ইউক্রেনকে দেয়ার জন্য প্রচুর পরিমাণে গোলাবারুদ কিনতে রাজি হলো ইইউ-র দেশগুলি।
বিজ্ঞাপন
বুধবার স্টকহোমে ইইউ-র প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠকের পর পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বরেল এই পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, গোলাবারুদ কেনার জন্য ইইউ-র দেশগুলি একশ কোটি ইউরো আর্থিক সাহায্য পাবে। তাছাড়া যৌথভাবে গোলাবরুদ কেনার জন্যও তারা একশ কোটি ইউরোর সাহায্য পাবে।
বরেল জানিয়েছেন, ''বৈঠকে সাধারণভাবে গোলাবারুদ কেনা নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু এখনো বেশ কিছু প্রশ্ন আছে। আমরা আবার আলাপ করব। সেখানে বিস্তারিতভাবে কথা হবে।''
আগামী ২০ মার্চ ইইউ-র পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠকে পরিকল্পনা চূড়ান্ত হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এই প্রস্তাব প্রথমে দিয়েছিল এস্তোনিয়া। তারপর ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রেজনিকভ ইইউ-র প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন, তাদের যেন দশ লাখ ১৫৫এমএম গোলা দেয়া হয়। তার দাম চারশ কোটি ইউরো। রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ও পাল্টা আঘাত হানার জন্য এই গোলাবারুদ দরকার বলে তিনি দাবি করেছেন।
লিওপার্ড টু ট্যাঙ্ক কী, ইউক্রেন কেন তা চাইছে?
যুদ্ধ তাড়াতাড়ি শেষ করতে জার্মানির তৈরি লিওপার্ড টু ট্যাঙ্ক চাইছে ইউক্রেন৷ কিন্তু জার্মানি তা দিতে চাইছে না৷ কিন্তু কেন, আর কেনইবা লিওপার্ড টু ট্যাঙ্ক এত গুরুত্বপূর্ণ?
ছবি: Philipp Schulze/dpa/picture-alliance
লিওপার্ড টু ট্যাঙ্ক চায় ইউক্রেন
ইউক্রেন ও তার মিত্ররা মনে করছে, রাশিয়া ইউক্রেনের যে অংশগুলো দখল করেছে সেগুলো থেকে রুশদের সরাতে পারলে যুদ্ধ তাড়াতাড়ি শেষ করা যাবে৷ কিন্তু সেটা করতে হলে জার্মানির তৈরি লিওপার্ড টু এর মতো ট্যাঙ্ক দরকার বলে জানিয়েছে ইউক্রেন৷ কারণ তাদের কাছে থাকা ট্যাঙ্কগুলো সেই সোভিয়েত আমলের৷
ছবি: Michael Kappeler/dpa/picture alliance
কেন লিওপার্ড টু?
১৯৭৯ সাল থেকে এই ট্যাঙ্ক ব্যবহৃত হয়ে আসছে৷ এটি প্রায় ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে৷ সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৬৮ কিলোমিটার৷ এতে ১২০ মিমি নলের বন্দুক ছাড়াও আছে দুটি লাইট মেশিন গান৷ যুক্তরাষ্ট্রের আব্রামস ট্যাঙ্কের চেয়ে লিওপার্ড টু চালাতে কম জ্বালানি লাগে বলে ইউক্রেনের জন্য এটি বেশি উপযোগী মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: Moritz Frankenberg/dpa/picture-alliance
ইউরোপে বহুল ব্যবহৃত
ইউরোপের এক ডজনেরও বেশি দেশে বর্তমানে দুই হাজারেরও বেশি লিওপার্ড টু ব্যবহৃত হচ্ছে৷ ক্যানাডাও এটি ব্যবহার করছে৷ কসোভো, বসনিয়া, আফগানিস্তান ও সিরিয়া এটি ব্যবহৃত হয়েছে৷
ছবি: Michael Kappeler/dpa/picture alliance
জার্মানির চাওয়া
জার্মানি এখন পর্যন্ত ইউক্রেনকে সাঁজোয়া যানসহ অনেক অস্ত্র দিলেও একা লিওপার্ড ২ ট্যাঙ্ক দিতে রাজি হচ্ছে না৷ কারণ তারা মনে করছে এখন পর্যন্ত ইউক্রেনকে যা দেয়া হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হচ্ছে লিওপার্ড টু- যা একটি সমস্যার বিষয় বলে মনে করছে জার্মানি৷ তবে কোনো জোটের আওতায় ইউক্রেনকে ট্যাঙ্ক দেয়া হলে তার অংশ হিসেবে লিওপার্ড টু দেয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছে জার্মানি৷
ছবি: Moritz Frankenberg/dpa/picture-alliance
পোল্যান্ড দিতে চায়
পোল্যান্ড বলেছে তারা ইউক্রেনকে লিওপার্ড টু দিবে৷ কিন্তু জার্মানির অনুমতি ছাড়া পোল্যান্ড সেটি ইউক্রেনকে দিতে পারবে না৷ তবে রোববার জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক জানিয়েছেন, পোল্যান্ড ইউক্রেনকে ওই ট্যাঙ্ক পাঠালে জার্মানি আপত্তি করবে না৷
ছবি: Michael Kappeler/dpa/picture-alliance
৩০০, নাকি ১০০?
ইউক্রেন বলছে, তাদের ৩০০টি লিওপার্ড টু ট্যাঙ্ক দরকার৷ তবে পশ্চিমা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ১০০টি ট্যাঙ্ক হলেই যুদ্ধের ভারসাম্যে পরিবর্তন আনা সম্ভব হতে পারে৷
ছবি: Philipp Schulze/dpa/picture-alliance
6 ছবি1 | 6
বরেল যে পরিকল্পনা করেছেন, তাতে ইউক্রেন যে পরিমাণ গোলাবরুদ চেয়েছিল, তার অর্ধেক দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এটাও নিঃসন্দেহে খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
মার্কিন স্পিকারকে আমন্ত্রণ জেলেনস্কির
মার্কিন হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার ম্যাকার্থিকে ইউক্রেনে আসার আমন্ত্রণ জানালোন জেলেনস্কি। রিপোর্ট বলছে, অ্যামেরিকার রক্ষণশীলরা ইউক্রেনকে সাহায্য করার ব্যাপারে খুব একটা উৎসাহ দেখাচ্ছেন না। তারপরেই সিএনএনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি বলেছেন, ''ম্যাকার্থি একবার এসে দেখুন আমরা কীভাবে কাজ করছি। যুদ্ধের ফলে আমাদের কী অবস্থা হয়েছে। দেশের মানুষ কীভাবে লড়ছেন। তারপর তিনি তার মতামত জানান।''
জেলেনস্কি বলেছেন, ''আমার মনে হয়, স্পিকার ম্যাকার্থি কখনোই ইউক্রেন বা কিয়েভ আসেননি। তিনি যে পদে আছেন, তাতে তার একবার ইউক্রেন আসা জরুরি।''
খেরসনে যেসব অস্ত্র, যান ফেলে গেছে রাশিয়া
গত বৃহস্পতিবার রুশ সেনারা খেরসন শহর থেকে পিছু হটার ঘোষণা দেয়৷ ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরুর পর খেরসন ছিল একমাত্র আঞ্চলিক রাজধানী, যার নিয়ন্ত্রণ নিতে পেরেছিল রাশিয়া৷
ছবি: VALENTYN OGIRENKO/REUTERS
গোলাবারুদ
খেরসনের ব্লাহোদাৎনে গ্রামে রুশ সেনাদের ফেলে যাওয়া গোলাবারুদের পাশে ইউক্রেনীয় এক সেনাকে দেখা যাচ্ছে৷ ছবিটি শুক্রবার তোলা৷
ছবি: VALENTYN OGIRENKO/REUTERS
ট্রাক
খেরসনের পোসাদ-পোকরোভস্কি গ্রামে ধ্বংস হয়ে যাওয়া একটি রুশ ট্রাক দেখা যাচ্ছে৷ গত বৃহস্পতিবার রুশ সেনারা খেরসন শহর থেকে পিছু হটার ঘোষণা দেয়৷
ছবি: VALENTYN OGIRENKO/REUTERS
মর্টার শেল
খেরসনের ব্লাহোদাৎনে গ্রামে ফেলে যাওয়া মর্টার শেল৷ ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরুর পর খেরসন ছিল একমাত্র আঞ্চলিক রাজধানী, যার নিয়ন্ত্রণ নিতে পেরেছিল রাশিয়া৷
ছবি: VALENTYN OGIRENKO/REUTERS
অ্যান্টি-ট্যাংক গ্রেনেড লঞ্চার
খেরসনের ব্লাহোদাৎনে গ্রামে এই লঞ্চার পাওয়া যায়৷
ছবি: VALENTYN OGIRENKO/REUTERS
মর্টার শেল
জব্দ করা রুশ মর্টার শেলের উপর বসে আছেন এক ইউক্রেনীয় সেনা৷
ছবি: VALENTYN OGIRENKO/REUTERS
আর্মার্ড পারসোনেল ক্যারিয়ার, এপিসি
ব্লাহোদাৎনে গ্রামে ইউক্রেনীয় সেনাদের রুশ বাহিনীর ফেলে যাওয়া এপিসির দিকে হেঁটে যেতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Valentyn Ogirenko/REUTERS
সাঁজোয়া যান
খেরসনের ভিসোকোপিলিয়া গ্রাম আগুনে পুড়ে যাওয়া রুশ বাহিনীর একটি সাঁজোয়া যান দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Celestino Arce Lavin/ZUMA/IMAGO/ZUMA Wire
7 ছবি1 | 7
ম্যাকার্থি জবাবে বলেছেন, পরিস্থিতি বোঝার জন্য তার ইউক্রেনে যাওয়ার দরকার নেই। তিনি ইউক্রেনকে সাহায্য করার বিরোধী নন। তবে বারবার মার্কিন কংগ্রেস ব্ল্যাংক চেক দেবে এটা হয় না। আগে সবকিছু বিচার করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।
মিগ ২৯ দিতে চায় পোল্যান্ড
পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট ডুডা জানিয়েছেন, তিনি ইউক্রেনকে অবিলম্বে মিগ ২৯ যুদ্ধবিমান দিতে প্রস্তুত। এই যুদ্ধবিমানগুলি সাবেক সোভিয়েত আমলের। সাবেক পূর্ব জার্মানির স্টক থেকে তা পোল্যান্ডকে দেয়া হয়েছিল।
ডুডার বক্তব্য, এই যুদ্ধবিমানগুলি এখনই ব্যবহার করতে পারবেন ইউক্রেনের পাইলটরা। পাশাপাশি তাদের এফ ১৬ যুদ্ধবিমান চালাবার প্রশিক্ষণ দেয়া হোক। পোল্যান্ডে ৩০টি মিগ ২৯ যুদ্ধবিমান পূর্ব সীমান্তে মোতায়েন করা আছে।
এরই মধ্যে মার্কিন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, রাশিয়া আরো লম্বা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা মনে করছেন, এই বছর রাশিয়া ইউক্রেনের খুব বেশি জমি অধিকার করতে পারবে না। ফলে দীর্ঘ যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়া ছাড়া তাদের সামনে আর কোনো রাস্তা নেই।