এই বাড়তি সাহায্য দিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রের কাছের জায়গাগুলিতে থাকা মানুষকে সাহায্য করা হবে। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ''ইউক্রেনের মানুষকে কম্বল, শীতের কোট-সহ অন্য প্রয়োজনীয় জিনিস দেয়া হবে। এর ফলে তারা ভয়ংকর ঠান্ডার মোকাবিলা করতে পারবেন।''
তিনি জানিয়েছেন, এই অর্থের পুরটাই মানবিক ত্রাণ। এই অর্থ বিদ্যুৎক্ষেত্রে খরচ করা যাবে না। মানুষকে শীতের হাত থেকে বাঁচাতে এই অর্থ খরচ করতে হবে। এই অর্থ দিয়ে শীতের পোশাক কেনা যাবে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুটিন এখন পূর্ব ইউক্রেনে দ্বিগুণ বেগে আক্রমণ করার জন্য উত্তর কোরিয়ার সাহায্য চাইছেন। বেয়ারবক জানিয়েছেন, পুটিন ইচ্ছে করেই ইউক্রেন-জুড়ে জীবনদায়ী ব্যবস্থাগুলি ধ্বংস করতে চাইছেন। রাশিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রে বোমা ফেলছে, বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন ধ্বংস করছে। এটা খুবই ভয়াবহ কৌশল।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, ইউক্রেন যুদ্ধে উত্তর কোরিয়া ঢুকে যাওয়ার পর তিনি বেয়ারবকের সঙ্গে নির্ণায়ক অ্যাকশন নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ''আমরা ইউরোপের কাছে আর্জি জানিয়ে বলছি, উত্তর কোরিয়ার সেনা একটি সার্বভৌম ইউরোপীয় দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসী যুদ্ধে নামছে।''
রাশিয়ার কুরস্কে ঢুকে ৭৪টি বসতি তারা দখল করে নিয়েছে বলে দাবি ইউক্রেনের। কী বলছেন কুরস্কের সাধারণ মানুষ?
ছবি: Roman Pilipey/AFP/Getty Images
রাশিয়ার ভূখণ্ডে ইউক্রেনের সেনা
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তারা যুদ্ধটা এবার রাশিয়ার ভূখণ্ডে নিয়ে গেছেন। ইউক্রেন জানিয়েছে, তাদের সেনা ১৩ কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে পড়েছে। ৭৪টি বসতি তাদের অধিকারে আছে। এক সপ্তাহ হলো ইউক্রেনের সেনা কুরস্কে ঢুকেছে। রাশিয়ার দাবি, ইউক্রেনের সেনার অগ্রগতি তারা থামাতে পেরেছে।
ছবি: ROMAN PILIPEY/AFP
'প্রথমে সবাই শান্ত ছিলেন'
কুরস্কের বাসিন্দা মার্গারিটা(আসল নাম জানাতে চাননি) ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''গত শুক্রবার যখন সাইরেন বাজলো, তখন মানুষ শান্ত ছিলেন। তারা নিজেদের কাজ করেছেন, বাজার করেছেন, সবই স্বাভাবিক ছিল। রাস্তায়, পার্কে মানুষ স্বাভাবিকভাবে হাঁটছিলেন। পরে সীমা্ন্ত থেকে খবর এলো, ইউক্রেনের সেনা আক্রমণ করেছে।''
ছবি: AP Photo/picture alliance
টিভি বললো, 'সাময়িক সমস্যা'
গোটা এলাকার জন্য সতর্কবার্তা জারি করা হয়। মার্গারিটা জানিয়েছেন, ''গোটা অঞ্চলকে সতর্ক করা হয়েছিল। আর আমরা এখন সাইরেনে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তাই সাইরেন সত্ত্বেও আমরা খুব একটা চিন্তিত হইনি। পরে আত্মীয়রা জানান, সীমান্তে তীব্র লড়াই চলছে। মানুষ ওই এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।''
ছবি: Ilya Pitalev/Sputnik/IMAGO
'পালাবার জন্য হুড়োহুড়ি'
অ্যান্টোনিনা কুরস্কে থাকেন, আর তার বোন থাকতেন সুদঝাতে। অ্যান্টোনিনা জানিয়েছেন, ''সুদঝা এখন ইউক্রেনের দখলে। তার বোন জুলিয়া বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছেন। ইউক্রেনের আক্রমণের পর মানুষ যেভাবে পেরেছে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।''
ছবি: AP Photo/picture alliance
'সবকিছু ফেলে আসতে হয়েছে'
অ্যান্টোনিনা জানিয়েছেন, তার বোন জুলিয়া এখন আত্মীয়দের কাছে দূরে চলে যেতে পেরেছেন। কিন্তু তিনি ব্যাংক কার্ড-সহ সব ডকুমেন্ট ফেলে এসেছেন। তবে তার সবচেয়ে বেশি চিন্তা পালিত হাঁস, মুরগি ও অন্য পশুদের নিয়ে।
ছবি: AP Photo/picture alliance
অর্থ ও রেশনের প্রতীক্ষায়
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, যাদের বাড়ি থেকে চলে আসতে হয়েছে, তাদের রেশন দেয়া হবে এবং ১০ হাজার রুবল দেয়া হবে। কিছু অসুবিধার জন্য জুলিয়ারা এখনো রেশন পাননি। তারা অপেক্ষা করছেন। অনেকে বলছেন, এই অর্থ দিয়ে এক বা দুই দিনের জন্য খাবার ও ওষুধ কেনা যেতে পারে। ফলে তা যথেষ্ট নয়।
ছবি: AP Photo/picture alliance
প্রতিবেশী এলাকাতেও আশংকা
কুরস্কের প্রতিবেশী বেলগোরোদের নিনা ডিডাব্লিওউকে বলেছেন, তারাও সমানে এয়ার রেইড সাইরেন শুনতে পাচ্ছেন। ডিডাব্লিউর সঙ্গে কথা বলার সময়ও সাইরেন বাজার শব্দ পাওয়া গেলো। নিনা জানিয়েছেন, তারা এখন সাইরেনে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। ইউক্রেন কুরস্কে ঢুকে পড়ার পর এখানে প্রচুর রাশিয়ার সেনা এসেছে।
সুদঝা অঞ্চলে নিখোঁজ মানুষদের নিয়ে সামাজিক মাধ্যম সরগরম। বলা হচ্ছে, ৪০ জন নিখোঁজ। অনেকে আত্মীয়দের নিয়ে আসার জন্য গেছিলেন। তাদের খোঁজ নেই। সামাজিক মাধ্যমে একজন লিখেছেন, ইউক্রেনের সেনা যাতে বিপাকে পড়ে, সেজন্য রাশিয়া গ্রামগুলিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক জায়গায় ফোনে যোগাযোগও করা যাচ্ছে না।
ছবি: Evgeniy Maloletka/AP Photo/picture alliance
'আগাম সতর্কতা ছিল না'
সামাজিক মাধ্যমে মানুষ প্রশ্ন তুলছেন, কেন গোয়েন্দারা ইউক্রেনের আক্রমণের খবর দেয়নি বা দিতে পারেনি? জুলিয়ানা বলেছেন, ''মানুষের আশংকা ছিল, কিন্তু কর্তৃপক্ষ আগাম কোনো সতর্কতা জারি করেনি।'' শ্বেতলানা বলেছেন, ''কোথায় গেল সিক্রেট সার্ভিস? তারা তো মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে?'' স্থানীয় প্রশাসন মানুষকে শান্ত থাকতে বলেছেন।
জেলেনস্কি তার বিডিও বার্তায় বলেছেন, ''আমরা দেখছি, উত্তর কোরিয়ার সেনার সংখ্যা বাড়ছে। দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা হলো, আমাদের অংশীদারদের এনিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখতে পাচ্ছি না।''
তিনি জানিয়েছেন, ইউক্রেনের গোয়েন্দাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তিনি এই কথা বলেছেন।
এটা এখনো স্পষ্ট নয়, উত্তর কোরিয়ার সেনা ইউক্রেনের সেনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে কি না।
পেন্টাগন বলেছে, উত্তর কোরিয়ার আরো দুই হাজার সেনা গেছে। সবমিলিয়ে রাশিয়ায় উত্তর কোরিয়ার ১১ থেকে ১২ হাজার সেনা আছে বলে জানিয়েছেন পেন্টাগনের মুখপাত্র।
দক্ষিণ কোরিয়াকে অনুরোধ
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বরেল দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
সামাজিক মাধ্যমে বরেল জানিয়েছেন, তারা নিরাপত্তা সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি দক্ষিণ কোরিয়াকে বলেছেন, তারা যেন ইউক্রেনকে আরো বেশি করে সমর্থন করে।
বরেল বলেছেন, "রাশিয়ার আগ্রাসনের পর ইউক্রেনের অস্তিত্ব সংকট দেখা দিয়েছে। ইউক্রেনকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে আমরা ঐক্যবদ্ধ। আমি দক্ষিণ কোরিয়াকে সেই সাহায্যের পরিমাণ বাড়াতে উৎসাহিত করেছি।"