ইউক্রেনের সঙ্গে খাদ্যশস্য চুক্তি বাতিলের ঘোষণা রাশিয়ার
১৮ জুলাই ২০২৩
ইউক্রেন ক্রাইমিয়া আক্রমণ করেছে, এই অভিযোগও তুলেছে রাশিয়া। তারপরই তারা খাদ্যশস্যের চুক্তি বাতিল করেছে।
বিজ্ঞাপন
আশঙ্কা ছিল। এবার তা সত্যি হলো। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে গেছিল কৃষ্ণসাগর। ফলে ইউক্রেন এবং রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য আফ্রিকা এবং এশিয়ায় যেতে পারছিল না। কার্যত খাদ্যসংকটের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সেই সময়, জাতিসংঘ এবং তুরস্কের মধ্যস্থতায় ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে খাদ্যশস্যের চুক্তি সই হয়েছিল। যার অর্থ, কৃষ্ণসাগর দিয়ে জাহাজে করে আফ্রিকা এবং এশিয়ায় খাদ্যশস্য পাঠাতে পারবে ইউক্রেন এবং রাশিয়া। এতদিন পর সেই চুক্তি বাতিল হয়ে গেল। চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ালো রাশিয়া।
কৃষ্ণসাগরে বৃহত্তম নৌ-মহড়া
অ্যামেরিকার নেতৃত্বে কৃষ্ণসাগরে বিশ্বের সব চেয়ে বড় নৌ-মহড়া শুরু হয়েছে। সমালোচনায় রাশিয়া।
ছবি: Konstantin Sazonchik/dpa/picture alliance
যুক্তরাজ্যের জাহাজ
গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্যের একটি নৌ সেনার জাহাজকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল রাশিয়া। রাশিয়ার দাবি, জাহাজটি বেআইনি ভাবে তাদের সীমান্তে ঢুকে পড়েছিল, তাই ওয়ার্নিং ফায়ার করা হয়। জাহাজের রাস্তা ধরে বোমাবর্ষণও করা হয়।
ছবি: Ministry of Internal Affairs via REUTERS
যুক্তরাজ্যের দাবি
যুক্তরাজ্যের দাবি, তাদের জাহাজটি আইনভঙ্গ করেনি। ইউক্রেনের জলপথ দিয়ে জাহাজটি যাচ্ছিল। রাশিয়ার দাবি ভিত্তিহীন।
ছবি: Ben Mitchell/AP/picture alliance
ক্রিমিয়া সমস্যা
জাহাজটি আসলে ছিল ক্রিমিয়ার কাছে। রাশিয়া ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলে নেয়। আগে তা ছিল ইউক্রেনের। কিন্তু অ্যামেরিকা, যুক্তরাজ্য সহ একাধিক দেশ রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলকে মান্যতা দেয় না। ফলে যুক্তরাজ্যের দাবি, ক্রিমিয়ার জলসীমা ইউক্রেনের। রাশিয়ার নয়।
ছবি: DW
মার্কিন হুমকি
যুক্তরাজ্যের সঙ্গে রাশিয়ার এই বিতর্কের মধ্যেই কৃষ্ণসাগরে বিশ্বের বৃহত্তম নৌ-মহড়ার আয়োজন করে বসেছে অ্যামেরিকা। এটাই রাশিয়াকে মার্কিন হুমকি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
বিশাল আয়োজন
ছয়টি মহাদেশের ৩২ টি দেশ এই মহড়ায় অংশ নিয়েছে। ১৯৯৭ সাল থেকে কৃষ্ণসাগরে এই নৌ-মহড়া শুরু হয়েছে। তবে এবারের মহড়া সব চেয়ে বড়।
ছবি: Getty Images/AFP/STR
অসংখ্য জাহাজ
বিভিন্ন দেশের পাঁচ হাজার নৌ-সেনা, ৩২টি জাহাজ, ৪০টি বিমান এই মহড়ায় অংশ নিয়েছে। ১৮টি স্পেশাল অপারেশন ফোর্স যোগ দিয়েছে। সেখানে প্রশিক্ষিত ডাইভাররা আছেন।
ছবি: Getty Images/AFP/S. Maina
ইউক্রেনের ভূমিকা
নৌ-মহড়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ইউক্রেন। অ্যামেরিকার সঙ্গে তারাও এই মহড়ার আয়োজন করেছে। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে রাশিয়ার বিতর্কেও বিবৃতি দিয়েছে ইউক্রেন। জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের জাহাজ তাদের জলসীমায় ছিল।
নৌ-মহড়ার কড়া সমালোচনা করেছে পুটিন প্রশাসন। ক্রেমলিনের বক্তব্য, এই নৌ-মহড়া আসলে রাশিয়াকে খোঁচা দেওয়ার জন্য আয়োজন করা হয়েছে। প্রয়োজনে রাশিয়া জবাব দেবে।
ছবি: Sergei Karpukhin/TASS/dpa/picture alliance
ক্রিমিয়া নিয়ে রাশিয়া
ক্রিমিয়া নিয়েও রাশিয়া নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে। রাশিয়ার দাবি, ক্রিমিয়া রাশিয়ার অংশ। ফলে ওই অঞ্চলের জলও তাদের আওতাধীন। সেখান দিয়ে যাতায়াত করতে হলে রাশিয়ার অনুমতি নিতে হবে, ইউক্রেনের নয়। তবে কৃষ্ণসাগরের যে অংশ নৌ-মহড়ার আয়োজন হয়েছে, তার থেকে ক্রিমিয়ার দূরত্ব খুব বেশি নয়।
ছবি: DW
9 ছবি1 | 9
ক্রাইমিয়া আক্রমণ
ইউক্রেন এবং ক্রাইমিয়ার মধ্যবর্তী গুরুত্বপূর্ণ সেতু কার্চ ব্রিজ। সোমবার সেই সেতুতে ইউক্রেন আক্রমণ চালিয়েছে বলে রাশিয়ার অভিযোগ। সেতুটি আংশিকভাবে ধ্বংস হয়েছে। ইউক্রেন অবশ্য মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত আক্রমণের কথা স্বীকার করেনি। ওই সেতুটি ধ্বংস হওয়ায় ইউক্রেন থেকে ক্রাইমিয়া যাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা বন্ধ গেছে। বহু রাশিয়ার পর্যটক ইউক্রেনে াটকে পড়েছেন। তাদের বিকল্প রাস্তা দিয়ে আসতে বলেছে রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ। যে রাস্তা তাদের বলা হয়েছে তা কারযত রণক্ষেত্রের মাঝখান দিয়ে যাওয়ার রাস্তা।
রাশিয়ার গ্লাইড বোমা কী?
02:12
ক্রাইমিয়া ব্রিজ ধ্বংস হওয়ার পরেই খাদ্যশস্যের চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেরাশিয়া। তবে দুইটি কারণকে মেলায়নি রাশিয়া। অর্থাৎ, ব্রিজ ধ্বংসের জন্যই তারা চুক্তি থেকে সরে দাঁড়িয়েছে, এমন কথা সরকারিভাবে ঘোষণা দেয়া হয়নি। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, একারণেই তারা সরে দাঁড়িয়েছে।
গুতেরেসের মন্তব্য
জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছেন, '';চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানো একটা চয়েস। কিন্তু এর ফলে যারা খাদ্যকষ্টে ভুগবেন, খিদের সঙ্গে লড়াই করবেন, তাদের হাতে আর কোনো চয়েস নেই।'' রাশিয়ার এই অবস্থানের তীব্র বিরোধিতা করেছেন তিনি। সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছেন, এবিষয়েরাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনকে একটি চিঠি দিয়েছিলেন তিনি। এখনো তার কোনো জবাব আসেনি।
গুতেরেসের বিবৃতি প্রকাশিত হওয়ার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তার সঙ্গে গুতেরেসের ফোনে কথা হয়েছে। বিকল্প রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা হয়েছে।