জ্বালানি ও অবকাঠামোতে যুদ্ধবিরতি নিয়ে পুটিন-ট্রাম্প মতৈক্য
১৯ মার্চ ২০২৫
পূর্ণ যুদ্ধবিরতি নয়, ইউক্রেনে জ্বালানি ও অবকাঠামো ক্ষেত্রে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির বিষয়ে একমত হয়েছেন ভ্লাদিমির পুটিন ও ডনাল্ড ট্রাম্প।
ইউক্রেনের তাপবিদ্যুৎ-সহ বিভিন্ন শক্তিকেন্দ্রগুলিতে রাশিয়া আক্রমণ করেছে। ছবি: ANATOLII STEPANOV/AFP
বিজ্ঞাপন
ডনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুটিন ফোনে কথা বলার পর হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, দুই নেতা এই ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি। তবে এই যুদ্ধবিরতি হবে জ্বালানি ও অবকাঠামো ক্ষেত্রে।
তার সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোস্যালে ট্রাম্প বলেছেন, ''আমরা সব জ্বালানিকেন্দ্র ও অবকাঠামোর উপর অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি নিয়ে একমত হয়েছি। আমরা দ্রুত সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করা নিয়ে এবং রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে ভয়াবহ যুদ্ধ বন্ধ করা নিয়েও আমরা একমত হয়েছি।''
রাশিয়ার কুরস্কে ঢুকে ৭৪টি বসতি তারা দখল করে নিয়েছে বলে দাবি ইউক্রেনের। কী বলছেন কুরস্কের সাধারণ মানুষ?
ছবি: Roman Pilipey/AFP/Getty Images
রাশিয়ার ভূখণ্ডে ইউক্রেনের সেনা
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তারা যুদ্ধটা এবার রাশিয়ার ভূখণ্ডে নিয়ে গেছেন। ইউক্রেন জানিয়েছে, তাদের সেনা ১৩ কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে পড়েছে। ৭৪টি বসতি তাদের অধিকারে আছে। এক সপ্তাহ হলো ইউক্রেনের সেনা কুরস্কে ঢুকেছে। রাশিয়ার দাবি, ইউক্রেনের সেনার অগ্রগতি তারা থামাতে পেরেছে।
ছবি: ROMAN PILIPEY/AFP
'প্রথমে সবাই শান্ত ছিলেন'
কুরস্কের বাসিন্দা মার্গারিটা(আসল নাম জানাতে চাননি) ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''গত শুক্রবার যখন সাইরেন বাজলো, তখন মানুষ শান্ত ছিলেন। তারা নিজেদের কাজ করেছেন, বাজার করেছেন, সবই স্বাভাবিক ছিল। রাস্তায়, পার্কে মানুষ স্বাভাবিকভাবে হাঁটছিলেন। পরে সীমা্ন্ত থেকে খবর এলো, ইউক্রেনের সেনা আক্রমণ করেছে।''
ছবি: AP Photo/picture alliance
টিভি বললো, 'সাময়িক সমস্যা'
গোটা এলাকার জন্য সতর্কবার্তা জারি করা হয়। মার্গারিটা জানিয়েছেন, ''গোটা অঞ্চলকে সতর্ক করা হয়েছিল। আর আমরা এখন সাইরেনে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তাই সাইরেন সত্ত্বেও আমরা খুব একটা চিন্তিত হইনি। পরে আত্মীয়রা জানান, সীমান্তে তীব্র লড়াই চলছে। মানুষ ওই এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।''
ছবি: Ilya Pitalev/Sputnik/IMAGO
'পালাবার জন্য হুড়োহুড়ি'
অ্যান্টোনিনা কুরস্কে থাকেন, আর তার বোন থাকতেন সুদঝাতে। অ্যান্টোনিনা জানিয়েছেন, ''সুদঝা এখন ইউক্রেনের দখলে। তার বোন জুলিয়া বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছেন। ইউক্রেনের আক্রমণের পর মানুষ যেভাবে পেরেছে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।''
ছবি: AP Photo/picture alliance
'সবকিছু ফেলে আসতে হয়েছে'
অ্যান্টোনিনা জানিয়েছেন, তার বোন জুলিয়া এখন আত্মীয়দের কাছে দূরে চলে যেতে পেরেছেন। কিন্তু তিনি ব্যাংক কার্ড-সহ সব ডকুমেন্ট ফেলে এসেছেন। তবে তার সবচেয়ে বেশি চিন্তা পালিত হাঁস, মুরগি ও অন্য পশুদের নিয়ে।
ছবি: AP Photo/picture alliance
অর্থ ও রেশনের প্রতীক্ষায়
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, যাদের বাড়ি থেকে চলে আসতে হয়েছে, তাদের রেশন দেয়া হবে এবং ১০ হাজার রুবল দেয়া হবে। কিছু অসুবিধার জন্য জুলিয়ারা এখনো রেশন পাননি। তারা অপেক্ষা করছেন। অনেকে বলছেন, এই অর্থ দিয়ে এক বা দুই দিনের জন্য খাবার ও ওষুধ কেনা যেতে পারে। ফলে তা যথেষ্ট নয়।
ছবি: AP Photo/picture alliance
প্রতিবেশী এলাকাতেও আশংকা
কুরস্কের প্রতিবেশী বেলগোরোদের নিনা ডিডাব্লিওউকে বলেছেন, তারাও সমানে এয়ার রেইড সাইরেন শুনতে পাচ্ছেন। ডিডাব্লিউর সঙ্গে কথা বলার সময়ও সাইরেন বাজার শব্দ পাওয়া গেলো। নিনা জানিয়েছেন, তারা এখন সাইরেনে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। ইউক্রেন কুরস্কে ঢুকে পড়ার পর এখানে প্রচুর রাশিয়ার সেনা এসেছে।
সুদঝা অঞ্চলে নিখোঁজ মানুষদের নিয়ে সামাজিক মাধ্যম সরগরম। বলা হচ্ছে, ৪০ জন নিখোঁজ। অনেকে আত্মীয়দের নিয়ে আসার জন্য গেছিলেন। তাদের খোঁজ নেই। সামাজিক মাধ্যমে একজন লিখেছেন, ইউক্রেনের সেনা যাতে বিপাকে পড়ে, সেজন্য রাশিয়া গ্রামগুলিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক জায়গায় ফোনে যোগাযোগও করা যাচ্ছে না।
ছবি: Evgeniy Maloletka/AP Photo/picture alliance
'আগাম সতর্কতা ছিল না'
সামাজিক মাধ্যমে মানুষ প্রশ্ন তুলছেন, কেন গোয়েন্দারা ইউক্রেনের আক্রমণের খবর দেয়নি বা দিতে পারেনি? জুলিয়ানা বলেছেন, ''মানুষের আশংকা ছিল, কিন্তু কর্তৃপক্ষ আগাম কোনো সতর্কতা জারি করেনি।'' শ্বেতলানা বলেছেন, ''কোথায় গেল সিক্রেট সার্ভিস? তারা তো মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে?'' স্থানীয় প্রশাসন মানুষকে শান্ত থাকতে বলেছেন।
ছবি: Anatoliy Zhdanov/REUTERS
9 ছবি1 | 9
জেলেনস্কি ফিনল্যান্ডে সাংবাদিকদের বলেছেন, ''অ্যামেরিকার কাছ থেকে আগে আমরা জানি, কী কথা হয়েছে, তারপর আমরা মতামত জানাব। তবে যুক্তরাষ্ট্রকে গ্যারান্টি দিতে হবে। রাশিয়া যতদিন এটা মানবে, ততদিন আমরাও মানব। ''
শলৎস ও মাক্রোঁ যা বললেন
জার্মানির বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ওলাফ শলৎস বার্লিনে সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, ''এটা প্রথম ধাপ। এরপর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পূর্ণ যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতে হবে। তবে এই আংশিক যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তকে আমি ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ সমর্থন জানাচ্ছি।''
মাক্রোঁকে পাশে নিয়ে শলৎস জানিয়েছেন, ''ইউক্রেন আমাদের বিশ্বাস করতে পারে, ইউরোপকে বিশ্বাস করতে পারে। আমরা তাদের বিশ্বাসের অমর্যাদা করব না।''
মাক্রোঁ বলেছেন, ''আমরা রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের সেনাকে সমর্থন করে যাব।''