1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
রাজনীতিমলডোভা

ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ: কী প্রভাব মলডোভায়?

১২ মার্চ ২০২৩

অভ্যুত্থানের ব্যর্থ চেষ্টা, ভুয়া বোমাতঙ্ক, ইন্টারনেট হ্যাক, সেনাবাহিনীতে ভুয়া নিয়োগের জন্য ফোন, সরকারবিরোধী প্রতিবাদ-গত এক বছরে এ সবই দেখেছে মলডোভা।

ইউক্রেন নিয়ে মস্কো ও পশ্চিমের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে, আঁচ পড়েছে মলডোভাতেও।
ইউক্রেন নিয়ে মস্কো ও পশ্চিমের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে, আঁচ পড়েছে মলডোভাতেও।ছবি: picture-alliance/dpa/D. Doru

দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আনা রেভেঙ্কো রয়টার্সকে বলেছেন, "গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে একাধিকবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত হুমকি দেয়া হয়েছে।"

সংকটের একটি তালিকা দিয়ে পশ্চিমাপন্থি সরকারের মন্ত্রী বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর থেকে মলডোভা সংকটে জর্জরিত।

এই ছোট ইউরোপীয় দেশটি একসময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের দখলে ছিল। এটি একটি অনন্য ভূ-রাজনৈতিক আধার বললে ভুল হবে না।

মলডোভার একেবারে লাগোয়া এলাকাই হলো ট্রান্সনিস্ট্রিয়া। ইউক্রেনের পূর্ব সীমান্ত বরাবর একটি প্রসারিত এই ভূমিখণ্ডটি রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং রুশ সেনাবাহিনী ওই এলাকা ঘিরে রাখে। দেশটিতে গাগাউজিয়ার আধা-স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলও রয়েছে, সেটিও প্রধানত রুশপন্থি।

মলডোভার কর্মকর্তারা মস্কোর বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার চাপে রয়েছেন বলে অভিযোগ। মলডোভার প্রেসিডেন্ট মাইয়া সানডু কয়েকবার অভিযোগ করেছেন রাশিয়া তার সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র করছে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে মলডোভার অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা নষ্ট করে দিচ্ছে।

রেভেঙ্কো বলেছিলেন, এটি একটি "তথ্য যুদ্ধ"। তার কথায়, "এটি জনসংখ্যার মনস্তাত্ত্বিক স্থিতিস্থাপকতায় মারাত্মক চাপ দেয়।''

যদিও মলডোভা সরকার এর কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি। রয়টার্স স্বাধীনভাবে তার বিষয়টি যাচাই করতে পারেনি। এই অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগকে অস্বীকার করেছে ক্রেমলিন। এই নিবন্ধের জন্য তারা কোনো মন্তব্য করতে চায়নি।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ গত মাসে বলেন, "মলদোভান নেতৃত্ব সবসময় রুশবিরোধী সবকিছুর উপর নজর রাখে। তারা রুশ-বিরোধী হিস্টিরিয়ায় ভুগছে।"

এর মধ্যে ইউক্রেন এবং মলদোভার মাঝে অবস্থিত একটি দেশ রোমানিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ফলে মলদোভার চিন্তা আরো বেড়েছে।

চার শতাধিক বোমার হুমকি

গত মাসে মলডোভা কর্তৃপক্ষ অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে বলেছিল পরিকল্পনাটি ছিল বহিরাগত আন্দোলনকারীদের। আন্দোলনকারীররা রাশিয়া এবং অন্যান্য দেশ থেকে মলডোভা প্রবেশ করার চেষ্টা করছিল বলে অভিযোগ আনা হয়। বলা হয়, তারা সহিংস সংঘর্ষ উসকে দিতে চাইছে। সহিংসার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে কর্মকর্তারা গত সপ্তাহে অজ্ঞাতপরিচয় দুই জন ব্যক্তিকে বহিষ্কার করেছে। যদিও তাদের পরিকল্পনা সম্পর্কে বিশদে জানানো হয়নি।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ভালেরিউ মিইজা বলেন, ''ষড়যন্ত্রের উদ্দেশ্য ছিল দেশের মনোবলে আঘাত দেওয়া, সরকারকে উৎখাত করা। আমরা এটি বিশ্বাস করি। মনোস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের একটি অংশ।"

বোমা হামলার ভুয়া হুমকিমলডোভার দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। সরকারের দাবি, গত গ্রীষ্ম থেকে ফোন বা ই-মেলের মাধ্যমে ৪০০-র বেশি হুমকি পেয়েছে। প্রায় নয় হাজার পুলিশ কর্তাকে এই নিয়ে তদন্ত করতে হয়েছে।

চিসিনাউ বিমানবন্দর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আদালত, হাসপাতাল এবং শপিং সেন্টারগুলিতে বোমা রয়েছে, এ জাতীয় ভুয়া হুমকি দেয়া হয় বলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

মলডোভা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ধারাবাহিকভাবে সাইবার হানায় গত বছর কিছু সরকারি ওয়েবসাইট সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার ফোন হ্যাক করা হয়েছে।

ভুয়া কনস্ক্রিপশন নোটিশ

ইউক্রেন নিয়ে মস্কো ও পশ্চিমের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। আঁচ পড়েছে মলডোভাতেও।

ইউক্রেনের পক্ষ নেওয়ার জন্য প্রধান বিরোধী দল সোর পার্টি সান্দুর তীব্র নিন্দা করেছে। নতুন নির্বাচনের দাবিতে ছয় লাখ সই সংগ্রহ করা হয়েছে।

গত সপ্তাহে মলডোভার রাজধানীতে একটি বিক্ষোভের সময় উপস্থিত ছিল প্রায় দুই হাজার ব্যক্তি। মেরিনা টাবার নামে এক আইনপ্রণেতা সান্দুবিরোধী বক্তব্য রাখেন।

তিনি জনতাকে বলেন, "সান্দু আমাদের দেশকে যুদ্ধে জড়ানোর চেষ্টা করছেন। আমরা নিরপেক্ষ, শান্তিপ্রিয় দেশ।"

জনতা স্লোগান দেয়, "মাইয়া সান্দু নিপাত যাক! একনায়কতন্ত্র নিপাত যাক!"

সান্দু সরকারের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা যে কোন মূল্যে সংঘাত এড়াতে চান। তাদের অভিযোগ, সরকার বিরোধীরা ভুয়া প্রচারণা চালাচ্ছে। আন্দোলনকারীরা সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক নিয়োগের ভুয়া বিজ্ঞপ্তি প্রচার করছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। বিশেষ করে টেলিগ্রাম মেসেজিং সার্ভিসে উদ্বেগ ছড়িয়ে দিতে চাইছে। মলডোভাকে নিয়ে ভুল বার্তা দিতে চাইছে

ট্রান্সনিস্ট্রিয়াতে রুশ সেনা

আনুমানিক দেড় হাজার রুশ সেনা মোতায়েন রয়েছে ট্রান্সনিস্ট্রিয়াতে। তাদের অধিকাংশই স্থানীয় ট্রান্সনিস্ট্রিয়ান। রাশিয়ান পাসপোর্ট সহ স্থায়ী নিয়োগ দেয়া হয়েছে তাদের।

মলডোভার প্রধানমন্ত্রী ডরিন রেসেন বলেন, রুশ সেনাদের এই অঞ্চল থেকে বহিষ্কার করা উচিত। এদিকে মস্কোর হুঁশিয়ারি, এই সেনাদের উপর যে কোনো হামলাকে রাশিয়াবিরোধী হামলা হিসাবে বিবেচনা করা হবে।

মলডোভা সরকার একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্যমূলক আইনের মুখোমুখি। ট্রান্সনিস্ট্রিয়ায় রয়েছে কুসিউরগান বিদ্যুৎ কেন্দ্র। যা মলডোভার বিদ্যুৎ সরবরাহ করে এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদেরও অনেকভাবে অযাচিত সুবিধা দেয়। ফলে দুই পক্ষের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরতার চক্র রয়েছে বলা যায়।

অন্যদিকে, গাগাউজিয়ায় অধিকাংশ মানুষ রুশ ভাষার পাশাপাশি তুর্কি-সংযুক্ত গাগাউজ ভাষায় কথা বলে। ভ্লাদিমির লেনিনের একটি মূর্তি পার্লামেন্টের সামনে রয়েছে। রুশ বিরোধিতা নিয়ে সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে চায় যেন সেটি।

থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক ওয়াচডগ জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরু হতেই পুতিনের প্রতি মলডোভাদের আস্থা ৬০% (২০২০ সালের জানুয়ারি) থেকে কমে ৩৫%-এ এসে দাঁড়িয়েছে। অথচ গাগাউজিয়ায় সেই আস্থা এখনো ৯০%।

গাগাউজিয়ার পাবলিক টেলিভিশনের সাংবাদিক ভ্যালেন্টিনা কোরোলেক বলেন, "আমাদের শিকড়গুলো পরস্পর জড়িয়ে আছে। মলদোভার বাকি অংশের থেকে এখানকার লোকেরা রুশ আগ্রাসনকে আলাদাভাবে দেখেছে। আমরা সোভিয়েত ইউনিয়নে জন্মেছি। আমরা তাদের গান, শিল্প এসবের মাঝে বড় হয়েছি।''

আরকেসি/এসিবি (রয়টার্স)

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ