রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুটিন বেলারুশ সফরে গিয়ে সে দেশকেও ইউক্রেন যুদ্ধ সরাসরি জড়ানোর উদ্যোগ নিতে পারেন বলে আশঙ্কা বাড়ছে৷ সোমবার কিয়েভের উপর আরও হামলা ঘটেছে৷
বিজ্ঞাপন
দীর্ঘ প্রায় দশ মাস ধরে ইউক্রেনের উপর হামলা চালিয়ে গেলেও তেমন সুবিধা করে উঠতে পারছে না রাশিয়া৷ আরও জমি জবরদখল করতে ব্যর্থ হয়ে ইউক্রেনের বেসামরিক অবকাঠামোর উপর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে সে দেশ৷ এবার বেলারুশের সহায়তায় ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আরও বড় আকারের সামরিক অভিযানের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন বেলারুশ সফরে গিয়ে এমন উদ্যোগ চূড়ান্ত করতে পারেন বলে ইউক্রেন মনে করছে৷ বেলারুশে মোতায়েন রুশ সৈন্যরা মহড়ার প্রস্তুতি নেওয়ায় এমন আশঙ্কা বাড়ছে৷ উল্লেখ্য, রাশিয়াকে সাহায্য করলেও বেলারুশ এখনো সরাসরি ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে নি৷
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদোমির জেলেনস্কি রোববার বলেন, রাশিয়া ও বেলারুশ সীমান্তে সুরক্ষা নিশ্চিত করা সরকারের লাগাতার অগ্রাধিকারের মধ্যে পড়ে৷ যে কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি চলছে বলে তিনি আশ্বাস দেন৷ জেলেনস্কির মতে, লুকাশেঙ্কাকে যাই করতে রাজি করা হোক না কেন, সেটা ইউক্রেন ও ইউক্রেনীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মতোই ন্যাক্কারজনক হবে৷ রাশিয়ার তীব্র আক্রমণ সত্ত্বেও বাখমুত শহরের উপর ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন৷
এদিকে, সোমবার ভোরেই ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ ও সংলগ্ন এলাকার উপর আবার রাশিয়া হামলা চালিয়েছে৷ সামরিক প্রশাসনের সূত্র অনুযায়ী নয়টি ইরানে তৈরি ড্রোন ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে৷ তবে সতর্কবাণীর মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সাধারণ মানুষকে নিরাপদ জায়গায় থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেলেও শহরে নতুন ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যায় নি৷ শহরের মেয়র ভিতালি ক্লিচকো বলেন, পরে বিস্তারিত জানানো হবে৷
রাশিয়ার হামলার মোকাবিলা করতে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি পশ্চিমা বিশ্বের উদ্দেশ্যে আরও অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের ডাক দেন৷ তিনি বলেন, শুক্রবার রাশিয়ার ব্যাপক হামলায় বৈদ্যুৎ পরিষেবা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও মাত্র ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩০ লাখ মানুষের জন্য সেই পরিষেবা আবার চালু করা সম্ভব হয়েছে৷ এর আগের দিন ৬০ লাখ মানুষও আবার সেই পরিষেবা পেয়েছেন৷ বেশিরভাগ শহরে পরিবহণ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করে তোলা হচ্ছে বলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন৷
ইউক্রেনের সামরিক কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, রাশিয়া শীতকালে ইউক্রেনের উপর আরও বড় আকারে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ এমনকি রাজধানী কিয়েভ দখল করাও তাদের লক্ষ্যের মধ্যে পড়ে৷ পুটিন রাশিয়ার শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে ইউক্রেনে হামলার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার প্রস্তাব চেয়েছেন৷ রাশিয়ার টেলিভিশনে এমন উদ্যোগ তুলে ধরা হয়েছে৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি)
ইউক্রেনে যৌন সন্ত্রাসের অভিযোগ তদন্ত
রাশিয়ার দখলমুক্ত করা খেরসনে রুশ সৈন্যদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তদন্ত শুরু হয়েছে৷ ধর্ষণ, গণহত্যা ইত্যাদির মতো সব অভিযোগই অবশ্য ‘বানোয়াট’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে রাশিয়া৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: Anna Voitenko/REUTERS
তদন্তে দেশি-বিদেশি আইনজীবী
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরুর কিছুদিনের মধ্যেই খেরসন দখল করে রাশিয়া৷ নভেম্বরের শুরুর দিকে শহরটি পুনরুদ্ধার করে ইউক্রেন৷রুশ সৈন্যরা চলে যেতেই খেরসনবাসীদের কাছ থেকে আসতে থাকে যৌন সন্ত্রাসসহ নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগ৷সম্প্রতি সেসব অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছেন ইউক্রেনের আইনজীবীরা৷ হেগভিত্তিক আন্তর্জাতিক আইনি সংস্থা গ্লোবাল রাইটস কমপ্লায়েন্সের একটি দল এ কাজে সহায়তা করছে তাদের৷
ছবি: Anna Voitenko/REUTERS
অভিযোগের পাহাড়
ইউক্রেনের প্রসিকিউটর জেনারেলের কার্যালয় বলছে, খেরসনের বাসিন্দারা রুশ সৈন্যদের বিরুদ্ধে ৫০ হাজারেরও বেশি অভিযোগ করেছেন৷অভিযোগগুলোর মধ্যে গণহত্যা এবং নানা ধরনের আগ্রাসী আচরণের অভিযোগ অসংখ্য৷ সেরকম অভিযোগগুলোর বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধা আদালত আইসিসি-তেও হতে পারে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনের প্রসিকিউটর জেনারেলের কার্যালয়৷ ওপরের ছবিতে খেরসনের একটি ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি ঘুরে দেখছেন এক তদন্তকারী৷
ছবি: Anna Voitenko/REUTERS
যেখানে রুশ সৈন্য সেখানেই নিপীড়ন, নির্যাতন!
ইউক্রেনের যৌন সন্ত্রাস সংক্রান্ত অপরাধ বিচারের ইউনিটের সহকারি প্রধান আনা সোসোনস্কার দাবি- রুশ সৈন্যরা খেরসন ছেড়ে না যাওয়া ইউক্রেনীয়দের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন চালিয়েছে৷ রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘‘রাশিয়ার সৈন্যরা যেখানে গিয়েছে সেখানেই যৌন সন্ত্রাস, নির্যাতন, এমনকি হত্যাকাণ্ডও চালিয়েছে৷’’
ছবি: Anna Voitenko/REUTERS
প্রথম শুনানি
সম্প্রতি এক রুশ সৈন্যের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তোলেন এক ইউক্রেনীয় নারী৷ গত জুনে সেই মামলার প্রথম প্রাথমিক শুনানি অনুষ্ঠিত হয়৷ অভিযুক্ত রুশ সৈন্যের অনুপস্থিতিতেই অনুষ্ঠিত হয় শুনানি৷
ছবি: Artur Widak/AA/picture alliance
৭০ জনের জবানবন্দি
ক্রাইমিয়া এবং সেভাস্তোপোল পুলিশের তদন্ত বিভাগের সহকারি প্রধান সেরহি ডোরোশিন জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত ৭০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে৷তাদের অনেকেই বলেছেন, রুশ সৈন্যরা খেরসনে ১০টির মতো ডিটেনশন সেন্টার গড়ে তুলেছিল৷ সেখানে আটকে রেখেই তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়৷
ছবি: Anna Voitenko/REUTERS
রাশিয়ার দাবি
রাশিয়া সব অভিযোগই অস্বীকার করেছে৷ সে দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা (ওপরের ছবি) সব অভিযোগকে ‘বানোয়াট’ বলে উড়িয়েই দিয়েছেন৷ জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে রাশিয়ার সৈন্যদের বিরুদ্ধে সাধারণ নাগরিকদের ওপর নির্যাতন চালানোর অভিযোগের কথা উঠে এসেছে৷ সে বিষয়ে রয়টার্সকে মারিয়া জাখারোভা বলেন, ‘‘এসব অভিযোগ পুরোপুরি গুজব এবং গুঞ্জননির্ভর৷’’