চলতি বছরে ইউক্রেনের উপর সবচেয়ে বড় আক্রমণ রাশিয়ার। ড্রোন ও কামান দিয়ে ১১৮টি গ্রাম ও শহরে আক্রমণ করেছে রাশিয়া।
বিজ্ঞাপন
ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইগর ক্লিমেনকো সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে জানিয়েছেন, ''গত ২৪ ঘণ্টায় ১০টি অঞ্চলে ১১৮টি জনবসতিতে আক্রমণ করা হয়েছে। এই বছরের শুরু থেকে একদিনে এত বেশি জায়গায় আগে কখনো আক্রমণ করা হয়নি।''
উত্তরপশ্চিম খারকিভে সারারাত ধরে আক্রমণ চালিয়েছে রাশিয়া। স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একজন মারা গেছেন। রাশিয়ার ড্রোন হামলায় নিকোপোলে ৫৯ বছর বয়সি এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।
কুপিয়ান্সক থেকে ২৭৫টি বাচ্চাকে উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
গতবছর ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়া ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলে লাখ লাখ গোলা ফেলেছে। ইউক্রেনের বহু জনবসতি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
কিয়েভ জানিয়েছে, রাশিয়া সারারাত ধরে অসংখ্য ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। ড্রোনের সাহায্যে আক্রমণ করেছে। ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, প্রচুর ড্রোনকে তারা মাঝপথে ধ্বংস করে দিতে পেরেছে। বেশ কিছু মিসাইলকেও অকেজো করে দেয়া সম্ভব হয়েছে। কিন্তু পলটাভা এলাকায় একটি তেল শোধনাগারে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র গিয়ে আঘাত করে এবং সেখানে আগুন ধরে যায়। সেই আগুন নেভানো হয়েছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলে সেনা জানিয়েছে।
যুদ্ধে অঙ্গ হারিয়েও কাজে ব্যস্ত যে সৈনিকরা
ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর একদল সৈনিকের কাজ ল্যান্ডমাইন খুঁজে বের করা৷ যুদ্ধে অঙ্গ হারিয়েও এই কাজ করে যাচ্ছেন তারা৷
ছবি: Sofiia Gatilova/REUTERS
স্যাপার সৈনিক
যে সৈনিক যুদ্ধের সময়ে সেতু বানানোর বা ল্যান্ডমাইন চিহ্নিত করার কাজ করেন, তাদের বলা হয় স্যাপার৷ ইউক্রেনের জাতীয় পুলিশের বিশেষ ‘ডিমাইনিং ইউনিটের’ সদস্য অলেকজি পলিয়াকোভকে দেখা যাচ্ছে ছবিতে৷ ইউক্রেনের খারকিভ অঞ্চলের ইজুম শহরের একটি মাঠ থেকে মাইন সরাচ্ছেন তিনি৷ যুদ্ধে বোমা বিস্ফোরণে উড়ে গেছে তার পা৷
ছবি: Sofiia Gatilova/REUTERS
কেন এই কাজ করেন তারা
২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর ইউক্রেন সেনাবাহিনী থেকে তৈরি করা হয় এই ইউনিট৷ তাদের মূল কাজ যুদ্ধরত সৈনিকদের ল্যান্ডমাইন থেকে বাঁচাবার পাশাপাশি সাধারণ জনগণের বসবাসের এলাকা থেকেও মাইন সরানো৷
ছবি: Sofiia Gatilova/REUTERS
কৃত্রিম পা নিয়ে
৩৭ বছর বয়সি আন্দ্রেই ইলকিভ গত বছর এই খারকিভ অঞ্চলেই আরেকটি জায়গায় মাইন ফেটে নিজের বাঁ পাটি হারান৷ তবুও আবার কাজে ফিরেছেন তিনি৷ তার স্ত্রীকে কথা দিয়েছেন যে মানবতার খাতিরে তাকে ফিরে যেতে হবেই৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে ইলকিভের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা তার নতুন প্রস্থেটিক পা৷
ছবি: Sofiia Gatilova/REUTERS
কাজে অনড় ভালেরি
২০২২ সালের নভেম্বরে একইভাবে জখম হন ভালেরি ওনুল৷ বিস্ফোরণের পর তিনি জানতে পারলেন যে আন্দ্রির মতো পা হারিয়েছেন তিনি৷ সেই মুহূর্তেই তিনি ঠিক করেন যে কাজে ফিরে আসবেন৷ ভালেরি বলেন, ‘‘আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়৷ আমার মাথায় অনেক চিন্তা ভিড় করছিল৷ যখন জ্ঞান ফিরল, জানতাম যে আমাকে আবার কাজে যেতে হবে৷’’
ছবি: Sofiia Gatilova/REUTERS
কতটা কঠিন এই কাজ
আন্দ্রি জানান, ঠিক যে মাইন ফেটে তিনি জখম হয়েছিলেন, সেই দিনের কাজ ছিল খুব কঠিন৷ মাটির অনেকটা গভীরে লুকিয়ে রাখা ছিল ল্যান্ডমাইন৷ খুব ঠাহর করে না দেখলে বোঝা অসম্ভব, বলেন তিনি৷ বর্তমানে এই ডিমাইনিং ইউনিট কাজ করছে ইউক্রেনের খারকিভ ও খেরসন অঞ্চলে৷
ছবি: Sofiia Gatilova/REUTERS
5 ছবি1 | 5
উত্তর কোরিয়া গোলা দিচ্ছে, অভিযোগ
দক্ষিণ কোরিয়ার গুপ্তচর সংস্থার অভিযোগ, উত্তর কোরিয়া রাশিয়াকে লাখ লাখ গোলা সরবরাহ করেছে। অগাস্টের প্রথমে এই গোলা উত্তর কোরিয়া থেকে রাশিয়া গিয়ে পৌঁছেছে।
গত সেপ্টেম্বরে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন রাশিয়া গিয়ে পুটিনের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন।
অ্যামেরিকা আগেই অভিযোগ করেছিল, উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে গোলাবারুদ পাচ্ছে রাশিয়া। বিনিময়ে তারা উত্তর কোরিয়াকে তাদের ব্য়ালেস্টিক কর্মসূচির জন্য প্রযুক্তি সরবরাহ করছে।
তবে উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়া এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ইউক্রেন: যুদ্ধের মাঝে বিদ্যালয়ে ফেরা
ইউক্রেনে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়েছে৷ তবে সব শিক্ষার্থীর পক্ষে সাধারণ বিদ্যালয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না৷ নিরাপত্তার কারণে কোথাও কোথাও বিদ্যালয় সরিয়ে নেয়া হয়েছে বাঙ্কার ও সাবওয়ে স্টেশনে৷
ইউক্রেনে গ্রীষ্মের ছুটি শেষ হয়েছে এবং শিশুরা বিদ্যালয়ে ফিরেছে৷ দেশটির কিছু অঞ্চলে যুদ্ধের কারণে সাধারণত অনলাইনে বা হাইব্রিড সেশনে ক্লাস নেয়া হচ্ছে৷ খারকিভ শহরে মাটির নিচের সাবওয়ে স্টেশনে বিদ্যালয় সরিয়ে নেয়া হয়েছে৷ শিশুরা সেখানে সুরক্ষিত পরিবেশে ক্লাস করতে পারছে৷
ইউক্রেনে চলতি বছর ৩৭ লাখের মতো শিশু ও কিশোর বিদ্যালয়ে যাচ্ছে৷ দেশটির প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি সব শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের নতুন শিক্ষাবর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন৷
শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে স্বাগত জানাচ্ছেন এক শিক্ষক৷ যুদ্ধের গুমোট পরিবেশের মধ্যে শ্রেণিকক্ষগুলোকে উজ্জ্বল ও উৎসবমুখর রাখতে কঠোর পরিশ্রম করছেন শিক্ষকেরা৷ তারা তাদের শিক্ষার্থীদের যতটা সম্ভব রঙিন সময় উপহার দিতে চান৷
খারকিভের মেয়র ইহর তারাখাভ তার শহরের মাটির নিচে ট্রেন স্টেশনে সরিয়ে নেয়া একটি বিদ্যালয় পরিদর্শন করছেন৷ এরকম ৬০টি শ্রেণিকক্ষ তৈরি করা হয়েছে যেখানে এক হাজারের মতো শিক্ষার্থী ক্লাস করছেন৷
ক্লাসরুমে একসঙ্গে পড়াশোনা এবং সরাসরি শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷ কিন্তু যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের অধিকাংশ বড় শহরে বেশিরভাগ সময় অনলাইনে ক্লাস নেয়া হচ্ছে৷ খারকিভের এই বিদ্যালয়ের মতো কিছু স্কুলে সরাসরি ক্লাস করার সুযোগ মেলে৷
ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভের এক স্কুলশিক্ষার্থীর মা জানান যে ট্রেন স্টেশনে চালু করা বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা একে অপরের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাতের ও কথোপকথনের সুযোগ পাচ্ছে৷ তিনি এটা পুরোপুরি সমর্থন করেন বলেও জানান৷
ইউত্রেনের সেনার কম্যান্ডার ইন চিফ ভ্যালেরি জালুঝনি জানিয়েছেন, ''যুদ্ধ এখন নতুন পর্বে প্রবেশ করেছে। ফলে ইউক্রেনকে আরো বেশি নাগরিককে সেনায় যোগ দেয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে।''
সংবাদপত্রে একটি নিবন্ধ লিখে তিনি জানিয়েছেন, ''ইউক্রেনের এখন সেনা-রিজার্ভ দরকার। কিন্তু আইনে ফাঁক আছে বলে অনেকে সেনায় যোগ দিচ্ছেন না।'' তবে তিনি এটাও স্বীকার করেছেন, দেশের মধ্যে নতুনদের প্রশিক্ষিত করার ক্ষমতাও সীমাবদ্ধ।
তবে তার দাবি, ''এই সমস্যা মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা চলছে।'' তিনি বলেছেন, ''রাশিয়ার কাছে শক্তিশালী বিমান বাহিনী আছে। তারা এই শীতে ইউক্রেনের পাওয়ার গ্রিডের উপর হামলা করার চেষ্টা করবে।''