ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পলটাভা শহরে রাশিয়ার ব্যালেস্টিক মিসাইল সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও হাসপাতালে আঘাত করেছে।
বিজ্ঞাপন
এর ফলে ৫১ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ২৭০ জন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এটাই সবচেয়ে মারাত্মক আক্রমণ বলে জানিয়েছে ইউক্রেন।
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি তার দৈনিক সান্ধ্য ভাষণে এই আক্রমণের উল্লেখ করেছেন। তিনি এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
রাশিয়ার এই আক্রমণের পর ইউক্রেনের সামাজিক মাধ্যমে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠেছে। রাশিয়ার সামরিক ব্লগাররা বলেছেন, ইউক্রেনের সেনা প্রকাশ্যে একটি অনুষ্ঠান করছিল। রাশিয়া সেটাকেই টার্গেট করতে চেয়েছে। এরপরই ইউক্রেনের ব্লগাররা প্রশ্ন তুলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কী করে প্রকাশ্যে কোনো অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত নিলো সেনা কর্তৃপক্ষ?
শহরের গভর্নর ফিলিপ প্রোনিন বলেছেন, উদ্ধারকারী দল ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে দেখছে, তার নিচে আর কেউ চাপা পড়ে আছেন কিনা।
রাশিয়ার মিসাইলে বিধ্বস্ত ইউক্রেনের শিশু হাসপাতাল
ইউক্রেনের পাঁচটি শহরে আবার মিসাইল হামলা চালিয়েছে রাশিয়া৷ হামলায় বিধ্বস্ত হয়েছে কিয়েভের একটি শিশু হাসপাতাল৷ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফ আন্দ্রেই ইয়েরমাক জানান, হামলায় মোট ৩৬ জন নিহত হয়েছেন৷ আহত হয়েছেন ১৪০ জন৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
বিধ্বস্ত শিশু হাসপাতাল
রাশিয়ার ছোঁড়া মিসাইলের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে কিয়েভের অকমাডিট শিশু হাসপাতাল৷ এটিই ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় শিশু হাসপাতাল৷ মিসাইলের আঘাতে হাসপাতাল ভবনটির ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ সেখানে কর্মরত চিকিৎসক লেসিয়া লিজিটসিয়া ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে এ কথা জানিয়েছেন৷
ছবি: Oleksandr Ratushniak/REUTERS
ভীতিকর পরিস্থিতি
ভীতিকর পরিস্থিতি
হামলার সময়কার ভীতিকর অবস্থান বর্ণনা করেছেন চিকিৎসক লেসিয়া লিজিটসিয়া৷ তিনি বলেন, যখন মিসাইল এসে হাসপাতালে আঘাত হানে তখন পুরো বিষয়টি ‘সিনেমার দৃশ্যের’ মতো মনে হচ্ছিল৷ তিনি ‘ভয়ঙ্কর তীব্র আলো’ দেখতে পেয়েছিলেন জানিয়ে আরো বলেন, ‘‘এর পরপরই বিকট এবং ভীতিকর শব্দ শুনতে পাই৷’’ হামলায় হাসপাতালের একটি অংশ গুঁড়িয়ে গেছে, অন্য অংশে আগুন ধরে যায় বলেও জানান তিনি৷
ছবি: Oleksandr Ratushniak/REUTERS
মোট নিহত ৩৬, হাসপাতালে ২
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদোমির জেলেনস্কির চিফ অব স্টাফ আন্দ্রেই ইয়েরমাক জানিয়েছেন, কয়েকটি শহরের এ হামলায় মোট ৩৬ জন নিহত হয়েছেন৷ আহত হয়েছেন আরো ১৪০ জন৷ কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিৎসকো জানিয়েছেন, মিসাইল হামলায় হাসপাতালের এক চিকিৎসকসহ দুই ব্যক্তি মারা গেছেন৷ উদ্ধারকর্মীদের বরাত দিয়ে তিনি আরো জানিয়েছেন, আশঙ্কা করা হচ্ছে ধ্বংসস্তূপের নিচে আরো কেউ আটকা থাকতে পারেন৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
থমকে গেছে চিকিৎসাসেবা
রাশিয়ার হামলায় থমকে গেছে হাসপাতালটির চিকিৎসাসেবা৷ চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, চিকিৎসাধীন রোগীদের দ্রুত কাছের হাসপাতালগুলোতে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইউক্রেনীয় একটি টিভি চ্যানেলকে জানিয়েছে, যে ওয়ার্ডটিতে মিসাইল আঘাত হেনেছে সেখানে অন্তত ২০ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
দায় অস্বীকার রাশিয়ার
বিবিসি জানিয়েছে, হাসপাতালে হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেছে রাশিয়া৷ উল্টো ইউক্রেনের ঘাড়ে দায় চাপিয়েছে তারা৷ রাশিয়া দাবি করছে, হাসপাতালটি ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা মিসাইলের একটি অংশের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে৷ কিন্তু ইউক্রেন জানিয়েছে, তারা রাশিয়ার ছোঁড়া মিসাইলের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেয়েছে৷
ছবি: Evgeniy Maloletka/AP Photo/picture alliance
গণহত্যার অভিযোগ
রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনে গণহত্যার চালানোর অভিযোগ এনেছেন কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিৎসকো৷ তিনি বলেন, ‘‘এ ঘটনার মধ্য দিয়ে পুরো বিশ্ব দেখতে পাচ্ছে রাশিয়ার মিসাইল ও ড্রোন কিভাবে আমাদের শান্তিপূর্ণ শহরকে তছনছ করে দিয়েছে এবং নাগরিকদের হত্যা করেছে৷’’ রাশিয়ার হামলায় একটি মাতৃ ও প্রসূতি হাসপাতালও আংশিক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি৷ বলেছেন, সেখানে অন্তত সাত জন মারা গেছেন৷
ছবি: STATE EMERGENCY SERVICE OF UKRAINE/REUTERS
পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি জেলেনস্কির আহ্বান
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয়া এক বার্তায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি লিখেছেন, রাশিয়ার ছোঁড়া বিভিন্ন ধরনের ৪০টিরও বেশি মিসাইল কিয়েভ, দিনিপ্রো, ক্রিভিই রি, স্লোভিয়ানস্ক ও ক্রামাতোরস্ক শহরে আঘাত করেছে৷ ইউক্রেনের জনগণ, ভূমি ও শিশুদের উপর রাশিয়ার এই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমা বিশ্বকে শক্তিশালী পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি৷
ছবি: EPA/MICHAEL BUHOLZER
7 ছবি1 | 7
জার্মানির নিন্দা
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেয়ারবক রাশিয়ার এই আক্রমণের নিন্দা করে বলেছেন, পুটিন নৃশংসতার সব সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। এই আক্রমণের দায় তাকে নিতে হবে বলে দাবি করেছেন বেয়ারবক।
একাধিক ইস্তফা
ইউক্রেনে স্পিকারের অফিস জানিয়েছে, তিনজন মন্ত্রী ও একজন সেনার ডেপুটি চিফ তাদের ইস্তফাপত্র জমা দিয়েছেন। পার্লামেন্টের আগামী অধিবেশনে তাদের অনুরোধ বিবেচনা করা হবে।
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানিয়েছেন, এই সপ্তাহে সরকারে বড় রদবদল হবে। অর্ধেকের বেশি মন্ত্রী বা তাদের কর্মকর্তাদের বদল করা হবে।