কৃষ্ণ সাগরের ধারে ইউক্রেনের শহর ওডেসা। বৃহস্পতিবার সেখানে রাশিয়া মিসাইল হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ।
বিজ্ঞাপন
ফের মিসাইল হামলা রাশিয়ার। কৃষ্ণ সাগর সংলগ্ন ওডেসায় বৃহস্পতিবার রাশিয়ার সেনা মিসাইল হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় গভর্নর। তার দাবি, একটি বহুতলে হামলা চালানো হয়। ঘটনায় এখনো পর্যন্ত ১০ জন বেসামরিক ব্যক্তির নিহত হওয়ার কথা জানা গেছে। বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ওডেসা অঞ্চলেই আরেকটি হাসপাতাল সংলগ্ন অঞ্চলে রাশিয়া আক্রমণ চালিয়েছে বলে অভিযোগ। যদিও সেখানে কারো মৃত্যু হয়নি।
যুদ্ধের মাঝেই দেশে ফিরছেন যে শরণার্থীরা
02:07
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, বহুতলটি কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। নিহতদের সকলেই বেসামরিক ব্যক্তি। রাশিয়া ফের বেসামরিক ব্যক্তিদের উপর আক্রমণ চালিয়েছে বলে এদিন অভিযোগ করেছে ইউক্রেন। রাশিয়া অবশ্য এখনো এবিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
রাশিয়া মিসাইলটি কৃষ্ণসাগর অঞ্চলে বিমান থেকে ছুঁড়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে। একইসঙ্গে অভিযোগ, স্থানীয় একটি হাসপাতাল চত্বরেও রাশিয়া আক্রমণ চালিয়েছে। সেখানে বহু মানুষ আহত হলেও এখনো পর্যন্ত কারো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
ক্যামেরায় ইউক্রেনের ধ্বংসস্তূপে আগামীর স্বপ্ন
যুদ্ধের সময়েও ইউক্রেনের মানুষ ভেঙে পড়েনি৷ তাই ধ্বংসযজ্ঞ আর মৃত্যুর মিছিলের মাঝেও চলছে স্বপ্ন রচনা৷ ফটোগ্রাফার স্তানিস্লাভ সেনিকের ক্যামেরায় চেরনিহিভের ধ্বংসস্তূপে স্কুল পরীক্ষার্থীদের ছবিগুলো সে কথাই বলে...
ছবি: Instagram/@senykstas
ধ্বংসস্তূপে অন্যরকম পরীক্ষা
যুদ্ধ শুরুর পর অনেকেই ইউক্রেন ছেড়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন৷ তবে যারা দেশ ছাড়েননি, তারা হয় দেশরক্ষার লড়াইয়ে নেমেছেন, নয়ত নিজেকে তৈরি রাখছেন, তৈরি করছেন দেশ পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখার জন্য৷ যুদ্ধের মাঝেও পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছে শিক্ষার্থীরা৷ ধ্বংসপ্রায় চেরনিহিভের শিক্ষার্থীরা স্কুল ফাইনালও দিয়েছে৷ তাদের কয়েকজনকে নিয়ে স্তানিস্লাভ সেনিকের ফটোশুটটাও ছিল অন্যরকম এক পরীক্ষা৷
ছবি: Instagram/@senykstas
অচেনা রূপে চেনা শহর
এই দুই কিশোরীর ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর চেরনিহিভেই জন্ম, বেড়ে ওঠা৷ তাদের প্রিয় শহর আজ রুশ হামলায় ধ্বংসপ্রায়৷ তবে ধ্বংসপ্রায় শহরটিও তাদের প্রিয়৷ এই শহরকে নতুন করে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখে তারা৷ স্তানিস্লাভ সেনিকের আইডিয়াটা তাই পছন্দ হয়েছে তাদের৷ বোমায় ভেঙে পড়া এক ভবনেই তাই ফটোশুটে অংশ নিয়েছে তারা৷
ছবি: Instagram/@senykstas
দুঃস্বপ্নময় বর্তমানে সুন্দর এক স্বপ্ন
স্তানিস্লাভ সেনিকের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ফটোশুটটা ওরা চেরননিহিভের জীর্ণ, বিবর্ণ ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে করতে রাজি হয়েছে মূলত একটি কারণে৷ বাকিদের মতো ওরাও ভেবেছে, এই ছবি থেকে যাবে স্মৃতি হয়ে৷ দিন বদলাবে৷ আসবে সুদিন৷ চেরনিহিভ একদিন আবার সেজে উঠবে নতুন সাজে৷ তখন এই দুই কিশোরী তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে এই ছবি দেখিয়ে বলতে পারবে, ‘‘দেখো, আমরা এই ধ্বংসপ্রায় শহরটাকে ভালোবেসে বেসে আবার বাঁচিয়ে তুলেছি৷’’
ছবি: Instagram/@senykstas
‘ওরা আর ভয় পায় না, মন খারাপ করে না’
ছবির এই মানুষটিই স্তানিস্লাভ সেনিক৷ ছবি তোলাকে পেশা করেছেন পাঁচ বছর আগে৷ রাশিয়ার হামলায় বিধ্বস্ত চেরনিহিভ শহরে শিক্ষার্থীরা স্বতস্ফূর্তভাবে ফটোশুটে অংশ নেবে কিনা- এ নিয়ে তার অনেক সংশয় ছিল৷ কিন্তু কথা বলে বুঝলেন, শিক্ষার্থীদের ফটোশুটে কোনো আপত্তি নেই৷ আরো দেখলেন, ‘‘ওরা এখন আর ভয় পায় না, প্রিয় শহরের ধ্বংসপ্রায় রূপ দেখে খুব বেশি মন খারাপও করে না৷’’
ছবি: Instagram/@senykstas
দুমড়ানো-মোচড়ানো গাড়ির ছাদে ওরা পাঁচজন
স্বাভাবিক অবস্থায় এই চেহারার গাড়ি কোনো শহরেই যত্ন করে রাখা হয় না৷ যুদ্ধ শেষ হলে এই দুটোকেও হয়ত আর কোথাও দেখা যাবে না৷ তবে এই পাঁচ শিক্ষার্থীর এই ফটোশুটের কল্যাণে আগামী পৃথিবীর অনেকেই নিশ্চয়ই মনে রাখবে গাড়ি দুটোর কথা৷
ছবি: Instagram/@senykstas
‘ভুল বুঝবেন না’
ফটোশুটে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা অবশ্য আগেভাগেই জানিয়ে রেখেছে, কেউ যদি ছবিগুলো দেখে মনে করেন, চেরনিহিভের ধ্বংসপ্রায় চেহারা নিয়ে শিক্ষার্থীরা গর্বিত আর এ কারণেই তারা সেখানে ফটোশুটে অংশ নিয়েছে- তাহলে খুব বড় ভুল করা হবে৷ তাদের অনুরোধ, ‘‘প্লিজ, আমাদের ভুল বুঝবেন না, আমরা আসলে এই দুঃসময়টাকে ফ্রেমে ধরে রাখতে চাই, আগামী প্রজন্মকে ছবি দেখিয়ে বলতে চাই ভয়ঙ্কর এই যুদ্ধের কথা৷’’
ছবি: Instagram/@senykstas
6 ছবি1 | 6
রাশিয়ার দাবি
বৃহস্পতিবারই রাশিয়া জানিয়েছে, কৃষ্ণসাগরের ওডেসা বন্দরের কাছে স্নেক আইল্যান্ড থেকে তারা সেনা সরিয়ে নিয়েছে। ইউক্রেনের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়েই রাশিয়া এই পদক্ষেপ নিয়েছে বলে তাদের দাবি। কিন্তু ইউক্রেনের বক্তব্য, তাদের হাউইৎজার আক্রমণের মুখে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে রাশিয়ার সেনা। এবং সে কারণেই যাওয়ার আগে তারা প্রতিহিংসা স্বরূপ ওডেসায় মিসাইল হামলা চালিয়েছে।
জার্মানির আশঙ্কা
আগামী মাসে নর্ড স্ট্রিম এক পরিষ্কার করার জন্য সাময়িকভাবে বন্ধ করা হবে। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে রাশিয়া থেকে জার্মানিতে গ্যাস আসে। জার্মান ভাইস চ্যান্সেলর সংবাদমাধ্যমের কাছে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, রাশিয়া ফের গ্যাস সরবরাহ না-ও করতে পারে। অর্থাৎ, গ্যাস দেওয়া পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে পারে। যদিও রাশিয়া এখনো পর্যন্ত এবিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
বাইডেনের বক্তব্য
বৃহস্পতিবার মাদ্রিদে শেষ হয়েছে ন্যাটোর সম্মেলন। সমাপ্তি বক্তৃতায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ঐতিহাসিক সম্মেলন হয়েছে এবার। তার বক্তব্য, ২০১০ সালের পর ফের এবার ন্যাটো স্ট্রাটেজিক কনসেপ্টের পর্যালোচনা করল। রাশিয়াকে এদিন ফের প্রধান শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে বাইডেন বলেছেন, ন্যাটো সর্বশক্তি দিয়ে ইউরোপের শান্তি রক্ষা করবে।