দীর্ঘদিন ধরে বেলারুশের সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালাচ্ছিলেন ওই কর্মী। ইউক্রেনের পার্ক থেকে তার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
ভিতালি শিশোভ। ২৬ বছরের এই সমাজকর্মী কিয়েভে সকালবেলা দৌড়তে বেরিয়েছিলেন। তারপর আর ফেরেননি। তার বান্ধবী কিয়েভ পুলিশের কাছে মিসিং ডায়েরি করেন। পুলিশ তদন্তে নেমে কিয়েভের একটি পার্ক থেকে ভিতালির দেহ উদ্ধার করে। তার দেহটি গাছে ঝুলছিল।
আপাতদৃষ্টিতে বিষয়টিকে আত্মহত্যা বলে মনে হলেও পুলিশ এবং ভিতালির সংগঠনের অনুমান এটি খুনের ঘটনা। ভিতালিকে মেরে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এবং এর পিছনে বেলারুশের প্রশাসনের মদত আছে। কারণ, কয়েকদিন ধরেই ভিতালি বলছিলেন, কেউ বা কারা তাকে অনুসরণ করছে। বেলারুশে ভিতালির বন্ধুরাও তাকে সাবধান করেছিলেন।
যে কারণে শিরোনামে বেলারুশ
ইউরোপের বেলারুশে টানা ২৬ বছর ধরে ক্ষমতায় আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো৷ এখন কেন শিরোনামে এই রাষ্ট্রনায়ক, জানুন ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/B. Zawrzel
লুকাশেঙ্কোর রাজনীতিতে প্রবেশ
সাবেক সোভিয়েত সামরিক বাহিনীর সাথে যুক্ত থাকা আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো ১৯৯৪ সালের প্রথম নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হিসাবে ক্ষমতায় আসেন৷ ৪৫ শতাংশের ভোট পেয়ে নির্বাচিত হবার পর থেকেই লুকাশেঙ্কো বেলারুশের নীতিকে রাশিয়ার নিকটবর্তী করে তোলেন৷ ১৯৯৬ সালে ১৯৯জন সংসদ সদস্য সংবিধান বিরোধিতার দায়ে লুকাশেঙ্কোর অপসারণের দাবি তোলেন৷ কিন্তু ক্ষমতাচ্যুত করা যায়নি তাঁকে৷
ছবি: Reuters/M. Guchek
ক্ষমতা ধরে রাখা
১৯৯৬ সালে অপসারণের দাবির প্রেক্ষাপটে আয়োজন করা হয় একটি গণভোটের৷ সেখানে দেখা যায়, বেলারুশের জনতা বিপুলভাবে লুকাশেঙ্কোর পক্ষে রায় দিয়েছেন, যদিও এই গণভোটকে স্বীকৃতি দেয়নি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ৷ ২০০৪ সালে প্রেসিডেন্টের মেয়াদ বাড়ানোর কথা তোলেন তিনি, যা আবার গণভোটে ৭৯ শতাংশের সম্মতি পায়৷ এই ভোটকেও মান্যতা দেয়নি পশ্চিমা বিশ্ব৷
ছবি: Reuters/Y. Yerchak
বেলারুশ ও লুকাশেঙ্কো
লুকাশেঙ্কোর আমলে বেলারুশের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে চোখে পড়বার মতো, যদিও বিশেষজ্ঞদের মত, এই উন্নয়নের পেছনে বিরাট ভূমিকা পালন করেছে রাশিয়ার সাথে তাদের নিবিড় সম্পর্ক৷ রাশিয়া থেকে বাজারদরের চেয়ে সস্তায় তেল কিনে ইউরোপের অন্যান্য দেশে যথেষ্ট লাভ রেখে বিক্রি করতে পারা বেলারুশের অর্থনীতির মূল চালক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
রাশিয়া ছাড়াও চীন, ভেনেজুয়েলা, ইরান, পাকিস্তানের সাথে সুসম্পর্ক রয়েছে বেলারুশের৷ কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর সাথে লুকাশেঙ্কোর সম্পর্কে উন্নতি এই মুহূর্তে হচ্ছে না বলে বিশেষজ্ঞদের মত৷ বিশেষ করে, লুকাশেঙ্কো ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের এই দুই অঞ্চলে চলাফেরা করার ওপর বিধিনিষেধ থাকায় এমনটা হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/RIA Novosti
‘ইউরোপের শেষ স্বৈরাচারী’
সাবেক জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী গুইডো ভেস্টারভাইলে ২০১২ সালে লুকাশেঙ্কোকে ‘ইউরোপের শেষ স্বৈরাচারী’ আখ্যা দেন৷ বেলারুশে তাঁর শাসনকালে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রেক্ষিতে এমনটা বলেন তিনি৷ উত্তরে লুকাশেঙ্কোর ব্যক্তিগত জীবনের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘‘(গুইডোর মতো) সমকামী হবার চেয়ে স্বৈরাচারী হওয়া ভালো’’৷
ছবি: Reuters/V. Ogirenko
বর্তমান বিতর্ক
১৯৯৪ সাল থেকে একটানা ২৬ বছর ধরে ক্ষমতায়৷ সব নির্বাচনে তিনিই বিপুলভাবে জয়ী হন৷ কিন্তু ২০২০ সালের সর্বশেষ নির্বাচনে পুনর্নির্বাচিত হবার পর বেলারুশজুড়ে নেমেছে প্রতিবাদের ঢল৷ ব্যাপক দুর্নীতি করে ক্ষমতায় লুকাশেঙ্কো - এমনটা মনে করছে ইইউ, অ্যামেরিকা, যুক্তরাজ্য ও ক্যানাডার পাশাপাশি বেলারুশের জনতাও৷ বেশ কিছু দেশ ইতিমধ্যেই লুকাশেঙ্কোকে বেলারুশের সাবেক রাষ্ট্রপতি বললেও পদ ছাড়ার কোনো কথা তিনি এখনও বলছেন না৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/B. Zawrzel
6 ছবি1 | 6
২০২০ সালে বেলারুশের নির্বাচন নিয়ে দেশের ভিতর বিপুল অশান্তি শুরু হয়। দেশের জনগণের একটি বড় অংশ এবং বিরোধী রাজনীতিকরা দাবি করেন, ভোটে বিপুল কারচুপি করে আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো ক্ষমতায় এসেছেন। তাকে অপসরণ করতে বিপুল আন্দোলন শুরু হয়। পাল্টা চাপ তৈরি করে প্রশাসন। প্রতিবাদীদের দমন করতে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়। জেলে ঢোকানো হয় বহু বিক্ষোভকারীকে। বিরোধী নেত্রী দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। বহু সমাজকর্মী এবং আন্দোলনকারী পালিয়ে পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া এবং ইউক্রেনে আশ্রয় নেন। ভিতালি আশ্রয় নিয়েছিলেন ইউক্রেনে। সেখানে তিনি নতুন একটি সংগঠন তৈরি করেন। যার নাম বেলারুশিয়ান হাউস ইন ইউক্রেন। সংস্থাটির মূল কাজ ছিল দেশ থেকে পালাতে চাওয়া প্রতিবাদকারীদের ইউক্রেনে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া এবং আইনি সাহায্য দেওয়া। বিরোধীনেত্রীর সঙ্গেও তার সম্পর্ক ভালো ছিল। বস্তুত, ভিতালির মৃত্যুসংবাদ শুনে তিনি টুইটও করেছেন।
ভিতালির বন্ধুরা আগেই তাকে সতর্ক করে বলেছিলেন, বেলারুশের প্রশাসন ভিতালিকে নজরবন্দি করেছে। গত কয়েকদিন ধরে ভিতালিও বলছিলেন, তিনি রাস্তায় বেরোলেই কেউ বা কারা তাকে ফলো করে।
স্বাভাবিক ভাবেই ভিতালির বন্ধুদের দাবি, তাকে হত্যা করা হয়েছে। একটি বিবৃতিতে তারা জানিয়েছেন, ভিতালির কাজ তারা এগিয়ে নিয়ে যাবেন। পাশাপাশি ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত যাতে হয়, সে দিকে তারা লক্ষ্য রাখবেন। বেলারুশ প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চায়নি।