন কাটছে জীবন
কবে, কিভাবে শেষ হবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জানা নেই কারো৷ অনেকেই আক্রান্ত এলাকা থেকে সরে গিয়েছেন৷ অনেকে ছেড়েছেন ইউক্রেন৷ কিন্তু অনেকেই বিধ্বস্ত ইউক্রেনেই মৃত্যুর আশঙ্কা মাথায় নিয়ে জীবন কাটাচ্ছেন৷ ছবিঘরে থাকছে তাদের কথা৷
ছবি: VIOLETA SANTOS MOURA/REUTERS
ধ্বংসপ্রাপ্ত দালান
গালিনা স্লেপকোর বয়স ৬৪ বছর৷ এই বয়সে ভিটেমাটি ছেড়ে কোথাও গিয়ে নতুন জীবন শুরু করাটাও তার পক্ষে প্রায় অসম্ভব৷ রাশিয়ার দখল করে নেয়া দনেৎস্ক অঞ্চলে তার এই বাড়িটির এক পাশের দেয়াল রাশিয়ার মর্টার শেলের আঘাতে ধসে গেছে৷ এই অবস্থাতেই তাকে কাটাতে হয়েছে শীতকাল৷
ছবি: Alexander Ermochenko/REUTERS
যুদ্ধের ফ্রন্টলাইনে
পুরো ইউক্রেন যুদ্ধটাই যেন থেমে আছে বাখমুতে৷ কৌশলগতভাবে তেমন গুরুত্বপূর্ণ না হলেও মর্যাদার লড়াইয়ের কারণে এই এলাকা দখলে নিতে চায় দুই পক্ষই৷ বাখমুতের চাসিভ ইয়ার গ্রামে এখনও হাতেগোণা কয়েকজন বাসিন্দা রয়ে গেছেন জীবনের ঝুঁকির তোয়াক্কা না করেই৷ তাদের একজনকে দেখা যাচ্ছে ছবিতে৷
ছবি: Kai Pfaffenbach/REUTERS
মুহুর্মুহু বোমাবর্ষণ
যেকোনো সময় পালটে যেতে পারে পরিস্থিতি৷ দোনেৎস্ক অঞ্চলের বাখমুতে এখন চলছে চূড়ান্ত লড়াই৷ দুই পক্ষের সেনারাই দখল-পুনর্দখলের চেষ্টায় রত৷ রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চলের সুপারমার্কেটে এসে পড়েছে একটি মর্টার শেল৷ আগে এক হামলায় আহত এক নারীকে দেখা যাচ্ছে কান্না করতে৷ বাখমুতে এখন প্রতিটি মুহূর্তই জীবন-মরণের লড়াই৷
ছবি: ALEXANDER ERMOCHENKO/REUTERS
সরবরাহ সংকট
যুদ্ধের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সংকট দেখা দিয়েছে৷ স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যুৎ ও জলের মতো অতিপ্রয়োজনীয় সেবাও এখন বিলাসিতা৷ হাতের কাছে যা পাওয়া যায়, তা দিয়েই প্রয়োজন মিটিয়ে কোনোরকমে টিকে থাকার লড়াই করছেন বাসিন্দারা৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি বিধ্বস্ত সামরিক বিমান থেকে ধাতব দ্রব্য নিয়ে যাচ্ছেন দুজন৷ সেটিকেই কোনো কাজে লাগানোর চিন্তা রয়েছে তাদের৷
ছবি: OLEKSANDR KLYMENKO/REUTERS
একটি রক্তাক্ত চশমা
এই ছবিটিই অনেক কথা বলে দেয়৷ কস্তিয়ানতিনিভকা নামের একটি আবাসিক এলাকায় ভয়াবহ বোমা হামলায় মারা যান অনেকেই৷ কেউ ছিলেন বাসায়, কেউ বাজারে, কেউ রাস্তায়৷ হয়তো একজন বাসিন্দার রক্তমাখা চশমা এখনও পড়ে রয়েছে মাঠের পাশে৷ পৃথিবীকে আর দেখা হবে না তার৷
ছবি: VIOLETA SANTOS MOURA/REUTERS
জ্বালানি সংকট
ঠিক পেছনেই একটি গাড়ি বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে৷ এখন বাখমুতের রাস্তায় গাড়ি চালানো অনেক কারণেই আঁতকে ওঠার কারণ৷ একে তো জ্বালানি জোগাড় করাই কষ্ট ও ব্যয়সাধ্য৷ অন্যদিকে, যেকোনো সময় হতে পারে মর্টার বা বিমান হামলা৷ ফলে রাস্তায় বের হয়ে কেউই নিশ্চিত টার্গেটে পরিণত হতে চান না৷ ফলে দোকানে যেতেও বেশিরভাগের ভরসাই নিজের পা, বড়জোর বাইসাইকেল৷
ছবি: KAI PFAFFENBACH/REUTERS
ত্রাণ সহায়তা
প্রায় পুরো অঞ্চলই ধ্বংসপ্রায়৷ ফলে বাখমুতের সকল অফিস-আদালত, দোকানপাট প্রায় বন্ধ৷ যেসব গুটিকয়েক দোকান খোলা রয়েছে, অনেকেই সেখান থেকে জিনিস কেনার সামর্থ্য নেই৷ ফলে যেসব বাসিন্দা এখনও বাখমুতে রয়ে গেছেন তাদের অনেকের নির্ভর করতে হচ্ছে ত্রাণের ওপর৷ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা ঝুঁকি নিয়েই যুদ্ধের ফ্রন্টলাইনে ত্রাণ সরবরাহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷
ছবি: KAI PFAFFENBACH/REUTERS
জীবন-মৃত্যুর দোলাচল
এই ছবিটি খারকিভের৷ রাশিয়া দখলে নেয়ার পর ইউক্রেনের সেনারা আবার এই এলাকা পুনর্দখলে নিয়েছে৷ কিন্তু কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলটি দখলে মরিয়া রুশবাহিনী৷ ফলে এখনও প্রায়ই বোমাবর্ষণ চলছে এখানে৷ রুশ মিসাইলে ধ্বংস হওয়া একটি বাড়ির পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন এক নারী৷ মনে ভয়, যেকোনো মুহূর্তে আবারও হতে পারে নির্বিচার হামলা৷
ছবি: Sofiia Gatilova/REUTERS
প্রিয়জন হারানোর বেদনা
একসঙ্গেই থাকা, একসঙ্গেই কাজ৷ কদিন আগেও বন্ধুর চেয়েও বেশি ছিলেন ইভান সোরোকিনের সহকর্মী৷ কর্মরত অবস্থাতেই বিমান হামলায় মারা যান এই গাড়ি মেরামতকর্মী৷ বন্ধুকে শেষ বিদায় জানানোর আগে তার মরদেহ আনা হয়েছে তার কাজের জায়গাতেই৷