সোমবার সারা রাত ধরে ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে বিমান হামলা চালায় রাশিয়া। কিয়েভে এখনো সতর্কতা জারি।
বিজ্ঞাপন
এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের সাহায্যে কিয়েভ রাশিয়ার হামলা প্রতিহত করেছে। কিয়েভে সারা রাত ধরে একের পর এক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। বেসামরিক মানুষ মাটির তলায় সাবওয়ে স্টেশনে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।
কিয়েভের মেয়র জানিয়েছেন, রাজধানী ছাড়াও ইউক্রেনের অন্যান্য শহরে একইভাবে আক্রমণ চালিয়েছে রাশিয়া। বিমান হামলা ছাড়াও দূরপাল্লার রকেটও ছোঁড়া হয়েছে। তবে ইউক্রেন এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের সাহায্যে হামলা অনেকটাই প্রতিহ করতে পেরেছে। মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত আক্রমণ চলে বলে জানানো হয়েছে।
যখন সাবওয়েই তাদের ঘর, স্কুল এবং বিনোদনকেন্দ্র
ইউক্রেন যুদ্ধ বদলে দিয়েছে তাদের জীবন৷ সব সময় যেন প্রাণ হাতে নিয়ে বাঁচতে হয় তাদের৷ যেখানে যখন রাশিয়ার হামলা সেখানে তখনই হতে পারে জীবনাবসান৷ তবুও কাটছে জীবন৷ সাবওয়েতেও চলছে বসবাস, লেখাপড়া এবং বিনোদন৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Viacheslav Ratynskyi/REUTERS
আকস্মিক হামলা
রাশিয়ার মিসাইল বা বোমা হামলার বিভীষিকা নেমে আসে যখন তখন৷ তাই ইউক্রেনের মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে যাবার প্রস্তুতি রাখতে হয় সব সময়৷ রাজধানী কিয়েভেও জীবন চলছে একই নিয়মে৷
ছবি: Valentyn Ogirenko/REUTERS
এসকেলেটর যেন বিশ্রামাগার
প্রাণভয়ে মেট্রোস্টেশনে আশ্রয় নিয়েছেন তারা৷ তখন এসকেলেটরের সিঁড়িই তাদের আশ্রয়স্থল, সেখানে কেটে যাচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা৷ মিসাইল বা বোমা হামলার বিকট শব্দ না থামা পর্যন্ত কারো মেট্রো স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার উপায় নেই৷ গত ২৯ মে-র তোলা ছবি৷
ছবি: Alina Smutko/REUTERS
শত শত মানুষের ভিড়
এই ছবিটিও গত ২৯ মে-র৷ কিয়েভে তখন আবার শুরু হয়েছে রাশিয়ার বিমান হামলা৷ মেট্রো স্টেশনটিতে তাই শত শত মানুষের ভিড়৷
ছবি: Alina Smutko/REUTERS
সৈনিকের অসহায়ত্ব
হঠাৎ আকাশ থেকে বোমা হামলা শুরু হলে সৈন্যদেরও বিশেষ কিছু করার থাকে না৷ তাদেরও তখন ছুটতে হয় নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে৷ ২৯ মে-র ছবিটিতে ধরা পড়েছে এক মেট্রোস্টেশনে ইউক্রেনের দুই সেনা সদস্যের অসহায়ত্ব৷
ছবি: Alina Smutko/REUTERS
বাবা-মেয়ে
এক সেনাসদস্য মেয়েকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন মেট্রোস্টেশনে৷ বাবার কাছে বসে মেয়েটি মন দিয়েছে ট্যাবে৷ বাবা নিজের টুপি পরিয়ে দিয়েছেন মেয়েকে৷ গত ৯ মার্চের ছবি৷
ছবি: Alina Smutko/REUTERS
অস্থায়ী স্কুল
রাশিয়ার হামলা শুরু হলে কখনো কখনো মেট্রোস্টেশন যে অস্থায়ী স্কুলের রূপ নেয়, ওপরের ছবিটি তার প্রমাণ৷ স্কুলের শিক্ষার্থীদের সেখানেই ক্লাস নিচ্ছেন এক শিক্ষক৷
ছবি: Viacheslav Ratynskyi/REUTERS
সাবওয়েতে কনসার্ট!
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে একটা সময় পর্যন্ত মেট্রো রেল স্টেশনে আশ্রয় নেয়া মানুষদের প্রতিটি মুহূর্ত কাটতো মহাতঙ্কে৷ তবে ধীরে ধীরে যুদ্ধের এই নির্মম বাস্তবতা মানতে শুরু করেন তারা৷ বিশেষ করে এক বছর আগে রক ব্যান্ড ইউ-টু যখন সেখানে এসে কনসার্ট করলো, ইউক্রেনবাসীরাও যেন বুঝতে শুরু করলেন যুদ্ধপরিস্থিতিতে সব সময় সব পরিস্থিতেই মানিয়ে নিতে হবে নিজেদের৷ ওপরের ছবিতে নেচে নেচে গাইছেন ইউ-টু তারকা বোনো৷
ছবি: VALENTYN OGIRENKO/REUTERS
শিল্পী-সেনার দ্বৈত সংগীত
ইউ-টু তারকা বোনোর সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে গাইছেন ইউক্রেনের এক সেনা সদস্য৷ কিয়েভের এক মেট্রোস্টেশনের এই কনসার্টের ছবিটি ২০২২ সালের ৮ মে তোলা৷
ছবি: VALENTYN OGIRENKO/REUTERS
মগ্ন শ্রোতা
পল ডেভিড হিউসন, অর্থাৎ ইউ-টু রক ব্যান্ডের ভোকালিস্ট বোনোর গান মন দিয়ে শুনছেন কিয়েভের কয়েক শ মানুষ৷ গত বছরের ৮ মে-র ছবি৷
ছবি: VALENTYN OGIRENKO/REUTERS
সাবওয়েতে ভাষাশিক্ষা
বিমান হামলা সেই কখন শুরু হয়েছে, থামার কোনো লক্ষণই নেই৷ তাই এক শিক্ষক মেট্রোরেলেই শুরু করে দিয়েছেন ভাষা শেখানোর ক্লাস৷ গত ৩ মে-র ছবি৷
ছবি: Viacheslav Ratynskyi/REUTERS
10 ছবি1 | 10
বাখমুত কার দখলে
এদিকে সোমবার রাতে দেশের সেনাদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি বলেছেন, সেনারা যেভাবে লড়াই করছে, তা এক কথায় অভূতপূর্ব। একের পর এক দখল হয়ে যাওয়া জায়গা তারা পুনর্দখল করছে। প্রাণের বিনিময়ে তারা দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে। বাখমুত শহরটি তারা পুনর্দখল করতে পেরেছে। বস্তুত, এই বাখমুতে গত কয়েকমাস ধরে টানা লড়াই হয়েছে। শেষপর্যন্ত শহরের দখল নিয়েছিল রাশিয়ার অসরকারি সেনাদল ভাগনার। ১ জুন ভাগনার রাশিয়ার সেনার হাতে ভাগনার তুলে দিয়ে ফ্রন্টলাইন থেকে চলে যায়। জেলেনস্কির দাবি, সেই বাখমুত সোমবার ইউক্রেনের সেনা পুনর্দখল করেছে।
এবার মস্কোর আবাসিক এলাকাতেও ড্রোন হামলা
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো মস্কোর আবাসিক এলাকায় ড্রোন হামলা হয়েছে৷ ইউক্রেন এই হামলা চালায়নি বলে দাবি করেছে৷ পুটিন বলছেন, এই হামলার মাধ্যমে রাশিয়াকে ভয় দেখানো ও উসকানোর চেষ্টা করা হয়েছে৷
ছবি: Maxim Shemetov/REUTERS
প্রথমবার হামলা
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো মস্কোর আবাসিক এলাকায় ড্রোন হামলা হয়েছে৷ তবে এতে কেউ মারাত্মকভাবে আহত হননি বলে রুশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন৷ তবে কয়েকটি আবাসিক ভবনে ‘সামান্য’ ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তারা৷ এর আগে চলতি মাসে ক্রেমলিনের উপর দুটো ড্রোন রুখে দেয়া হয়েছিল৷
ছবি: Kirill Kudryavtsev/AFP/Getty Images
৮টি ড্রোন
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, মস্কোতে আটটি ড্রোন দিয়ে হামলা করা হয়৷ এর মধ্যে কিছু ভূপতিত ও কিছু ড্রোনের দিক পরিবর্তন করে দেয়া হয়৷ অভিজাত এলাকা দক্ষিণ-পশ্চিম মস্কোর দুটি উঁচু আবাসিক ভবনে দুটি ড্রোন ভেঙে পড়ে৷ আরেকটি, অন্য এলাকার এক ভবনে কিছুটা ক্ষতি করেছে৷ বাকিগুলো মস্কোর বাইরে পড়েছে৷ অবশ্য রাশিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কিত টেলিগ্রাম চ্যানেল ‘বাজা’য় ২৫টির বেশি ড্রোনের কথা বলা হয়েছে৷
ছবি: Lev Sergeev/REUTERS
অকল্পনীয়
মস্কোর স্থানীয় কিছু ব্যক্তি বলছেন, তারা কখনও ভাবেননি যে রাশিয়ার রাজধানীতে এমন হামলা হতে পারে৷ মস্কোর দক্ষিণ-পশ্চিমের পেনশনভোগী তাতিয়ানা কালিনিনা এএফপিকে বলেন, ‘‘আমি ভেবেছিলাম এসব অনেক দূরে ঘটে৷ এগুলো আমাদের পর্যন্ত আসবে না৷ কিন্তু এখন হঠাৎ করেই এগুলো এত কাছে চলে এসেছে৷’’ ছবিতে মস্কোতে হামলা করা একটি ড্রোনের অংশ দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Alexander Shcherbak/Tass/picture alliance
ইউক্রেনের অস্বীকার
ইউক্রেন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ঘনিষ্ট কর্মকর্তা মিখাইলো পোডোলিয়াক মস্কোয় ড্রোন হামলার সঙ্গে কিয়েভের সরাসরি জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন৷ তবে ‘এমন ঘটনা প্রত্যক্ষ করে তারা আনন্দিত’ এবং ভবিষ্যতে এমন হামলা আরও হতে পারে বলে জানিয়েছেন৷ ছবিতে ড্রোন হামলার পর মস্কোর এক অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের বাইরে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Evgenia Novozhenina/REUTERS
রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন মঙ্গলবার বলেন, মস্কোতে ড্রোন হামলার মাধ্যমে রাশিয়াকে ভয় দেখানো ও উসকানোর চেষ্টা করা হয়েছে৷ মস্কোর আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী করার অঙ্গীকার করেন তিনি৷ এদিকে, ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ বুধবার বলেন, মস্কোতে ড্রোন হামলা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ‘নিন্দা না জানানোর’ বিষয়টি রাশিয়া খেয়াল করেছে৷
ছবি: Gavriil Grigorovvia/Kremlin/Sputnik via REUTERS
হোয়াইট হাউসের প্রতিক্রিয়া
মস্কোতে ড্রোন হামলা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে জানিয়ে হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব কারিন জ্য-পিয়ের বলেন, ‘‘আমরা রাশিয়ার ভেতরে হামলা সমর্থন করি না৷ দ্যাটস ইট৷ পিরিয়ড৷’’ ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা দেয়া দেশগুলোর অন্যতম যুক্তরাষ্ট্র৷ তবে তাদের শর্ত হচ্ছে, এগুলো শুধু নিজেদের প্রতিরক্ষার কাজে এবং রাশিয়ার দখল করা এলাকা মুক্ত করতে ব্যবহার করা যাবে৷
ছবি: Mandel Ngan/AFP
কিয়েভে টানা তৃতীয় দিন হামলা
মঙ্গলবার কিয়েভে রাশিয়া টানা তৃতীয় দিনের মতো ড্রোন ও মিসাইল হামলা চালিয়েছে৷ ইউক্রেন বলছে, রাশিয়ার নিক্ষেপ করা ৩১টির মধ্যে ২৯টি ড্রোন ভূপতিত করা হয়েছে৷ ছবিতে মঙ্গলবার কিয়েভে রাশিয়ার ড্রোন হামলার পর একটি ভবনে আগুন দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Kyiv City Military Administration/Handout/REUTERS
রাশিয়ার তেল শোধনাগারে ড্রোন হামলা
রাশিয়ার কর্মকর্তারা বলছেন, কৃষ্ণসাগরের পাশে অবস্থিত তেল রপ্তানি করতে ব্যবহৃত দেশটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ টার্মিনাল নভোরোসিস্ক বন্দর থেকে ৬৫-৮০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত দুটি তেল শোধনাগারে বুধবার ড্রোন হামলা হয়েছে৷ হামলার কারণে একটিতে আগুন ধরেছে, অন্যটিতে কোনো ক্ষতি হয়নি৷ রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা রিয়া এই তথ্য জানিয়েছে৷ মস্কোয় ড্রোন হামলার পরদিন এই হামলা হলো৷ উপরের ছবিটি ফাইল থেকে নেয়া৷
এদিকে রাশিয়ার সেনা সোমবার দাবি করেছে, ইউক্রেন সোমবার তাদের অঞ্চলে ঢুকে লড়াইয়ের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু রাশিয়া তা প্রতিহত করেছে। ইউক্রেনের বিপুল পরিমাণ সেনা নিহত হয়েছে। তাদের ট্যাঙ্কও ধ্বংস হয়েছে বলে দাবি করেছে রাশিয়া। যদিও ইউক্রেন একথা মানতে রাজি হয়নি। তবে ইউক্রেনের সেনা যে ফ্রন্ট লাইন থেকে সামনের দিকে এগতে শুরু করেছে, তা মেনে নিয়েছেন জেলেনস্কি।
ইউক্রেনপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদী
রাশিয়ার ডুমার সাবেক প্রতিনিধি এবং রাজনীতিক ইলাইয়া পোনোমারেভ এখন ইউক্রেনে বসবাস করেন। দ্য ফ্রিডম অফ রাশিয়া লিজিয়ন মিলিশিয়া চালান তিনি। ডিডাব্লিউকে তিনি জানিয়েছেন, বেলগোরোদ অঞ্চলের রাজধানী শেবেকিনো এখন তাদের দখলে। তিনি জানিয়েছেন, এই লড়াই ইউক্রেনের সেনা তাদের পাশে ছিল না। তারা নিজেদের শক্তিতেই রাশিয়ার সঙ্গে লড়াই করে ওই অঞ্চলে দখল করেছেন। সীমান্তবর্তী এলাকাটি এখন তাদের দখলে। পোনোমারেভের দাবি, তারা যে অস্ত্র ব্যবহার করেছে, তা অধিকাংশই রাশিয়ার। তবে মার্কিন অস্ত্র সামান্য কিছু আছে বলে স্বীকার করেছেন তিনি। তবে ইউক্রেনের সেনা তাদের সাহায্য করছে না বলেই দাবি করেছেন এই রাজনীতিক।