ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের জন্য জার্মানিতে চাপ
৩০ জানুয়ারি ২০২৪প্রায় দুই বছর আগে ইউক্রেনের উপর রাশিয়া শুরু হওয়ার সময় জার্মানি ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর জন্য শুধু হেলমেট সরবরাহের কথা ভেবেছিল৷ তারপর থেকে যুদ্ধক্ষেত্রে অস্ত্র সরবরাহ নিয়ে দ্বিধার ঐতিহ্য ঝেড়ে ফেলে জার্মানি সে দেশকে একের পর এক উন্নত অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সামরিক সরঞ্জাম পাঠিয়ে গেছে৷ প্রায় প্রতিবারই প্রাথমিক সংশয় কাটিয়ে জার্মানি সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ কিন্তু টাউরুস নামের ক্রুজ মিসাইল সরবরাহের প্রশ্নে এখনো আপত্তি করে চলেছেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস৷ উল্লেখ্য, প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দূরে লক্ষ্যবস্তুর উপর প্রায় নিখুঁতভাবে আঘাত করার ক্ষমতা রাখে এই মিসাইল৷ শুধু বিরোধী পক্ষ নয়, সরকারি জোটের শরিকরাও মতবদলের জন্য তাঁর উপর চাপ বাড়াচ্ছেন৷
ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তার ক্ষেত্রে জার্মানি এতকাল শুধু ‘রক্ষণাত্মক' অস্ত্র পাঠিয়ে এসেছে৷ অর্থাৎ, নিজস্ব ভূখণ্ডে রাশিয়ার হামলা প্রতিহত করতে যা প্রয়োজন, মূলত সেটুকুই দিতে প্রস্তুত জার্মানি৷ রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলার ক্ষেত্রে জার্মান অস্ত্র ব্যবহারের প্রশ্নে এতকাল সরকার আপত্তি জানিয়ে এসেছে৷ প্রতিরক্ষার অংশ হিসেবে ইউক্রেন বার বার রুশ ভূখণ্ডে হামলা চালানোয় সেই সংশয় আরো বেড়ে গেছে৷ কিন্তু রাশিয়ার লাগাতার হামলার মুখে ইউক্রেনের আত্মরক্ষার অধিকার ও সে দেশের পরাজয় এড়াতে আরো সামরিক সহায়তার প্রতিও সমর্থন বাড়ছে৷
জার্মানির তিন দলের জোট সরকারের দুই শরিক উদারপন্থি এফডিপি ও সবুজ দলের কিছু নেতা প্রকাশ্যেই ইউক্রেনকে টাউরুস ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানোর পক্ষে সওয়াল করছেন৷ সবুজ দলের নেত্রী ও সংসদের ডেপুটি স্পিকার কাটরিন গ্যোরিং-একার্ট এক সংবাদপত্রের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলেন, ইউক্রেনের সব চাহিদা পূরণ করার প্রতিশ্রুতি পালন করতে অবিলম্বে এই মিসাইল পাঠানো উচিত৷ এফডিপি দলের সংসদীয় নেতা ক্রিস্টিয়ান ড্যোরও সেই সিদ্ধান্তের পক্ষে সওয়াল করেছেন৷ রোববার জার্মানির এআরডি নেটওয়ার্কের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি সেই মিসাইল সরবরাহে জার্মান সরকারের অনীহা সম্পর্কে দুঃখ প্রকাশ করেন৷
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন শুধু ইউক্রেনে জমি দখল করে থামবেন না বলে জার্মানির অনেক নেতা মনে করছেন৷ দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে ইউরোপের সার্বিক প্রতিরক্ষার স্বার্থে তাই ইউক্রেনের জয় নিশ্চিত করতে চান তাঁরা৷ বিশেষ করে বাল্টিক এলাকার তিন সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর সদস্য এস্টোনিয়া, লাটভিয়াা ও লিথুয়েনিয়া আক্রান্ত হলে জার্মানিও নিরাপদ থাকবে না, এমন উপলব্ধির ভিত্তিতে ইউক্রেনের জন্য যাবতীয় মদতের পক্ষে সওয়াল করছেন সরকার ও বিরোধী পক্ষের একাধিক নেতা৷ অন্যদিকে চ্যান্সেলর শলৎস অতি সতর্কতার সঙ্গে প্রত্যেকটি সিদ্ধান্ত খতিয়ে দেখার নীতি অনুসরণ করছেন৷ বিশেষ করে ন্যাটোর বাকি জোটসঙ্গীদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে তিনি যৌথ পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষে৷ অর্থাৎ জার্মানির ‘একলা চলো রে' নীতির ঘোর বিরোধিতা করে আসছেন শলৎস৷ ইউরোপের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমেও ইউক্রেনের জন্য পরোক্ষভাবে অস্ত্রের ব্যবস্থা করছেন তিনি৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, এএফপি)