জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইউক্রেনের মানবিক পরিস্থিতি প্রতিদিনই খারাপের দিকে যাচ্ছে৷ স্থানীয়দের সহায়-সম্বল বলতে কিছুই নেই৷ তাই সংকট নিরসনে নিরাপত্তা পরিষদের এক জরুরি বৈঠকে একথা বলেন জাতিসংঘের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা৷
বিজ্ঞাপন
জাতসিংঘের মানবিক সহায়তা বিভাগের পরিচালক জন জিং মঙ্গলবার নিরাপত্তা পরিষদকে জানিয়েছেন যে, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের মানবিক পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি ঘটছে৷ সেখানে বিদ্যুৎ এবং পানির সংকট দেখা দিয়েছে৷ অধিকাংশ ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন৷
জিং জানান, সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে চলমান সহিংসতা মানুষের জীবনের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে৷ তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দ্রুত কূটনীতিক সমাধান প্রয়োজন বলে জানান জিং৷ রাশিয়ার আহ্বানে নিরাপত্তা পরিষদের ঐ জরুরি বৈঠকে জিং জানান, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে সংঘাতে এখন অবধি প্রায় ১,৪০০ মানুষ নিহত হয়েছেন৷ এছাড়া আহত হয়েছেন চার হাজারেরও বেশি মানুষ৷
ইউক্রেনে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব
তুমুল বিক্ষোভ চলছে ইউক্রেনে৷ সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ-র সঙ্গে একটি বাণিজ্য ও সহযোগিতা চুক্তি করতে অস্বীকৃতি জানানোর পর, রাস্তায় নেমে আসে বিরোধী দলের হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ সমর্থক৷
ছবি: Reuters
ইউরোপীয় ভবিষ্যতের জন্য লড়াই
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর সঙ্গে একটি বাণিজ্য ও সহযোগিতা চুক্তি করতে সরকার অস্বীকৃতি জানানোর পর থেকে ইউক্রেনে চলছে তুমুল বিক্ষোভ৷ বিক্ষোভকারীরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে সরে সরকারের রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা রুখতে বদ্ধপরিকর৷ দাবি আদায়ের লক্ষ্যে হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা নেমে এসেছে রাস্তায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সড়ক অবরোধ
সরকারি কর্মকর্তারা যাতে কার্যালয়ে যেতে না পারেন, সে জন্য কিয়েভের রাস্তা বন্ধ করে দিচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা৷ প্রচণ্ড শীতে রাতেও বিক্ষোভ জানাচ্ছেন বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা৷
ছবি: Reuters
ইনডিপেনডেন্ট স্কয়্যারে তাঁবুর শহর
কিয়েভের ইনডিপেনডেন্ট স্কয়্যারে এখন শত শত তাঁবু৷ শীতের কষ্ট সহ্য করে সেখানেই থাকছেন অনেকে৷ সারি সারি তাঁবু নয় বছর আগের কমলা বিপ্লবের কথা মনে করিয়ে দেয়৷সেবার কয়েক সপ্তাহ ধরে চলেছিল বিক্ষোভ৷ বিক্ষোভকারীরা এবারও শেষ দেখেই ঘরে ফিরতে চান৷
ছবি: DW/A. Sawizki
চা, কফি আর ইন্টারনেট
বিক্ষোভকারীদের সুবিধার্থে ক্যাফে আর বারগুলো থাকছে খোলা৷ শীতে জমে যাওয়ার উপক্রম হলেই তাঁরা পান করতে পারছেন চা, কফি কিংবা অন্য কোনো পানীয়৷ কোনো কোনো ক্যাফে আর বার-এ বিক্ষাভকারীদের থাকা এবং ওয়াইফাই-এ ইন্টারনেট ব্যবহারের ব্যবস্থাও রয়েছে৷
ছবি: DW/A. Sawizki
গীর্জায় আশ্রয়
সপ্তাহান্তে সবচেয়ে বেশি বিক্ষোভকারীর সমাবেশ হয়েছিল কিয়েভের সেইন্ট মাইকেল’স ক্যাথেড্রালের সামনে৷ সেখানেই রাত কাটিয়েছেন তাঁরা৷ অন্য গীর্জাগুলোও বিক্ষোভকারীদের আশ্রয় দেয়ার জন্য খোলা রাখা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কে বেশি আগ্রাসী?
বিক্ষোভকারী আর পুলিশের মধ্যে এখন ব্যাপক উত্তেজনা৷ পুলিশ সংসদ ভবনের সামনের রাস্তা মুক্ত করার চেষ্টা করায় শুরু হয়ে যায় সংঘর্ষ৷ সপ্তাহান্তের এ সংঘর্ষে অনেকে আহত হন৷
ছবি: Reuters
‘আর নয় পুলিশি সন্ত্রাস’
পুলিশের বাধার প্রতিবাদ জানাতে একসময় বিক্ষোভকারীরা হাতে তুলে নেন ব্যানার, সেখানে লেখা ছিল, ‘আর নয় পুলিশি সন্ত্রাস’, ‘নিরাপত্তা বাহিনী আমাদের পুতে ফেলবে৷’
ছবি: DW/L. Grischko
ন্যাটোর সমালোচনা
বিক্ষোভকারীদের ওপর সরকারের অতিরিক্ত বল প্রয়োগের সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছে ন্যাটো৷ রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ আবার সেই বিবৃতির সমালোচনা করে বলেছেন, ন্যাটোর বিবৃতি ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল৷ লাভরভ মনে করেন, বিক্ষোভকারীদের আগ্রাসী আচরণের মাত্রা না বুঝে এ বিবৃতি দেয়া হয়েছে৷
ছবি: GENYA SAVILOV/AFP/Getty Images
সরকারের অনাস্থা ভোট জয়
মিকোলা আজারভ সরকারের জনপ্রিয়তা অনেকটা কমে গেলেও সংসদে বিরোধী দলের তোলা অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে যে ভোটাভুটি হয়েছিল, তাতে তারা জয়ী হয়েছে৷ বিরোধী দল ২২৬ ভোট পেলে বিপদ হতো, কিন্তু সব মিলিয়ে ১৮৬ ভোট পাওয়ায় তাৎক্ষণিক বড় বিপর্যয় এড়াতে পেরেছে সরকার৷
ছবি: Reuters
শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রয়াস
কাউন্সিল অফ ইউরোপ, অর্থাৎ ইউরোপীয় পরিষদ এখন ইউক্রেনের ইউরোপপন্থি বিরোধী দল এবং সরকারের মধ্যে শান্তি ফেরানোর জন্য মধ্যস্ততা করার চেষ্টা করছে৷
ছবি: Reuters
10 ছবি1 | 10
এর আগে জাতিসংঘের শরণার্থী এজেন্সি জানায়, চার মাস ধরে চলা লড়াইয়ের কারণে ইতোমধ্যে সাত লাখ মানুষ ইউক্রেন ছেড়ে রাশিয়ায় চলে গেছে৷ এছাড়া এক লাখ সতের হাজার মানুষ ইউক্রেনের মধ্যেই নিজেদের অবস্থান বদল করেছে৷ প্রতিদিন অন্তত এক হাজার মানুষ সংঘাতপূর্ণ এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছে বলেও জানিয়েছে এজেন্সিটি৷
প্রসঙ্গত, রাশিয়াপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর মধ্যে চলা লড়াইয়ের কারণে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ বিপদের মধ্যে রয়েছে৷ বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দোনেৎস্ক এবং লুগানস্ক অঞ্চলে প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না৷ জিং জানিয়েছেন, সেখানে ওষুধপত্রের সংকট দেখা দিয়েছে এবং আনুমানিক ৭০ শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মী এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে৷
জাতিসংঘে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভিটালি চুরকিন সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘বিপর্যয়কর' বলে আখ্যা দিয়ে দাবি করেছেন যে, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর নির্বিচার গোলা হামলার কারণে সেখানকার (ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল) ৮০ শতাংশ ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে৷
তবে জাতিসংঘে ইউক্রেনের উপ-রাষ্ট্রদূত অলেকজান্ডার পাভলিশেঙ্কো দোনেৎস্ক এবং লুগানস্কের পরিস্থিতি মারাত্মক হলেও বিপর্যয়কর নয় বলে মন্তব্য করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ইউক্রেন সরকারের পক্ষেই এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব৷ তবে আন্তর্জাতিক সঙ্গীরাও চাইলে সহায়তা করতে পারেন৷''
এদিকে, ওয়াশিংটনে পেন্টাগন জানিয়েছে, রাশিয়া তার দশ হাজার সৈনিক ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের সীমান্তের কাছে জড়ো করেছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কিয়েভ মনে করে, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সহায়তা করছে রাশিয়া৷ জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের উপ-রাষ্ট্রদূত রোসমেরি ডিকার্লো দাবি করেছেন, রাশিয়া চাইলে একাই স্বাচ্ছন্দে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে চলমান সংঘাত বন্ধ করতে পারে৷