সশস্ত্র সংঘাতে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের লঙ্ঘনকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ ইউক্রেনেও বেসামরিক নাগরিকদের উপর হামলা হয়েছে, যারা সর্বশেষ প্রমাণ বুচা শহরে পড়ে থাকা মরদেহ৷ তবে, এক্ষেত্রে আইনে কিছু অস্বচ্ছতা রয়েছে৷
ছবি: Vadim Ghirda/AP/picture alliance
বিজ্ঞাপন
১৮৯৯ এবং ১৯০৭ এর হেগ সনদে, যা আসলে কিছু বহুপাক্ষিক চুক্তির সমন্বয়ে তৈরি, বেশ কিছু আইন এবং নিয়মের কথা বলা হয়েছে যেগুলো চুক্তি স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর অবশ্যই মনে চলতে হবে৷
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রোম সংবিধির আট ধারায় বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে৷ ১৯৪৯ সালের জেনেভা সনদের ভিত্তিতে এটি তৈরি করা হয়েছে৷
কিংস কলেজ লন্ডনের যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক গবেষণা দলের উপপরিচালক মারিয়া ভারাকি বলেন, ‘‘যদিও রাজনীতিবিদ এবং পর্যবেক্ষকরা বলছেন যে ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছে , কিন্তু এসংক্রান্ত তথ্যপ্রমাণ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাইবাছাই এবং সত্যতা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এটা শুধুই অভিযোগ হিসেবে থাকবে৷’’
আইনজীবীরা যুদ্ধাপরাধকে জেনেভা সনদের চরম লঙ্ঘন মনে করেন৷ ভারাকি বলেন, ‘‘আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা, নির্যাতন, জোর করে অন্যত্র সরিয়ে দেয়া এবং নির্বিচারে হামলার কথা বলছি৷ কারণ যুদ্ধসংক্রান্ত আইনের মৌলিক নীতি হচ্ছে বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিনত করা যাবে না৷’’
এই বিচারে অবশ্য কিয়েভে বিদ্যালয় এবং প্রসূতি ওয়ার্ডে হামলা কিংবা মারিয়োপোলে থিয়েটারে হামলা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি৷ ভারাকি বলেন, ‘‘এবং গত ৪৮ ঘণ্টায় আমরা দেখেছি যে বেসামরিক পোশাক পরা মানুষের মরদেহ বুচার রাস্তায় পড়ে আছে৷ অনেককে মাথার পেছনে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে৷ আন্তার্জাতিক মানবিক আইন অনুযায়ীয় এগুলো নৃশংসতা৷’’
বুচার ঘটনায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞার প্রস্তুতি
01:07
This browser does not support the video element.
তবে, যুদ্ধাপরাধের সংজ্ঞার কিছু অস্বচ্ছ দিক রয়েছে৷ আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মূলত তিনটি নীতির উপর নির্ভরশীল: পার্থক্য, সমানুপাতিকতা এবং সতর্কতা৷ আর এই নীতির উদ্দেশ্য হচ্ছে এটা নিশ্চিত করা যে কোনো পক্ষই যাতে বেসামরিক নাগরিক এবং বেসামরিক স্থাপনায় হামলা না চালায়৷
যদিও কাগজে এই নিয়ম বেশ স্পষ্ট, কিন্তু বাস্তবে প্রয়োগের ক্ষেত্রে তা নানাভাবে ব্যাখ্যার সুযোগ রয়েছে৷ যেমন, যদি একটি বেসামরিক স্থাপনার ব্যবহার দেখে মনে হয় যে সেটি সামরিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে তখন কী হবে?
ভারাকি বলেন, ‘‘আমি একটি শপিং মলের কথা উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি৷ ইউক্রেনীয়রা বলছে এটা স্পষ্টভাবে একটি বেসামরিক স্থাপনা৷ কিন্তু রাশিয়া নিজেদের গোয়েন্দাদের বরাতে বলছে যে সেখানে সামরিক সামগ্রী জমা করা হয়েছিল৷’’
যদিও বেসামরিক মানুষের ভোগান্তি কমানোর জন্য নিয়ম আছে, কিন্তু প্রায়শই সেগুলোর অপব্যবহার এবং হেরফের করা হয়৷
‘‘সবকিছুই নিয়মের ব্যাখ্যা এবং মানুষের বিবেচনার উপর নির্ভরশীল: কখন আপনি লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করবেন, কী লক্ষ্যবস্তু বানাবেন, কিংবা সেটার পরিধি কতটা হবে,’’ বলেন ভারাকি৷
রব মাজ/এআই
ইউক্রেন যুদ্ধে যেসব অস্ত্রের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে
রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করে ২৪ ফেব্রুয়ারি৷ নিজস্ব অস্ত্র ছাড়াও পশ্চিমাদের কাছ থেকে পাওয়া অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার মোকাবিলা করছে ইউক্রেন৷
ছবি: Alexander Zemlianichenko/AP/picture alliance
কিনজাল মিসাইল
মিগ-৩১ বিমানের গায়ে সাদা কিনজাল মিসাইল দেখতে পাচ্ছেন৷ শব্দের গতির চেয়ে এর গতি প্রায় পাঁচগুণ বেশি৷ তাই একে হাইপারসনিক মিসাইল বলা হয়৷ ১৯ মার্চ রাশিয়া জানায়, ইউক্রেনের পশ্চিমের একটি বিশাল অস্ত্রভাণ্ডার ধ্বংস করতে এই মিসাইল ব্যবহার করা হয়েছে৷ আর ২৯ মার্চ এক ঊর্ধ্বতন মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা জানান, রাশিয়া নিয়মিত এমন মিসাইল ব্যবহার করছে৷ ছবিটি ২০১৮ সালে তোলা৷
ছবি: Alexander Zemlianichenko/AP/picture alliance
ভ্যাকুয়াম বোমা
এই বোমা থার্মোব্যারিক বোমা বা অ্যারোসল বোমা নামেও পরিচিত৷ ছবিতে রাশিয়ার টিওএস-১এ থার্মোব্যারিক রকেট লঞ্চার দেখা যাচ্ছে, যেটা থেকে ভ্যাকুয়াম বোমা ছো়ড়া হয়৷ ইউক্রেন যুদ্ধে এই সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে বলে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে৷ ভ্যাকুয়াম বোমার আঘাতে অনেক বড় আগুনের গোলা সৃষ্টি হয়৷ এটি সুরক্ষিত ভবন, যন্ত্রপাতি ধ্বংস করতে পারে৷ মানুষকে মেরে ফেলতে কিংবা আহত করতে পারে৷
ছবি: Leonid Faerberg/ZUMAPRESS/picture alliance
ক্লাস্টার বা গুচ্ছ বোমা
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান মিশেল বাচেলেট বুধবার জানান, রাশিয়া জনবহুল এলাকায় অন্তত ২৪ বার এমন বোমা ব্যবহার করেছে বলে তার অফিস অভিযোগ পেয়েছে৷ এই বোমার এমন নামকরণের কারণ এই বোমায় অনেকগুলো ছোট ছোট বোমা (বম্বলেট) থাকে৷ ক্লাস্টার বোমা বিস্ফোরিত হলে ছোট বোমাগুলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে৷ ফলে একটা বিশাল এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ ছবিটি ফাইল থেকে নেয়া৷
ছবি: MOHAMMED ZAATARI/AA/picture alliance
কালিবা ক্রুজ মিসাইল
ইউক্রেনের সামরিক ও সরকারি ভবনে হামলা চালাতে কালিবা ক্রুজ মিসাইল ব্যবহার করেছে রাশিয়া৷ ছবিটি ফাইল থেকে নেয়া৷
ছবি: Tass/imago images
ইস্কান্দার ব্যালিস্টিক মিসাইল
এই মিসাইল সর্বোচ্চ ৫০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে৷ বড় ভবন ও সুরক্ষিত, দুর্ভেদ্য অবকাঠামো ধ্বংস করতে পারে এটি৷ বেলারুশ থেকে কিছু ইস্কান্দার মিসাইল ইউক্রেনের দিকে ছোড়া হয়েছে বলে জানা গেছে৷
ছবি: Russian Defense Ministry via AP/picture alliance
আর্টিলারি সিস্টেম
২৬ ফেব্রুয়ারির এই ছবিতে ইউক্রেন সীমান্তের কাছে রাশিয়ার বেলগোরোদ এলাকায় ‘উরাগান’ মাল্টিপল রকেট লঞ্চার সিস্টেম দেখা যাচ্ছে৷ তার দুদিন আগে ইউক্রেনে হামলা শুরু করেছিল রাশিয়া৷ উরাগান ছাড়াও রাশিয়ার কাছে সোভিয়েত আমলের ডিজাইন করা ‘গ্রাট’, ‘স্ম্যার্শ’ রকেট লঞ্চার আছে৷
ছবি: Mikhail Voskresenskiy/SNA/imago images
ফসফরাস বোমা?
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ২৫ মার্চ জানান, রাশিয়া ইতিমধ্যে ফসফরাস বোমা ব্যবহার করেছে৷ লুহানস্কের গভর্নর জানান একটি গ্রামে এমন বোমা হামলায় দুই শিশুসহ কমপক্ষে চারজন মারা গেছেন৷ জেলেনস্কির মন্তব্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে ক্রেমলিনের মুখপাত্র জানান, রাশিয়া ‘‘কখনও আন্তর্জাতিক কনভেনশন লঙ্ঘন করেনি৷’’ ছবিতে ১৯৪৫ সালে ফসফরাস বোমার ব্যবহার দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: United Archives International/imago images
জ্যাভলিন মিসাইল
যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এই অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল ব্যবহার করছে ইউক্রেন৷ পশ্চিমা দেশগুলো এসব তাদের সরবরাহ করেছে৷ গত ডিসেম্বরের ছবিতে জ্যাভলিনসহ ইউক্রেনের সেনাদের দেখা যাচ্ছে৷
এটি একটি অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট মিসাইল৷ এটিও পশ্চিমের কাছ থেকে পেয়েছে ইউক্রেন৷
ছবি: LEILA GORCHEV/AFP/Getty Images
বায়রাকতার ড্রোন
যুদ্ধ শুরুর আগে ইউক্রেনকে এই ড্রোন দিয়েছিল তুরস্ক৷ এটি ব্যবহার করে রাশিয়ার মিলিটারি কনভয়ের উপর হামলার ভিডিও প্রকাশ করেছে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী৷
ছবি: Emrah Yorulmaz/AA/picture alliance
ক্ষয়ক্ষতির হিসাব
ওরিক্স মিলিটারি অ্যানালিসিস ব্লগের তথ্য উল্লেখ করে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) পর্যন্ত রাশিয়ার ৩১৮টি ট্যাঙ্ক ধ্বংস হয়েছে কিংবা সেনারা ফেলে পালিয়ে গেছেন৷ এছাড়া পাঁচশর বেশি সাঁজোয়া যান, ১৬টি ফাইটার জেট, ৩৫টি হেলিকপ্টার ও নৌবাহিনীর দুটি জাহাজ ধ্বংস হয়েছে বলে জানিয়েছে ওরিক্স৷ আর ইউক্রেন হারিয়েছে ৭৯টি ট্যাঙ্ক, প্রায় ২০০টি সাঁজোয়া যান, ১২টি জেট ও ১৩টি জাহাজ৷