রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ ইউক্রেনের। সোমবার ফের তুরস্কে মুখোমুখি আলোচনায় বসছে দুই দেশের প্রতিনিধি।
বিজ্ঞাপন
ইউক্রেনের সেনার গোয়েন্দাপ্রধান রোববার অভিযোগ করেছেন, কোরিয়ার মতো ইউক্রেনকে দুই টুকরো করার চেষ্টা করছে রাশিয়া। তার বক্তব্য, রাশিয়া ইতিমধ্যে যে জায়গাগুলি দখল করেছে সেগুলিকে একত্রিত করে একটি রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টা করতে পারে। বাকি ইউক্রেনের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে সেই রাষ্ট্রটিকে ব্যবহার করাই রাশিয়ার উদ্দেশ্য। একইসঙ্গে গোয়েন্দাপ্রধানের বক্তব্য, ইউক্রেন সে কাজ হতে দেবে না।
গোয়েন্দাপ্রধান জানিয়েছেন, ইউক্রেন এবার গেরিলা পদ্ধতিতে রাশিয়ার সেনার উপর আঘাত হানবে। রাশিয়ার সেনাকে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হবে। পিছিয়ে না গেলে মৃত্যু ছাড়া রাশিয়ার সেনার হাতে আর কোনো উপায় থাকবে না।
রাশিয়ার উপর কে, কত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে
ইউক্রেনে হামলার পর থেকে রাশিয়ার উপর দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে পশ্চিমা দেশগুলো৷ সঙ্গে যোগ দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, জাপান৷ পাল্টা পদক্ষেপ নিচ্ছে রাশিয়াও৷ ছবিঘরে জানুন বিস্তারিত৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Smialowski
শীর্ষে যুক্তরাজ্য
রাশিয়ার উপর কারা কত নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে তার হালনাগাদ পরিসংখ্যান রাখছে বৈশ্বিক নিরাপত্তা ঝুঁকি ও নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট কাস্টেলাম ডট এআই৷ তাদের হিসাবে ইউক্রেনে হামলার পর থেকে ক্রেমলিনের উপর সবচেয়ে বেশি ৮৭৮টি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাজ্য৷ এই তালিকায় রুশ ব্যাংক, ড্রোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে আব্রাহোমোভিচের (ছবি) মতো ধনকুবের কিংবা পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লেভরভের সৎ কন্যাও রয়েছেন৷
ছবি: Mike Egerton/empics/picture alliance
সম্পদ জব্দ করছে সুইজারল্যান্ড
নিষেধাজ্ঞার আওতায় রাশিয়ার ৬১৭ কোটি ডলারের সম্পদ এরই মধ্যে জব্দ করেছে সুইজারল্যান্ড, যা আরো বাড়বে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার৷ ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়ার উপর সুইজারল্যান্ডের নিষেধাজ্ঞার সংখ্যা ৭৭৪টি৷
ছবি: Jean-Christophe Bott/EPA-EFE
আরো বাড়াতে চায় ইইউ
ইউক্রেনে হামলার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো একযোগে রাশিয়ার বিভিন্ন খাত, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে৷ কয়েক দফায় সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে ৭০৫-এ, যা আরো বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা চলছে৷ এছাড়া ফ্রান্সের অর্থ বিভাগ নিজেরাও আলাদাভাবে রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞার তালিকা করেছে, যার সংখ্যা ৬৯৬৷
ছবি: IAN LANGSDON/AFP/Getty Images
টার্গেটে মিডিয়া ব্যাক্তিত্বরাও
ক্যানাডার নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আছেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরাও৷ চলতি মাসের শুরুর দিকে রাশিয়ার গণমাধ্যম নির্বাহীসহ দশ জনের একটি তালিকা ঘোষণা করে দেশটি৷ তাদের মধ্যে রয়েছেন রাশিয়ান টেলিভিশন নিউজ নেটওয়ার্ক আরটির প্রধান সম্পাদক মার্গারিটা সিমোনিয়ানও৷ সব মিলিয়ে ইউক্রেনে রুশ হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৫২৬ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ক্যানাডা৷
ছবি: Muhammed Ibrahim Ali/IMAGESLIVE via ZUMA Press Wire/picture alliance
বিনিয়োগকারীরাও ছাড় পাচ্ছে না
অস্ট্রেলিয়ায় সম্পদ আছে রাশিয়ার এমন ধনকুবেরদের উপর নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে দেশটি৷ গত সপ্তাহে এই তালিকায় যুক্ত হয়েছেন কুইন্সল্যান্ডে অ্যালুমিনা পরিশোধনাগারের বিনিয়োগকারী ওলেগ দেরিপাস্কা (ছবি)৷ ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার উপর ৪৭৯টি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি৷
ছবি: picture.alliance/dpa/Tass/V. Smirnov
অন্যদের চেয়ে কম যুক্তরাষ্ট্র
রাশিয়ার বিরুদ্ধে সবচেয়ে সরব যুক্তরাষ্ট্র৷ তবে মিত্র দেশগুলোর তুলনায় এখনও তাদের নিষেধাজ্ঞার তালিকাটি ছোট৷ কাস্টেলাম এর হিসাবে হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত ক্রেমলিনের উপর ২৯৩ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ওয়াশিংটন৷ তবে ২৪ মার্চ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রাশিয়ার পার্লামেন্ট ডুমা ও এর ৩২৮ সদস্য এবং ৪৮টি প্রতিরক্ষা সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র৷
ছবি: Brendan Smialowski/AFP
তৎপর জাপানও
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে শুরু থেকেই সরব জাপান৷ রাশিয়ার রাজনীতিবিদ, তাদের স্বজনদের উপর নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে দেশটি৷ তার মধ্যে আছেন ডুমার ১১ সদস্য, ব্যাংকার, শিল্পপতিও৷ ২২ ফেব্রুয়ারির পর এখন পর্যন্ত মোট ৮৮টি নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে তারা৷
ছবি: The Yomiuri Shimbun/AP Images/picture alliance
নিষেধাজ্ঞায় শীর্ষে রাশিয়া
রাশিয়া এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হওয়া দেশ৷ মোট সাত হাজার ৩৮৬টি নিষেধাজ্ঞার বোঝা বিশ্বের অন্যতম এই পরাশক্তির কাঁধে৷ এর মধ্যে চার হাজার ৩৬২টি দেয়া হয়েছে ইউক্রেনে হামলা শুরুর পরে৷ এর আগে নিষেধাজ্ঞা পাওয়া দেশের তালিকায় শীর্ষে ছিল ইরান (৩৬১৬৷ এরপর রয়েছে সিরিয়া (২৬০৮), উত্তর কোরিয়া (২০৭৭), ভেনেজুয়েলা (৬৫১), মিয়ানমার (৫১০) ও কিউবা (২০৮)৷
ছবি: Mikhail Klimentyev/AP/picture alliance
নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য
২২ ফেব্রুয়ারির পর থেকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরোপিত চার হাজার ৩৬২টি নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বেশিরভাগই দেয়া হয়েছে ব্যক্তির উপরে৷ তিন হাজার ৯১৫টি নিষেধাজ্ঞাই এ সংক্রান্ত৷ আর বাকি ৪৩৭টি দেয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানের উপরে৷
ছবি: Anton Novoderezhkin/Tass/imago images
রাশিয়ার পাল্টা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী অস্টিনসহ বিভিন্ন কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে ক্রেমলিন৷ অন্যদিকে ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোসহ ৩১৩ জনের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ এছাড়াও মার্চের শুরুতে রাশিয়া ‘অবন্ধুসুলভ’ ৪৮ দেশের তালিকা প্রকাশ করে৷ বুধবার পুটিন ঘোষণা দিয়েছেন দেশগুলোকে রাশিয়ার গ্যাসের মূল্য শোধ করতে হবে রুবলে৷
ছবি: Bai Xueqi/ Xinhua News Agency/picture alliance
10 ছবি1 | 10
তুরস্কে রাশিয়া-ইউক্রেন আলোচনা
ইউক্রেনের একাধিক শহরে এখনো নাগাড়ে গোলাবর্ষণ করে চলেছে রাশিয়া। তারই মধ্যে সোমবার তুরস্কে ফের মুখোমুখি বৈঠকে বসছে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার প্রতিনিধি। সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত বৈঠক চলবে বলে জানানো হয়েছে। বস্তুত, রোববারেও ভিডিও বৈঠক হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। সেখানেই সোমবার মুখোমুখি আলোচনায় বসার প্রস্তাব ওঠে। দুই দেশই তাতে সম্মত হয়। রাশিয়ার প্রতিনিধি অবশ্য সংবাদসংস্থা ডিপিএ-কে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার এবং বুধবার আলোচনা হবে।
এর্দোয়ানের বক্তব্য
সোমবার বৈঠক শুরু হওয়ার আগে ফের রাশিয়া এবং ইউক্রেনের কাছে যুদ্ধবিরতির আবেদন জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান। রোববার এবিষয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে ফোনে তার কথা হয়েছে। এরপরেই এর্দোয়ান একটি টুইট করেন। সেখানে তিনি ইস্তামবুলে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের আলোচনা হওয়ার কথাও বলেছেন। তবে বৈঠক কবে শুরু হবে এবিষয়ে তিনি কিছু জানাননি। এর্দোয়ান দুই দেশের কাছে দ্রুত যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে শান্তিপ্রস্তাবে সই করার আর্জি জানিয়েছেন।
জেলেনস্কির বক্তব্য
রোববার ৯০ মিনিটের একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। সেখানে তিনি বলেছেন, তৃতীয় দেশ যদি নিরাপত্তার গ্যারান্টি দেয়, তাহলে নিউট্রাল বা নিরপেক্ষ অবস্থান মেনে নিতে আপত্তি নেই ইউক্রেনের।
কূটনীতির পরিভাষায় নিউট্রাল স্টেটাস একটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ। এর অর্থ, ইউক্রেন ন্যাটো বা ওই ধরনের গোষ্ঠীর অংশ হবে না। পরমাণু অস্ত্রও রাখতে পারবে না। জেলেনস্কির বলেছেন, শান্তির স্বার্থে এই বিষয়টি মেনে নিতে তিনি রাজি আছেন। কিন্তু তৃতীয় কোনো দেশকে গ্যারান্টার হিসেবে থাকতে হবে। তাদের জানাতে হবে, ইউক্রেনের নিরাপত্তার দায়িত্ব তারা নেবে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের আগে থেকেই মস্কো দাবি করে আসছে, ইউক্রেনকে তারা ন্যাটোর সদস্য হতে দেবে না। কারণ, ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হলে রাশিয়ার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি স্পষ্টভাবেই তার অবস্থান জানিয়েছেন। তুরস্কের বৈঠকে এই বিষয়টি গুরুত্ব পাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার ভাষা ব্যবহার নিয়েও রাশিয়ার বেশকিছু বক্তব্য আছে। এবিষয়েও আলোচনায় আগ্রহ দেখিয়েছেন জেলেনস্কি।
পাঁচ হাজার ১০০ ট্যাঙ্ক ধ্বংসের অস্ত্র
একদিকে আলোচনা অন্যদিকে লড়াই। জার্মানির কাছ থেকে রোববার পাঁচ হাজার ১০০টি ট্যাঙ্ক ধ্বংস করার অস্ত্র কিনেছে ইউক্রেন। এই অস্ত্রগুলি কাঁধে নিয়ে ব্যবহার করতে হয়। আরজিডাব্লিউ৯০ এইচএইচ সিরিজের এই অস্ত্রগুলিকে ম্যাটাডোরও বলা হয়। ২৫ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে জার্মানির কাছ থেকে এই অস্ত্রগুলি কিনেছে ইউক্রেন। জার্মানির একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এর মধ্যে দুই হাজার ৬৫০টি অস্ত্র ইউক্রেনে পৌঁছে গেছে। বাকি দুই হাজার ৪৫০টি অস্ত্র কয়েকদিনের মধ্যেই ইউক্রেনে পৌঁছে যাওয়ার কথা।
পোল্যান্ডের কাছেও ট্যাঙ্ক আর ফাইটার জেট চেয়েছে ইউক্রেন। তবে পোল্যান্ড কবে তা ইউক্রেনকে দেবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।