রাশিয়ায় ওই বন্দিদের বিচার হতে পারে। খাদ্য সংকট নিয়ে ইউক্রেনকে দায়ী করতে চাইছে রাশিয়া।
বিজ্ঞাপন
গত কয়েকমাসে বেশ কিছু ইউক্রেনীয় সেনাকে আটক করেছে রাশিয়ার সেনা। পূর্ব ইউক্রেনের বেশ কিছু অঞ্চলে রাশিয়ার সেনার কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল ইউক্রেনের সেনা। রাশিয়া তাদের আটক করে রাশিয়ার দখলে থাকা ইউক্রেনের বিভিন্ন এলাকায় বন্দি করে রেখেছিল। সবচেয়ে বেশি ইউক্রেনীয় সেনাকে আটক করা হয়েছিল মারিউপলের কারখানা থেকে। প্রায় এক হাজার সেনাকে সেখান থেকে আটক করা হয়। রাশিয়ার এক সূত্র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, সব মিলিয়ে প্রায় দুই হাজার সেনাকে ইউক্রেন থেকে রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে প্রশাসন। সেখানে তাদের বিচার হতে পারে।
যে পাঁচ উপায়ে পৃথিবী বদলে দিয়েছে যুদ্ধ
রাশিয়ার ইউক্রেনে হামলা শুরুর ১০০ দিন পার হলো৷ অন্য রাষ্ট্রের সীমানায় ঢুকে এমন আক্রমণ গেল ৮০ বছরে ইউরোপে আর হয়নি৷ এই যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে বিশ্বজুড়ে৷ সেটি কেমন? চলুন দেখে নিই৷
ছবি: South Korean Defense Ministry/Getty Images
অসংখ্য শরণার্থী
রাশিয়ার আক্রমণের পর প্রায় ৬৮ লাখ ইউক্রেনিয়ান দেশ ছেড়েছেন৷ জাতিসংঘের হিসেবে, এদের প্রায় ৩০ লাখ প্রতিবেশী দেশগুলো ছাড়িয়ে অন্যান্য দেশেও আশ্রয় নিয়েছেন৷ জার্মানিতে সাত লাখেরও বেশি ইউক্রেনিয়ান আশ্রয় নিয়েছেন৷ আরো ৭৭ লাখ দেশের ভেতরেই ঘরছাড়া হয়েছেন৷
ছবি: Kirsty O'Connor/empics/picture alliance
খাদ্য সংকট
বিশ্বের অর্ধেক সানফ্লাওয়ার ভোজ্য তেল উৎপাদন করে ইউক্রেন৷ এছাড়া দেশটি ১৫% ভুট্টা ও ১০% গম রপ্তানি করে৷ যুদ্ধের কারণে এসব পণ্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে৷ এ কারণে এসব পণ্য উৎপাদনকারী অন্য দেশগুলোও অভ্যন্তরীণ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য রপ্তানি বন্ধ করেছে৷ গেল মে মাস পর্যন্ত ২৩টি দেশ এসব পণ্য রপ্তানি বন্ধ করেছে৷
ছবি: Jelena Djukic Pejic/DW
জ্বালানি সংকট
রাশিয়া পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জ্বালানি গ্যাস রপ্তানিকারক দেশ৷ তারা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও তৃতীয় সর্বোচ্চ কয়লা রপ্তানিকারক৷ ইউক্রেনে হামলা করার পর রাশিয়ার ওপর জ্বালানি নির্ভরতা কমাতে বা বন্ধ করতে একযোগে কাজ করছে ইউরোপের দেশগুলো৷ রাশিয়াও একাধিক ইউরোপীয় দেশে গ্যাস রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে৷
ছবি: ITAR-TASS/imago
দ্রব্যমূল্য ও মুদ্রাস্ফীতি
খাদ্যপণ্য ও জ্বালানি সংকটের মুখে দাম বেড়ে গেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের৷ বেড়েছে মার্কিন ডলারের দাম৷ ইউরোজোনে গত মাসে মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে ৮.১%৷ সারা বিশ্বেই মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে৷
ছবি: Emre Eser/DW
ন্যাটোর পুনর্জন্ম
রাশিয়ার আক্রমণ এককাট্টা করেছে ন্যাটোর সদস্যদেশগুলোকে৷ শুধু তাই নয়, রাশিয়ার কারণে নিরাপত্তা হুমকিতে ভোগা অনেক রাষ্ট্র এখন ৩০ সদস্যদেশের এই জোটে যুক্ত হবার ব্যাপারে ভাবছে৷ ফিনল্যান্ড ও সুইডেন এরই মধ্যে তাদের আনুষ্ঠানিক আবেদন জমা দিয়েছে৷
ছবি: Gints Ivuskans /AFP
5 ছবি1 | 5
ইউক্রেন অবশ্য চুপ করে বসে নেই। দেশের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, রাশিয়ার এই পদক্ষেপ কোনোভাবেই ইউক্রেন সমর্থন করে না। তাদের আশঙ্কা, আটক সেনাদের রাশিয়ায় নিয়ে গিয়ে অত্যাচার করা হবে। তাদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জেলেনস্কি। বস্তুত, মারিউপলের সেনাদের আটক করার পরে রাশিয়া বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, তারা ওই সেনাদের বন্দি প্রত্যার্পণ চুক্তি হলেও ইউক্রেনের হাতে তুলে দেবে না। কারণ, রাশিয়া মনে করে ওই সেনারা নব্য নাৎসি। তাদের বিচার করা হবে। ইউক্রেন তখনো এর ঘোর বিরোধিতা করেছিল।
জেলেনস্কির দাবি
জেলেনস্কি জানিয়েছেন, রাশিয়ার যুদ্ধাপরাধের বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশ করতে চলেছে ইউক্রেন। আগামী সপ্তাহেই 'বুক অফ টর্চার' নামের একটি বই প্রকাশ করা হবে। কীভাবে রাশিয়ার সেনা ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধ করেছে তার বিস্তারিত রিপোর্ট সেখানে থাকবে। ইউক্রেনের দাবি, অন্তত ১২ হাজার এমন যুদ্ধাপরাধের বর্ণনা সেখানে থাকবে। এখনো পর্যন্ত এর জন্য ৬০০ রাশিয়ার সেনাকে তারা চিহ্নিত করেছে। আন্তর্জাতিক বিশ্বের হাতে এই বইটি তুলে দেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
ইউক্রেনের অবস্থা দেখে তাইওয়ানে বন্দুক চালানো শেখার হিড়িক
বড় প্রতিবেশী দেশ রাশিয়া ইউক্রেনের সঙ্গে যা করেছে, তাইওয়ানের সঙ্গেও তো তেমন হতে পারে! বড় প্রতিবেশী দেশ চীন এমন আশঙ্কায় ফেলেছে তাইওয়ানবাসীদের৷ সেখানে তাই অনেকেই নিচ্ছেন বন্দুক চালানোর প্রশিক্ষণ৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: Ann Wang/REUTERS
তাইওয়ানেও যুদ্ধের আশঙ্কা
বড় প্রতিবেশী দেশ যখন-তখন তার ছোট প্রতিবেশীর ওপর হামলা চালাতে পারে- এই বিষয়ে এখন আর কোনো সংশয় নেই অনেক তাইওয়ানবাসীর মনে৷ তাদের অনেকেই মনে করেন, চীনও যে কোনো সময় তাইওয়ানে হামলা চালাতে পারে এবং সেরকম হলে অস্তিত্ব রক্ষার জন্য যেহেতু লড়তে হবে, তার প্রস্তুতি এখনই শুরু করা ভালো৷ সেই ভাবনায় ইতিমধ্যে বন্দুক চালানোর প্রশিক্ষণে নাম লিখিয়েছেন অনেকে৷
ছবি: Ann Wang/REUTERS
আগের তুলনায় তিন-চারগুণ!
গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া৷ তারপর থেকে তাইওয়ানবাসীদের মাঝে বন্দুক প্রশিক্ষণে আগ্রহ যে হারে বাড়ছে এমন আগে কখনো দেখা যায়নি৷ রাজধানী তাইপের অদূরের পোলার লাইট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান নির্বাহী মাক্স-চিয়াং জানালেন, জীবনে কোনোদিন বন্দুক হাতে নেননি, এমন অনেকেই আসছেন বন্দুক চালানো শিখতে৷ সংখ্যাটা নাকি আগের তুলনায় তিন থেকে চারগুণ!
ছবি: Ann Wang/REUTERS
সর্বস্তরে আগ্রহ
গত তিন মাসে তাইওয়ানের প্রায় সব বয়স আর পেশার মানুষের মাঝেই বন্দুক চালানোর প্রশিক্ষণে আগ্রহ বেড়েছে৷ বলা হচ্ছে, ট্যুর গাইড থেকে ট্যাটু আর্টিস্ট পর্যন্ত মোটামুটি সবাই বিশেষ পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে গুলি চালানোয় দক্ষ হতে চাইছেন৷
ছবি: Ann Wang/REUTERS
রাজনীতিবিদরাও শঙ্কিত
ইউক্রেন পরিস্থিতি তাইওয়ানের রাজনীতিবিদদের বড় একটা অংশকেও দুশ্চিন্তায় ফেলেছে৷ তাদের কেউ কেউ যু্দ্ধপরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতিও শুরু করেছেন৷ ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটিক প্রোগ্রেসিভ পার্টির নেতা লিন পিং-ইউ জানিয়েছেন, যুদ্ধ শুরু হলে যাতে কিছুদিন ঘরে নিরাপদে দু-মুঠো খেয়ে বাঁচতে পারেন তা নিশ্চিত করতে শুকনো খাবার এবং ব্যাটারির মতো কিছু জিনিস জমিয়ে রেখেছেন৷ জনগণকেও এমন প্রস্তুতি রাখতে বলেছেন তিনি৷
ছবি: Ann Wang/REUTERS
যুদ্ধে অনিহা, তবু হাতে বন্দুক...
ট্যাটু আর্টিস্ট সু চুন বললেন, ‘‘বেশির ভাগ মানুষই যুদ্ধে যেতে চায় না৷ যুদ্ধ আমিও চাই না৷ কিন্তু এখন যা যা ঘটতে দেখছি, তাতে যুদ্ধের মানসিক প্রস্তুতি আমি নিয়ে রাখবো৷’’ তিনি আরো জানান, সবার মতো আপাতত এয়ারগান চালানো তো শিখবেনই, সঙ্গে সম্ভব হলে সম্মুখযুদ্ধের কায়দা-কানুন এবং যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে রক্ষা করার যাবতীয় কৌশলও রপ্ত করবেন৷
ছবি: Ann Wang/REUTERS
5 ছবি1 | 5
মস্কোর অভিযোগ
খাদ্যশস্যের সরবরাহ বন্ধ নিয়ে সম্প্রতি বৈঠকে বসেছিল ইউক্রেন এবং রাশিয়া। তুরস্কে প্রশাসনের মধ্যস্থতায় সেই বৈঠক হয়েছিল। কিন্তু সেখান থেকে কোনো সমাধানসূত্র মেলেনি। ডিডাব্লিউয়ের সংবাদদাতা জানিয়েছেন, বৈঠকে ইউক্রেনকে দায়ী করেছে রাশিয়া। তাদের অভিযোগ, ইউক্রেন ইচ্ছাকৃতভাবে খাদ্য শস্যের সরবরাহ বন্ধ করে রেখেছে। যদিও রাশিয়া পূর্ব ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় খাদ্যশস্যের বন্দর ধ্বংস করে দিয়েছে।
ইউক্রেনের অভিযোগ, রাশিয়া কৃষ্ণসাগরে অবরোধ তৈরি করে রেখেছে বলেই এই সংকট তৈরি হয়েছে। গোটা আফ্রিকা খাদ্য সংকটে ভুগছে। কিন্তু রাশিয়া তা মানতে চায়নি। রাশিয়ার বক্তব্য, যুদ্ধের কারণে জাহাজগুলি যাতে ধ্বংস না হয়, সে কারণে সব জাহাজকে ওই রাস্তায় যাতায়াত করতে দেয়া হচ্ছে না।
আফ্রিকার দেশগুলিও খাদ্য সংকট নিয়ে আশঙ্কিত হতে শুরু করেছে। এ বিষয়ে বরাবরই তারা রাশিয়ার মুখাপেক্ষী।
বিশ্ব ব্যাংকের সাহায্য
ইউক্রেনকে এক দশমিক চার নয় বিলিয়ন ডলার অর্থ সাহায্য দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে বিশ্ব ব্যাংক। প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া শহরগুলির নির্মাণ এবং সরকারি খরচ তুলতে এই অর্থ ব্যয় হবে। ইউক্রেন অবশ্য জানিয়েছে, ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য মাসে তাদের পাঁচ বিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন।
প্রতিদিন ৩০০ সেনার মৃত্যু
মঙ্গলবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন, ডনবাস অঞ্চলে রাশিয়া প্রাথমিকভাবে কিছু সুবিধা করতে পারলেও এখন ফের তারা পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছে। ডনবাস অঞ্চলের ফ্রন্টলাইন এখন ইউক্রেনের দখলে। শুধু তা-ই নয়, ইউক্রেনের দাবি, প্রতিদিন গড়ে রাশিয়ার ৩০০ সেনার মৃত্যু হচ্ছে। রাশিয়ার কাছেও এ তথ্য আছে বলে জানিয়েছেন জেলেনস্কি। যদিও এই তথ্যের সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।