রাশিয়ার একটি আদালত তার রায়ে মেনে নিয়েছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনা আছে। চরম প্রতিক্রিয়া ইউক্রেনের।
বিজ্ঞাপন
রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে ইউক্রেনের ভিতরে রাশিয়ার সেনা আছে। নিয়মিত সেই সেনার কাছে খাবার যায়। একটি মামলার বিচার করতে গিয়ে সরাসরি এ কথা মেনে নিয়েছে রাশিয়ার একটি আদালত। পরে ক্রেমলিন জানিয়েছে, আদালতের রায়ে 'ভুল' আছে। যে খাবারের কথা বলা হয়েছে, তা সেনার জন্য নয়, মানবিক কারণে ওই খাবার পাঠানো হয়।
মামলাটির সঙ্গে অবশ্য সাম্প্রতিককালে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। যে ব্যক্তি মামলা করেছেন, তিনি সেনা বাহিনীকে খাবার পাঠান। অর্থাৎ, কেটারার। সেনা অফিসারদের ঘুস দিয়ে তিনি এই ব্যবসা করছেন বলে অভিযোগ। সেই সূত্রেই মামলাটির শুনানি চলছিল। সেখানেই জানা যায়, রাশিয়া ইউক্রেন সীমান্তে দোনবাস অঞ্চলে রাশিয়ার সেনার জন্য খাবার যায়। এই অঞ্চলটি ইউক্রেনের মধ্যে পড়ে। বিচারকও তার রায়ে দোনবাসে খাবার যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। তারপরেই শুরু হয়েছে বিতর্ক।
ছবিতে রুশ-ইউক্রেন দ্বন্দ্ব
কের্শ প্রণালী থেকে তিন ইউক্রেনীয় জাহাজ আটকের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়েছে৷ এই দ্বন্দ্ব আর শুধু দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, ইউরোপ ছাড়িয়ে এর উত্তাপ ছুঁয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Volskii
যেভাবে শুরু
ছবিতে দেখা যাচ্ছে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডের সাথে ক্রাইমিয়া উপদ্বীপের সংযোগ স্থাপনকারী সেতুর ওপর রুশ জেট বিমান উড়ছে৷ ইউক্রেনের তিন কার্গো জাহাজ আটকের পর এভাবেই মহড়া দেয় রুশ বিমানবাহিনী৷
ছবি: Reuters/P. Rebrov
আটক জাহাজ
ইউক্রেনের জাহাজ তিনটি কৃষ্ণ সাগর থেকে কের্শ প্রণালী হয়ে আজভ সাগরে যাচ্ছিল৷ এক চুক্তি অনুযায়ী কের্শ প্রণালীতে রাশিয়া ও ইউক্রেন, দুই দেশেরই নিয়ন্ত্রণ রয়েছে৷ কিন্তু রাশিয়ার দাবি, বারবার সাবধান করা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক সীমা লঙ্ঘন করে রাশিয়ার সীমানায় ঢুকে পড়েছিল জাহাজগুলো৷
ছবি: Reuters/A. Dmitrieva
আটক নাবিক
জাহাজগুলোতে থাকা নাবিকদের আটক করেছে রুশ নৌবাহিনী৷ তাঁদের বিরুদ্ধে ক্রাইমিয়ার আদালতে অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ক্রাইমিয়ার সিম্ফারপোলে আদালতে এক আটক ইউক্রেনীয় নাবিককে নিয়ে যাচ্ছেন রাশিয়ার এফএসবির নিরাপত্তা সদস্য৷
ছবি: Reuters/P. Rebrov
ইচ্ছাকৃত উসকানি!
আদালতে শুনানিতে ইউক্রেনের নাবিক ইউরি বুদসিলোকে তাঁর আইনজীবীর সাথে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে৷ পুরো ঘটনার জন্য ইউক্রেন রাশিয়াকে দায়ী করলেও রুশ সেনাবাহিনীর দাবি, বারবার সাবধান করা সত্ত্বেও রুশ জলসীমায় ঢুকে পড়ে ইউক্রেনের জাহাজ৷ এই বক্তব্যের সমর্থনে আটক নাবিকদের স্বীকারোক্তিও প্রচার করা হয়েছে রুশ গণমাধ্যমে৷ তবে ‘ভয় দেখিয়ে’ এমন কথা বলতে নাবিকদের বাধ্য করা হয়েছে, দাবি ইউক্রেনের৷
ছবি: Reuters/P. Rebrov
মার্শাল ল’
রাশিয়ার ‘অনভিপ্রেত’ ও ‘আগ্রাসী’ মনোভাবের কড়া জবাব দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেট্রো পোরোশেংকো৷ তাঁর প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে রুশ সীমান্তের বেশ কিছু এলাকায় জরুরি অবস্থা জারি করেছে দেশটির পার্লামেন্ট৷ পাশাপাশি, আজভ সাগরে যুদ্ধজাহাজ পাঠাতে ন্যাটোকে আহ্বান জানিয়েছেন পোরোশেংকো৷
ছবি: Reuters/V. Ogirenko
প্রতিবাদ, বিক্ষোভ
জাহাজ আটকের ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ইউক্রেনের জনগণের মধ্যে৷ বিশেষ করে উগ্র ডানপন্থি দলগুলো আয়োজন করেছে বিক্ষোভ কর্মসূচির৷ কিয়েভে পার্লামেন্ট ভবন এবং রুশ দূতাবাসের সামনে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে ডানপন্থিরা৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, রুশ দূতাবাসে ইউক্রেনের পতাকা ওড়ানোর চেষ্টা করছেন এক বিক্ষোভকারী৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Gimanov
6 ছবি1 | 6
বিচারক লিওনার্ড শোলোখভ তার রায়ে লিখেছেন, 'পিপলস রিপাবলিক অফ দোনেতস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়ার সেনা বাহিনী আছে।' এই দুইটি অঞ্চলই আসলে ইউক্রেনের মধ্যে পড়ে। শুনানির সময় সাক্ষীরা আদালতকে জানিয়েছেন, প্রতি দুই সপ্তাহে ৭০টি ট্রাকের একটি কনভয় ওই অঞ্চলে খাবার পৌঁছে দিতে যায়। সেনার জন্যই সেই খাবার যায়।
বৃহস্পতিবারও রাশিয়া জানিয়েছিল, সীমান্তে সৈন্য থাকলেও ইউক্রেনের অভ্যন্তরে রাশিয়া কখনোই সৈন্য পাঠায়নি। কিন্তু ইউক্রেন বার বার দাবি করছিল, তাদের সার্বভৌম জমিতে রাশিয়া সৈন্য পাঠিয়ে যুদ্ধের আবহাওয়া তৈরি করছে। যা নিয়ে অ্যামেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সকলেই সরব হয়েছিল। কিন্তু রাশিয়া কোনোভাবেই তা মানতে চাইছিল না। এ দিন রাশিয়ার আদালত এমন কথা জানানোয় বিপাকে পড়েছে ক্রেমলিন। আদালতের রায়কে 'ভুল' বলতে হচ্ছে তাদের।
ইউক্রেন জানিয়েছে, রাশিয়ার আদালতের রায়েই পরিষ্কার, এতদিন ধরে তাদের দাবি সঠিক ছিল। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এরপর যুদ্ধ পরিস্থিতি আরো জটিল হলো। যুদ্ধের দিকে আরো এক ধাপ এগিয়ে গেল এই বিতর্ক।