ইউক্রেনে বাঁধ ভাঙলো, কিয়েভ ও মস্কো একে অপরকে দুষছে
৭ জুন ২০২৩
বিস্ফোরণে দক্ষিণ ইউক্রেনের কাখোভকা বাঁধ ও জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যাপক ক্ষতি। নিপ্রো নদীর জলে বিপুল এলাকায় বন্যা।
বিজ্ঞাপন
ইউক্রেনের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব জলবিদ্যুৎ সংস্থা জানিয়েছে, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইঞ্জিন রুমে বিস্ফোরণের ফলে পুরো কেন্দ্রটি ধ্বংস হয়ে গেছে। বাঁধটি আংশিকভাবে ভেঙে গেছে। এর ফলে বহু এলাকা জলের তলায় চলে গেছে।
মস্কো ও কিয়েভ একে অপরকে এর জন্য দায়ী করেছে। ইউক্রেন বলেছে, তাদের সেনা যাতে দক্ষিণ ইউক্রেন যেতে না পারে, সেজন্যই রাশিয়া এই কাজ করেছে। আর মস্কোর অভিযোগ, ইউক্রেনের বাহিনী গোলা মেরে এই কাজ করেছে।
এই বাঁধ তৈরি হয়েছিল সোভিয়েত জমানায়। এখান থেকে ঝাপোরিজ্ঝিয়া পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রে জল সরবরাহ করা হত। একইসঙ্গে ক্রাইমিয়া উপদ্বীপ অঞ্চলেও জল যেত। এই অঞ্চল ২০১৪ সালে রাশিয়া দখল করে নিয়েছে। এই বাঁধের পাশের এলাকাও রাশিয়ার দখলে।
বাঁধ ভাঙার ফলে প্রচুর দ্বীপ প্লাবিত হতে পারে। ইউক্রেন ও রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৮০টি জনবসতি এলাকা ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, গত কয়েক দশকের মধ্যে ইউরোপে এটাই সবচেয়ে বড় পরিবেশগত বিপর্যয় এবং যার পিছনে মানুষই দায়ী। তার যুক্তি এই শক্তপোক্ত বাঁধ ও জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র সাধারণ কারণে ভেঙে পড়া সম্ভব নয়। রাশিয়াই তা ভেঙেছে।
অ্যামেরিকা খতিয়ে দেখছে
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, তারা বাঁধ ভাঙা নিয়ে রিপোর্ট খতিয়ে দেখছে। মুখপাত্র জন কিরবি জানিয়েছেন, ''এই আক্রমণের পিছনে মস্কো আছে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে বাঁধ ভাঙার ফলে প্রচুর মানুষ মারা গেছেন।''
কিরবি বলেছেন, ''আমরা এই রিপোর্ট দেখেছি যে, বাঁধে বিস্ফোরণের জন্য রাশিয়া দায়ী। আমরা সব রিপোর্ট খতিয়ে দেখছি। ইউক্রেন যাতে আরো তথ্য দেয়, তার জন্য তাদের অনুরোধ করা হয়েছে। কী হয়েছিল, তা আমরা এখনই নিশ্চিত করে বলতে পারছি না।''
এই বিস্ফোরণ ইচ্ছে করে করা হয়েছে কি না, তাও জানাতে পারেননি কিরবি।
যখন সাবওয়েই তাদের ঘর, স্কুল এবং বিনোদনকেন্দ্র
ইউক্রেন যুদ্ধ বদলে দিয়েছে তাদের জীবন৷ সব সময় যেন প্রাণ হাতে নিয়ে বাঁচতে হয় তাদের৷ যেখানে যখন রাশিয়ার হামলা সেখানে তখনই হতে পারে জীবনাবসান৷ তবুও কাটছে জীবন৷ সাবওয়েতেও চলছে বসবাস, লেখাপড়া এবং বিনোদন৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Viacheslav Ratynskyi/REUTERS
আকস্মিক হামলা
রাশিয়ার মিসাইল বা বোমা হামলার বিভীষিকা নেমে আসে যখন তখন৷ তাই ইউক্রেনের মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে যাবার প্রস্তুতি রাখতে হয় সব সময়৷ রাজধানী কিয়েভেও জীবন চলছে একই নিয়মে৷
ছবি: Valentyn Ogirenko/REUTERS
এসকেলেটর যেন বিশ্রামাগার
প্রাণভয়ে মেট্রোস্টেশনে আশ্রয় নিয়েছেন তারা৷ তখন এসকেলেটরের সিঁড়িই তাদের আশ্রয়স্থল, সেখানে কেটে যাচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা৷ মিসাইল বা বোমা হামলার বিকট শব্দ না থামা পর্যন্ত কারো মেট্রো স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার উপায় নেই৷ গত ২৯ মে-র তোলা ছবি৷
ছবি: Alina Smutko/REUTERS
শত শত মানুষের ভিড়
এই ছবিটিও গত ২৯ মে-র৷ কিয়েভে তখন আবার শুরু হয়েছে রাশিয়ার বিমান হামলা৷ মেট্রো স্টেশনটিতে তাই শত শত মানুষের ভিড়৷
ছবি: Alina Smutko/REUTERS
সৈনিকের অসহায়ত্ব
হঠাৎ আকাশ থেকে বোমা হামলা শুরু হলে সৈন্যদেরও বিশেষ কিছু করার থাকে না৷ তাদেরও তখন ছুটতে হয় নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে৷ ২৯ মে-র ছবিটিতে ধরা পড়েছে এক মেট্রোস্টেশনে ইউক্রেনের দুই সেনা সদস্যের অসহায়ত্ব৷
ছবি: Alina Smutko/REUTERS
বাবা-মেয়ে
এক সেনাসদস্য মেয়েকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন মেট্রোস্টেশনে৷ বাবার কাছে বসে মেয়েটি মন দিয়েছে ট্যাবে৷ বাবা নিজের টুপি পরিয়ে দিয়েছেন মেয়েকে৷ গত ৯ মার্চের ছবি৷
ছবি: Alina Smutko/REUTERS
অস্থায়ী স্কুল
রাশিয়ার হামলা শুরু হলে কখনো কখনো মেট্রোস্টেশন যে অস্থায়ী স্কুলের রূপ নেয়, ওপরের ছবিটি তার প্রমাণ৷ স্কুলের শিক্ষার্থীদের সেখানেই ক্লাস নিচ্ছেন এক শিক্ষক৷
ছবি: Viacheslav Ratynskyi/REUTERS
সাবওয়েতে কনসার্ট!
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে একটা সময় পর্যন্ত মেট্রো রেল স্টেশনে আশ্রয় নেয়া মানুষদের প্রতিটি মুহূর্ত কাটতো মহাতঙ্কে৷ তবে ধীরে ধীরে যুদ্ধের এই নির্মম বাস্তবতা মানতে শুরু করেন তারা৷ বিশেষ করে এক বছর আগে রক ব্যান্ড ইউ-টু যখন সেখানে এসে কনসার্ট করলো, ইউক্রেনবাসীরাও যেন বুঝতে শুরু করলেন যুদ্ধপরিস্থিতিতে সব সময় সব পরিস্থিতেই মানিয়ে নিতে হবে নিজেদের৷ ওপরের ছবিতে নেচে নেচে গাইছেন ইউ-টু তারকা বোনো৷
ছবি: VALENTYN OGIRENKO/REUTERS
শিল্পী-সেনার দ্বৈত সংগীত
ইউ-টু তারকা বোনোর সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে গাইছেন ইউক্রেনের এক সেনা সদস্য৷ কিয়েভের এক মেট্রোস্টেশনের এই কনসার্টের ছবিটি ২০২২ সালের ৮ মে তোলা৷
ছবি: VALENTYN OGIRENKO/REUTERS
মগ্ন শ্রোতা
পল ডেভিড হিউসন, অর্থাৎ ইউ-টু রক ব্যান্ডের ভোকালিস্ট বোনোর গান মন দিয়ে শুনছেন কিয়েভের কয়েক শ মানুষ৷ গত বছরের ৮ মে-র ছবি৷
ছবি: VALENTYN OGIRENKO/REUTERS
সাবওয়েতে ভাষাশিক্ষা
বিমান হামলা সেই কখন শুরু হয়েছে, থামার কোনো লক্ষণই নেই৷ তাই এক শিক্ষক মেট্রোরেলেই শুরু করে দিয়েছেন ভাষা শেখানোর ক্লাস৷ গত ৩ মে-র ছবি৷
ছবি: Viacheslav Ratynskyi/REUTERS
10 ছবি1 | 10
পশুর মৃত্যু
নোভা কাখোভকা এলাকার এক চিড়িয়াখানার মালিক জানিয়েছেন, তার আশঙ্কা, অন্ততপক্ষে তিনশ পশু মারা গেছে। এই এলাকাটি রাশিয়ার সেনার অধিকারে আছে।
এফ১৬ নিয়ে বিরোধ
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ জানিয়েছেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির অনুরোধ মেনে অ্যামেরিকা যদি ইউক্রেনকে এফ১৬ যুদ্ধবিমান সরবরাহ করে তাহলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।
লাভরভ বলেছেন, এফ১৬-র কিছু বিমান পরমাণু অস্ত্র বহন করতে পারে। যদি তারা এটা বুঝতে না পারে, তাহলে তাদের সামরিক কৌশল খুবই খারাপ।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, ''ইউক্রেনকে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান দেয়ার উদ্দেশ্য, তারা যাতে ঠিকভাবে আত্মরক্ষা করতে পারে, তাদের বায়ুসীমা রক্ষা করতে পারে এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা করতে পারে।'' কিরবির বক্তব্য, ''যদি ইউক্রেনের সামরিক শক্তি নিয়ে রাশিয়া চিন্তিত, তাহলে তারা অবিলম্বে সেখান থেকে সেনা সরাক।''
ইউক্রেনের পাইলটদের এফ১৬ চালাবার প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। তবে ইউক্রেনকে এখনো এই যুদ্ধবিমান দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র।