ইউক্রেন রাশিয়াকে নরম করার আশা করছে৷ ওয়াশিংটন মস্কোকে আরো সাজা দেবার প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ চার ঘণ্টা বৈঠকের পর আবার আলাপ-আলোচানা চলেছে৷ ওদিকে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দু’মুখো নীতির অভিযোগ করেছে৷
বিজ্ঞাপন
জেনেভায় কথাবার্তা চলেছে, তারই মধ্যে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের একটি টুইট পুনঃপ্রচার করে বসে আছে৷ পুটিন সেই টুইটে ওয়াশিংটনের দু'মুখো নীতির সমালোচনা করেছেন৷ রাশিয়ার প্রতি ওয়াশিংটনের ‘গাজর অথবা লাঠি' নীতির রুশ উত্তর হলো: পশ্চিমি বিশ্বকে যত পারো উত্যক্ত করো, কিন্তু দেখো, শাস্তিমূলক ব্যবস্থার মাত্রা যেন না বাড়ে!
এই কূটনীতির খেলায় নানা পক্ষের নানা গোপন আশা, নানা গোপন বাসনা৷ ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি দেশচিৎসিয়া বলেছেন, তিনি এখনও কূটনীতির মাধ্যমে পরিস্থিতির উপশমের সম্ভাবনা দেখেন৷ ওদিকে ওবামা প্রশাসন গোড়া থেকেই চার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক থেকে বেশি প্রত্যাশা না করার পরামর্শ দিয়ে আসছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের মনোভাবের দৃষ্টান্ত হিসেবে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদের মন্তব্য উদ্ধৃত করা যেতে পারে৷ ওলঁদ বলেছেন, ‘‘আমরা শাস্তিমূলক ব্যবস্থার মাত্রা বাড়াতে পারি, কিন্তু সেটা কোনো সমাধান নয়, কেননা তা আমাদের কাম্য নয়৷ আমরা যা চাই, তা হলো পরিস্থিতির প্রশমন৷''
ক্রাইমিয়ায় সব শান্ত?
সবার মনোযোগ এখন ইউক্রেনের ক্রাইমিয়ার দিকে৷ ক্রাইমিয়ায় যা ঘটেছে তাকে রাশিয়ার আগ্রাসন বলা হলেও রুশ সেনাদের কিন্তু সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছে স্থানীয়রা৷ ছবিঘরে দেখুন ক্রাইমিয়ার পরিস্থিতি৷
ছবি: DW/F. Warwick
কোসাকদের আগমন
রাশিয়ার ক্রাসনোডার থেকে এসেছে ২৫০ জনের মতো কুবান কোসাক৷ সামরিক বাহিনীর পোশাক পরেননি তাঁরা৷ সেভাস্টোপোলের রুশপন্থি কর্তৃপক্ষ কোসাকদের শপথ পাঠ করিয়েছে৷ স্বেচ্ছাসেবী কোসাকরা জানিয়েছে, ক্রাইমিয়াবাসীদের রক্ষা করার জন্য তারা স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে কাজ করবে৷
কুবান কোসাকরা সেভাস্টোপোলের পুলিশের সঙ্গে টহলে অংশ নিচ্ছে৷ মাথায় উলের টুপি পরে রবি বার থেকে রাস্তায় টহল দিচ্ছে কোসাকরা৷ ২০০৫ সালে এথনিক সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী এবং শক্তিশালী সামরিক শক্তি হিসেবে কোসাকদের স্বীকৃতি দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন৷
ছবি: DW/F. Warwick
কঠিন সময়ে নিরাপত্তা
রাশিয়া এবং ক্রাইমিয়ার টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন কোসাকদের নেতা কর্নেল সের্গেই সাভোনিন ইউরিয়েভিচ৷ তিনি বলেন, কোসাকরা সেভাস্টোপোলের মানুষদের রক্ষা করার জন্য এসেছে৷
ছবি: DW/F. Warwick
‘স্বায়ত্তশাসন, বিচ্ছিন্নতাবাদ নয়’
ক্রাইমিয়ায় অনেকের হাতেই দেখা যায় ক্রাইমিয়া এবং রাশিয়ার পতাকা৷ এর অর্থ এই নয় যে, ক্রাইমিয়া ইউক্রেন থেকে আলাদা হয়ে গেছে৷ সেভাস্টোপোলের এই তরুণ-তরুণীরা জানালেন, তাঁরা ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ চাননা, কেননা ইউক্রেনকে তাঁরা ভ্রাতৃপ্রতীম রাষ্ট্র মনে করেন৷ তাঁদের দাবি একটাই – স্বায়ত্তশাসন এবং এথনিক রুশ হিসেবে প্রাপ্য মর্যাদা৷
ছবি: DW/F. Warwick
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?
এই প্রবীণ এসেছেন কোসাকদের সমর্থন জানাতে৷ রাশিয়ার প্রতি তাঁর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে৷ পরনে রুশ সেনাবাহিনীর মতো কমলা আর কালো রংয়ের পোশাক৷ তিনি নিজেও সোভিয়েত ইউনিয়নের রেড আর্মির সাবেক কর্মকর্তা৷
ছবি: DW/F. Warwick
রাস্তায় তল্লাশি
সিমফারোপোল এবং সেভাস্টোপোলের মাঝের হাইওয়েতে গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে রুশপন্থি বেসামরিক বাহিনীর সদস্যরা৷
ছবি: DW/F. Warwick
ব্যবসার জন্য খারাপ সময়?
লিলিয়া ভজনুক একজন স্যুভেনির বিক্রেতা৷ রাবারের তৈরি মুখোশগুলোর মধ্যে পুটিনের চেহারার মুখোশটার এখন দারুণ কাটতি৷ তবু খুব চিন্তায় আছেন লিলিয়া৷ চলমান সংকট ব্যবসার বড় রকমের ক্ষতি করবে বলে আশঙ্কা তাঁর৷
ছবি: DW/F. Warwick
হৃদয়-মন জয় করেছে তাঁরা
সেভাস্টোপোলে গেলেই ব্ল্যাক সি ফ্লিট অঁসম্বল-এর কনসার্ট দেখতে পাবেন৷ নাচ-গানের এই স্থানীয় সংগঠনটি তাদের পরিবেশনা দিয়ে সবার মন জয় করেছে৷ রুশ লোকসংগীতে সাগরের প্রশংসা করে যেসব গান রচনা করা হয়েছে মূলত সেগুলোই পরিবেশন করে ব্ল্যাক সি ফ্লিট অঁসম্বল৷ রাশিয়ার ঐতিহ্যবাহী ইয়াব্লোচকো বা ‘ছোট্ট আপেল’ নাচটা সত্যই মনোমুগ্ধকর৷
ছবি: DW/F. Warwick
চাই শুধু স্বায়ত্তশাসন
সেভাস্টোপোলের অধিকাংশ মানুষই রুশ জাতীয়তাবাদের সমর্থক৷ ইউক্রেনীয়দের তারা অবিশ্বাস করে, মনে করে ইউক্রেনীয়রা চরম ডানপন্থি৷ সেভাস্টোপোলের মানুষ মনে করে রুশ বাহিনীর উপস্থিতি এ অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসন এবং নিরাপত্তার রক্ষাকবচ৷
ছবি: DW/F. Warwick
10 ছবি1 | 10
আসলে এই আলাপ-আলোচনাকে চারতরফা বলার যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন তোলা যেতে পারে৷ যেমন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি প্রথমে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদেশনীতি বিষয়ক প্রধান ক্যাথেরিন অ্যাশটনের সঙ্গে কথা বলেন৷ তারপরে তিনি দেশচিৎসিয়া এবং রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে এককভাবে কথা বলেন৷ সবশেষে চার পররাষ্ট্রমন্ত্রী একত্রে বৈঠকে বসেন৷
অর্থাৎ এখানে চারপক্ষের নিজস্ব স্বার্থই নয়, পারস্পরিক ইকোয়েশন বা ফর্মুলাও কাজ করেছে৷ ইউক্রেনের মূল চিন্তা, পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়৷ মার্কিন তরফ যেন মস্কোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাকে মোটামুটি অবধারিত বলেই ধরে নিয়েছে – সেই সঙ্গে রয়েছে ইউক্রেনের প্রতি সামরিক সাহায্য বাড়ানোর পরিকল্পনা, যদিও তার ফলে মস্কোর আরো তীব্র প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা রয়েছে৷
রুশ তরফে পুটিন যে শুধু পূর্ব ইউক্রেনে প্ররোচনা দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন, তা-ই নয়, তিনি কিয়েভ সরকারের বিদ্রোহ দমন করার প্রচেষ্টাকে ‘‘অপরাধ'' বলে অভিহিত করেছেন৷ কাজেই জেনেভায় বাস্তবিক শান্তির জন্য চেষ্টিত বলতে থাকছে ইউক্রেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ ইউক্রেনের প্রচেষ্টা হলো, রাশিয়াকে শান্ত করা, এমনকি পূর্ব ইউরোপের রুশভাষীদের কি করে ঠাণ্ডা রাখতে হবে, সে বিষয়েও পরামর্শ চেয়ে!
ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাস্তবিক পরিস্থিতির উপশম চায়, কেননা রাশিয়া থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস ও খনিজ তেল ইইউ-এর পক্ষে অতীব গুরুত্বপূর্ণ৷ অপরদিকে রাশিয়া ও ইইউ, উভয়েই অপরের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সহযোগী৷