ইউক্রেনের বর্তমান শাসকদের সরাতে চায় রাশিয়া। আফ্রিকা সফররত রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভ স্পষ্টভাবে এই কথা জানিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
লাভরভ এখন আফ্রিকার দেশগুলি সফর করছেন। তিনি বলেছেন, ''ইউক্রেনের বর্তমান শাসকদের কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না। রাশিয়া ইউক্রনকে বর্তমান শাসকদের হাত থেকে উদ্ধার করবে।'' লাভরভ বলেছেন, ''রাশিয়া ও ইউক্রেনের মানুয একসঙ্গে শান্তিতে থাকবেন। আমরা ইউক্রেনের মানুষদের বর্তমান শাসকদের সরাবার জন্য সাহায্য করব। কারণ, এই শাসকরা শুধু জনগণের বিরোধী তাই নয়, তারা ইতিহাসের বিরোধী।''
পশ্চিমা দেশগুলি অবশ্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলনস্কির প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তারা মনে করছে, জেলেনস্কি যেভাবে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, তা প্রশংসার যোগ্য। কিন্তু লাভরভ বলেছেন, জেলেনস্কি এবং পশ্চিমা দেশগুলি ইউক্রেনকে রাশিয়ার চিরশত্রু বানাতে চাইছে।
ক্রেমলিনের তরফ থেকে এর আগে জানানো হয়েছিল, তারা শাসক পরিবর্তন করতে চায় না।
আফ্রিকাকে পাশে পেতে
রাশিয়া এখন আফ্রিকার দেশগুলিকে পাশে পেতে চাইছে। লাভরভ মিশর, রিপাবলিক অফ কঙ্গো সফর করেছেন। এবার তিনি উগান্ডা ও ইথিওপিয়া যাবেন।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিশ্বময় জেলেনস্কি
তিন বছর আগে ‘মস্কো-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের’ বিরুদ্ধে লড়াই শেষ করার প্রত্যয় নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন ভোলোদিমির জেলেনস্কি৷ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট এখন দেশরক্ষার লড়াইয়ের নেতৃত্বে৷ ক্রমশ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছেন তিনি...
ছবি: Piotr Skornicki/AGENCJA WYBORCZA/Reuters
আহত যোদ্ধার পাশে
যুদ্ধ চলছে৷ এ অবস্থায় প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ে বসে থাকেন কী করে? জেলেনস্কি দেশের জনগণকে উজ্জীবিত করতে বার্তা দিচ্ছেন, যুদ্ধ বন্ধে কিংবা রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি, হাসপাতালে ছুটে যাচ্ছেন যুদ্ধাহতদের দেখতে৷ওপরের ছবিতে কিয়েভের সামরিক হাসপাতালে আহত এক সৈনিকের পাশে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি৷
গত ১৬ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন জেলেনস্কি৷ ওপরের ছবিতে তারই একটি মুহূর্ত৷
ছবি: J. Scott Applewhite/Pool/REUTERS
সাক্ষাৎকার শেষে স্বস্তি
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে আগেও অনেক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন জেলেনস্কি৷ তবে যুদ্ধ শুরুর পর তার বক্তব্য শোনার আগ্রহ সারা বিশ্বেই অনেক বেড়েছে৷ এক সাক্ষাৎকার শেষে ছবির জন্য পোজ দিচ্ছেন কৌতুক অভিনেতা থেকে প্রেসিডেন্ট হওয়া জেলেনস্কি৷
ছবি: Umit Bektas/REUTERS
কাতেরিয়ানাকে সমবেদনা
রুশ হামলা থেকে বাঁচতে পরিবারের অন্যদের সঙ্গে ভোরজেল শহর থেকে পালাচ্ছিল কাতেরিয়ানা ভ্লাসেঙ্কো৷ কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি৷ আহত হয়ে কাতেরিয়ানা এখন কিয়েভের হাসপাতালে৷ ১৭ মার্চ ফুল নিয়ে তাকে দেখতে গিয়েছিলেন জেলেনস্কি৷ প্রেসিডেন্টকে পাশে পেয়ে মনে বেশ জোর পেয়েছে ১৬ বছর বয়সি কিশোরী৷
ইউক্রেনে যারা আছেন, তারা প্রতিটি মুহূর্ত কাটাচ্ছেন মৃত্যুর আতঙ্ক নিয়ে৷ যারা দেশ ছেড়েছেন, তারা প্রতিবেশী দেশে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ের মাঝেও নিচ্ছেন দেশের খবর৷ সুযোগ পেলে জেলেনস্কির ভাষণ শোনেন না এমন ইউক্রেনীয় খুঁজে পাওয়া কঠিন৷ ছবিতে মোবাইল ফোনে জেলেনস্কির ভাষণ শুনছেন হাঙ্গেরিতে আশ্রয় নেয়া এক ইউক্রেনীয় নারী৷
ছবি: Bernadett Szabo/REUTERS
ট্রুডোর সম্মান
গত ১৫ মার্চ ভিডিও কলের মাধ্যমে ক্যানাডার সংসদে ভাষণ দেন জেলেনস্কি৷ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের বক্তব্য শুরু হতেই আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়ান ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো৷
ছবি: Patrick Doyle/REUTERS
বালিশে জেলেনস্কি
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নানা পণ্যে দেখা যাচ্ছে জেলেনস্কির ছবি৷ চেক প্রজাতন্ত্রের চেসকা লিপা শহরে তার ছবি সম্বলিত বালিশের কাভার গুছিয়ে রাখছেন এক নারী৷
ছবি: REUTERS
যুক্তরাষ্ট্রের রাস্তায়
ওয়াশিংটনে রুশ অ্যাম্বাসির পাশের রাস্তার পথ-নির্দেশিকাতেও দেখা যাচ্ছে জেলেনস্কির নাম৷
ছবি: Leah Millis/REUTERS
পোল্যান্ডের রাস্তায়
পোল্যান্ডের রাস্তায়ও জেলেনস্কির দেখা মিলছে৷ এক শিল্পী হ্যারি পটারের আদলে ম্যুরাল এঁকে জেলেনস্কির নামের প্রথম অক্ষর ‘জেড’ লিখে দিয়েছেন কপালে৷
ছবি: Piotr Skornicki/AGENCJA WYBORCZA/Reuters
জরুরি সেবাকর্মীদের সঙ্গে
ইউক্রেনে যারা যেভাবেই দেশ ও জনগণের জীবন রক্ষায় কাজ করছেন, তাদের সবার পাশেই থাকার চেষ্টা করছেন জেলেনস্কি৷ ওপরের ছবিতে কিয়েভের এক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্মীদের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে তাকে৷
আফ্রিকার দেশগুলির উপর রাশিয়ার বেশ কিছুটা প্রভাব আছে। আফ্রিকার দেশগুলিও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে কোনোপক্ষ নেয়নি। ইউক্রেন অবশ্য লাভরভের সফরের কড়া সমালোচনা করে বলেছে, প্রথমে তারা খাদ্যসংকট তৈরি করেছে। তারপর এখন তারা আফ্রিকা গিয়ে দেশগুলিকে পাশে পাওয়ার চেষ্টা করছে।
খাদ্যশস্য যাবে
ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে খাদ্যশস্য সংক্রান্ত চুক্তি হয়েছে। তারপরই রাশিয়া ইউক্রেনের বন্দর-শহর ওডেসায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে। এখান থেকেই খাদ্যশস্য বাইরে পাঠানোর কথা। রাশিয়ার হামলার পর খাদ্যশস্য পাঠানো নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। কিন্তু রাশিয়া জানিয়ে দিয়েছে, তারা ওডেসায় রাখা সামরিক অস্ত্রসম্ভারের উপর আঘাত করতে চেয়েছে। খাদ্যসম্ভার যেখানে রাখা আছে, তা অনেক দূরে। লাভরভও জানিয়েছেন, চুক্তি মানবে রাশিয়া। তারা ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্য বাইরে আসতে দেবে।
কমেডিয়ান থেকে যুদ্ধকালীন নেতা জেলেনস্কি
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি একসময় অভিনেতা ও কমেডিয়ান ছিলেন৷ এখন যুদ্ধকালীন নেতা হিসেবে বিশ্বের মনোযোগ কেড়েছেন ৪৪ বছর বয়সি জেলেনস্কি৷
ইউক্রেনে হামলা শুরুর পরদিন শুক্রবার প্রেসিডেন্ট ভবনের কাছে কয়েকজন উপদেষ্টাকে নিয়ে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে ভিডিও বার্তা দিয়েছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি৷ তিনি তার পদ ছেড়ে দিয়েছেন বলে ওঠা গুজব মিথ্যা প্রমাণ করতে ভিডিওটি করেন ৪৪ বছর বয়সি জেলেনস্কি৷
ছবি: FACEBOOK/@Volodymyr Zelensky/AFP
বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট নেই
রাশিয়া তাকে হত্যা করতে চায় - এমন সতর্কবাণী থাকার পরও জেলেনস্কি বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট বা হেলমেট ছাড়াই ভিডিওতে উপস্থিত হয়েছিলেন৷ তাকে দেখে মনে হচ্ছিল, তিনি ঠিকমতো ঘুমাননি৷ মাঝেমধ্যে তাকে হাসতেও দেখা গেছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা সবাই এখানে আছি৷ আমাদের সামরিক বাহিনী এখানে৷ সমাজের নাগরিকরা এখানে৷ আমরা সবাই আমাদের দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করছি, এবং এটা এভাবেই থাকবে৷’’
ছবি: Ukrainian Presidential Press Service/REUTERS
মিশ্র বার্তা
এই ছবিটি শনিবারের ভিডিও থেকে নেয়া৷ সামরিক স্টাইলের খাকি টি-শার্টের ওপর হালকা সবুজ জ্যাকেট পরে জেলেনস্কি নাগরিকদের আশ্বস্ত করছেন যে, তিনি কিয়েভেই আছেন৷ এর বাইরে আনুষ্ঠানিক পোশাক পরেও সংবাদ সম্মেলন করেছেন৷ তার বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি একইসঙ্গে নাগরিকদের চাঙা রাখার পাশাপাশি তাদের আসন্ন বিপদ সম্পর্কেও সচেতন করার চেষ্টা করেছেন৷ তিনি ইউক্রেনীয়দের ‘অদম্য’ বৈশিষ্ট্য নিয়েও কথা বলেছেন৷
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জেলেনস্কির কিয়েভ ছাড়ার প্রয়োজন হলে তাকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছিলেন৷ কিন্তু জেলেনস্কি বাইডেনকে বলেন, ‘‘আমার অস্ত্র দরকার, উড়ান নয়৷’’ ব্রিটেনের ইউক্রেন দূতাবাসের টুইটে এই তথ্য জানানো হয়েছে৷
ছবি: AFP
আবেগী বার্তা
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে এক ভিডিও কলে জেলেনস্কি বলেন, ‘‘আমাকে হয়ত আপনারা শেষবারের মতো জীবন্ত দেখছেন৷’’ এরপর তিনি তাদের কাছে অস্ত্র সহায়তা কামনা করেন৷
ছবি: EU Council/Pool /AA/picture alliance
চার্চিলের সঙ্গে মিল
জেলেনস্কির সঙ্গে ব্রিটেনের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সময়কালীন প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের মিল খুঁজে পেয়েছেন চার্চিলের জীবনী লেখক অ্যান্ড্রু রবার্টস৷ তিনি জেলেনস্কির ‘অভাবনীয় ব্যক্তিগত সাহসিকতা’, ‘মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের দক্ষতা’ এবং ‘জয় সম্পর্কে তার অটল বিশ্বাসের’ প্রশংসা করেন৷ চার্চিল একসময় বলেছিলেন, মানুষের অনেকগুলো গুণের মধ্যে প্রথম হচ্ছে সাহস, কারণ এটা এমন একটা গুন, যা অন্যগুলো নিশ্চিত করে৷
অভিনেতা ও কমেডিয়ান
২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগে জেলেনস্কি একজন প্রখ্যাত অভিনেতা ও কমেডিয়ান ছিলেন৷ একটি শোতে তিনি স্কুল শিক্ষকের ভূমিকায় ছিলেন৷ শোতে দেখা যায়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে দেয়া তার জ্বালাময়ী এক বক্তব্য একজন শিক্ষার্থী রেকর্ড করে অনলাইনে ছেড়ে দেয়৷ পরে তিনি দেশের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন বলে শোতে দেখানো হয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/Ukrainian Presidential Press Office via AP
পোরোশেঙ্কোর মন্তব্য
২০১৯ সালে যখন জেলেনস্কি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হন তখন তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক প্রেসিডেন্ট পেট্রো পোরোশেঙ্কো (ছবি) তার ইউক্রেনিয়ান ভাষা নিয়ে হাসাহাসি করেছিলেন (কারণ জন্মসূত্রে জেলেনস্কির প্রাথমিক ভাষা হচ্ছে রুশ)৷ এছাড়া পুটিনের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার মতো রাজনৈতিক মর্যাদা তার নেই বলেও মন্তব্য করেছিলেন৷ কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় পোরোশেঙ্কোকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট হয়ে যান জেলেনস্কি৷
ছবি: Anna Marchenko/dpa/TASS/picture alliance
জেলেনস্কির উত্তর
নির্বাচনি প্রচারণার সময় জেলেনস্কির সমালোচকরা বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য যে ধরনের গাম্ভীর্য ভাব দরকার, সেটা তার নেই৷ এর উত্তরে জেলেনস্কি বলেছিলেন, ‘‘আমি রাজনীতিবিদ নই৷ আমি একজন সাধারণ মানুষ যে সিস্টেম ভাঙতে এসেছে৷’’
ছবি: Daniel Leal-Olivas/AFP
শপথ অনুষ্ঠানে অঙ্গীকার
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে জেলেনস্কি বলেছিলেন, ‘‘এতদিন ইউক্রেনীয়দের হাসানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, আর এখন এমন চেষ্টা করবো যেন ইউক্রেনীয়দের কাঁদতে না হয়৷’’
ছবি: Irina Yakovleva/TASS/dpa/picture alliance
10 ছবি1 | 10
ইউক্রেন জানিয়েছে, এই সপ্তাহেই খাদ্যশস্যভর্তি প্রথম জাহাজ বাইরে যাবে। জাতিসংঘের তরফেও জানানো হয়েছে, সব পক্ষ সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছে।
জার্মানির কামান
জার্মানি তিনটি অত্যাধুনিক কামান দিয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেন। সেই সঙ্গে বিপুল পরিমাণে গোলাবারুদও দিয়েছে তারা। গত জুন মাসে জার্মানি সাতটি হাউইটজার কামান দিয়েছিল। এবার তারা দিয়েছে গেপার্ড কামান।
ডিডাব্লিউর রাজনৈতিক সংবাদদাতা সাইমন ইয়াং জানিয়েছেন, এই যুদ্ধাস্ত্র ইউক্রেনের হাতে তুলে দিতে অনেকটা সময় লাগে। এই কামানগুলিকে প্রথমে যুদ্ধের জন্য তৈরি করতে হয়। তারপর ইউক্রেনের সেনাকে তা চালানোর জন্য প্রশিক্ষণ দিতে হয়। তারপর সেই অস্ত্র যায়।