কাউকে না জানিয়ে ইউক্রেন সফর জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। ইউক্রেনকে একাধিক সাহায্যের দাবি।
বিজ্ঞাপন
সংবাদমাধ্যমকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে মঙ্গলবার ইউক্রেন সফরে যান জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানালেনা বেয়ারবক। তিনি ইউক্রেন পৌঁছানোর পর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। ইউক্রেনে রাশিয়া যুদ্ধ শুরু করার পর এই প্রথম কোনো জার্মান মন্ত্রী সেখানে পৌঁছালেন।
কিয়েভের পাশাপাশি বুচা এবং ইরপিনে যান বেয়ারবক। ইউক্রেনের সলিসিটার জেনারেলের সঙ্গে বুচা ঘুরে দেখেন তিনি। সলিসিটার জেনারেল জানিয়েছেন, বুচায় রাশিয়ার সেনার অত্যাচারের সমস্ত তথ্য তিনি সংগ্রহ করছেন। বুচায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বেয়ারবক বলেন, ''সমস্ত তথ্য ক্রমশ হাতে আসছে। যারা এই অন্যায় করেছে, তাদের শাস্তি পেতে হবে। তার জন্য জার্মানি ইউক্রেনকে সাহায্য করবে। আক্রান্ত এবং মৃতের পরিবার ন্যায়বিচার পাবে।''
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন বেয়ারবক। জানিয়েছেন, ইউক্রেন যাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পূর্ণ সদস্যপদ পেতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রাখবে জার্মানি। তবে সবকিছুই নিয়ম মেনে হবে। তার জন্য যা সমসয় লাগবে, তা দিতে হবে।
ইউক্রেনকে জার্মানি যে অস্ত্র পাঠিয়েছে তার প্রশিক্ষণ দ্রুত শুরু হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন বেয়ারবক। জানিয়েছেন, ইউক্রেনকে আরো সাহায্য দেওয়া হবে।
ইউক্রেন ছেড়ে আসা মানুষের জন্য ইইউ-র নীতি
রাশিয়ার হামলার পর ইউক্রেন ছেড়ে প্রতিবেশী দেশগুলিতে চলে এসেছেন প্রায় ৬০ লাখ মানুষ। শেষপর্যন্ত কোথায় আশ্রয় পাবেন তারা?
ছবি: Fabrizio Bensch/REUTERS
প্রথমে প্রতিদিন এক লাখ করে
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত শুরু হওয়ার পর প্রথমদিকে দিনে এক লাখ করে মানুষ ইউক্রেন ছেড়েছেন। প্রাণ বাঁচাতে তারা চলে গেছেন প্রতিবেশী দেশগুলিতে। উপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, পোল্যান্ডের একটি স্টেশনে ইউক্রেন থেকে আসা মানুষদের সাময়িকভাবে রাখা হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের কমিশনার ফর হোম অ্যাফেয়ার্স জানিয়েছে, এখন দিনে ৪০ হাজার মানুষ ইউক্রেন ছেড়ে ইউরোপের দেশগুলিতে আসছে।
ছবি: Fanny Facsar/DW
অর্ধেক বাচ্চা
যারা ইউক্রেন ছেড়ে ইউরোপের দেশগুলিতে আশ্রয় নিচ্ছেন, তাদের অর্ধেকই বাচ্চা। আসলে বহু পুরুষ ও নারী হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছেন। তারা বয়স্ক ও বাচ্চাদের পাঠিয়ে দিয়েছেন নিরাপদ আশ্রয়ে। উপরের ছবিটি স্লোভানিয়ায় ইউক্রেন থেকে আসা বাচ্চাদের।
ছবি: Robert Nemeti/AA/picture alliance
সবচেয়ে বেশি মানুষ পোল্যান্ডে
পোল্যান্ডেই ২২ লাখের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। পোল্যান্ড জানিয়েছে, এত কম সময়ের মধ্যে এত মানুষ আশ্রয় নেয়ায় তাদের অভিবাসন নীতি ভেঙে পড়ার মুখে।
ছবি: Sergei Grits/AP/picture alliance
জার্মানিতে তিন লাখ
জার্মান চ্যান্সেলর ওলফ শলৎস জানিয়েছেন, ইউক্রেন থেকে তিন লাখ মানুষ জার্মানিতে এসেছেন। উপরের ছবিতে বার্লিনের সেন্ট্রাল স্টেশনের সামনে ইউক্রেন থেকে আসা মানুষরা।
ছবি: Michael Kuenne/PRESSCOV/Zuma/picture alliance
জার্মানির প্রস্তাব
জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফ্রেজার চিঠি লিখে পোল্যান্ডের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, ইউক্রেন ছেড়ে আসা প্রত্যেকের জন্য ইইউ-র সদস্য দেশগুলি এক হাজার ইউরো করে দিক। ছবিতে পোল্যান্ডের একটি স্টেডিয়ামে ইউক্রেন থেকে আসা মানুষদের প্রবেশের জন্য লম্বা লাইন।
ছবি: Beata Zawrzel/NurPhoto/picture alliance
ইইউ-র সিদ্ধান্ত
ইইউ-র মন্ত্রীরা সোমবার বৈঠকে বসে ১০ দফা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, ইউক্রেন থেকে আসা মানুষদের রেজিস্ট্রেশনের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হবে। তাদের যাতায়াত ও পরিবহণের জন্য একটি হাব তৈরি করা হবে। ইইউ কমিশন সেফ হোম নীতি নেবে। তার ফলে যেখানে সবচেয়ে বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন, সেখান থেকে অন্য দেশে কিছু মানুষকে নিয়ে যাওয়া হবে।
ছবি: Hannibal Hanschke/Getty Images
সহযোগিতার সিদ্ধান্ত
ইইউ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বিভিন্ন দেশে ইউক্রেন থেকে আসা মানুষদের পুনর্বাসনের জন্য সাহায্য করা হবে। এই মানুষদের পাশে দাঁড়াবে সব দেশ। প্রতিটি দেশকে সাধ্যমতো শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে বলা হয়েছে। উপরের ছবিতে ওয়ারশর একটি স্টেডিয়ামে ইউক্রেন ছেড়ে আসা মানুষদের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। অ্যামেরিকাও ইউক্রেন ছেড়ে আসা মানুষদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়াবে বলে জানিয়েছে।
ছবি: Evan Vucci/AP/picture alliance
কোটায় আপত্তি
কোটা ব্যবস্থায় আপত্তি আছে জার্মানির। তারা চায়, ইউক্রেন থেকে আসা মানুদের বিভিন্ন দেশে ভাগ করে রাখা হোক। সব দেশ যেন ইউক্রেন থেকে আসা মানুষদের প্রতি সমর্থন জানায়।
ছবি: Hannibal Hanschke/Getty Images
9 ছবি1 | 9
ইউক্রেনে রাশিয়া যুদ্ধ শুরু করার পর বার বার সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে জার্মানিকে। রাশিয়ার প্রতি জার্মানির নীতি নরম, এমন সমালোচনা হয়েছে। জার্মানি রাশিয়ার গ্যাসের উপর নির্ভরশীল বলেই এমন নীতি নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। এদিন বেয়ারবক জানিয়েছেন, ধীরে ধীরে রাশিয়ার গ্যাসের উপর থেকে নির্ভরশীলতা কমাচ্ছে জার্মানি।
জার্মানির চ্যান্সেলর ওলফ শলৎস কেন ইউক্রেন যাচ্ছেন না, তা নিয়েও বহু সমালোচনা হয়েছে। বেয়ারবকের এই সফর তাই কূটনৈতিক ভাবেও গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে বুধবারই ফিনল্যান্ডের পার্লামেন্ট ন্যাটোয় যোগ দেওয়ার বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছে।