এ মন্তব্য করেছেন খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, এস্টোনিয়ার রাজধানী টালিন থেকে৷ পরে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট পেট্রো পোরোশেঙ্কোর অফিস থেকে ‘‘স্থায়ী যুদ্ধবিরতির'' বদলে ‘‘যুদ্ধবিরতির ব্যবস্থার'' কথা বলা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
রাশিয়া বলছে, তারা এই সংঘাতে কোনো পক্ষ নয়৷ বুধবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেট্রো পোরোশেঙ্কোর প্রেস অফিস থেকে ঘোষণা করা হয় যে, পোরোশেঙ্কো এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন পূর্ব ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি সম্পর্কে একমত হয়েছেন৷ পরে প্রেস অফিস থেকেই ঐ বিবৃতি সংশোধন করে বলা হয়, উভয় নেতা একটি ‘‘যুদ্ধবিরতি ব্যবস্থা'' সম্পর্কে একমত হয়েছেন৷
ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির খবরে প্রথমেই যাঁদের কান খাড়া হয়েছে, তারা হলেন ফাটকা ব্যবসায়ীরা৷ বিশ্বের শেয়ার বাজারগুলিতে শেয়ারের দাম বেশ কিছুটা চড়ে গেছে৷ বিশেষ করে রাশিয়ায় শেয়ার বাজার চড়ে চার শতাংশের বেশি: ডলারের হিসেবে রুবলের বিনিময়মূল্য বাড়ে এক ধাক্কায় দেড় শতাংশ৷ ইউরোপে এফটিএসই, যুক্তরাষ্ট্রে ওয়াল স্ট্রিট, জাপানে নিকেই – সর্বত্রই হাওয়া গরম: যুদ্ধের ভীতি কেটেছে, এবার ব্যবসা-বাণিজ্য আবার চলবে পুরোদমে, কোনোরকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ছাড়াই৷
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এস্টোনিয়ার টালিনে এসেছিলেন ইউরোপের পূর্ব প্রান্তে রাশিয়ার সীমান্তবর্তী দেশগুলির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র তথা ন্যাটোর সংহতি প্রকাশ করতে – এমনকি এস্টোনিয়ার আমারিয়া বিমানঘাঁটিতে আরো বেশি মার্কিন জঙ্গিবিমান স্থাপনের সম্ভাবনার কথাও বলেছেন তিনি৷ ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য হলো, রাশিয়াকে ‘‘ভান করা'' বন্ধ করতে হবে যে, তারা এই সংঘাতে সক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট নয়৷ সেই সঙ্গে রাশিয়াকে ইউক্রেনে সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র পাঠানো বন্ধ করতে হবে৷
ইউক্রেনে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব
তুমুল বিক্ষোভ চলছে ইউক্রেনে৷ সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ-র সঙ্গে একটি বাণিজ্য ও সহযোগিতা চুক্তি করতে অস্বীকৃতি জানানোর পর, রাস্তায় নেমে আসে বিরোধী দলের হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ সমর্থক৷
ছবি: Reuters
ইউরোপীয় ভবিষ্যতের জন্য লড়াই
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর সঙ্গে একটি বাণিজ্য ও সহযোগিতা চুক্তি করতে সরকার অস্বীকৃতি জানানোর পর থেকে ইউক্রেনে চলছে তুমুল বিক্ষোভ৷ বিক্ষোভকারীরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে সরে সরকারের রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা রুখতে বদ্ধপরিকর৷ দাবি আদায়ের লক্ষ্যে হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা নেমে এসেছে রাস্তায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সড়ক অবরোধ
সরকারি কর্মকর্তারা যাতে কার্যালয়ে যেতে না পারেন, সে জন্য কিয়েভের রাস্তা বন্ধ করে দিচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা৷ প্রচণ্ড শীতে রাতেও বিক্ষোভ জানাচ্ছেন বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা৷
ছবি: Reuters
ইনডিপেনডেন্ট স্কয়্যারে তাঁবুর শহর
কিয়েভের ইনডিপেনডেন্ট স্কয়্যারে এখন শত শত তাঁবু৷ শীতের কষ্ট সহ্য করে সেখানেই থাকছেন অনেকে৷ সারি সারি তাঁবু নয় বছর আগের কমলা বিপ্লবের কথা মনে করিয়ে দেয়৷সেবার কয়েক সপ্তাহ ধরে চলেছিল বিক্ষোভ৷ বিক্ষোভকারীরা এবারও শেষ দেখেই ঘরে ফিরতে চান৷
ছবি: DW/A. Sawizki
চা, কফি আর ইন্টারনেট
বিক্ষোভকারীদের সুবিধার্থে ক্যাফে আর বারগুলো থাকছে খোলা৷ শীতে জমে যাওয়ার উপক্রম হলেই তাঁরা পান করতে পারছেন চা, কফি কিংবা অন্য কোনো পানীয়৷ কোনো কোনো ক্যাফে আর বার-এ বিক্ষাভকারীদের থাকা এবং ওয়াইফাই-এ ইন্টারনেট ব্যবহারের ব্যবস্থাও রয়েছে৷
ছবি: DW/A. Sawizki
গীর্জায় আশ্রয়
সপ্তাহান্তে সবচেয়ে বেশি বিক্ষোভকারীর সমাবেশ হয়েছিল কিয়েভের সেইন্ট মাইকেল’স ক্যাথেড্রালের সামনে৷ সেখানেই রাত কাটিয়েছেন তাঁরা৷ অন্য গীর্জাগুলোও বিক্ষোভকারীদের আশ্রয় দেয়ার জন্য খোলা রাখা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কে বেশি আগ্রাসী?
বিক্ষোভকারী আর পুলিশের মধ্যে এখন ব্যাপক উত্তেজনা৷ পুলিশ সংসদ ভবনের সামনের রাস্তা মুক্ত করার চেষ্টা করায় শুরু হয়ে যায় সংঘর্ষ৷ সপ্তাহান্তের এ সংঘর্ষে অনেকে আহত হন৷
ছবি: Reuters
‘আর নয় পুলিশি সন্ত্রাস’
পুলিশের বাধার প্রতিবাদ জানাতে একসময় বিক্ষোভকারীরা হাতে তুলে নেন ব্যানার, সেখানে লেখা ছিল, ‘আর নয় পুলিশি সন্ত্রাস’, ‘নিরাপত্তা বাহিনী আমাদের পুতে ফেলবে৷’
ছবি: DW/L. Grischko
ন্যাটোর সমালোচনা
বিক্ষোভকারীদের ওপর সরকারের অতিরিক্ত বল প্রয়োগের সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছে ন্যাটো৷ রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ আবার সেই বিবৃতির সমালোচনা করে বলেছেন, ন্যাটোর বিবৃতি ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল৷ লাভরভ মনে করেন, বিক্ষোভকারীদের আগ্রাসী আচরণের মাত্রা না বুঝে এ বিবৃতি দেয়া হয়েছে৷
ছবি: GENYA SAVILOV/AFP/Getty Images
সরকারের অনাস্থা ভোট জয়
মিকোলা আজারভ সরকারের জনপ্রিয়তা অনেকটা কমে গেলেও সংসদে বিরোধী দলের তোলা অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে যে ভোটাভুটি হয়েছিল, তাতে তারা জয়ী হয়েছে৷ বিরোধী দল ২২৬ ভোট পেলে বিপদ হতো, কিন্তু সব মিলিয়ে ১৮৬ ভোট পাওয়ায় তাৎক্ষণিক বড় বিপর্যয় এড়াতে পেরেছে সরকার৷
ছবি: Reuters
শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রয়াস
কাউন্সিল অফ ইউরোপ, অর্থাৎ ইউরোপীয় পরিষদ এখন ইউক্রেনের ইউরোপপন্থি বিরোধী দল এবং সরকারের মধ্যে শান্তি ফেরানোর জন্য মধ্যস্ততা করার চেষ্টা করছে৷
ছবি: Reuters
10 ছবি1 | 10
এক্ষেত্রে রাশিয়ার মনোভাব যা-ই হোক না কেন, ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেস্কভের বিবৃতি অনুযায়ী রুশ এবং ইউক্রেনীয় নেতারা পূর্ব ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির জন্য আবশ্যক পদক্ষেপ সম্পর্কে একমত হয়েছেন বটে, কিন্তু মস্কো কোনো চুক্তিতে অংশ নিতে পারবে না, কেননা রাশিয়া এই সংঘাতে সংশ্লিষ্ট নয়৷ বাকি থাকছে পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা৷
তাদের নেতা, ডনবাস অঞ্চলের স্বঘোষিত দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিকের উপ-প্রধানমন্ত্রী ভ্লাদিমির আন্তিয়ুফেয়েভ বলেছেন, ‘‘আমাদের রাজ্যাঞ্চল'' থেকে ইউক্রেনীয় সৈন্যদের পশ্চাদপসারণ হলো শান্তির মুখ্য পূর্বশর্ত৷ আন্তিয়ুফেয়েভ রয়টার্স সংবাদ সংস্থাকে টেলিফোনে বলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধবিরতির কথাটা একটা ‘‘প্ররোচনা'' ছাড়া আর কিছু নয়, কেননা রাশিয়া এই সংঘাতে কোনো পক্ষ নয়৷