জার্মানির অত্যাধুনিক যুদ্ধের ট্যাঙ্ক লিওপার্ড ২ ইউক্রেনকে দেওয়া হতে পারে। দাবি একাধিক জার্মান সংবাদমাধ্যমের।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার জার্মানির একটি দৈনিক প্রথম জানায়, জার্মানি সিদ্ধান্ত নিয়েছে লিওপার্ড ২ ট্যাঙ্ক ইউক্রেনকে পাঠানো হবে। সরকারি সূত্র উদ্ধৃতি করে এই খবর দিয়েছে ওই পত্রিকা। যদিও সরকারের নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা বিভাগের কথা উল্লেখ করা হয়নি ওই রিপোর্টে। পরে জার্মানির আরো কয়েকটি সংবাদমাধ্যম এবং সংবাদসংস্থা ডিপিএ একই খবর প্রকাশ্যে এনেছে। তবে সরকার এখনো পর্যন্ত এবিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
সংবাদমাধ্যমের তথ্য সত্য হলে ইউক্রেনকে অত্যাধুনিক ট্যাঙ্ক দিতে চলেছে জার্মানি। বস্তুত, এনিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা এবং বিতর্ক চলছিল। জার্মানি আদৌ এই ট্যাঙ্ক ইউক্রেনকে পাঠাতে সম্মত হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। পোল্যান্ডও এই ট্যাঙ্ক ইউক্রেনকে পাঠাতে চেয়েছিল। তা-ও সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল। অবশেষে তার নিষ্পত্তি হতে চলেছে।
লিওপার্ড টু ট্যাঙ্ক কী, ইউক্রেন কেন তা চাইছে?
যুদ্ধ তাড়াতাড়ি শেষ করতে জার্মানির তৈরি লিওপার্ড টু ট্যাঙ্ক চাইছে ইউক্রেন৷ কিন্তু জার্মানি তা দিতে চাইছে না৷ কিন্তু কেন, আর কেনইবা লিওপার্ড টু ট্যাঙ্ক এত গুরুত্বপূর্ণ?
ছবি: Philipp Schulze/dpa/picture-alliance
লিওপার্ড টু ট্যাঙ্ক চায় ইউক্রেন
ইউক্রেন ও তার মিত্ররা মনে করছে, রাশিয়া ইউক্রেনের যে অংশগুলো দখল করেছে সেগুলো থেকে রুশদের সরাতে পারলে যুদ্ধ তাড়াতাড়ি শেষ করা যাবে৷ কিন্তু সেটা করতে হলে জার্মানির তৈরি লিওপার্ড টু এর মতো ট্যাঙ্ক দরকার বলে জানিয়েছে ইউক্রেন৷ কারণ তাদের কাছে থাকা ট্যাঙ্কগুলো সেই সোভিয়েত আমলের৷
ছবি: Michael Kappeler/dpa/picture alliance
কেন লিওপার্ড টু?
১৯৭৯ সাল থেকে এই ট্যাঙ্ক ব্যবহৃত হয়ে আসছে৷ এটি প্রায় ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে৷ সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৬৮ কিলোমিটার৷ এতে ১২০ মিমি নলের বন্দুক ছাড়াও আছে দুটি লাইট মেশিন গান৷ যুক্তরাষ্ট্রের আব্রামস ট্যাঙ্কের চেয়ে লিওপার্ড টু চালাতে কম জ্বালানি লাগে বলে ইউক্রেনের জন্য এটি বেশি উপযোগী মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: Moritz Frankenberg/dpa/picture-alliance
ইউরোপে বহুল ব্যবহৃত
ইউরোপের এক ডজনেরও বেশি দেশে বর্তমানে দুই হাজারেরও বেশি লিওপার্ড টু ব্যবহৃত হচ্ছে৷ ক্যানাডাও এটি ব্যবহার করছে৷ কসোভো, বসনিয়া, আফগানিস্তান ও সিরিয়া এটি ব্যবহৃত হয়েছে৷
ছবি: Michael Kappeler/dpa/picture alliance
জার্মানির চাওয়া
জার্মানি এখন পর্যন্ত ইউক্রেনকে সাঁজোয়া যানসহ অনেক অস্ত্র দিলেও একা লিওপার্ড ২ ট্যাঙ্ক দিতে রাজি হচ্ছে না৷ কারণ তারা মনে করছে এখন পর্যন্ত ইউক্রেনকে যা দেয়া হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হচ্ছে লিওপার্ড টু- যা একটি সমস্যার বিষয় বলে মনে করছে জার্মানি৷ তবে কোনো জোটের আওতায় ইউক্রেনকে ট্যাঙ্ক দেয়া হলে তার অংশ হিসেবে লিওপার্ড টু দেয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছে জার্মানি৷
ছবি: Moritz Frankenberg/dpa/picture-alliance
পোল্যান্ড দিতে চায়
পোল্যান্ড বলেছে তারা ইউক্রেনকে লিওপার্ড টু দিবে৷ কিন্তু জার্মানির অনুমতি ছাড়া পোল্যান্ড সেটি ইউক্রেনকে দিতে পারবে না৷ তবে রোববার জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক জানিয়েছেন, পোল্যান্ড ইউক্রেনকে ওই ট্যাঙ্ক পাঠালে জার্মানি আপত্তি করবে না৷
ছবি: Michael Kappeler/dpa/picture-alliance
৩০০, নাকি ১০০?
ইউক্রেন বলছে, তাদের ৩০০টি লিওপার্ড টু ট্যাঙ্ক দরকার৷ তবে পশ্চিমা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ১০০টি ট্যাঙ্ক হলেই যুদ্ধের ভারসাম্যে পরিবর্তন আনা সম্ভব হতে পারে৷
ছবি: Philipp Schulze/dpa/picture-alliance
6 ছবি1 | 6
উল্লেখ্য, মঙ্গলবারই জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াসের সঙ্গে বৈঠক হয় ন্যাটো প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গের। সেখানে জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছিলেন, দ্রুত এবিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে চলেছে। তারপরেই বস্তুত, জার্মান সংবাদমাধ্যমগুলি সূত্রকে উদ্ধৃত করে এই খবর প্রকাশ করতে শুরু করে।
জার্মানি আদৌ ইউক্রেনকে ট্যাঙ্ক দেবে কি না, তা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই টালবাহানা চলছে। ইউক্রেন পশ্চিমা দেশগুলির কাছে অনেকদিন ধরেই যুদ্ধের ট্যাঙ্ক চাইছে। তাদের দাবি, ইউক্রেনের যে এলাকাগুলিতে রাশিয়ার সেনা ঢুকে বসে আছে, তাদের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য অত্যাধুনিক ট্যাঙ্কের প্রয়োজন। কিন্তু জার্মানি এতদিন পর্যন্ত ইউক্রেনকে অত্যাধুনিক ট্যাঙ্ক দিতে সম্মত হচ্ছিল না। কারণ ট্যাঙ্ক আত্মরক্ষার যুদ্ধসামগ্রী নয়, আক্রমণের সামগ্রী।
জার্মানির তৈরি ট্যাঙ্ক পোল্যান্ডের হাতেও আছে। পোল্যান্ড দীর্ঘদিন ধরেই সেই ট্যাঙ্ক ইউক্রেনকে দিতে চায়। কিন্তু এই ট্যাঙ্ক দিতে হলে ন্যাটো এবং জার্মানির ছাড়পত্র লাগবে। এতদিন তা-ও মিলছিল না। মঙ্গলবারের বৈঠকের পর সেই জট কেটেছে বলেই মনে হচ্ছে। জার্মানি অন্তত এক কোম্পানি লিওপার্ড ট্যাঙ্ক ইউক্রেনকে পাঠাবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। পোল্যান্ডের ক্ষেত্রেও ট্যাঙ্ক পাঠানোয় আর কোনো বাধা থাকল না বলে মনে করা হচ্ছে। তবে সরকারের তরফে এখনো এবিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট বিবৃতি জারি করা হয়নি।