মস্কোর পর এবার কিয়েভে পৌঁছালেন জাতিসংঘের প্রধান। বেসামরিক মানুষদের উদ্ধার নিয়ে আলোচনা হবে জেলেনস্কির সঙ্গে।
বিজ্ঞাপন
বুধবার রাতে কিয়েভে পৌঁছেছেন জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস। মস্কো থেকে পোল্যান্ডগামী ট্রেনে চড়ে কিয়েভে পৌঁছেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার তার আলোচনা হওয়ার কথা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে। এর আগে সপ্তাহের শুরুতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন তিনি। শান্তি আলোচনার পাশাপাশি মারিউপলে আটকে থাকা বেসামরিক ব্যক্তিদের উদ্ধার নিয়েও কথা বলেছেন তিনি। সে বিষয়েই এদিন জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনা হওয়ার কথা তার। কথা বলার কথা শান্তিপূর্ণ সমাধানসূত্র নিয়েও।
রাশিয়া-ইউক্রেন বন্ধুত্বের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হলো
ইউক্রেনের কিয়েভে রাশিয়া-ইউক্রেন বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে নির্মিত একটি ভাস্কর্য মঙ্গলবার ভেঙে ফেলা হয়েছে৷ রাশিয়া ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু করায় এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিচকো৷
ছবি: Gleb Garanich/REUTERS
শুরুর কথা
সোভিয়েত ইউনিয়নের ৬০ বছর পূর্তিতে কিয়েভে ১৯৮২ সালে ‘পিপলস ফ্রেন্ডশিপ আর্চ’ নামের একটি তোরণ নির্মাণ করা হয়েছিল৷ তার নীচে ছিল আট মিটার উঁচু একটি ব্রোঞ্জের ভাস্কর্য, যেটাতে একজন ইউক্রেনীয় ও একজন রুশ নাগরিককে দেখা যেত৷ রাশিয়া-ইউক্রেন বন্ধুত্বের প্রতীক ছিল এটি৷
ছবি: Hady Khandani/JOKER/picture alliance
ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত
রাশিয়া ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু করায় ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিচকো৷ তিনি বলেন, ‘‘এখন আমরা দেখছি ‘ফ্রেন্ডশিপ’ বলতে কী বোঝায় -ইউক্রেনের শহর ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে... হাজার হাজার শান্তিপ্রিয় মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে৷’’
ছবি: Sergei Chuzavkov/SOPA Images via ZUMA Press Wire/picture alliance
ভাঙা শুরু
মঙ্গলবার ভাস্কর্যটি ভাঙা শুরু হয়৷ সেটি দেখতে প্রায় ১০০ সাধারণ নাগরিক জড়ো হয়েছিলেন৷ তারা ‘ইউক্রেনের জয়’ বলে স্লোগান দিয়েছেন৷
ছবি: Gleb Garanich/REUTERS
‘আমরা কি রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পারি?’
সেরিয়ে মিরোরোডস্কি নামের একজন ডিজাইনার বলেন, ‘‘রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করেছে... আমরা কি রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পারি? আপনার কী মনে হয়? তারা আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু৷ সে কারণে রাশিয়া-ইউক্রেন বন্ধুত্বের ভাস্কর্য আর কোনো অর্থ বহন করে না৷
ছবি: Gleb Garanich/REUTERS
‘কোনো সম্পর্ক রাখা উচিত নয়’
ডায়ানা নামের আরেকজন জানান, ‘‘আমাদের ঐ হামলাকারীদের সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পর্ক রাখা উচিত নয়.. বন্ধুত্ব, সম্পর্ক কোনো কিছুই নয়৷’’
ছবি: Gleb Garanich/REUTERS
তোরণের নাম পরিবর্তন
কিয়েভের মেয়র জানিয়েছেন ‘পিপলস ফ্রেন্ডশিপ আর্চ’ থাকবে৷ তবে এর নাম পরিবর্তন করে ‘আর্চ অফ ফ্রিডম অফ দ্য ইউক্রেনিয়ান পিপল’ করা হবে বলে জানান তিনি৷
ছবি: Gleb Garanich/REUTERS
6 ছবি1 | 6
স্টিল প্লান্টে আটক
মারিউপলের কাছে একটি স্টিল প্লান্টে প্রায় এক হাজার বেসামরিক মানুষ আটকে আছেন বলে ইউক্রেন জানিয়েছে। তাদের সঙ্গে প্রায় দুই হাজার ইউক্রেনের সেনাও আছে। প্লান্টটি বাইরে থেকে ঘিরে রেখেছে রাশিয়ার সেনা। ভিতরে সকলে বাঙ্কারের ভিতর লুকিয়ে আছে বলে রাশিয়া জানিয়েছে। তাদের অভিযোগ, বেসামরিক ব্যক্তিদের ঢাল বানিয়ে রেখেছে ইউক্রেনের সেনা।
এবিষয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা করেছেন গুতেরেস। দ্রুত ওই ব্যক্তিদের উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন। পুটিন জানিয়েছেন, রেডক্রস এবং জাতিসংঘের উপস্থিতিতে তারা উদ্ধার কাজ চালাতে দেবে। কীভাবে সেই উদ্ধারকাজ হবে, তা নিয়ে জেলেনস্কির সঙ্গে গুতেরেসের বৈঠক হওয়ার কথা। এছাড়াও কীভাবে শান্তিপূর্ণ সমাধান সূত্রে পৌঁছানে যায়, তা নিয়েও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা হওয়ার কথা জাতিসংঘের প্রধানের।
মারিউপল-- যুদ্ধের আগে এবং পরে
দক্ষিণ ইউক্রেনের মারিউপল একসময় ছিল পর্যটকদের প্রিয় জায়গা। যুদ্ধের পর সেই বন্দর-শহর কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
ছবি: Maxar Technologies/picture alliance/AP
বন্দর এলাকা
প্রায় চার লাখ ৪০ হাজার মানুষের বাস রাশিয়া লাগোয়া এই বন্দর শহরে। এখন সেখান থেকে অধিকাংশ বেসামরিক মানুষ পালিয়েছেন। সমুদ্রের ধারে বন্দর এলাকায় একসময় মানুষ বিশ্রাম নিতে যেতেন। পর্যটকদের বিশেষ আকর্ষণ ছিল এই বন্দর এবং সমুদ্র।
ছবি: Ivanov Stanislav/Ukrinform/IMAGO
বর্তমান ছবি
সেই বন্দরের বর্তমান চেহারা। আক্ষরিক অর্থেই 'মরা বন্দর'। যুদ্ধে বিধ্বস্ত বন্দরে জলে ভাসছে ভাঙা জাহাজ। মানুষ পালাচ্ছে ওই অঞ্চল থেকে। এখনো বহু মানুষ আটকে আছেন বলে আশঙ্কা।
ছবি: Sergei Bobylev/ITAR-TASS/IMAGO
সিটি সেন্টারের ছবি
২০১৯ সালের ২০ জুন তোলা হয়েছিল এই ছবি। সিটি সেন্টার অঞ্চলে ফোয়ারের জলে স্নান করছে ছোটরা। ইউক্রেনের পরিচিত ছবি। আর তার পিছনে দেখা যাচ্ছে চার্চ।
ছবি: Thomas Imo/photothek/IMAGO
বর্তমান ছবি
ওই একই চার্চের সামনের ছবি। এ বছর ১ এপ্রিল তোলা হয়েছে ছবিটি। যুদ্ধ বিধ্বস্ত শহরের রাস্তায় ছড়িয়ে আছে বারুদ। যে রাস্তার ধারে সকলে আনন্দ করতেন, এখন সেখানে আতঙ্ক।
ছবি: Sergei Bobylev/ITAR-TASS/IMAGO
প্রাদেশিক থিয়েটার
দনেৎস্ক অ্যাকাডেমিক রিজিওনাল ড্রামা থিয়েটারের সামনের ছবি্। ২০১৪ সালে তোলা এই ছবিতে এক প্রতিবাদীকে দেখা যাচ্ছে। রাশিয়া ক্রাইমিয়া দখল করার পরে ইউক্রেনের পতাকা হাতে তিনি প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
ছবি: EST&OST/IMAGO
বর্তমান ছবি
সেই থিয়েটার এখন ধ্বংসস্তূপ। ১৬ মার্চ রাশিয়ার বোমারু বিমান এখানে বোমাবর্ষণ করে। অন্তত এক হাজার মানুষ এর ভিতরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। বহু মানুষের মৃত্যু হয়। যার মধ্যে বহু নারী ও শিশু আছে।
ছবি: Nikolai Trishin/ITAR-TASS/IMAGO
স্টিল প্লান্ট
অ্যাজোভস্টাল স্টিল প্লান্টের ছবি। ইউরোপের অন্যতম বড় স্টিল প্লান্ট এটি। ২০১৭ সালে এই ছবিটি তোলা হয়েছিল।
ছবি: Musienko Vladislav/Ukrainian News/IMAGO
বর্তমান ছবি
স্টিল প্লান্ট আর চেনা যাচ্ছে না। ভিতরে ইউক্রেনের যোদ্ধারা। বাইরে ঘিরে রেখেছে রাশিয়ার সেনা। এই অঞ্চলে প্রায় এক লাখ বেসামরিক মানুষ আটকে আছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
ছবি: Sergei Bobylev/ITAR-TASS/IMAGO
মারিউপলের রাস্তা
২০১৮ সালে তোলা মারিউপলের রাস্তা। ঝকঝকে রাস্তায় আশঙ্কার চিহ্নমাত্র নেই।
ছবি: MAXPPP/picture alliance
বর্তমান ছবি
সেই রাস্তার অবস্থা এখন এমন। রাস্তা বলে মনেই হয় না। যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
ছবি: Maximilian Clarke/ZUMA Wire/IMAGO
10 ছবি1 | 10
পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়ার জয়
ইউক্রেন জানিয়েছে, পূর্ব ইউক্রেনের বিস্তীর্ণ অঞ্চল রাশিয়ার সেনা দখল করে নিয়েছে। মারিউপলের স্টিল প্লান্টে তারা এখনো আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। এছাড়াও দনবাস অঞ্চলের একাধিক জায়গা রাশিয়া দখল করে নিয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে রাশিয়ার অভিযোগ বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র আসছে ইউক্রেনে। বুধবারও দক্ষিণ ইউক্রেনে একটি অস্ত্র ভান্ডার তারা ধ্বংস করেছে বলে রাশিয়া দাবি করেছে। তাদের অভিযোগ, ওই অস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে হামলা চালাচ্ছে ইউক্রেন।
পুটিনের হুমকি
বুধবার পুটিন বলেছেন, পশ্চিমা দেশগুলির প্রক্সি যুদ্ধ বরদাস্ত করা হবে না। পশ্চিম সরাসরি ইউক্রেনের হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছে। রাশিয়া বিষয়টি ভালো চোখে দেখছে না। এমন চলতে থাকলে যে কোনোদিন অন্যদেশেও রাশিয়া আক্রমণ চালাতে পারে হুমকি দিয়েছেন পুটিন। পাশাপাশি মনে করিয়ে দিয়েছেন, রাশিয়ার হাতে ব্যালেস্টিক মিসাইল এবং পরমাণু অস্ত্র আছে। এবং রাশিয়া প্রয়োজনে তা ব্যবহার করতে পিছুপা হবে না।