ইউক্রেন সফরে গিয়ে ন্যাটোর মহাসচিব আরো সামরিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন৷ তিনি ইউক্রেনের জয়ের সম্ভাবনা তুলে ধরে আরো দ্রুত অস্ত্র সরবরাহের ডাক দেন৷ এদিকে রাশিয়া ওডেসা ও খারকিভের উপর হামলা চালিয়েছে৷
ইউক্রেন এখনো যুদ্ধে জয়লাভ করতে পারে বলে মনে করছেন সামরিক জোট ন্যাটোর মহাসচিব ইয়েন্স স্টলটেনবার্গছবি: Efrem Lukatsky/AP Photo/picture alliance
বিজ্ঞাপন
যুদ্ধক্ষেত্রে আপাতত কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়লেও ইউক্রেন এখনো যুদ্ধে জয়লাভ করতে পারে বলে মনে করছেন সামরিক জোট ন্যাটোর মহাসচিব ইয়েন্স স্টলটেনবার্গ৷ তিনি স্বীকার করেন যে, যথেষ্ট অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সামরিক সরঞ্জামের অভাবে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী বাধ্য হয়ে গত কয়েক মাসে রক্ষণাত্মক অবস্থান নিয়ে আসছে৷ কিয়েভ সফরে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ভোলোদোমির জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনার পর স্টলটেনবার্গ এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে যুদ্ধ সম্পর্কে নিজস্ব মূল্যায়ন তুলে ধরেন৷ আত্মসমালোচনার সুরে তিনি স্বীকার করেন, যে ন্যাটোর সহযোগীরা ইউক্রেনকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ দিতে বিফল হলে ইউক্রেনের মানুষকেই তার মূল্য চোকাতে হয়৷ তাঁর মতে, শুধু অ্যামেরিকা নয়, ইউরোপের সহযোগী দেশগুলিও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিতে পারেনি৷
দীর্ঘ বিলম্বের পর অতি গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন সামরিক সহায়তার প্যাকেজ অনুমোদনের ফলে যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের অবস্থান আরো মজবুত হবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ ন্যাটোর মহাসচিব অদূর ভবিষ্যতে সদস্য দেশগুলির কাছ থেকে আরো সহায়তার ঘোষণার পূর্বাভাস দিয়েছেন৷ ইউক্রেনের প্রয়োজন মেটাতে ন্যাটোর দেশগুলি সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে স্টলটেনবার্গ দাবি করেন৷ সম্প্রতি স্পেন ইউক্রেনকে পেট্রিয়ট মিসাইল সরবরাহের যে ঘোষণা করেছে, তিনি সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান৷ জেলেনস্কি অস্ত্র সরবরাহের গতি আরো বাড়ানোর আর্জি জানিয়েছেন৷ তাঁর মতে, সে ক্ষেত্রে দ্রুততার উপর যুদ্ধক্ষেত্রে সাফল্য নির্ভর করছে৷
সোমবার জার্মানি দশটি মার্ডার ইনফ্যানট্রি ফাইটিং ভেহিকেলসহ আরো সামরিক সহায়তা পাঠানোর ঘোষণা করেছে৷ তার মধ্যে দ্বিতীয় স্কাইনেক্স এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ও গেপার্ড এয়ার ডিফেন্স ট্যাংক ও আইরিস-টি সিস্টেমের জন্য ৩০,০০০ গোলাবারুদও রয়েছে৷ তবে জার্মানি গত এপ্রিল মাসে তৃতীয় পেট্রিয়ট এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম পাঠানোর যে ঘোষণা করেছিল, সেটি হস্তান্তরের দিনক্ষণ এখনো জানা যায় নি৷ উল্লেখ্য, রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা মোকাবিলা করতে ইউক্রেন সহযোগীদের কাছ থেকে আরো এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম চাইছে৷
কার্যক্ষেত্রে ইউক্রেনের বর্তমান দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে রাশিয়া সে দেশের উপর লাগাতার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে৷ সোমবার বন্দর শহর ওডেসার উপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে৷ শহরের গভর্নর ওলেহ কিপার টেলিগ্রামে জানান, কমপক্ষে চার জন নিহত ও ২৭ জন আহত হয়েছে৷ খারকিভ শহরের উপরেও আবার হামলা চালিয়েছে রাশিয়া৷
এসবি/এসিবি (এএফপি, ডিপিএ)
কে-পপ, অ্যানিমে ও কসপ্লে: রাশিয়ায় যুদ্ধের ‘উপহার’
এক সময় অনেকে জানতে চাইতেন, ‘‘কে-পপ কী জিনিস?’’ অ্যানিমে বা কসপ্লেও চিনতেন না অনেক তরুণ-তরুণী৷ ‘ইউক্রেন যুদ্ধ’ শুরুর পর সেই রাশিয়ায় কে-পপ, অ্যানিমে আর কসপ্লে কিভাবে রাতারাতি জনপ্রিয়তা পেলো জেনে নিন তার পেছনের গল্প...
ছবি: Maxim Shemetov/REUTERS
কারিনা মারাকশিনার বিস্ময়
এক বছর আগেও নিজের ড্যান্স স্টুডিয়োয় এসে অনেকে জানতে চাইতেন, ‘‘কে-পপ আসলে কী জিনিস?’’ মাত্র এক বছরে আমূল বদলে গেছে পরিস্থিতি৷ তার জেএসএস স্টুডিয়োর প্রচার, প্রসার তো বেড়েছেই, এমন অনেক স্টুডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে রাশিয়ার বিভিন্ন শহরে৷ কারিনা আজকাল অনেক শপিং মলে গিয়ে অবাক হয়ে যান এই ভেবে, ‘‘আরে, এখানেও কে-পপ বাজছে!’’
ছবি: Maxim Shemetov/REUTERS
রাশিয়ায় কে-পপ, কসপ্লে ও অ্যানিমের জয়জয়কার
শুধু কে-পপ কেন, খুব অল্প সময়ে অ্যানিমে এবং কসমোপ্লে-ও লুফে নিয়েছে রাশিয়ার তরুণ প্রজন্মের উল্লেখযোগ্য একটা অংশ৷গত নভেম্বরে মস্কোয় আয়োজিত হলো কসমোপ্লে-র দুর্দান্ত এক উৎসব৷ এক হাজারেরও বেশি কসপ্লেয়ার বেগুনি পরচুলা আর ঐতিহ্যবাহী কিমোনো পরে নানা জনপ্রিয় চরিত্র হয়ে এসে মাতিয়ে রেখেছেন পুরো আসর৷
ছবি: Maxim Shemetov/REUTERS
নেপথ্যের কারণ
রাশিয়ায় কে-পপ, অ্যানিমে এবং কসপ্লে-র জোয়াড় শুরুর প্রধান কারণ ইউক্রেন যুদ্ধ৷ ইউক্রেনে হামলা করায় রাশিয়ার ওপর নেমে আসে পশ্চিমা বিশ্বের নিষেধাজ্ঞা৷বন্ধ হয়ে যায় বিদেশি পণ্য আমদানি, রুশ নাগরিগদের জন্য রুদ্ধ হয়ে যায় পশ্চিমা দেশগুলোর দরজা৷ ফলে রাশিয়ায় বিনোদনের জগতও হয়ে যায় সংকুচিত৷ পাশ্চাত্যের মুখ ফিরিয়ে নেয়ার ওই সময়েই রাশিয়ার তরুণ সমাজ ঝুঁকে পড়ে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান এবং চীনের সাংস্কৃতিক পণ্যের দিকে৷
ছবি: Maxim Shemetov/REUTERS
এশিয়ায় মজেছে রাশিয়া
কারিনা মারাকশিনা তার জিএসএস স্টুডিয়ো প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ২০১৬ সালে৷ ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর দ্রুত শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে গেছে জিএসএস৷ কারিনা মনে করেন এর প্রধান কারণ রাশিয়ার কিশোর এবং তরুণদের এশিয়ার প্রতি ঝুঁকে পড়া, ‘‘আজকাল তো আমি যেই টিনএজারের সঙ্গেই কথা বলি, দেখি সে-ই এশিয়ায় বুঁদ হয়ে আছে৷’’ তিনি জানান, কসমোপ্লে আর অ্যানিমে যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা পেলেও রাশিয়ায় কে-পপের জনপ্রিয়তাই বেশি৷
ছবি: Maxim Shemetov/REUTERS
একতার অনুভূতি
জিএসএস স্টুডিয়োর কোরিওগ্রাফার পলিনা ইভানভস্কায়া৷ তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ‘‘কে-পপের কোন বিষয়টা আপনার সবচেয়ে ভালো লাগে?’’ জবাবে পলিনা বললেন, ‘‘একসঙ্গে কাজ করার অনুভূতি৷ আমরা যে সবসময় একটা গ্রুপ হিসেবে নাচি- এই বিষয়টাই সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে৷ এই নাচটা একটা গ্রুপে এক হয়ে যাওয়ার একটা অনুভূতি দেয় আমাদের৷’’