রুশপন্থি বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে লাগাতার সংঘর্ষের ফলে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে৷ না আছে চাল, না আছে চুলো৷ নিরাপদে তাদের প্রস্থানের পথ সুগম করার ডাক দিচ্ছে কিয়েভ সরকার৷
বিজ্ঞাপন
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রুশপন্থি বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে সে দেশের সরকার৷ দিনের পর দিন ধরে বিদ্যুৎ ও জল সরবরাহ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে৷ নিরীহ মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠছে৷ সরকার ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে গত সপ্তাহান্তেই ১০ জনের বেশি নিহত হয়েছে৷ লুগানস্ক শহরের মেয়র মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন৷ এই অবস্থায় সাধারণ মানুষ যাতে দোনেৎস্ক, লুগানস্ক সহ অন্যান্য শহর ছেড়ে চলে যেতে পারে, কিয়েভ সরকার বিদ্রোহীদের উদ্দেশ্যে সেই আবেদন জানিয়েছে৷ সরকারের প্রস্তাব, দিনে কয়েক ঘণ্টার জন্য ‘মানবিক করিডোর' সৃষ্টি করে সেখান দিয়ে অবাধে নিরীহ মানুষ বেরিয়ে আসতে পারবে৷ প্রয়োজনে তাদের চিহ্নিত করা হবে সাদা পতাকা অথবা অন্য কোনো উপায়ে৷
ক্রাইমিয়ায় সব শান্ত?
সবার মনোযোগ এখন ইউক্রেনের ক্রাইমিয়ার দিকে৷ ক্রাইমিয়ায় যা ঘটেছে তাকে রাশিয়ার আগ্রাসন বলা হলেও রুশ সেনাদের কিন্তু সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছে স্থানীয়রা৷ ছবিঘরে দেখুন ক্রাইমিয়ার পরিস্থিতি৷
ছবি: DW/F. Warwick
কোসাকদের আগমন
রাশিয়ার ক্রাসনোডার থেকে এসেছে ২৫০ জনের মতো কুবান কোসাক৷ সামরিক বাহিনীর পোশাক পরেননি তাঁরা৷ সেভাস্টোপোলের রুশপন্থি কর্তৃপক্ষ কোসাকদের শপথ পাঠ করিয়েছে৷ স্বেচ্ছাসেবী কোসাকরা জানিয়েছে, ক্রাইমিয়াবাসীদের রক্ষা করার জন্য তারা স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে কাজ করবে৷
কুবান কোসাকরা সেভাস্টোপোলের পুলিশের সঙ্গে টহলে অংশ নিচ্ছে৷ মাথায় উলের টুপি পরে রবি বার থেকে রাস্তায় টহল দিচ্ছে কোসাকরা৷ ২০০৫ সালে এথনিক সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী এবং শক্তিশালী সামরিক শক্তি হিসেবে কোসাকদের স্বীকৃতি দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন৷
ছবি: DW/F. Warwick
কঠিন সময়ে নিরাপত্তা
রাশিয়া এবং ক্রাইমিয়ার টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন কোসাকদের নেতা কর্নেল সের্গেই সাভোনিন ইউরিয়েভিচ৷ তিনি বলেন, কোসাকরা সেভাস্টোপোলের মানুষদের রক্ষা করার জন্য এসেছে৷
ছবি: DW/F. Warwick
‘স্বায়ত্তশাসন, বিচ্ছিন্নতাবাদ নয়’
ক্রাইমিয়ায় অনেকের হাতেই দেখা যায় ক্রাইমিয়া এবং রাশিয়ার পতাকা৷ এর অর্থ এই নয় যে, ক্রাইমিয়া ইউক্রেন থেকে আলাদা হয়ে গেছে৷ সেভাস্টোপোলের এই তরুণ-তরুণীরা জানালেন, তাঁরা ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ চাননা, কেননা ইউক্রেনকে তাঁরা ভ্রাতৃপ্রতীম রাষ্ট্র মনে করেন৷ তাঁদের দাবি একটাই – স্বায়ত্তশাসন এবং এথনিক রুশ হিসেবে প্রাপ্য মর্যাদা৷
ছবি: DW/F. Warwick
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?
এই প্রবীণ এসেছেন কোসাকদের সমর্থন জানাতে৷ রাশিয়ার প্রতি তাঁর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে৷ পরনে রুশ সেনাবাহিনীর মতো কমলা আর কালো রংয়ের পোশাক৷ তিনি নিজেও সোভিয়েত ইউনিয়নের রেড আর্মির সাবেক কর্মকর্তা৷
ছবি: DW/F. Warwick
রাস্তায় তল্লাশি
সিমফারোপোল এবং সেভাস্টোপোলের মাঝের হাইওয়েতে গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে রুশপন্থি বেসামরিক বাহিনীর সদস্যরা৷
ছবি: DW/F. Warwick
ব্যবসার জন্য খারাপ সময়?
লিলিয়া ভজনুক একজন স্যুভেনির বিক্রেতা৷ রাবারের তৈরি মুখোশগুলোর মধ্যে পুটিনের চেহারার মুখোশটার এখন দারুণ কাটতি৷ তবু খুব চিন্তায় আছেন লিলিয়া৷ চলমান সংকট ব্যবসার বড় রকমের ক্ষতি করবে বলে আশঙ্কা তাঁর৷
ছবি: DW/F. Warwick
হৃদয়-মন জয় করেছে তাঁরা
সেভাস্টোপোলে গেলেই ব্ল্যাক সি ফ্লিট অঁসম্বল-এর কনসার্ট দেখতে পাবেন৷ নাচ-গানের এই স্থানীয় সংগঠনটি তাদের পরিবেশনা দিয়ে সবার মন জয় করেছে৷ রুশ লোকসংগীতে সাগরের প্রশংসা করে যেসব গান রচনা করা হয়েছে মূলত সেগুলোই পরিবেশন করে ব্ল্যাক সি ফ্লিট অঁসম্বল৷ রাশিয়ার ঐতিহ্যবাহী ইয়াব্লোচকো বা ‘ছোট্ট আপেল’ নাচটা সত্যই মনোমুগ্ধকর৷
ছবি: DW/F. Warwick
চাই শুধু স্বায়ত্তশাসন
সেভাস্টোপোলের অধিকাংশ মানুষই রুশ জাতীয়তাবাদের সমর্থক৷ ইউক্রেনীয়দের তারা অবিশ্বাস করে, মনে করে ইউক্রেনীয়রা চরম ডানপন্থি৷ সেভাস্টোপোলের মানুষ মনে করে রুশ বাহিনীর উপস্থিতি এ অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসন এবং নিরাপত্তার রক্ষাকবচ৷
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সংবাদ সংস্থা বিবিসি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে তাঁর সরকার দ্রুত সাফল্য পেতে চলেছে৷ তবে দোনেৎস্ক ও লুগানস্ক শহর মুক্ত করা সহজ হবে না বলে তিনি স্বীকার করেন৷
এরই মধ্যে রাশিয়া ইউক্রেন সীমান্তের কাছে বিশাল আকারে সামরিক মহড়ার ঘোষণা করেছে৷ প্রায় ১০০ বোমারু বিমান ও হেলিকপ্টার এতে অংশ নেবে৷ আস্ত্রাখান অঞ্চলে সোম থেকে শুক্রবার পর্যন্ত এই মহড়া চলবে৷ এছাড়া চলতি মাসেই এস-৪০০ নামের নতুন প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করতে চলেছে রুশ সেনাবাহিনী৷
রাশিয়ার উপর পশ্চিমা জগতের নিষেধাজ্ঞার মাত্রা ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে৷ জার্মানি সোমবার রাশিয়ার জন্য নির্দিষ্ট প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রপ্তানি স্থগিত করেছে৷ সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য প্রায় ১২ কোটি ৮০ লক্ষ ইউরো মূল্যের সরঞ্জাম রাশিয়ায় পাঠানোর কথা ছিল৷ জার্মান কোম্পানি রাইনমেটাল এর জন্য সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ চাইতে পারে৷ কারণ বিগত সরকারের আমলেই এই চুক্তি অনুমোদন করা হয়েছিল৷ রাশিয়া বিষয়টি আদালতে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে৷