লুহানস্কের একটি স্কুলে এই ঘটনা ঘটেছে। জাতিসংঘের কড়া সমালোচনা।
বিজ্ঞাপন
ইউক্রেনের লুহানস্কের একটি স্কুলে এবার বিমান হামলাচালালো রাশিয়া। রোববার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, আক্রমণের ভয়ে বহু মানুষ ওই স্কুলটিতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু রাশিয়া স্কুল ভবনেও আক্রমণ চালিয়েছে। অন্তত ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে ওই ঘটনায়।
লুহানস্কের গভর্নর জানিয়েছেন, রাশিয়ার বিমান থেকে বোমা ফেলার পর স্কুলের বাড়ি ভেঙে পড়ে। সেখানে আগুন ধরে যায়। স্কুলের বেসমেন্টে প্রচুর মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। দমকল কর্মীরা তিন ঘণ্টা ধরে চেষ্টার পর আগুন নেভায়।
জি৭ শীর্ষ সম্মেলনে ভিডিও ভাষণে জেলেনস্কি জানান, রাশিয়ার গোলার হাত থেকে বাঁচার জন্য গ্রামের মানুষ স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। রাশিয়া সেই স্কুল আক্রমণ করেছে।
জাতিসংঘের নিন্দা
রাশিয়ার এই হামলার তীব্র নিন্দা করেছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, রাশিয়ার এই আক্রমণ মেনে নেওয়া যায় না। স্কুল ভবনে হামলা ক্ষমাহীন অপরাধ। এদিন ফের যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তি বৈঠকে বসার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। তবে স্কুল ভবনে বোমা ফেলা নিয়ে রাশিয়া এখনো পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি।
রুটি কিনতে গিয়ে গোলার আঘাতে মৃত্যু
ইউক্রেনের খারকিভ শহরে ঘটেছে এই মর্মান্তিক ঘটনা৷ বাসায় খাবার কিছু না থাকায় রুটি কিনতে বাইরে বের হয়েছিলেন ভিক্টর গুবারেভ৷ ঠিক তখনই তার বাসার সামনে এসে পড়ে এক গোলা৷ সেটির আঘাতে মারা যান তিনি৷
ছবি: Alkis Konstantinidis/REUTERS
রুটি আর খাওয়া হলো না
পরিবারের খাওয়ার জন্য রুটি ঠিকই কিনে এনেছিলেন ভিক্টর৷ নিজের অ্যাপার্টমেন্টের ঠিক বাইরেই যখন গোলা এসে পড়ে, তার হাতে তখনও ধরা ছিল সেই রুটি৷
ছবি: Alkis Konstantinidis/REUTERS
মেয়ের কান্না থামছে না
ভিক্টরের মেয়ে ইয়ানা বাচেক একজন ইংরেজি শিক্ষক৷ যুদ্ধের মধ্যেও অনলাইনে ক্লাস করানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি৷ এমন সময় ফোনে মায়ের কাছে বোমা বর্ষণের খবর শুনে ছুটে আসেন বাবা-মায়ের অ্যাপার্টমেন্টে৷ এসে দেখেন বাবার মরদেহের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে অ্যাম্বুলেন্স৷
ছবি: Alkis Konstantinidis/REUTERS
মুহূর্মুহু গোলাবর্ষণ
বাবা-মায়ের অ্যাপার্টমেন্টের পাশেই স্বামী ইয়েভগেনি ভ্লাসেংকোর সঙ্গে থাকেন ইয়ানা৷ মায়ের কল পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ছুটে বের হতে গিয়েও স্বামীর বাধায় বের হতে পারেননি তিনি৷ ইয়েভগেনির আশঙ্কাকে সত্য প্রমাণ করে কিছুক্ষণের মধ্যে আবার সেখানে বোমা ফেলে রুশ বাহিনী৷ কিছুক্ষণ আগেই বিস্ফোরণ ও গোলাবর্যণের মধ্যেই কেনাকাটা করে ফিরেছিলেন ইয়ানাও৷
ছবি: Alkis Konstantinidis/REUTERS
ভুলতে চান শেষ ছবি
বিস্ফোরণের কিছুক্ষণের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় অ্যাম্বুলেন্স৷ এক ফটোগ্রাফার তখন ভিক্টরের মৃত্যুর ঠিক পরের মুহূর্তের ছবি তুলেছেন৷ এই ছবির কথা ভুলতে পারছেন না ইয়ানা৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি দুঃখিত৷ আমি এটার কথা ভুলে যেতে চাই৷ এই ছবি, তার এই ছবির কথা আমি মনে রাখতে চাই না৷’’
ছবি: Alkis Konstantinidis/REUTERS
বাবার স্মৃতি
বাবার সঙ্গে অন্যসব স্মৃতি নিয়েই বাকি জীবন কাটাতে চান ভিক্টরের একমাত্র সন্তান ইয়ানা৷ মাত্র ১৬ বছর বয়সে পরিবারের ভরণপোষণের জন্য ড্রাইভারের কাজ শুরু করেন ভিক্টর৷ তারপর ক্যারিয়ারের শেষ দিকে রুশ কোম্পানি গ্যাজপ্রমের গাড়ি পরিবহণের ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে ছিলেন৷ ৭৯ বছর বয়সি ভিক্টর যুদ্ধাবস্থাতেও নিজের ও স্ত্রীর স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে খারকিভ ছেড়ে যেতে চাননি৷
ছবি: Alkis Konstantinidis/REUTERS
আরো মৃত্যু
ক্রমাগত গোলাবর্ষণে ভিক্টর ছাড়াও ২৫ এপ্রিল আরো অন্তত তিন জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে৷ রাশিয়ার পক্ষ থেকে বেসামরিক স্থাপনায় হামলার কথা বারবার অস্বীকার করা হলেও, আবাসিক এলাকাতেও চলছে নির্বিচার গোলাবর্ষণ৷ প্রতিদিনই ভারি হচ্ছে মৃত্যুর পাল্লা৷
ছবি: Alkis Konstantinidis/REUTERS
6 ছবি1 | 6
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত হাইকমিশনার গত মাসে জানিয়েছিল, ইউক্রেনে দুই হাজার ৩৪৫ জন বেসামরিক মানুষ মারা গেছেন এবং দুই হাজার ৯১৯ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া এক কোটি ২০ লাখ মানুষ বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। এর মধ্যে ৫৭ লাখ প্রতিবেশী দেশগুলিতে আশ্রয় নিয়েছেন। বাকি ৬৫ লাখ মানুষ ঘরছাড়া হয়ে দেশেই বিভিন্ন জায়গায় আছেন।
জাপানের বক্তব্য
জাপান জানিয়েছে, ক্রমান্বয়ে তারা রাশিয়া থেকে অশোধিত তেলের আমদানি বন্ধ করবে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী জি ৭ বৈঠকে বলেছেন, জাপান সম্পূর্ণভাবে বিদেশি তেলের উপর নির্ভরশীল। রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ তেল আমদানি করা হয়। নীতিগতভাবে তারা ওই তেলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করছে। তবে একবারে সম্পূর্ণ আমদানি বন্ধ করা যাবে না।
জাপান জানিয়েছে, বিকল্প শক্তির উপর তারা জোর দিচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব রাশিয়ার তেল নেওয়া পুরোপুরি বন্ধ করা হবে।