ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী তাদের রক্তাক্ত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে৷ বুধবার দোনেৎস্ক অঞ্চলের ৩৪ জন বাসিন্দার নিহত হবার খবর দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ৷ অথচ আগামী সপ্তাহে ইউক্রেন ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্টদ্বয়ের বৈঠক৷
বিজ্ঞাপন
দোনেৎস্ক হলো বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দুটি মূল ঘাঁটির একটি৷ সরকারি সেনাবাহিনী দোনেৎস্ক-এর লাগোয়া মাকিয়িভকা শহরটির কাছে মঙ্গলবার সারারাত ধরে যুদ্ধ চালিয়েছে৷ সেই যুদ্ধে সেনাবাহিনীর ন'জন সৈন্য নিহত হয়েছে, বলে জানিয়েছেন এক মুখপাত্র৷
তবে ইউক্রেনীয় ন্যাশনাল গার্ড পুনরায় যে শহরটি দখল করেছে, সেটি হলো ইলোভায়িস্ক৷ এই শহরটি দোনেৎস্ক-এর প্রায় ৪৫ কিলোমিটার পূর্বে৷ শহরটি একটি বড় রেলওয়ে জংশন৷ খোদ দোনেৎস্ক-এ পানি সরবরাহ আবার চালু হয়েছে, বলে খবর দিয়েছেন স্থানীয় কর্তৃপক্ষ৷ সপ্তাহান্তে একটি ফিল্টারিং স্টেশনে বিদ্যুৎ সরবরাহ আবার চালু করা সম্ভব হয়৷
ক্রাইমিয়ায় সব শান্ত?
সবার মনোযোগ এখন ইউক্রেনের ক্রাইমিয়ার দিকে৷ ক্রাইমিয়ায় যা ঘটেছে তাকে রাশিয়ার আগ্রাসন বলা হলেও রুশ সেনাদের কিন্তু সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছে স্থানীয়রা৷ ছবিঘরে দেখুন ক্রাইমিয়ার পরিস্থিতি৷
ছবি: DW/F. Warwick
কোসাকদের আগমন
রাশিয়ার ক্রাসনোডার থেকে এসেছে ২৫০ জনের মতো কুবান কোসাক৷ সামরিক বাহিনীর পোশাক পরেননি তাঁরা৷ সেভাস্টোপোলের রুশপন্থি কর্তৃপক্ষ কোসাকদের শপথ পাঠ করিয়েছে৷ স্বেচ্ছাসেবী কোসাকরা জানিয়েছে, ক্রাইমিয়াবাসীদের রক্ষা করার জন্য তারা স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে কাজ করবে৷
কুবান কোসাকরা সেভাস্টোপোলের পুলিশের সঙ্গে টহলে অংশ নিচ্ছে৷ মাথায় উলের টুপি পরে রবি বার থেকে রাস্তায় টহল দিচ্ছে কোসাকরা৷ ২০০৫ সালে এথনিক সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী এবং শক্তিশালী সামরিক শক্তি হিসেবে কোসাকদের স্বীকৃতি দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন৷
ছবি: DW/F. Warwick
কঠিন সময়ে নিরাপত্তা
রাশিয়া এবং ক্রাইমিয়ার টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন কোসাকদের নেতা কর্নেল সের্গেই সাভোনিন ইউরিয়েভিচ৷ তিনি বলেন, কোসাকরা সেভাস্টোপোলের মানুষদের রক্ষা করার জন্য এসেছে৷
ছবি: DW/F. Warwick
‘স্বায়ত্তশাসন, বিচ্ছিন্নতাবাদ নয়’
ক্রাইমিয়ায় অনেকের হাতেই দেখা যায় ক্রাইমিয়া এবং রাশিয়ার পতাকা৷ এর অর্থ এই নয় যে, ক্রাইমিয়া ইউক্রেন থেকে আলাদা হয়ে গেছে৷ সেভাস্টোপোলের এই তরুণ-তরুণীরা জানালেন, তাঁরা ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ চাননা, কেননা ইউক্রেনকে তাঁরা ভ্রাতৃপ্রতীম রাষ্ট্র মনে করেন৷ তাঁদের দাবি একটাই – স্বায়ত্তশাসন এবং এথনিক রুশ হিসেবে প্রাপ্য মর্যাদা৷
ছবি: DW/F. Warwick
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?
এই প্রবীণ এসেছেন কোসাকদের সমর্থন জানাতে৷ রাশিয়ার প্রতি তাঁর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে৷ পরনে রুশ সেনাবাহিনীর মতো কমলা আর কালো রংয়ের পোশাক৷ তিনি নিজেও সোভিয়েত ইউনিয়নের রেড আর্মির সাবেক কর্মকর্তা৷
ছবি: DW/F. Warwick
রাস্তায় তল্লাশি
সিমফারোপোল এবং সেভাস্টোপোলের মাঝের হাইওয়েতে গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে রুশপন্থি বেসামরিক বাহিনীর সদস্যরা৷
ছবি: DW/F. Warwick
ব্যবসার জন্য খারাপ সময়?
লিলিয়া ভজনুক একজন স্যুভেনির বিক্রেতা৷ রাবারের তৈরি মুখোশগুলোর মধ্যে পুটিনের চেহারার মুখোশটার এখন দারুণ কাটতি৷ তবু খুব চিন্তায় আছেন লিলিয়া৷ চলমান সংকট ব্যবসার বড় রকমের ক্ষতি করবে বলে আশঙ্কা তাঁর৷
ছবি: DW/F. Warwick
হৃদয়-মন জয় করেছে তাঁরা
সেভাস্টোপোলে গেলেই ব্ল্যাক সি ফ্লিট অঁসম্বল-এর কনসার্ট দেখতে পাবেন৷ নাচ-গানের এই স্থানীয় সংগঠনটি তাদের পরিবেশনা দিয়ে সবার মন জয় করেছে৷ রুশ লোকসংগীতে সাগরের প্রশংসা করে যেসব গান রচনা করা হয়েছে মূলত সেগুলোই পরিবেশন করে ব্ল্যাক সি ফ্লিট অঁসম্বল৷ রাশিয়ার ঐতিহ্যবাহী ইয়াব্লোচকো বা ‘ছোট্ট আপেল’ নাচটা সত্যই মনোমুগ্ধকর৷
ছবি: DW/F. Warwick
চাই শুধু স্বায়ত্তশাসন
সেভাস্টোপোলের অধিকাংশ মানুষই রুশ জাতীয়তাবাদের সমর্থক৷ ইউক্রেনীয়দের তারা অবিশ্বাস করে, মনে করে ইউক্রেনীয়রা চরম ডানপন্থি৷ সেভাস্টোপোলের মানুষ মনে করে রুশ বাহিনীর উপস্থিতি এ অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসন এবং নিরাপত্তার রক্ষাকবচ৷
ছবি: DW/F. Warwick
10 ছবি1 | 10
দোনেৎস্ক-এর পর বিদ্রোহীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর হলো লুগানস্ক৷ বিগত কয়েক দিনে ইউক্রেনীয় সৈন্যরা লুগানস্ক-এর অনেক ভিতরে ঢুকে পড়েছে৷ মঙ্গলবার ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর এক ফিল্ড কমান্ডার নাকি দেখেছেন, রুশ সাঁজোয়া গাড়ির একটি বিশাল বহর কিভাবে লুগানস্ক-এ ঢুকছে৷ তা-তে নাকি ট্যাংক, রকেট লঞ্চার ও কামান ছিল – আর ছিল রুশ উর্দি পরা শ'বারো লোক৷ তবে কিয়েভ-এর সামরিক মহল থেকে কমান্ডার ইগর ভরোঞ্চেঙ্কোর এই দাবির কোনো স্বীকৃতি পাওয়া যায়নি৷ – অপরদিকে প্রায় ৩০০ রুশ ট্রাক প্রচুর পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী নিয়ে এখনও লুগানস্ক সীমান্তের কাছে খাড়া: তাদের ঢুকতে দেওয়া হবে কি না হবে, তা নিয়ে এখনও তর্কাতর্কি চলেছে৷
বাকি থাকছে আগামী সপ্তাহে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট পেট্রো পোরোশেঙ্কো এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের মধ্যে পরিকল্পিত সাক্ষাৎ৷ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিয়েভ ও মস্কো, উভয় পক্ষই তাদের নিজস্ব অবস্থান জেরদার করার চেষ্টা করছে: রাশিয়ার ‘ত্রাণ সাহায্য' কিংবা ইউক্রেনের জোরদার সামরিক অভিযানের অর্থই হলো তাই৷ রাশিয়ার দাবি হলো, পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধপীড়িত এলাকাকে ‘ডিমিলিটারাইজ' করো, অর্থাৎ যুদ্ধবর্জিত এলাকায় পরিণত করো৷ ইউক্রেন যদি পোরোশেঙ্কো-পুটিন সাক্ষাতের আগে লুগানস্ক কিংবা দোনেৎস্ক দখল করতে পারে, তাহলে ‘ডিমিলিটারাইজেশন'-এর প্রশ্নটাই অবান্তর হয়ে পড়ে৷