অনেকদিন ধরেই অ্যামেরিকা থেকে এই বিমান ইউক্রেনে যাওয়ার কথা ছিল। এফ-১৬ চালানোর প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে ফাইটার চালকদের।
বিজ্ঞাপন
ক্রেমলিন জানিয়েছে, ইউক্রেনে থাকা রাশিয়ার সেনাবাহিনী যে কোনো দিন এফ-১৬ যুদ্ধবিমান গুলি করে নামিয়ে দেবে।
অ্যামেরিকা অবশ্য় সরাসরি এফ-১৬ ফাইটার জেট ইউক্রেনের হাতে তুলে দেয়নি। কারণ, নিয়ম মতো সে কাজ তারা করতে পারে না। অ্যামেরিকা এই যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে ডেনমার্ক এবং নেদারল্যান্ডসকে। এই দুই দেশ প্রথম ব্য়াচের এফ-১৬ বিমান পাঠিয়েছে ইউক্রেনকে। ডেনমার্ক ইউক্রেনকে সব মিলিয়ে ১৯টি এফ-১৬ দেবে বলেছিল। নেদারল্য়ান্ডস বলেছিল ২৪টি। তারই প্রথম ব্য়াচের বিমান পৌঁছেছে। নরওয়ে এবং বেলজিয়ামও ইউক্রেনকে এফ-১৬ দেবে বলে জানিয়েছে।
সাধারণত এফ-১৬ চালানোর জন্য় তিন বছরের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। কিন্তু ইউক্রেনের ফাইটার পাইলটদের নয় মাসের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
রাশিয়ার মিসাইলে বিধ্বস্ত ইউক্রেনের শিশু হাসপাতাল
ইউক্রেনের পাঁচটি শহরে আবার মিসাইল হামলা চালিয়েছে রাশিয়া৷ হামলায় বিধ্বস্ত হয়েছে কিয়েভের একটি শিশু হাসপাতাল৷ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফ আন্দ্রেই ইয়েরমাক জানান, হামলায় মোট ৩৬ জন নিহত হয়েছেন৷ আহত হয়েছেন ১৪০ জন৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
বিধ্বস্ত শিশু হাসপাতাল
রাশিয়ার ছোঁড়া মিসাইলের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে কিয়েভের অকমাডিট শিশু হাসপাতাল৷ এটিই ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় শিশু হাসপাতাল৷ মিসাইলের আঘাতে হাসপাতাল ভবনটির ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ সেখানে কর্মরত চিকিৎসক লেসিয়া লিজিটসিয়া ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে এ কথা জানিয়েছেন৷
ছবি: Oleksandr Ratushniak/REUTERS
ভীতিকর পরিস্থিতি
ভীতিকর পরিস্থিতি
হামলার সময়কার ভীতিকর অবস্থান বর্ণনা করেছেন চিকিৎসক লেসিয়া লিজিটসিয়া৷ তিনি বলেন, যখন মিসাইল এসে হাসপাতালে আঘাত হানে তখন পুরো বিষয়টি ‘সিনেমার দৃশ্যের’ মতো মনে হচ্ছিল৷ তিনি ‘ভয়ঙ্কর তীব্র আলো’ দেখতে পেয়েছিলেন জানিয়ে আরো বলেন, ‘‘এর পরপরই বিকট এবং ভীতিকর শব্দ শুনতে পাই৷’’ হামলায় হাসপাতালের একটি অংশ গুঁড়িয়ে গেছে, অন্য অংশে আগুন ধরে যায় বলেও জানান তিনি৷
ছবি: Oleksandr Ratushniak/REUTERS
মোট নিহত ৩৬, হাসপাতালে ২
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদোমির জেলেনস্কির চিফ অব স্টাফ আন্দ্রেই ইয়েরমাক জানিয়েছেন, কয়েকটি শহরের এ হামলায় মোট ৩৬ জন নিহত হয়েছেন৷ আহত হয়েছেন আরো ১৪০ জন৷ কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিৎসকো জানিয়েছেন, মিসাইল হামলায় হাসপাতালের এক চিকিৎসকসহ দুই ব্যক্তি মারা গেছেন৷ উদ্ধারকর্মীদের বরাত দিয়ে তিনি আরো জানিয়েছেন, আশঙ্কা করা হচ্ছে ধ্বংসস্তূপের নিচে আরো কেউ আটকা থাকতে পারেন৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
থমকে গেছে চিকিৎসাসেবা
রাশিয়ার হামলায় থমকে গেছে হাসপাতালটির চিকিৎসাসেবা৷ চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, চিকিৎসাধীন রোগীদের দ্রুত কাছের হাসপাতালগুলোতে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইউক্রেনীয় একটি টিভি চ্যানেলকে জানিয়েছে, যে ওয়ার্ডটিতে মিসাইল আঘাত হেনেছে সেখানে অন্তত ২০ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
দায় অস্বীকার রাশিয়ার
বিবিসি জানিয়েছে, হাসপাতালে হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেছে রাশিয়া৷ উল্টো ইউক্রেনের ঘাড়ে দায় চাপিয়েছে তারা৷ রাশিয়া দাবি করছে, হাসপাতালটি ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা মিসাইলের একটি অংশের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে৷ কিন্তু ইউক্রেন জানিয়েছে, তারা রাশিয়ার ছোঁড়া মিসাইলের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেয়েছে৷
ছবি: Evgeniy Maloletka/AP Photo/picture alliance
গণহত্যার অভিযোগ
রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনে গণহত্যার চালানোর অভিযোগ এনেছেন কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিৎসকো৷ তিনি বলেন, ‘‘এ ঘটনার মধ্য দিয়ে পুরো বিশ্ব দেখতে পাচ্ছে রাশিয়ার মিসাইল ও ড্রোন কিভাবে আমাদের শান্তিপূর্ণ শহরকে তছনছ করে দিয়েছে এবং নাগরিকদের হত্যা করেছে৷’’ রাশিয়ার হামলায় একটি মাতৃ ও প্রসূতি হাসপাতালও আংশিক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি৷ বলেছেন, সেখানে অন্তত সাত জন মারা গেছেন৷
ছবি: STATE EMERGENCY SERVICE OF UKRAINE/REUTERS
পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি জেলেনস্কির আহ্বান
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয়া এক বার্তায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি লিখেছেন, রাশিয়ার ছোঁড়া বিভিন্ন ধরনের ৪০টিরও বেশি মিসাইল কিয়েভ, দিনিপ্রো, ক্রিভিই রি, স্লোভিয়ানস্ক ও ক্রামাতোরস্ক শহরে আঘাত করেছে৷ ইউক্রেনের জনগণ, ভূমি ও শিশুদের উপর রাশিয়ার এই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমা বিশ্বকে শক্তিশালী পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি৷
ছবি: EPA/MICHAEL BUHOLZER
7 ছবি1 | 7
রাশিয়ার বক্তব্য
ক্রেমলিনের বক্তব্য, এফ-১৬ যুদ্ধবিমান যুদ্ধের ধারা বদলাতে পারবে না। প্রতিটি এফ-১৬ বিমান সারফেস টু এয়ার মিসাইল দিয়ে ধ্বংস করা হবে। এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, সব মিলিয়ে ১৩০টি এফ-১৬ বিমান প্রয়োজন তার। যার সাহায্যে ইউক্রেনের আকাশ নিরাপদ রাখা সম্ভব হবে। তিনি মনে করেন, এফ-১৬ বিমান আকাশে টহল দিতে শুরু করলে রাশিয়ার বোমারু বিমান ইউক্রেনের আকাশে প্রবেশ করতে পারবে না।
বেইজিংয়ের মধ্যস্থতা চায় না ইউক্রেন
২৯ মাস ধরে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ হচ্ছে রাশিয়ার। সম্প্রতি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দুই দেশের মধ্যে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট তা নাকচ করে দিয়েছেন। জেলেনস্কি সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন, বেইজিংয়ের মধ্যস্থতা তিনি চান না।
জেলেনস্কির বক্তব্য, ''চীন চাইলে রাশিয়ার উপর চাপসৃষ্টি করতে পারে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য। আমরা বেইজিংয়ের মধ্যস্থতা চাই না। বেইজিং রাশিয়ার সঙ্গে কথা বলুক।''
সম্প্রতি সুইজারল্য়ান্ডে ইউক্রেন একটি শান্তি বৈঠক ডেকেছিল। স্বাভাবিকভাবেই সেখানে রাশিয়াকে ডাকা হয়নি। রাশিয়াকে ডাকা হয়নি বলেই সম্ভবত চীন তাতে যোগ দেয়নি। শুধু তা-ই নয়, ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিছুদিন আগে চীন গেছিলেন। সেখানেও যুদ্ধের নিন্দা করেনি বেইজিং। বরং পরবর্তীকালে রাশিয়ার কাছ থেকে সস্তায় তেল এবং গ্য়াস কিনেছে।